৩৭ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন শেখ হাসিনা৷ সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রী এবং ২৫ জন পূর্ণ মন্ত্রী ও ১১ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকছেন৷ বুধবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান৷
টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হিসেবে আবারও স্থান পেয়েছেন বর্তমান মন্ত্রিসভার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান৷ শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেনকে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়েছেন শেখ হাসিনা৷
প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় স্থান পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের আরো ১১ জন সংসদ সদস্য৷ তাদের মধ্যে রয়েছেন: সিমিন হোসেন রিমি, নসরুল হামিদ, জুনায়েদ আহমেদ পলক, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, মুহিবুর রহমান, জাহিদ ফারুক, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, রুমানা আলী, শফিকুর রহমান চৌধুরী, আহসানুল ইসলাম টিটু এবং খালিদ মাহমুদ চৌধুরী৷
এদের মধ্যে নসরুল হামিদ, জুনায়েদ আহমেদ পলক, জাহিদ ফারুক এবং খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বর্তমান মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বরত আছেন৷
বর্তমান মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের মধ্যে বাদ পড়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল, পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুল মান্নান, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশীসহ আরো কয়েকজন৷ এছাড়াও বর্তমান মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসা শাহরিয়ার আলমকেও রাখা হয়নি নতুন মন্ত্রিসভায়৷
আর বর্তমান মন্ত্রিসভায় থাকা সদস্যদের মধ্যে পদোন্নতি পেয়েছেন মহিবুল হাসান চৌধুরী, ফরহাদ হোসেন ও ফরিদুল হক খান৷ মহিবুল বর্তমান মন্ত্রিসভায় শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন আর জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ছিলেন ফরহাদ হোসেন৷ আর ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছনে ফরিদুল হক খান৷
তবে মন্ত্রিসভা ঘোষণা করা হলেও এখনও দপ্তর বণ্টন করা হয়নি৷ মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার শপথের পর নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের দপ্তন বণ্টন করা হবে৷
আজ জাতীয় সংসদ ভবনে শপথ নিয়েছেন নব নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা৷ ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয় পায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ৷ ২৯৮টি আসনের মধ্যে ২২২টি আসন পেয়েছে দলটি৷ দুটি আসনে পরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ তবে, এবারও মন্ত্রিসভায় ১৪ দলের কোনো শরিককে রাখা হয়নি৷
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুযায়ী মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে৷
টিএম/এসিবি
যাদের জয়-পরাজয়ে অনেক চমক
সাতবারের সংসদ সদস্যের পরাজয়, প্রতিমন্ত্রীকে বিরাট ব্যবধানে নতুন প্রার্থীর হারিয়ে দেয়া, নৌকা পেয়েও ১৪ দলের হেভিওয়েটদের জিততে না পারা- এমন বেশ কিছু চমক ছিল এবারের নির্বাচনের ফলাফলে৷ বিস্তারিত ছবিঘরে....
ছবি: Prodip Sagor
হারলেন ‘বঙ্গবীর’
টাঙ্গাইল-৮ আসন থেকে নির্বাচনে লড়াই করেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী৷ গামছা প্রতীক নিয়ে ৬৭ হাজার ৫০১ ভোট পেয়েছেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা৷ কিন্তু নৌকা প্রতীকে অনুপম শাহজাহান পেয়েছেন ৯৬ হাজার ৪০১ ভোট৷
ছবি: Shamim Mamun
আবার সংসদে ‘বহিষ্কৃত’ লতিফ
কাদের সিদ্দিকী না জিতলেও সংসদ সদস্য হয়েছেন তার বহুল আলোচিত ভাই, আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতা আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী৷ তিনি ট্রাক প্রতীকে ৭০ হাজার ৯৪০ ভোট পেয়েছেন৷ প্রায় ১৭ হাজার ভোটে হারিয়েছেন নৌকার মোজহারুল ইসলাম তালুকদারকে৷
ছবি: Shamim Mamun
বিমান প্রতিমন্ত্রীকে মাটিতে নামালেন ব্যারিস্টার সুমন
যুবলীগ থেকে হয়েছেন বহিষ্কৃত, আবেদন করেও পাননি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন৷ সেই ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন হারিয়ে দিয়েছেন সরকারের বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীকে৷ তা-ও প্রায় এক লাখ ভোটের ব্যবধানে৷ হবিগঞ্জ-৪ আসনে স্বতন্ত্র লড়ে প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার ভোট পেয়েছেন সুমন৷ অন্যদিকে নৌকার মো, মাহবুব আলী পেয়েছেন সাড়ে ৬৯ হাজার ভোট৷
ছবি: Prodip Sagor
নৌকা পেয়েও ডুবলেন ইনু
কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে ১৪ দলীয় জোটের হয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু৷ কিন্তু হেরে গেছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিনের কাছে৷ ট্রাক প্রতীক নিয়ে বিজয়ী প্রার্থী পেয়েছেন এক লাখ ১৫ হাজার ৭৯৯ ভোট, অন্যদিকে ইনু পেয়েছেন ৯২ হাজার ৪৪৫ ভোট৷
ছবি: DW
তীরে ভিড়তে পারেননি বাদশাও
১৪ দলের প্রার্থী হয়ে তিনবার রাজশাহী-২ আসনে সংসদ সদস্য হয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা ফজলে হোসেন বাদশা৷ ৩১ হাজার ৪৬০ ভোট পেয়ে তিনি হেরেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শফিকুর রহমানের কাছে৷ ৫৫ হাজার ভোট পেয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের এই সহ-সভাপতি৷
ছবি: Rubel Mahfuz
ব্যবসায়ী আজাদে ধরাশায়ী নৌকা
ফরিদপুর–৩ আসনে নৌকার প্রার্থীর সাথে নির্বাচনি প্রচার থেকে উত্তেজনা চলছিল স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের৷ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে এই ব্যবসায়ী নেতা লড়েছেন ঈগল প্রতীক নিয়ে৷ ৬৯ হাজার নয় ভোটের ব্যবধানে তিনি আওয়ামী লীগ নেতা শামীম হককে হারিয়েছেন৷ এক লাখ ৩৪ হাজার ৯৮ ভোট পড়েছে তার পকেটে৷
ছবি: T.K Himel
সহকারীর কাছে মঞ্জুর হার
১৯৮৬ সাল থেকে সাতবার জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে কখনো হারেননি জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু৷ অষ্টমবারের মতো সংসদ সদস্য হওয়ার পথে হোঁচট খেলেন নিজের সাবেক এপিএসের কাছে৷ স্বতন্ত্রপ্রার্থী মো: মহিউদ্দীন মহারাজ পেয়েছেন ৯৯ হাজার ২৬৮ ভোট৷ অন্যদিকে আনোয়ার হোসেন পেয়েছেন ৭০ হাজার ৬৮১৷
ছবি: bdnews24
ঈগলের কাছে হারলেন গোলাপ
এবারের নির্বাচনে অন্যতম আলোচিত আসন ছিল মাদারীপুর-৩৷ এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান ওরফে গোলাপকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম৷ ঈগল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ৯৬ হাজার ৬৩৩ ভোট৷ অন্যদিকে সোবহান পেয়েছেন ৬১ হাজার ৯৭১ ভোট৷ এই আসনে নির্বাচনি প্রচারে একজনের মৃত্যু হয়েছিল৷
ছবি: Pradyut Kumar
তৃণমূল বিএনপি মহাসচিবের জামানতও গেল
তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার শুধু হারেননি, জামানতও হারিয়েছেন৷ নারায়ণগঞ্জ-১ আসন থেকে লড়াই করে মাত্র তিন হাজার ১৯০ ভোট পেয়েছেন তিনি৷ অন্যদিকে এই আসনের জয়ী প্রার্থী আওয়ামী লীগের গোলাম দস্তগীর গাজী পেয়েছেন এক লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৩ ভোট৷ মোট প্রদত্ত ভোটের অন্তত সাড়ে ১২ শতাংশ ভোট না পেলে প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়৷ সেই হিসাবে জামানত বাঁচাতে তৈমুরের প্রয়োজন ছিল অন্তত ২৬ হাজার ৫৭৮ ভোট৷
ছবি: Youtube/Independent Television
জামানত হারালেন শমসের মবিনও
তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপার্সন শমসের মবিন চৌধুরীর পরিণতিও হয়েছে দলের মহাসচিবের মতো৷ সিলেট-৬ আসনে মাত্র ১০ হাজার ৯৩৬ ভোট পেয়েছেন তিনি ৷ ভোট পড়েছে এক লাখ ১৬ হাজার ৭০২টি। জামানত বাঁচাতে তার প্রয়োজন ছিল অন্তত ১৪ হাজার ৫৮৭ ভোট৷ এই আসনে বিজয়ী নৌকার নুরুল ইসলাম নাহিদ পেয়েছেন ৫৭ হাজার ৭৭৮ ভোট৷
ছবি: DW
এমপিকে হারালেন কল্যাণ পার্টির ইব্রাহিম
রাজনীতিতে, টেলিভিশনের টক শোতে বরাবরই সরব কণ্ঠ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম৷ কক্সবাজার-১ আসন থেকে হাতঘড়ি প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ৮১ হাজার ৯৫৫ ভোট৷ তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী, বর্তমান এমপি জাফর আলম পেয়েছেন ৫২ হাজার ৯৮৬ ভোট।
ছবি: DW
আলোচিত শাহজাহান ওমরের বড় জয়
নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতা শাহজাহান ওমরের জেল থেকে ছাড়া পাওয়া, আওয়ামী লীগের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে যোগ দেয়া চমক তৈরি করে রাজনৈতিক অঙ্গনে৷ নির্বাচনে ৯৫ হাজার ৪৭৮ ভোট পেয়েছেন আলোচিত এই নেতা৷ তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কের পার্টির আবু বকর সিদ্দিক পেয়েছেন মাত্র ১ হাজার ৬২৪ ভোট৷