নতুন বছরে ভারতের জাতীয় রাজনীতি কীভাবে আবর্তিত হবে, সেটা কোটি টাকার প্রশ্ন৷ মোদী সরকার তার স্বপ্ন কতটা পূরণ করতে পারবে, তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত৷ ভারতের আর্থ-সামাজিক ও পররাষ্ট্রনীতিতে সত্যিই কি হবে কোনো নাটকীয় দিক-বদল?
বিজ্ঞাপন
২০১৬ সালে ভারতের জাতীয় রাজনীতি রাতারাতি সাবালক হয়ে উঠবে – এমনটা কোনো অর্বাচীনও আশা করবে না৷ বরং সংসদের ভেতরে ও বাইরে দলীয় রাজনীতি নিয়ে কাদা ছোঁড়াছুড়ির ধারাবাহিকতা চলবে৷ অতীত অভিজ্ঞতার সূত্র থেকে বলা যায়, সংসদের অধিবেশন অচল করার নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না বিরোধি দলগুলি৷ গুরুত্বপূর্ণ জনস্বার্থ ইস্যুগুলি পড়ে থাকবে বাক্সবন্দি হয়ে৷ উন্নয়নের কোনো বড় পদক্ষেপ নিতে বাধা আসবে প্রতিপদে৷ যেমন জমি অধিগ্রহণ বিল, পণ্য ও পরিষেবা কর, শ্রমিক আইন সংশোধন ইত্যাদি৷ অর্থাৎ আর্থিক সংস্কার থমকে যাবার সম্ভাবনা আছে, যেটা দিল্লি ও বিহার বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবির পর বেশ বড় রকম ধাক্কা খেয়েছে৷ এটা কাটিয়ে উঠতে পারবে কিনা নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক কৌশলের ওপর৷ পাশাপাশি কয়েকটি রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা ভোটের মুখে কেন্দ্র ও অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাড়বে দলীয় কোন্দল৷ চলতে থাকবে অভিযোগ ও পাল্টা-অভিযোগের কাজিয়া৷ আগামী ফেব্রুয়ারির বাজেট অধিবেশন হবে মোদী সরকারের অর্থনৈতিক অগ্নিপরীক্ষা৷ মনে করা হচ্ছে, এ বছরের বাজেটে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ, কর্ম সংস্থান, পরিকাঠামো ও শিল্পায়ন ছাড়া বিশেষ জোর দেয়া হবে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক এবং সেচ তথা কৃষি বিকাশের ওপর৷ বিশ্ব আর্থিক সংকটের চাপে প্রবৃদ্ধির উচ্চহার প্রভাবিত হবে৷ সরকারের তরফে প্রবৃদ্ধির উচ্চহার এবং সংশ্লিষ্ট পরিসংখ্যান ফলাও করে তুলে ধরা হলেও, সাধারণ মানুষের জীবনে তার ভূমিগত বাস্তবতা নিয়ে থাকবে প্রশ্ন৷
একজন নরেন্দ্র মোদী
উগ্র সাম্প্রদায়িক আদর্শ এবং বিভাজনের রাজনীতির কারণে ভারতের বহু মানুষের কাছে তিনি খলনায়ক৷ ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে নিজেকে নতুন মোড়কে সামনে এনে সেই নরেন্দ্র মোদীই শোনাচ্ছেন ভারতকে বদলে দেয়ার মন্ত্র৷
ছবি: dapd
চা ওয়ালা
১৯৫০ সালে গুজরাটের নিম্নবিত্ত এক ঘাঞ্চি পরিবারে জন্ম নেয়া নরেন্দ্র মোদী কৈশরে বাবাকে সাহায্য করতে রেল ক্যান্টিনে চা বিক্রি করেছেন৷ ঘাঞ্চি সম্প্রদায়ের রীতি অনুযায়ী ১৭ বছর বয়সে যশোদাবেন নামের এক বালিকার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়, যদিও বেশিদিন সংসার করা হয়নি৷ ছাত্র হিসেবে সাদামাটা হলেও মোদী বিতর্কে ছিলেন ওস্তাদ৷ ১৯৭১ সালে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস-এর প্রচারক হিসাবে রাজনীতির দরজায় পা রাখেন মোদী৷
ছবি: UNI
গুজরাটের গদিধারী
১৯৮৫ সালে আরএসএস থেকে বিজেপিতে যোগ দেয়ার ১০ বছরের মাথায় দলের ন্যাশনাল সেক্রেটারির দায়িত্ব পান ১৯৯৫ সালে গুজরাটের নির্বাচনে চমক দেখানো মোদী৷ ১৯৯৮ সালে নেন দলের জেনারেল সেক্রেটারির দায়িত্ব৷ ২০০১ সালে কেশুভাই প্যাটেলের স্বাস্থ্যের অবনতি হলে দলের মনোনয়নে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে আবির্ভূত হন নরেন্দ্র মোদী, যে দায়িত্ব তিনি এখনো পালন করে চলেছেন৷
ছবি: Reuters
দাঙ্গার কালিমা
মোদীকে নিয়ে আলোচনায় ২০০২ সালের দাঙ্গার প্রসঙ্গ আসে অবধারিতভাবে৷ স্বাধীন ভারতের সবচেয়ে ভয়াবহ সেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় গুজরাটে প্রায় ১২০০ মানুষ নিহত হন৷ মোদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েও তিনি দাঙ্গায় উসকানি দেন৷ তিনি এ অভিযোগ স্বীকার করেননি, আদালতও তাঁকে রেহাই দিয়েছে৷ তবে দাঙ্গার পক্ষে কার্যত সাফাই গেয়ে, হিন্দুত্ববাদের গান শুনিয়েই তিন দফা নির্বাচনে জয় পান মোদী৷
ছবি: AP
রূপান্তর
দাঙ্গার পর নিজের ভাবমূর্তি ফেরানোর উদ্যোগ নেন নরেন্দ্র মোদী৷ একজন বিতর্কিত নেতার বদলে উন্নয়নের কাণ্ডারি হিসাবে তাঁকে প্রতিষ্ঠা দিতে শুরু হয় ‘গুজরাট মডেল’-এর প্রচার৷ ২০০৭ সালের পর নিজেকে একজন সর্বভারতীয় নেতা হিসাবে তুলে ধরতে নতুন প্রচার শুরু করেন এই বিজেপি নেতা, প্রতিষ্ঠা করেন ‘ব্র্যান্ড মোদী’৷গুজরাটের উন্নয়নের চিত্র দেখিয়ে কলঙ্কিত ভাবমূর্তিকে তিনি পরিণত করেন ভারতের ত্রাতার চেহারায়৷
ছবি: UNI
ভারতের পথে পথে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌঁড়ে নরেন্দ্র মোদী পাড়ি দিয়েছেন তিন লাখ কিলোমিটার পথ৷ সারা ভারতে পাঁচ হাজার ৮২৭টি জনসভায় তিনি অংশ নিয়েছেন, নয় মাসে মুখোমুখি হয়েছেন পাঁচ কোটি মানুষের৷ কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতা হিসাবে শুরু করলেও এবার তিনি হিন্দুত্ব নিয়ে প্রচার এড়িয়ে গেছেন সচেতনভাবে, যদিও বাংলাদেশের মানুষ, ভূখণ্ড এবং ধর্ম নিয়ে নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি নেতাদের বক্তব্য নতুন সমালোচনার জন্ম দিয়েছে৷
ছবি: AP
নতুন ইতিহাস
ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটই যে এবার ভারতে সরকারগঠন করতে যাচ্ছে, বুথফেরত জরিপ থেকে তা আগেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল৷ ৬৩ বছর বয়সি মোদীর নেতৃত্বে এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি৷ ৭ই এপ্রিল থেকে ১২ই মে অনুষ্ঠিত ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৮১ কোটি ৪০ লাখ৷ তাঁদের মধ্যে রেকর্ড ৬৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ ভোট দিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শেষ হাসি
নির্বাচনে বিজেপির প্রতিশ্রুতি ছিল – মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে দেশের অর্থনীতি নতুন গতি পাবে, গুজরাটের আদলে তিনি ভারতকে বদলে দেবেন৷ অবশ্য সমালোচকরা বলছেন, ‘কলঙ্কিত ভাবমূর্তি’ ঢাকতে এসব মোদীর ফাঁপা বুলি৷ তাঁর স্বৈরাচারী মেজাজ, শিক্ষা ও অর্থনীতির জ্ঞান নিয়েও ঠাট্টা-বিদ্রুপ হয়েছে৷ বলা হচ্ছে, ভোটাররা টানা তৃতীয়বার কংগ্রেসকে চায়নি বলেই বিজেপি জয় পেয়েছে৷ যদিও শেষ হাসি দেখা যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর মুখেই৷
ছবি: dapd
7 ছবি1 | 7
সামাজিক ইস্যু
আশা করা যায়, গোমাংস নিয়ে দাদরি হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না৷ মোদী স্বয়ং বুঝেছেন, এতে তাঁর লাভের চেয়ে লোকসান হয়েছে বেশি৷ উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা রুখতে এবং মৌল হিন্দুত্ববাদীদের মোকাবিলা করতে মোদী আরও কড়া হতে বাধ্য৷ সন্ত্রাসের পাশাপাশি আরও একটা নতুন সংকট ভারতে মাথা তুলছে৷ শুরু হয়েছে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর জন্য ভারত থেকে তরুণ মুসলিম যুবকদের ভাড়া নেয়া৷ এর জন্য চলেছে জোর মগজ ধোলাই কর্মসূচি৷ কয়েকজনকে ধরা পড়েছে ঠিকই, কিন্তু এতে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না৷ বরং সরকারকে সজাগ থাকতে হবে৷ অঙ্কুরে বিনাশ করতে হবে৷ না পারলে আরও বড় বিপদ আসতে পারে৷ অন্যদিকে অযোধ্যায় আবারো রাম মন্দির নির্মাণের যে তোড়জোড় চলছে, সেটা ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরিকে জাগানোর নামান্তর৷ কে বলতে পারে, আর একটা বাবরি মসজিদ কাণ্ড হবে না? এছাড়া নতুন বছরে পরিবেশ দূষণ রোধ মোদী সরকারের সামনে একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷ প্যারিস বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে গৃহীত খসড়া চুক্তিতে ভারত সই করলেও, ভারতের শিল্পায়নের কথা মাথায় রেখে কার্বন-নির্গমন নিয়ন্ত্রণ কতটা সম্ভব হবে, বলা কঠিন৷
শাহরুখকে ‘পাকিস্তানের দালাল’ বলল হিন্দু মৌলবাদীরা
হিন্দু মৌলবাদীরা ভারতে যে অসহিষ্ণুতা ছড়াচ্ছে – এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন হিন্দি ছবির সুপারস্টার শাহরুখ খান৷ তাতেই খেপে গেছেন বিজেপিসহ হিন্দু মৌলবাদী অন্যান্য দলের কতিপয় নেতা৷ শাহরুখকে বলছেন ‘পাকিস্তানের দালাল’!
ছবি: Johannes Eisele/AFP/Getty Images
কিং খানের ‘হাফ সেঞ্চুরি’
গত ২ নভেম্বর ছিল ‘বলিউড কিং’ শাহরুখ খানের ৫০তম জন্মদিন৷ জীবনের অর্ধ শতাব্দী পূরণ বলে কথা! বিশ্বের কোটি কোটি ভক্ত এ উপলক্ষ্যে অভিনন্দন এবং শুভকামনায় সিক্ত করেন শাহরুখকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Stringer
শাহরুখের সত্যি বয়ান
জন্মদিনে একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন শাহরুখ৷ সাম্প্রতিক সময়ে গরুর মাংস নিয়ে হিন্দু মৌলবাদীরা যে দেশব্যাপী অসহিষ্ণুতা ছড়িয়েছে সেই বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে শাহরুখ বলেছিলেন, ‘‘ধর্মীয় সহিষ্ণুতার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিছু আর হয়না৷ ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি দেশকে অন্ধকার যুগের দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷’’
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/F. Shamim
বিজেপিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া
সাক্ষাৎকারটি প্রচারের পরই বিজেপির সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়ভার্গব টুইটারে লিখে দেন,‘শাহরুখের হৃদয় পড়ে আছে পাকিস্তানে’৷ সেই টুইট পরে প্রত্যাহার করে নিলেও বুধবার তিনি বলেছেন, ভারত অসহিষ্ণু হলে শাহরুখের মতো এক মুসলমান অমিতাভ বচ্চনের পরই দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় তারকা হতে পারতেন না৷’’ বিজেপির কয়েকজন নেতা শাহরুখকে ‘মুখ সামলে কথা বলা’র অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, মুখ না সামলালে শাহরুখের ছবি বয়কট করা হবে৷
ছবি: Johannes Eisele/AFP/Getty Images
জঙ্গি নেতার সঙ্গে তুলনা
শাহরুখের সমালোচনা করতে গিয়ে বিজেপির আরেক সাংসদ যোগী আদিত্যনাথ বলেন, ‘‘শাহরুখ এখন হাফিজ সাঈদের ভাষায় কথা বলছেন৷’’ বলিউড ইতিহাসের অন্যতম সেরা সুপারস্টারের সঙ্গে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন লশকর-ই তৈয়বার শীর্ষ নেতা হাফিজ সাঈদের তুলনা ভারতের সাধারণ মানুষ এবং শাহরুখ ভক্তদের আহত করেছে৷ সংবাদ এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের তেমন প্রতিক্রিয়াই জানাচ্ছেন সবাই৷
ছবি: AP
শাহরুখের ধর্মনিরপেক্ষতা
ধর্মীয় সহিষ্ণুতার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত জীবনে শাহরুখ খুবই উদার৷ তাঁর স্ত্রী গৌরির জন্ম হিন্দু পরিবারে৷ প্রেম করে বিয়ে করার পরেও শাহরুখ কখনো গৌরির ধর্ম বিশ্বাস বা ধর্ম চর্চায় হস্তক্ষেপ করেননি৷ ভক্তদের কাছে ‘এসআরকে’ নামেও পরিচিত মুম্বই মহাতারকা বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তাঁর বাড়িতে নামাজ পড়া এবং পূজা করার ব্যবস্থা রয়েছে৷ ছবিতে স্ত্রী গৌরির সঙ্গে শাহরুখ৷
ছবি: Strdel/AFP/Getty Images
5 ছবি1 | 5
দুর্নীতি
নতুন বছরে দুর্নীতি দূর করা সম্ভব হবে, এমনটা আশা করা আকাশকুসুম৷ হয়ত ইতরবিশেষ হলেও হতে পারে৷ কারণ মোদী সরকার নতুন বছরে ব্যাপকমাত্রায় শুরু করতে চলেছেন ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া', যার অঙ্গ হিসেবে ই-গভর্নেন্স, টুইটার, অ্যাপ, ই-ট্রেড, মোবাইল পরিষেবা, স্টার্ট-আপের মতো সোশ্যাল মিডিয়া৷ তাতে আমলাতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ কিছুটা কমবে৷ তবে ইন্টারনেটকে কবজা করা নিয়ে ফেসবুককে ঘিরে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বিতর্ক৷ শুরু হয়েছে অবাধ অন-লাইন অভিযানের পক্ষে এবং বিপক্ষে৷ ‘ফ্রি বেসিক' নামে অন-লাইন সার্ভিস সাধারণ মানুষ যোগাযোগ, স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষা, কর্ম সংস্থান ও কৃষি সংক্রান্ত খবরাকবর৷ এটা নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকবে নতুন বছরে৷
পররাষ্ট্রনীতি
রাশিয়াকে পাশে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো পশ্চিমের ধণতান্ত্রিক দেশগুলির সঙ্গে ভারতের নৈকট্য তুলে ধরতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রয়াস নতুন বছরে এক ভিন্ন মাত্রা পেতে পারে৷ ইউরোপিয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ারও সম্ভাবনা৷ তবে ইইউ-ভারত অবাধ বাণিজ্য চুক্তির ভবিষ্যত এ বছরেও ঝুলে থাকবে৷ চীনের সঙ্গে স্থিতাবস্থা বজায় থাকবে৷ ভারতের চিরাচরিত পাকিস্তান নীতিকে গ্রাহ্য না করে পারস্পরিক আস্থা বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী মোদী যেভাবে সরাসরি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দোড়গোড়ায় হাজির হলেন, আপাতদৃষ্টিতে তা নাটকীয় মনে হলেও এর রাজনৈতিক তাত্পর্য অনস্বীকার্য৷ এতে দু'দেশের বহুমাত্রিক সম্পর্কের জটিলতা কিছুটা হলেও শিথিল হতে পারে৷ সন্ত্রাস, কাশ্মীর ইস্যুর শক্ত জমিটা হয়ত কিছুটা নরম হয়েছে৷ তাই এই জানুয়রিতেই বৈঠকে বসতে চলেছেন দু'দেশের বিদেশ সচিব৷ মোদী-শরিফ মিলিত হতে পারেন এ মাসেই সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ফাঁকে৷ পশ্চিম এশিয়া নিয়ে মোদী সরকার আগ্রহী হতে দেখা যাবে৷ ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রীদের আসন্ন দিল্লি সফর তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে৷ বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় ছেদ পডবে না৷ আফগানিস্তান ও নেপালের সঙ্গে সম্পর্কের একটা টানাপোড়েন চলছে৷ নেপালের সঙ্গে হয়ত সেটা মিটে যাবে৷ শ্রীলঙ্কা এবং আফগানিস্তানে ভারতের বৈষয়িক সাহায়্য অব্যাহত থাকবে৷
ভারতে মৌলবাদীদের পাকিস্তান বিরোধীতা
ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিরোধ দীর্ঘদিনের৷ চারটি যুদ্ধও হয়েছে দেশ দু’টির মধ্যে৷ তবে দু’দেশের দ্বন্দ্বকে রাজনীতিতেই সীমাবদ্ধ না রেখে তা সংস্কৃতি এবং খেলাধুলার অঙ্গনেও ছড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে হিন্দু মৌলবাদীরা৷
ছবি: Getty Images/AFP
ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচে বাধা
১৯৯৯ সালে ভারত সফরে এসেছিল পাকিস্তান৷ সেবার দু’দেশের ক্রিকেট ম্যাচ বানচাল করতে ফিরোজ শাহ কোটলার পিচ খুঁড়ে রেখেছিল হিন্দু মৌলবাদী দল শিব সেনা৷ তারপরও অবশ্য ম্যাচ হয়েছে৷ ২০০৬ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাকিস্তানের জয়পুর এবং মোহালির দু’টি ম্যাচেরও বিরোধীতা করেছিল শিব সেনা৷ সেবারও অবশ্য নির্বিঘ্নেই ম্যাচ হয়েছে৷
ছবি: Fotolia/S.White
বীনা মালিক আর আলী সেলিমের পারফর্ম্যান্সেও আপত্তি
রিয়েলিটি শো ‘বিগ বস’-এর চতুর্থ আয়োজনে অংশ নিতে এসে পাকিস্তানের বীনা মালিক এবং আলী সেলিমও পড়েছিলেন শিব সেনার আপত্তির মুখে৷ অনুষ্ঠানের আয়োজকরা শুধু পাকিস্তানি হওয়াকে অপরাধ মেনে বীনা এবং সেলিমকে অবশ্য বাদ দেননি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Merey
কাবাডিতেও পাকিস্তানে আপত্তি
২০১৪ সালে পেশাদার কাবাডি লিগের কয়েকটি দল পাকিস্তানের খেলোয়াড় দলে রেখেছিল৷ টাকা খরচ করে তাদের খেলোয়াড় নিয়ে তাদের শেষ পর্যন্ত খেলানো যায়নি৷ সেবারও শিব সেনার আপত্তি এবং আপত্তির মুখে পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের বসিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হয় দলগুলোকে৷
ছবি: imago/Xinhua
আতিফ আসলামের কনসার্ট হলো না
২০১৫ সালের ২৫শে এপ্রিল পুনেতে আতিফ আসলামের কনসার্ট হওয়ার কথা ছিল৷ শিব সেনার আপত্তির মুখে সেই কনসার্ট আর হয়নি৷
ছবি: Coke Studio
বন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারলেন না গুলাম আলী
পাকিস্তানের গজল শিল্পী গুলাম আলী ভারতে তুমুল জনপ্রিয়৷ এ মাসেই প্রয়াত গজল শিল্পী জগজিৎ সিং-এর জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নিতে মু্ম্বইতে আসার কথা ছিল তাঁর৷ শুধু পাকিস্তানি হওয়ার কারণে তাঁর ভারত আগমন নিয়েও আপত্তি তোলে শিবসেনা৷ গুলাম আলী তাই এবার আর প্রয়াত বন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেও মুম্বই আসতে পারেননি৷
ছবি: Getty Images/AFP
পাকিস্তানির পাশে থাকায় ভারতীয়র মুখেই কালি
নিজের লেখা বইয়ের প্রকাশের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মুম্বই এসেছিলেন পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী খুরশিদ কসুরি৷ অনুষ্ঠান হয়েছে, পুস্তকও প্রকাশিত হয়েছে৷ কিন্তু তাদের দাবি অনুযায়ী অনুষ্ঠান বাতিল না হওয়ায় অনুষ্ঠানে এসে সুধেন্দ্র কুলকার্নির মুখে কালি ছিটিয়ে দিয়েছে শিবসেনা সমর্থকরা৷ ভারতের সাবেক কূটনীতিক সুধেন্দ্র কুলকার্নির একমাত্র অপরাধ তিনি এক পাকিস্তানির বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Pilick
6 ছবি1 | 6
প্রতিরক্ষা
ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আগাগোড়া ঢেলে সাজাবার প্রক্রিয়া নতুন বছরে বিশেষ অগ্রাধিকার পাবে৷ যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং ইসরায়েল থেকে বড় রকম প্রতিরক্ষা সহযোগিতা পাওয়ার আশা করা যেতে পারে৷ আর সেটা হতে পারে মোদীর ‘মেক-ইন ইন্ডিয়া' কর্মসূচির অধীনে৷ প্রতিরক্ষা সমরাস্র সংগ্রহে রাশিয়ার স্থান বিঘ্নিত হবে না৷ নতুন বছরে দেশকে সার্বিক সাফল্যের মুখ দেখাতে না পারলে বিজেপিকে তার দাম চুকাতে হবে আগামী সাধারণ নির্বাচনে৷
বন্ধু, আপনি কি অনিল চট্টোপাধ্যায়ের এই বিশ্লেষণের সঙ্গে একমত? জানান মন্তব্যের ঘরে৷