দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষে নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেয়ার পর শুরু করেছেন অফিস৷ রোববার সকাল থেকে সচিবালয়ে মন্ত্রীদের কার্যালয়ে একে একে আসতে থাকেন নতুন মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা৷
রোববার গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সাথে মত বিনিময় সভায় বক্তব্য রাখছেন নবনিযুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ (ছবিতে মাঝে)৷ ছবি: PID
বিজ্ঞাপন
গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২৬ জন মন্ত্রী এবং ১১ জন প্রতিমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নিয়েছেন৷ এরপর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে অফিস শুরু করেন৷
নির্বাচনের পর প্রতিবেশী ভারত, চীন, রাশিয়ার পক্ষ থেকে অভিনন্দন বার্তা পেলেও পশ্চিমা অনেক দেশের বিবৃতিতে নির্বাচন নিয়ে খুব একটি সন্তুষ্টি প্রতিফলিত হয়নি৷
নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেব দায়িত্ব পাওয়া ড. হাছান মাহমুদ নিজ দপ্তরে রোববার সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘বিভিন্ন দেশের নানা পারসেপশন (ধারণা), ন্যারেটিভ (পটভূমি) থাকে৷ কিন্তু দিন শেষে সবাই একসঙ্গে কাজ করব, এটাই হচ্ছে মূল বিষয়৷ সবাই আমাদের উন্নয়ন সহযোগী৷ সবাইকে সঙ্গে নিয়েই আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব৷ তবে আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্বের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের কনসার্নগুলোকে (উদ্বেগ) মূল্য দেব৷’’
ভোটের আগে থেকে অ্যামেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থান এবং ভোট পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘসহ নানা সংগঠনের উদ্বেগ নিয়ে নতুন সরকার কোনো চাপ অনুভব করছেন না বলে জানিয়েছেন গত সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করা এই আওয়ামী লীগ নেতা৷
তিনি বলেন, ‘‘আমরা কোনো চাপ অনুভব করছি না৷ নির্বাচন নিয়ে বহু চাপ, গভীর চাপ, মধ্যম চাপ—নানা ধরনের চাপ ছিল৷ নানা চাপ উতরে নির্বাচন হয়ে গেছে৷ সুতরাং আমরা কারও কোনো চাপ কখনো অনুভব করি না৷’’
অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে কথা বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
জনগণ যাদের প্রত্যাখান করেছে, তাদের নিয়ে চিন্তা নেই এমন মন্তব্যই করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল৷ তিনি অবশ্য এই কথার মধ্য দিয়ে বিএনপিসহ সমমনা যে দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেয়নি তাদের দিকেই ইঙ্গিত করেছেন৷
রাজধানীর সচিবালয়ে রোববার নতুন করে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনে এক প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন৷
মন্ত্রী বলেন, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী অত্যন্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ৷ তারা এ সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবে৷
অর্থনীতিতে রাতারাতি সমাধান দেখছেন না অর্থমন্ত্রী
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের হয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করা সাবেক কূটনীতিক আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে এবার দেয়া হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব৷ করোনা মহামারি এবং রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনীতির চাপ পড়েছে বাংলাদেশে৷ তাই বিশ্লেষকেরা বলছেন অর্থমন্ত্রীর সামনে অপেক্ষা করছে কঠিন চ্যালেঞ্জ৷
দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম দিন অফিসে এসে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেছেন নতুন অর্থমন্ত্রী৷ আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ‘‘অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ আছে, সেটা মোকাবিলায় সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করব৷’’
উচ্চ মূল্যস্ফীতি, টাকার মান কমে যাওয়া, বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমতে থাকা মিলিয়ে নাজুক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি৷ টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসা শেখ হাসিনা সরকার কীভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দেবেন এ নিয়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা৷
রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ‘‘সমস্যা সমাধানে অবশ্যই কাজ করব৷ এ জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন হবে৷ কোনো সমস্যা রাতারাতি সমাধান হবে না৷ এ জন্য সময় দিতে হবে৷’’
অর্থনীতিকে বিপন্ন করার ষড়যন্ত্র চলছে: সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে টানাপড়েনের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন৷ সেই টানাপড়েন যে শেষ হয়ে যায়নি তা বুঝা যাচ্ছিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কথায়৷
মন্ত্রী হিসেবে কাজ শুরু করার প্রথম দিনে সাংবদিকদের বললেন, ‘‘অনেকে ভেবেছে এই নির্বাচন আমরা করতে পারব না৷ তাদের সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন হয়ে গেছে৷ আমাদের স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়িত করেছি৷ এখন আমাদের চ্যালেঞ্জ আসবে আমরা জানি৷’’
রোববার সকালে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি আরো বলেন, ‘‘বিদেশের চাপ আসবে৷ আমাদের অর্থনীতিকে বিপন্ন করার ষড়যন্ত্র আছে৷ এগুলো অতিক্রম করতে হবে, এগুলোকে ভয় পেলে চলবে না৷ সাহস রাখতে হবে৷’’
মজুতদারদের দমনের আশ্বাস বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর
দ্রব্যমুল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস সাধারণ মানুষের৷ আর তাই নতুন সরকার কীভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দেবে সেদিকে দৃষ্টি থাকবে সবার৷
অবশ্য বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম (টিটু) আশার বাণী শোনালেন৷ বললেন, সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং মজুতদারদের শক্ত হাতে দমন করা হবে৷
দুমাস পরেই শুরু হচ্ছে রমজান৷ আর তাই খুব দ্রুতই অবশ্য পরীক্ষায় নামতে হবে প্রতিমন্ত্রীকে৷ মজুতদারদের ঠেকিয়ে বাজার স্থিতিশীল রেখে সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবের এই প্রতিশ্রুতি রাখতে পারবেন কি না সেটিই এখন দেখার বিষয়৷
দুর্নীতি রোধে ছাড় না দেয়ার বার্তা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর
সারাদেশে স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়ানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি রোধে ‘জিরো টলারেন্স মেইনটেইন' করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন৷
আগুনে পোড়া রোগীদের দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা দিয়ে আসার এই চিকিৎসকের ওপর আস্থা রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ রোববার কাজ শুরুর প্রথম দিনেই মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সচিব, মহাপরিচালক, ঊর্ধতন কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সাথে মতবিনিময় করেন তিনি৷
এসময় মন্ত্রী আরো বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আমি নতুন কোন লোক নই৷ প্রধানমন্ত্রী আমাকে গুরুদায়িত্ব দিয়েছেন৷’’
শিগগিরই দেশের হাসপাতালগুলো পরিদর্শন করার কথা জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘‘টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে আমার সাধ্যের সবটুকু দিয়ে কাজ করব৷’’
আরআর/টিএম (ডেইলি স্টার, যুগান্তর, বাসস)
বাংলাদেশে ১২ সংসদ: সরকার, বিরোধী ও গণতন্ত্র
কখনো সংসদে নেই বিরোধী দল, কখনো নেই নির্বাচনেই। কখনো নামকাওয়াস্তে বিরোধী দল, কখনো একই দল বিরোধী এবং সরকারের ভূমিকায়। নির্বাচনে নানা ধরনের নাটকীয়তার তথ্য জানুন ছবিঘরে।
ছবি: AFP
১৯৭৩: প্রথম সংসদে ছিল না বিরোধী নেতা
৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৩ আসনে জয় পায় আওয়ীমী লীগ। জাসদ একটি, জাতীয় লীগ একটি এবং স্বতন্ত্ররা পান পাঁচটি আসন। ভোট পড়েছিল ৫৪.৯। উল্লেখযোগ্য আসন না থাকায় ছিলেন না কোনো বিরোধী দলীয় নেতা। সেই সময় সাতজন সংসদ সদস্য বিরোধী দল গঠনের দাবি করলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তা প্রত্যাখ্যান করেন। আড়াই বছর পর সংসদ ভেঙে দিয়ে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার প্রবর্তন করা হয়, গঠন করা হয় একক দল বাকশাল।
৫১.৩% ভোটার উপস্থিতিতে নির্বাচনের মাত্র ছয় মাস আগে গঠিত বিএনপি ২০৭ আসন জিতে সরকার গঠন করে। ৫৪ আসন জিতে আওয়ামী লীগ প্রধান বিরোধী দলের অবস্থান নেয়, দলের সভাপতি আসাদুজ্জামান খান হন বিরোধী নেতা। মুসলিম লীগ ২০টি, জাসদ ৮টি এবং অন্যান্য দল পায় ১০টি আসন। ১৯৮১ সালে সেনা কর্মকর্তাদের হাতে জিয়াউর রহমান নিহত হন। ১৯৮২ সালের মার্চের পর দ্বিতীয় সংসদ ভেঙে দেয়া হয়, ক্ষমতা দখল করেন সেনাপ্রধান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ।
ছবি: imago/Belga
১৯৮৬: বিএনপির বর্জন, বিরোধী আওয়ামী লীগ
নিজের দল জাতীয় পার্টি গঠন করে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দেন এরশাদ। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ১৫৩টি, আওয়ামী লীগ ৭৬টি আর জামায়াতে ইসলামী ১০টি আসন পায়৷ বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করেছিল৷ নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৬১.১%। আন্দোলনের মুখে ৭ ডিসেম্বর ১৯৮৭ সালে এই সংসদ বাতিল করেন এরশাদ।
ছবি: imago/Xinhua
১৯৮৮: প্রধান বিরোধীদের বর্জন, সম্মিলিত বিরোধী দল
আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ প্রায় সবকয়টি প্রধান বিরোধী দল এরশাদের অধীনে নির্বাচন বয়কট করে। জাতীয় পার্টি পায় ২৫১টি আসন। বেশ কয়েকটি নতুন তৈরি হওয়া দলের হয়ে নির্বাচিত হয়ে আসা সংসদ সদস্যদের নিয়ে তৈরি হয় ১৯ সদস্যের সম্মিলিত বিরোধী দল। কম্বাইন্ড অপজিশন পার্টি-কপ নামের ওই বিরোধী দলের নেতা করা হয় আ স ম আবদুর রবকে। নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৫২.৫%।
ছবি: bdnews24.com
১৯৯১: নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন
ব্যাপক আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন এরশাদ। সংবিধানে তখনও ছিল না নিরপেক্ষ সরকারের বিধান। কিন্তু সব দলের সম্মতিতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে হয় নির্বাচন। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি জয় লাভ করে ১৪২ আসনে, আওয়ামী লীগ ৮৮টি আসন পেয়ে সংসদে বিরোধী দলের মর্যাদা পায়, বিরোধীদলীয় নেতা হন শেখ হাসিনা। নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৫৫.৪%। এছাড়া, জাতীয় পার্টি ৩৫ এবং জামায়াতে ইসলামী পেয়েছিল ১৮টি আসন।
ছবি: Getty Images/AFP/FARJANA K. GODHULY
১৯৯৬: আবার বর্জন, বিরোধী নেতা বঙ্গবন্ধুর খুনি
এই নির্বাচন বেশি পরিচিত ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নামেই। অধিকাংশ বিরোধী দল নির্বাচনটি বর্জন করে, ভোটদানের হার ছিল মাত্র ২১%। বিএনপি জিতেছিল ২৭৮ আসনে। ফ্রিডম পার্টির হয়ে একটি আসন জিতেছিলেন বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল (অব.) খন্দকার আবদুর রশিদ৷ স্বতন্ত্ররা জয়ী হয়েছিলেন ১০ আসনে। বাকি ১১টির মধ্যে ১০টি আসনের ফলাফল ‘অসমাপ্ত' থাকে ও আদালতের রায়ে একটি আসনের নির্বাচন স্থগিত করা হয়।
ছবি: Getty Images
১৯৯৬: তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তন
আগের সংসদ টিকেছিল মাত্র ১১ দিন। ব্যাপক আন্দোলনের মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করে ১২ জুন দেয়া হয় সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ১৪৬ আসনে জেতে আওয়ামী লীগ, ১১৬ আসন পায় বিএনপি। ৩২ আসন পাওয়া জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ, বিরোধী দলের নেতা হন খালেদা জিয়া।
ছবি: Anupam Nath/AP/picture alliance
২০০১: জোটের নির্বাচনে বিএনপি
এটি ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দ্বিতীয় নির্বাচন। ১৯৯৯ সালেই জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোটকে সঙ্গে নিয়ে চার দলীয় জোট গঠন করে বিএনপি। এরশাদ জোট ত্যাগ করলেও নাজিউর রহমান মঞ্জু জাতীয় পার্টির একটি অংশ থেকে যায় জোটে। বিএনপি একাই ১৯৩ আসনে জয় পায়, ইসলামী ঐক্যজোট ২টি এবং জামায়াত পায় ১৭ আসন। আওয়ামী লীগ পায় ৬২ আসন। বিএনপির সঙ্গে সরকারে যোগ দিয়েছিল জামায়াত।
সংবিধান সংশোধন করে বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা বাড়ায় বিএনপি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে আওয়ামী লীগ। রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে সেনাবাহিনী, গঠিত হয় সেনাসমর্থিত সরকার। গ্রেপ্তার করা হয় শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়াকে, অভিযোগ ওঠে এই দুই নেতাকে রাজনীতি থেকে বাদ দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। মহাজোট গঠন করে আওয়ামী লীগ পায় ২৩০, জাতীয় পার্টি পায় ২৭ আসন। চার দলীয় জোটে বিএনপি পায় ৩০ আসন।
ছবি: picture-alliance/dpa
২০১৪: বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা
বিএনপিসহ অধিকাংশ বিরোধী দল দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে। কোনো প্রতিপক্ষ না থাকায় ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। ফলে নির্বাচনের আগেই সরকার গঠন নিশ্চিত ছিল আওয়ামী লীগের। রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি পায় ৩৪ আসন। এই সংসদে জাতীয় পার্টি একই সঙ্গে ছিল বিরোধী দল এবং সরকারে। রওশন এরশাদ হন সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা, মন্ত্রিসভায় ছিলেন তার দলেরই তিন জন।
ছবি: picture-alliance/AP Photo
২০১৮: বিএনপির অংশগ্রহণ, ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ
বিএনপি, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে একটি রাজনৈতিক ঐক্য গঠন করা হয়। এরশাদ বারবার মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গেই নির্বাচন করেন। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জোটসঙ্গীরা ২৮৮টি আসন পায়। আর বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্ট পায় মাত্র সাতটি। ২০১৯ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিরোধী নেতা ছিলেন এরশাদ, এরপর তার স্ত্রী রওশন এরশাদ।
২০২৪: ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্বতন্ত্র
বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনের ইতিহাসে এত স্বতন্ত্র প্রার্থী কখনো নির্বাচিত হননি। আওয়ামী লীগ জিতেছে ২২২ আসন, স্বতন্ত্ররা ৬২ আসন এবং জাতীয় পার্টি জিতেছে ১১ আসনে। বিএনপিসহ কয়েকটি দলের বর্জন করা নির্বাচনে স্বতন্ত্র হিসাবে লড়াই করে জয়ী হওয়াদের বেশিরভাগই বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতা। দুটি আসনে নির্বাচন স্থগিত হয়েছে। এবারও জাতীয় পার্টিই বিরোধী দল হবে, নাকি স্বতন্ত্ররাই জোট করবেন তা এখনো জানা যায়নি।