আগের তুলনায় উহানে করোনা-মৃত্যুর সংখ্যা অনেকটাই বেশি, জানালো চীন। পুরোনো পরিসংখ্যান যে সম্পূর্ণ সঠিক নয়, এমন দাবি ইতিমধ্যেই উঠতে শুরু করেছিল বিভিন্ন মহলে।
বিজ্ঞাপন
গতকাল পর্যন্ত চীনের উহান শহরে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা ছিল দুই হাজার ৫৭৯ জন। কিন্ত আজ, ১৭ এপ্রিল, চীন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই সংখ্যা তিন হাজার ৮৬৯। মোট আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৩৩৩জন, যা আগের সংখ্যার চেয়ে ৩২৫ জনের নতুন হিসাব দেখাচ্ছে।
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে এই উহান শহর থেকেই ছড়ায় নভেল করোনা ভাইরাস। কয়েক মাস ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক দেশের ধারণা ছিল যে চীন আসল সংখ্যা গোপন করছে। বদলে, চীন কর্তৃপক্ষ বারবার জানায় যে তাদের সরকার তথ্য গোপন করেনি।
কেন হঠাৎ সংখ্যা-বদল?
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান সাংবাদিকদের জানান যে নতুন করে করোনা সংক্রান্ত পরিসংখ্যান যাচাই করার পর কিছু খামতি ধরা পড়ে। এই রীতি বিশ্বের সব জায়গাতেই করা হয় বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে, হুবেই প্রদেশের কর্তৃপক্ষ অন্যান্য কারণও দেখিয়েছে। তারা বলে যে বেশ কিছু হাসপাতাল দেরি করে নতুন সংখ্যা সম্বন্ধে তাদের অবগত করেছে। পাশাপাশি, হাসপাতালের বাইরে রোগীর বাসায় ঘটা মৃত্যুর হিসাবও তাদের কাছে এসে পৌঁছতে দেরি হয়েছে।
সিসিটিভি কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হুবেই প্রদেশের এক কর্মকর্তা জানান, "প্রাথমিক স্তরে হাসপাতালের সাথে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সমণ্বয়ের অভাবের কারণে সঠিক তথ্য এসে পৌঁছতে অনেক বেশি সময় লেগেছে। এতে করে সঠিকভাবে রোগীদের হিসাব রাখাতেও ব্যাঘাত ঘটেছে।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রো'র মতো রাষ্ট্র নেতৃত্ব এর আগে চীনের প্রকাশিত সংখ্যার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। চীনা সরকারের কাছে দাবি করেছেন আরো স্পষ্ট তথ্য।
করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে সফল চীন
চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস এখন বৈশ্বিক মহামারীতে পরিণত হয়েছে৷ শুরুতে চরম অব্যবস্থাপনা থাকলেও পরে নানা কাড়াকড়ি আরোপ করে চীন করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua/S. Bohan
স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে না
তিনমাস আগে করোনা ভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার পর বৃহস্পতিবার প্রথম স্থানীয়ভাবে নতুন করে কেউ করোনায় সংক্রমিত হয়নি বলে জানায় চীন৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua News Agency/L. Xiao
পর্যটকরা ফিরছেন করোনা নিয়ে
তবে চীনে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা একেবারে শূণ্যে নেমে যায়নি৷ দেশটিতে নতুন করে ৩৪ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যাদের সবাই বিদেশ থেকে ফিরেছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Celis
শুরুতে অবহেলা
চীনও শুরুতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি৷ বরং যে চিকিৎসক প্রথম নতুন এই ভাইরাস নিয়ে সতর্ক করেছিলেন তাকে পুলিশি জেরা মুখে পড়তে হয়েছিল, ওই চিকিৎসকও পরে মারা যান৷ শুরুতে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে অব্যবস্থাপনা ছিল চোখে পড়ার মত৷ যে কারণে উহান থেকে অন্যান্য এলাকায়ও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP/K. SAto
চীনে মৃত্যু
চীনে করোনা ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ৩২৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ যাদের বেশির ভাগই হুবেই প্রদেশ বিশেষ করে উহানের বাসিন্দা ছিলেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/Str
বোধোদয়
গত বছর ৩১ ডিসেম্বর হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়৷ তখনই গুরুত্ব দিলে হয়তো এই ভাইরাস বৈশ্বিক মহামারীর রূপ নিত না৷ তবে অবস্থার গুরুত্ব বুঝতে পেরে জানুয়ারির শেষ দিকে পুরো প্রদেশ লকডাউন করে দেয়৷ যার ফলে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া দ্রুত কমতে শুরু করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Wong
বিপদ এখনো কাটেনি
চীনের বিপদ এখনো কাটেনি৷ লকডাউন শেষ হওয়ার পর জীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে৷ আটকে পড়া পর্যটকরাও ফিরতে শুরু করেছেন৷ তাদের কেউ কেউ শরীরে করোনা নিয়ে ফিরছেন৷ হংকং ইউনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞ বেন কাউলিং বলেন, ‘‘কড়াকড়ির কারণে চীন সংক্রমণের প্রথম ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছে৷ কিন্তু এই কড়াকড়ি দীর্ঘমেয়াদে থাকবে না৷ সেক্ষেত্র দ্বিতীয় ধাক্কা আসলে কি হবে সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে৷’’