1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘নতুন ভোটাররা অতীতমুখী রাজনীতি পছন্দ করে না'

২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সামনে যে নির্বাচন সেখানে তরুণ ভোটারদের একটা বড় অংশই প্রথমবার ভোট দেবেন। সেই ভোটে তরুণদের প্রভাব থাকবে কতটুকু? কোন বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেবে তারা? এসব বিষয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন মহিউদ্দিন আহমেদ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক, লেখক ও ইতিহাসবিদ মহিউদ্দিন আহমেদকে দেখা যাচ্ছে৷
‘‘তরুণরা প্রতিষ্ঠানবিরোধী, অর্থাৎ, এস্টাবিলিস্টমেন্টবিরোধী। তাদের মধ্যে বিদ্রোহের প্রবণতাটা প্রবল। সবকিছু ভেঙেচুরে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা থাকে। সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য যে ভিশনটা দরকার, সেটার আর্টিকুলেশনের অভাব আছে।’’ছবি: Saad Abdullah/DW

ডয়চে ভেলে : তরুণ ভোটাররা নির্বাচনে কতটুকু প্রভাব ফেলে?

মহিউদ্দিন আহমেদ : ভোটারদের মধ্যে তরুণদের অংশ যদি বেশি হয়, তাহলে তো অবশ্যম্ভাবীভাবে এর একটা প্রভাব পড়বে। আমরা দেখছি যে, এখন বাংলাদেশে যে ভোটার তাদের বেশিরভাগই তো তরুণ। তরুণ বলতে যদি আমরা ৩০-৩৫ বছর ধরি, তাহলে নাগরিকদের অধিকাংশই তরুণ। সুতারাং তারাই নির্ধারণ করে দেবে ভোটের ফলাফল। দ্বিতীয়ত, ২০২৬-এর ফেব্রুয়ারিতে যদি নির্বাচন হয়, তাহলে এই তরুণদের বেশিরভাগই জীবনে প্রথমবারের মতো ভোট দেবে। তারা এর আগে ভোট দেওয়ার সুযোগ পায়নি। গত তিনটা নির্বাচনে তো ভোট দেওয়ার সুযোগই রাখা হয়নি। এর মধ্যে আবার অনেক নতুন ভোটার হয়েছে। তরুণদের মধ্যে তারা একটু প্রবীণ বা মধ্যবয়স্ক, তাদের মধ্যে দলীয় রাজনীতির প্রভাব বেশ প্রকট। কারণ, তারা ওইভাবেই বড় হয়েছেন। কিন্তু এই তরুণরা দেখেছে, তাদের চোখের সামনে সরকারের দুঃশাসন এবং বিরোধী দলের অপরাজনীতি- দু'টোই তারা দেখেছে। 

আগের যে নির্বাচনগুলোকে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন বলি, সেখানে তরুণ ভোটারদের প্রভাব কতটুকু ছিল?

হ্যাঁ, ছিল তো। আমরা যদি ১৯৭০ সালের নির্বাচন থেকে শুরু করি, যে নির্বাচনে আমি প্রথম ভোট দিয়েছি, ওই নির্বাচনে তরুণদের ভোটের কারণে যে মেরুকরণ হলো, তার ফলে পাকিস্তান ভাঙলো এবং বাংলাদেশের সৃষ্টি হলো। প্রবীণদের ভোটে তো এটা হতো না। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ হওয়ার পরে মুক্ত পরিবেশে আমরা প্রথম ভোট দেখলাম ১৯৯১ সালে। সেখানেও কিন্তু তরুণরা ভোটে প্রভাব রেখেছে। এর আগে ১০ বছর ধরে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন হয়েছিল। সেই নির্বাচনে তো খালেদা জিয়া তার আপোষহীন ভাবমূর্তি দিয়ে তার দলের পক্ষে জয় ছিনিয়েছিলেন। সেখানে তরুণ ভোটারদের একটা বিরাট ভূমিকা ছিল। কারণ, ওই সময় বিএনপি ভেঙেচুরে গিয়েছিল। এরশাদ ভেঙে দিয়েছিল। কিন্তু ওই সময়ে তরুণদের যে সংগঠন, বিশেষ করে ছাত্রদল আন্দোলনে বড় ভূমিকা রাখে এবং ১৯৯০ সালে ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল জয়লাভ করেছিল। তার রেশ পড়েছিল ১৯৯১ সালের নির্বাচনে। এর পরের নির্বাচনগুলোতে ওই সময়ে যারা তরুণ ছিল, তারা দলীয় রাজনীতির মধ্যে বড় হয়েছে তো, ফলে তারা দলীয় হিসেবেই ভোটের হিসেব-নিকেশ করতো। এখন কিন্তু পরিস্থিতি বদলেছে। এখন আগের মতো হয়ত হবে না।

নতুন ভোটাররা এবার ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন বিষয়কে গুরুত্ব দিতে পারে?

নতুন ভোটাররা অতীতমুখী রাজনীতি পছন্দ করে বলে মনে হয় না। সুতরাং, তারা দেখবে সামনের দিনগুলোতে তাদের জন্য কারা কী প্যাকেজ প্রস্তাব করছে, তাদের সামনে কোনো আশাবাদ আছে কিনা৷ ভবিষ্যতের কর্মসূচিকেই তারা প্রাধান্য দেবে বলে মনে হয়। এখনকার কাজকর্ম এবং ভবিষ্যতের কর্মসূচিকেই তারা প্রাধান্য দেবে। ১৯৫২ সালে কে কী করেছে, ৬৬ বা ৭১ সালে বা ৯০ সালে কে কী করেছে, সেটা তারা হিসাবে ধরবে না। যেহেতু তারা এগুলো দেখেনি, ফলে এগুলো নিয়ে তাদের আবেগও নেই।

রাজনৈতিক দলগুলো তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে কি কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে?

রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রথাগত মডেল, অর্থাৎ, তরুণদের মধ্যে দলীয় সংগঠন করে। ছাত্র সংগঠন, যুব সংগঠন করে। দলের ফর্মুলার মধ্যে সবাইকে নিয়ে আসতে চায়। কিন্তু সাধারণ তরুণরা এটা খুব একটা পছন্দ করে বলে মনে হয় না। সুতরাং, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের অতীতের যে মডেল, তার থেকে তো বেরিয়ে আসতে পারছে না।

এবার সরকারও তরুণ ভোটারদের বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে। কেন?

সরকার তো মনে করে, এই সরকার এসেছে তরুণদের আন্দোলনের ফলে। এই সরকারের ভিত্তিই তো তরুণরা। সুতারাং, তাদের উপক্ষো করা সম্ভব না।

গণমাধ্যম তরুণ ভোটারদের ভোটাদানে আগ্রহী করতে কী ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে?

গণমাধ্যমের সম্পাদকীয় নীতির উপর এটা নির্ভর করে। যে গণমাধ্যমগুলো দলীয় রাজনীতির পক্ষে, তারা তাদের দল যা বলবে, সেভাবেই করবে। আর যে সমস্ত মাধ্যম স্বাধীন চিন্তা-ভাবনা করে, তারা হয়ত দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে গিয়ে তরুণদের মনের কথাগুলো তুলে ধরতে পারে। এইভাবে তারা তাদের বিভিন্ন সংবাদ, প্রতিবেদনে বা নিবন্ধ-প্রবন্ধ দিয়ে আকৃষ্ট করতে পারে।

সোশ্যাল মিডিয়া তরুণ ভোটারদের মনোজগতে কতটুকু প্রভাব ফেলে?

সোশ্যাল মিডিয়ার প্রায় পুরোটাই তরুণদের দখলে। এর মধ্যে দুইটা বিষয় দেখা যায়। একটা হলো গতানুগতিক রাজনীতির প্রতি তাদের বিতৃষ্ণা এবং বিদ্রোহ। আর দ্বিতীয়ত হলো, খিস্তি, খেউর, গালাগাল ইত্যাদি। তরুণদের মনোজগতের দুইটা দিকই ফুটে ওঠে।

তরুণ ভোটাররা রাজনৈতিক দল ও তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে কতটা সচেতন?

তারা তো সবই দেখছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় গেলে আমরা দেখতে পারি যে, এখন আর আগের মতো সর্বজন-শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব বলে কিছু নেই। সবাই সমালোচিত হচ্ছে। সবাইকেইতাদের কথা ও কাজের জন্য গালাগাল তরুণদের কাছ থেকে খেতে হচ্ছে।

বর্তমান রাজনীতির মাঠে অনেক তরুণকে দেখা যাচ্ছে। তারা নিজেরা কতটা স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ধরে রাখতে পারছে?

বর্তমানে পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে আমরা যাদের দেখছি, তাদের মধ্যে গুটিকয়েক দল তরুণ নেতৃত্বে আছে। তিন-চারটা হবে। এর সঙ্গে সর্বশেষ সংযোজন হলো এনসিপি। এদের অনেকেই গত ১৫ বছরের আন্দোলন, বিশেষ করে দুটো আন্দোলন আমি বলবো, একটা নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং আরেকটা কোটা সংস্কার আন্দোলন- এই আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে তারা বেড়ে উঠেছে। এই আন্দোলন ছিল দলীয় রাজনীতির বাইরে। সুতরাং, দলীয় সংকীর্ণ রাজনীতির বাইরে গিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো কথাবার্তা বলে এবং কর্মসূচি দিতে পারে, তাহলে তারা হয়ত ভোটের মাঠে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে।

নতুন ভোটাররা এখনকার কাজকর্ম এবং ভবিষ্যতের কর্মসূচিকেই প্রাধান্য দেবে: মহিউদ্দিন আহমেদ

This browser does not support the audio element.

তরুণ ভোটাররা আসলে কী ধরনের প্রার্থী পছন্দ করে?

আমরা যাদের তরুণ বলছি, তাদের বেশিরভাগেরই চলাফেরা শহরাঞ্চলে। গ্রামাঞ্চলে তাদের সংগঠন সেভাবে গড়ে ওঠেনি। এটা অনেক সময় লাগে। গ্রামে সংগঠন বলতে আমি বিএনপি আর আওয়ামী লীগের বাইরে কোনো সংগঠন দেখি না। গ্রামে যারা সমাজপতি, বয়সে প্রবীণ, তাদের প্রভাব খুবই বেশি। সুতরাং, সেখানে যদি তরুণদের পথ বের করে নিতে হয়, তাহলে তাদের সাংগঠনিক ক্ষমতা বাড়াতে হবে। কারণ, মানুষের কাছে পৌঁছাতে হলে সংগঠনের দরকার হয়। সেদিক দিয়ে তারা এখনো দুর্বল।

ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে তরুণ-তরুণীদের ভাবনা কি একই ধরনের হয়?

অনেক ক্ষেত্রে একই ধরনের হয়, অনেক ক্ষেত্রে আলাদাও হয়। একদিকে ছেলে হোক, মেয়ে হোক, তারা সবাই তো তরুণ, আবার আরেকদিকে আমরা সবসময় তো জেন্ডার সেন্সিটিভিটির কথা বলি। তবে শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে ওই চেতনাটা কাজ করে। তবে বেশিরভাগের মধ্যে তো ওই সচেতনতাটা নেই। কারণ, সেভাবে তারা পারিবারিক শিক্ষাটাও পাইনি। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে যাদের বসবাস। সেখানে পরিবারের মুরুব্বি, সমাজপতিদের প্রভাবটা বেশি।

তরুণ ভোটারদের উদ্দেশ্যে আপনার কোনো পরামর্শ?

আমরা সবসময়ই দেখেছি, তরুণরা প্রতিষ্ঠানবিরোধী, অর্থাৎ, এস্টাবিলিস্টমেন্টবিরোধী। তাদের মধ্যে বিদ্রোহের প্রবণতাটা প্রবল। সবকিছু ভেঙেচুরে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা থাকে। সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য যে ভিশনটা দরকার, সেটার আর্টিকুলেশনের অভাব আছে। আমার মনে হয়, এটার দিকে তাদের নজর দেওয়া উচিত। সবকিছু অর্জন করা যাবে না। তার একটা সময় লাগবে। কতটুকু সময়ের মধ্যে কতটুকু অর্জন করা যায়। তরুণদের মধ্যে আবেগ একটু বেশি, বাস্তবতাবোধ সেই তুলনায় কম। তাদের অনেক বেশি বাস্তববাদী হতে হবে। আর সেটার জন্য সাধারণ মানুষের সঙ্গে অনেক বেশি সম্পৃক্ত হতে হবে।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ