1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
ব্যবসা-বাণিজ্যবাংলাদেশ

নতুন ভ্যাট-শুল্কে আরো চাপে পড়বে মানুষ

১৭ জানুয়ারি ২০২৫

দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছাড়িয়েছে দুই অংকের ঘর। এমন পরিস্থিতিতে ওষুধ, এলপি গ্যাস, মোবাইলে ফোনের সিম কার্ডের মতো প্রয়োজনীয় পণ্যসহ শতাধিক পণ্য ও সেবায় আমদানি, উৎপাদন, সরবরাহ পর্যায়ে শুল্ক ও কর বাড়িয়েছে সরকার।

স্বল্পমূল্যে পণ্য কেনার লাইনে টাকা দেয়ার জন্য হাত তুলেছেন এক ক্রেতা
শতাধিক পণ্যে কর ও শুল্ক বাড়ায় বাংলাদেশে মানুষের জীবনধারণের ব্যয়ও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছেছবি: Md Manik/SOPA/ZUMA/picture alliance

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে সরকার শুল্ক-কর বাড়ানোর সহজ পথ বেছে নিয়েছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে ‘গণবিরোধী' বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। বিশ্লেষকরা বলছেন, নিত্যপণ্যের মূল্যে বিরূপ প্রভাব এখন অনিবার্য। মানুষের উপর আরো চাপ বাড়বে।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা রুবিনা ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, "আমরা দুইজনে চাকরি করে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাওয়া তো আগেই বন্ধ করে দিয়েছি। দুইটা মেয়ের স্কুলের বেতন আর সংসারের খরচ মেটাতে অনেক ইচ্ছেই এখন আর পূরণ করি না। এর মধ্যে নতুন করে ভ্যাট-শুল্কে তো অবশ্যই জিনিস-পত্রের দাম বাড়বে। তাহলে আমরা যাবো কই? আমাদের তো বেতন বাড়ছে না। এখন প্রতিদিনই চিন্তা করি, আর কী করলে খরচ কমানো যাবে। খরচ কমাতে কমাতে এখন এমন অবস্থা আর কমানোর জায়গা নেই। ফলে খাওয়ার খরচই কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। বাচ্চাদের ইচ্ছে তো পূরণ করিই না।”

গত ২ জানুয়ারি ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫' এবং ‘দ্য এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫' নামে এ দুটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। তার আগে ১ জানুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে মূল্য সংযোজন কর-ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক বাড়াতে এনবিআরের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। অধ্যাদেশ জারির পরপরই এটা কার্যকর হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে।

সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ দাবি করেন, এতে ভোক্তার বাড়তি মূল্য গুণতে হবে না। নিত্যপণ্যের বাজারে ‘প্রভাব পড়বে না'। এনবিআরও একই সুরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে দাবি করেছিল, মূল্যস্ফীতিতে ‘প্রভাব পড়বে না'। কিন্তু অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভিন্ন কথা। বাস্তবেও প্রভাব পড়েছে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "যেসব পণ্যে ট্যাক্স বেড়েছে, সেগুলোর দাম তো বাড়বে। যারা বলছেন, এর প্রভাব বাজারে পড়বে না, তারা ঠিক বলছেন না। সরকার রাজস্ব আহরনের সহজ পথ বেছে নিয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি তো আছেই, এর সঙ্গে সরকারের কাছে টাকাও নেই। ২২ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছে। এখন যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল তাতে তিন পক্ষই অর্থাৎ সরকার, বিক্রেতা আর ভোক্তা সবাই ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেলে যে কম পণ্য কিনবে, এতে আমদানিও কমবে এবং সরকার রাজস্বও কম পাবে।”

যারা ভ্যাট বসাচ্ছেন বিভিন্ন পণ্যের ওপর তারা কস্ট অ্যানালাইসিস করেননি: এ কে আজাদ

This browser does not support the audio element.

কেন এই সিদ্ধান্ত?

ঋণ দিতে আইএমএফ বাংলাদেশকে কর-জিডিপি অনুপাত ০.২ শতাংশ বাড়ানোর শর্ত দিয়েছে, টাকার অঙ্কে যা ১২ হাজার কোটির বেশি। এই অর্থ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার সঙ্গে যোগ হবে। জুলাই-আগস্টের আন্দোলন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে নানাবিধ সংকটে রাজস্ব আদায়ের পরিস্থিতি ভালো নয়। চলতি অর্থ বছরের চার মাসে রাজস্ব ঘাটতি প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। এমন অবস্থায় বাড়তি রাজস্ব আদায়ে জন্যই এই পদক্ষেপ। সরকার আইএমএফের তৃতীয় কিস্তির টাকা পেতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-র সম্মানিত ফেলো ড. গোলাম মোয়াজ্জেম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "সরকারের জন্য আইএমএফের তৃতীয় কিস্তির টাকাটা খুবই প্রয়োজন। এই কারণে হয়ত সরকার সবচেয়ে সহজ পথ হিসেবে এটা করেছে। আর্থিক পরিস্থিতি সামাল দিতে এটা করা হচ্ছে। কিন্তু সরকার আবার সরকারি কর্মচারীদের মহার্য্য ভাতা দেওয়া ঘোষণা দিয়েছে। তাহলে তো স্ববিরোধিতা হয়ে গেল। টাকা নেই বলেই তো আপনি এটা বাড়ালেন, তাহলে আবার খরচ বাড়াতে চাচ্ছেন কেন? নিচের গ্রেডে যারা চাকরি করেন, তাদের জন্য মহার্য্য ভাতার প্রয়োজন হয়ত কিছুটা থাকতেও পারে। কিন্তু এই সুবিধা যারা বেশি পাবে, তারা তো উপরের গ্রেডে চাকরি করেন। তাহলে অর্থ সাশ্রয় হবে কিভাবে? বরং রাজস্ব বাড়াতে সরকার বিকল্প পথ খুঁজতে পারত।

মানুষ অতিষ্ট হয়ে পড়বে?

পণ্য ও সেবার তালিকায় চাল, ডাল, আটা, ভোজ্য তেলের মত পণ্য না থাকলেও যেসব পণ্য ও সেবার শুল্ক-কর বাড়ানো হয়েছে, এগুলোর বেশির ভাগ বর্তমান সময়ে প্রয়োজনীয় হওয়ায় তা খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি উসকে দেবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিকরা। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আগের মাসের তুলনায় কিছুটা কমে খাদ্য বহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ২৬ শতাংশ। নভেম্বরে যা ছিল ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স সরকারের এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে ডয়চে ভেলেকে বলেন, "সাধারণ মানুষ এমনিতেই চাপে আছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এর মধ্যে নতুন যে ভ্যাট আর কর আরোপ করা হয়েছে, তাতে দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার আরো বাইরে চলে যাবে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত গণবিরোধী। এটা বাতিল করা উচিত।”

নতুন বছরে বিস্কুট, ওষুধ, আমদানি করা ফল, ফলের রস, সাবান, সাবান জাতীয় পণ্য, পোশাক কেনাকাটা, মিষ্টি, বেশ কয়েক ধররেনর টিস্যু, মোটর গাড়ির গ্যারেজ, এলপি গ্যাসের মত পণ্যে ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। সিগারেটে আরেক দফা দাম ও কর বাড়ানো হয়েছে। মোবাইল ফোনের সিম কার্ডের উপর সম্পূরক শুল্ক ২০ থেকে বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করা হয়েছে। ইন্টারনেট সেবা বা আইএসপির উপর প্রথমবারের মত ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বসানো হয়েছে। এনবিআরের মতে, শুল্ক-কর বৃদ্ধির তালিকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নেই। অর্থ উপদেষ্টাও একই বলেছেন। তাদের দাবি হল- চাল, তেল, চিনিসহ বিভিন্ন পণ্যের আমদানি পর্যায়ে শুল্ক-কর ছাড় দিয়েছেন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এবং বাজারে সরবরাহ বাড়াতে।

তবে বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন-আইএসপিএবি'র সভাপতি ইমদাদুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, "ইন্টারনেট তো এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। তালিকায় না থাকলেও এটা মানতে হবে। এমনিতে বাংলাদেশে ব্রডব্যান্ডের পেনিট্রেশন অনেক কম। গ্রহকদের সুবিধা না দিতে পারলে তা আর বাড়বে না। এখন এই সম্পূরক শুল্ক আরোপের ফলে যে বাড়তি টাকাটা দিতে হবে এটা কিন্তু সরাসরি গ্রাহকের পকেট থেকে যাবে। আগে যে ব্যবহারকারীকে ৫০০ টাকা দিতে হত, সম্পূরক শুল্ক আরোপের ফলে তাকে এখন থেকে দিতে হবে ৫৭৭ টাকা ৫০ পয়সা। আগে যিনি ১০০০ টাকা দিতেন, তাকে দিতে হবে ১১৫৫ টাকা। এই হারেই সবাইকে বাড়তি পেমেন্ট দিতে হবে। এতে ইন্টারনেটের ব্যবহার কমে যেতে পারে।”

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, "গ্যাসের দাম বাড়ানোর আগে চিন্তা করা উচিত ছিল, গ্যাস কে ব্যবহার করে, কেন ব্যবহার করে, তার প্রোডাক্ট কস্ট (উৎপাদন খরচ) এখন কত আর বাড়ালে কত হবে? সরকার কতগুলো নীতি নিচ্ছে। এই নীতি যদি বাস্তবায়ন হয় আমরা কোথায় চলে যাবো? যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নীতিনির্ধারকরা যদি আমাদের সঙ্গে একটু বসেন এবং ভ্যাট বসানোর আগে কস্ট অ্যানালাইসিস করেন, সেটা দেশি পণ্যই হোক বা রপ্তানিমুখী পণ্যই হোক। যারা ভ্যাট বসাচ্ছেন বিভিন্ন পণ্যের ওপর তারা কস্ট অ্যানালাইসিস করেননি। এতে পণ্যের উৎপাদন খরচ যেমন বাড়বে, তেমনি মানুষের খরচও বাড়বে। একটি পণ্যের সঙ্গে আরেকটি পণ্যের সম্পর্ক রয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তে মানুষের জীবনযাত্রা আর ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে।”

রাজস্ব বাড়াতে সরকার বিকল্প পথ খুঁজতে পারত: ড. গোলাম মোয়াজ্জেম

This browser does not support the audio element.

মোবাইল ফোন অপারেটর রবি'র চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার শাহেদ আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এ ধরনের শুল্ক বৃদ্ধির ফলে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির প্রকৃত উদ্দেশ্য কখনো পূরণ হয় না। কারণ সাধারণ গ্রাহকেরা ব্যয় কমিয়ে এ ধরনের সেবা মূল্য বাড়ার ধাক্কা সামাল দেন। ফলে রাজস্ব বৃদ্ধির চেয়ে কমে যেতে পারে। বর্তমানে মোবাইল সেবায় ১০০ টাকার রিচার্জে সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট ও সারচার্জ দিতে হয় ২৮ দশমিক ১ টাকা, রেভেনিউ শেয়ার ও মিনিমাম ট্যাক্স ৬ দশমিক ১ টাকা, পরোক্ষ কর ২০ দশমিক ৪ টাকা। সব মিলিয়ে ১০০ টাকা রিচার্জে কর দাঁড়ায় ৫৪ দশমিক ৬ টাকা। এর সঙ্গে সম্পূরক শুল্ক ৩ শতাংশ বাড়ানোর পর সবমিলিয়ে কর দিতে হবে ৫৬ দশমিক ৩ টাকা। একজন গ্রাহক ১০০ টাকা খরচ করে ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন ৪৪ টাকারও কম।”

শুল্ক-কর না বাড়িয়ে যা করা যেতো

আইএমএফের ঋণের শর্ত প্রতিপালনে রাজস্ব আদায় বাড়াতে সবচেয়ে সহজ পথ শুল্ক ও কর বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। অর্থবছরের মাঝপথে এমন সিদ্ধান্ত না নিয়ে সরকার আর কী করতে পারতো?

অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "যে পরিমান ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া হয়, সেটা উদ্ধার করা গেলে তো আয় এর দ্বিগুন হতো। মানুষের উপর বাড়তি চাপও পড়তো না। অথচ সেদিকে সরকারের কোন মনোযোগ নেই।”

সিপিডি সম্মানিত ফেলো ড. গোলাম মোয়াজ্জেম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "২০২১ সালের এক গবেষণায় আমরা দেখেছি, ওই বছর সরকার যত মানুষের কাছ থেকে যে পরিমান ট্যাক্স পেয়েছে, ঠিক সমপরিমান আরো ট্যাক্স সরকারের পাওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু তারা ট্যাক্স দেয়নি। তাদেরকে ট্যাক্সের আওতায় আনতে সরকারের পদক্ষেপগুলোও স্পষ্ট না। এদিকে গুরুত্ব দিতে হবে। যারা ট্যাক্স দিচ্ছে তাদের উপর চাপ না বাড়িয়ে, এর আওতা বাড়াতে হবে।”

অর্থ পাচার রোধ, কর ফাঁকি কমানো, অনিয়ম ও দুর্নীতির মতো বিষয়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিয়ে সরকারের পুরনো পথেই হাঁটার কারণ জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, "বাস্তবতা হচ্ছে, জুনের মধ্যেই অতিরিক্ত ১২ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের তো আর ফল স্বল্প মেয়াদে পাওয়া যাবে না, তাই এটা নেওয়া। তাছাড়া আয়কর বছরের মাঝে বাড়িয়েও আদায় বাড়ে না, যেহেতু পূর্বের অর্থবছরের আয়ের ওপর এটা দেওয়া হয়। সহজ হিসেবে শুল্ক-কর বাড়ানোর পথ বেছে নিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, টাইমিংটা সঠিক কিনা। এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে এটি না করে আইএমএফের সঙ্গে নেগোসিয়েশন করা যেতো।”

আইএমএফ চায় রাজস্ব আদায় বাড়ানোর মাধ্যমে বাজেট ঘাটতি কমানো হোক। কিন্তু বাজেট ঘাটতি তো ব্যয় কমিয়েও করা যায়। ব্যয় কমানোর বিষয়টি তারা মানেনি। এক্ষেত্রে এভাবে নেগোসিয়েশন করা যেত যে, কিছু আদায় বাড়াব আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে যে অপচয়মূলক প্রকল্প আছে সেটি বাদ দেবো। সিগারেট থেকে বাড়তি ৪ হাজার কোটি টাকা কর আদায়ের লক্ষ্য ধরা এবং এখন প্রয়োজন নেই এমন কিছু প্রকল্প বাদ দিলেই এ ধাক্কা সামলানো যেত বলে মনে করেন জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনায় সিগারেটে কর বসানো আর স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধে কর বসানোর সিদ্ধান্ত ‘সাংঘর্ষিক' হয়ে গেল।

যারা বলছেন, এর প্রভাব বাজারে পড়বে না, তারা ঠিক বলছেন না: ড. এম শামসুল আলম

This browser does not support the audio element.

সরকারের দায়িত্বশীলদের বক্তব্যের সমালোচনা

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, "সরকারের রাজস্ব প্রয়োজন। প্রচুর ভর্তুকিও লাগে। এই অর্থ কোথাও না কোথাও থেকে সংগ্রহ করতে হয়। তাই কিছু পণ্যের ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে, এতে তেমন কোন অসুবিধা হবে না।”

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, "বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশে ট্যাক্স আদায় সবচেয়ে কম। সরকার চায় ট্যাক্স, জিডিপি এমন জায়গায় থাক, যাতে বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটে। তাহলে সামনে দেশের মানুষেরও উন্নয়ন হবে। ম্যাক্রো ইকোনমি বাড়ানোর জন্য ট্যাক্স বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইএমএফের চাহিদার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। শতাধিক পণ্যে শুল্ক ও কর বাড়ানো হলেও দেশের মানুষের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমেরও উচিত বিষয়টি নিয়ে জনগণকে বোঝানো।”

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, "উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির ফলে জনজীবন এমনিতেই দুর্বিষহ, তদুপরি আইএমএফের পরামর্শে অন্তর্বর্তী সরকারের এই সিদ্ধান্ত গ্রামীণ স্বল্প উপার্জনকারী এবং নিম্ন-মধ্যম আয়ের মানুষের উপর যে বিরূপ প্রভাব পড়বে, তা দেশের অর্থনীতি ও জনজীবনে গভীর সংকট তৈরি করবে।”

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন বলেন, "জনগণের সরকার ক্ষমতায়, কিন্তু এমন একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কারও সঙ্গে কোনো আলোচনা নেই। আইএমএফের কথা বলে বাজেটের মাঝপথে এভাবে জনগণের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই।”

শতাধিক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বা এফআইসিসিআই। একই সঙ্গে ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা ও পুনর্মূল্যায়ন করার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে সংগঠনটি।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ