নদীবক্ষ থেকে অবৈধভাবে বালি খনন বন্ধ করার দাবিতে হরিদ্বারে অনশনে বসেন সাধকপুরুষ ও সমাজসেবী স্বামী আত্মবোধানন্দ৷ ১৯৪ দিন অনশনে থাকার পর সরকারের পক্ষ থেকে দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দেয়ায় অনশন ভঙ্গ করেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
গঙ্গা এবং ভারতের অন্যান্য বড় বড় নদীগর্ভ থেকে মাফিয়াদের অবৈধভাবে বালি খনন ও উত্তোলনের দৌরাত্মে নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ ব্যাহত হয়ে আসছে৷ ধীরে ধীরে নদীর গোটা ইকো-সিস্টেম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে৷ এটা বন্ধ করতে না পারলে পরিবেশের সমূহ বিপদ৷ এই দাবির প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য প্রতিবাদ অনশনে বসেন হরিদ্বার মাতৃসদনের সাধকপুরুষ, তথা প্রকৃতিপ্রেমী ২৭ বছর বয়সি আত্মবোধানন্দ স্বামী৷ পাশাপাশি তাঁর আরো দাবি, গঙ্গানদীর জলের গভীরতা বাড়াতে যেসব নদী গঙ্গায় এসে মিশেছে, সেইসব নদীতে বাঁধ দেওয়া বা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণকার্য নিয়ন্ত্রনের জরুরি ব্যবস্থা বলবৎ করা৷ উপায়ন্তর না দেখে জাতীয় স্বচ্ছ গঙ্গা মিশনের মহাঅধিকর্তা রাজীব রঞ্জন মিশ্র আত্মবোধানন্দ স্বামীকে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দিলে তিনি তাঁর ১৯৪ দিনের অনশন ভঙ্গ করেন৷ এর আগে, প্রাক্তন অধ্যাপক এবং সাধকপুরুষ ৮৬ বছর বয়সি জি.ডি আগরওয়াল একই দাবিতে অনশন শুরু করেন৷ অনশনের ১১২ দিনের মাথায় তিনি মারা যান৷
নদীতে সর্বস্বান্ত
বাংলাদেশে প্রতিবছরই নদী ভাঙনে বিলীন হয় হাজার হাজার হেক্টর জমি৷ নদীতে ঘর-বাড়ি, ভিটে-মাটি হারিয়ে গৃহহীন হয় বহু পরিবার৷ সব হারানো এসব মানুষের অনেকেরই ঠাঁই হয় শহরের বস্তিতে, স্বচ্ছল গৃহস্থ থেকে চলে যান তাঁরা মানবেতর জীবনে৷
ছবি: Bdnews24.com
বছরে গৃহহীন লাখো পরিবার
রাষ্ট্রীয় সংস্থা সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিস (সিইজিআইএস)-এর তথ্য মতে, প্রতি বছর ভাঙনে নদীতে চলে যায় প্রায় চার হাজার হেক্টর জমি৷ আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় লাখখানেক পরিবার৷ সব কিছু হারিয়ে নানা ধরনের দুর্দশার মুখোমুখি হয় তাঁরা৷
ছবি: bdnews24.com
সর্বনাশা তিন নদী
বাংলাদেশ জুড়ে থাকা কয়েকশ’ নদী-উপনদীতে ভাঙন হলেও সবচেয়ে বেশি ভাঙন-প্রবণ যমুনা, পদ্মা ও মেঘনা৷ স্বাধীনতার পর থেকে নদী ভাঙনে এ দেশের পৌনে দুই লাখ হেক্টরের মতো জমি বিলীন হয়েছে বলে বিভিন্ন সমীক্ষায় উঠে এসেছে৷
ছবি: bdnews24.com
যমুনাই নিয়েছে বেশি
প্রতিবছর বর্ষামৌসুমেই সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় যমুনা নদীর ভাঙনে লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে৷ সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসের তথ্য মতে, এই এক নদীর ভাঙনেই ৯০ হাজার হেক্টরের মতো জমি হারিয়ে গেছে৷
ছবি: Bdnews24.com
পদ্মা নিয়েছে ৬০ হাজার হেক্টর
মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬৭ সাল থেকে প্রমত্ত পদ্মায় বাংলাদেশের ৬০ হাজার হেক্টর (২৫৬ বর্গমাইল)-এর বেশি জমি বিলীন হয়েছে৷
ছবি: bdnews24.com
মেঘনায়ও গেছে গ্রামের পর গ্রাম
পদ্মা-যমুনার মতোই ভয়ঙ্কর আগ্রাসী হয়ে ওঠে মেঘনা৷ এ নদীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বরিশাল, চাঁদপুর এলাকার বাসিন্দারা৷ সিইজিআইএসের হিসাবে, ১৯৭৩ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মেঘনার ভাঙনে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ২৫ হাজার ৮২০ হেক্টর এলাকা৷
ছবি: Bdnews24.com
ভাঙছে নড়িয়া
বর্তমানে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে নিচ্ছে পদ্মা৷ গত দুই মাসে এই উপজেলার অন্তত দুই বর্গকিলোমিটার এলাকা চলে গেছে নদীগর্ভে৷
ছবি: bdnews24.com
স্কুল-কলেজ হাসপাতালও গেছে
নদী ভাঙনে মানুষের ভিটে-মাটির সঙ্গে এলাকার স্কুল-কলেজ, হাপাতালসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও হারিয়ে গেছে৷ নড়িয়ার আড়াই লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবার একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছিল ২০১৪ সালে৷ সাম্প্রতিক সময়ে সেই হাসপাতালও গিলতে শুরু করেছে পদ্মা৷ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনের বেশিরভাগ অংশ ইতোমধ্যে চলে গেছে নদীতে৷
ছবি: Bdnews24.com
শিবিরে আশ্রয়
নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রাথমিক সহায়তায় এগিয়ে আসে সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা৷ পরে এক সময় এসব মানুষকে নিজের পথ বেছে নিতে হয়৷ নড়িয়ায় সব হারানো পরিবারগুলোকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে ৩৯টি সাইক্লোন সেন্টারে৷ খাদ্য সহায়তা হিসেবে চাল ও শুকনা খাবার পাচ্ছেন তাঁরা৷
ছবি: Bdnews24.com
‘সবচেয়ে বড়’ দুর্যোগ
নিয়মিত নদী ভাঙনে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় একে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন অনেকে৷
ছবি: Bdnews24.com
ব্লক, বালুর বস্তায় রক্ষার চেষ্টা
বাংলাদেশের ভাঙন-প্রবণ অধিকাংশ নদীর পাড়ই বাঁধাই করা নয়৷ বর্ষা মৌসুমে পানি বাড়লে ভাঙন শুরু হলে তা ঠেকাতে তৎপর হন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা৷ ব্লক, বালুর বস্তা ফেলে শহর এলাকা রক্ষার চেষ্টা করেন তাঁরা৷
ছবি: bdnews24.com
ক্ষয়ক্ষতি কমানোর উপায়
বাংলাদেশে নদী ভাঙন প্রতিরোধের কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় এর পূর্বাভাস এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া গেলে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা যাবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: Bdnews24.com
11 ছবি1 | 11
নমামী গঙ্গে মিশন গঙ্গা ও অন্যসব বড় বড় নদীর পাশের শিল্প-কারখানার দূষিত ও বর্জ্য পদার্থ এবং পয়ঃপ্রণালীর নোংরা জল যাতে গঙ্গায় পডতে না পারে, সেদিকটা দেখে থাকে৷ সেখানেও গলদ৷ সরকারের বিরুদ্ধে পরিবেশ কর্মীদের ক্ষোভ, সরকার সেটাও ঠিকমতো করছে না৷ উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ৷ যার পরিণামে গঙ্গার স্বাভাবিক গতিস্রোত ব্যাহত হচ্ছে৷ বিপন্ন হচ্ছে নদীর ইকো-সিস্টেম৷ ভারতের হিমালয় রাজ্য উত্তরাখন্ডে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণে অনুমতি দেওয়ায় নদীর স্বাভাবিক জলপ্রবাহ রুদ্ধ হচ্ছে৷ ফলে নদীজলের স্বচ্ছতা প্রকল্পের উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে৷ এসব বিষয় নিয়ে গত এপ্রিল মাসে সরকারের সঙ্গে আলোচনা হয় এবং নদীবক্ষে বালি খনন নিষিদ্ধ আইন আরো কঠোরভাবে কার্যকর করার আশ্বাস দেওয়া হয়৷
‘‘উত্তরাখন্ড সরকারের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প আইন পর্যালোচনা করার কথাও বলা হয়৷ তবে বর্তমানে সাধারণ নির্বাচনের ভোটপর্ব চলেছে, নির্বাচনি বিধি বলবৎ আছে৷ কাজেই এই মূহুর্তে কিছু করা যাবে না৷ কিন্ত নির্বাচনের পরেও যদি কিছু করা না হয়, তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপের কথা ভেবে দেখতে হবে,'' বলেন স্বামী আত্মবোধানন্দ স্বামী৷ পরিবেশ কর্মীদের দাবি, উত্তরাখন্ডের অলকানন্দা, ধৌলি গঙ্গা, মন্দাকিনি এবং পিন্ডারা নদীর উপর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ বন্ধ করতে হবে এবং গঙ্গার জলপ্রবাহ অবাধ রাখতে আইন প্রণয়ন করতে হবে৷
এই বিষয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বললেন নদী, তথা পরিবেশ বিশেষজ্ঞ সুভাষ সাঁতরা৷ তাঁর কথায়, ‘‘বালি তোলার ফলে নদীর যে গভীরতা তা কমে যাচ্ছে এবং জায়গা বিশেষে নদীর স্রোতে অদলবদল হচ্ছে৷ জলের একটা অভিন্ন মাত্রা, যাকে বলে ইউনিফর্ম লেভেল, তা বজায় থাকছে না৷ তারজন্য মাছ বা বিভিন্ন জলজ প্রজাতির প্রাণীদের জীবন বিপন্ন হচ্ছে৷ এছাড়া অন্য বিপদও আছে৷ যেমন, নেভিগেশন. বালি খননের সবথেকে বড় বিপদ স্রোতের ভাটির দিকের জলজ উদ্ভিদ, যেটা মাছদের আহার৷ তার উত্পাদনশীলতা কমে যাচ্ছে৷ যেসব পচা জিনিষ সেডিমেন্টেশনে যায়, সেটা মিক্সিং হয়ে যায়৷ তাতে জলজ প্রাণীর আয়ু কমে যায়৷ জলজ প্রাণীদের দেহে বিষক্রিয়া হতে পারে৷ বালি খুঁডলে সেটা সাসপেন্সশনে চলে যায়৷ সেডিমেন্টেশনে আবার ফিরে আসতে বেশ কয়েক কিলোমিটার পথ লেগে যায়৷ নদীর ভাটির দিকে প্রোডাক্টিভিটির প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়৷''
পরিবেশবিজ্ঞানী সুভাষ সাঁতরা ডয়চে ভেলেকে আরো বললেন, ‘‘দ্বিতীয়ত, নদীতে বাঁধ দেবার ফলে এমন অনেক প্রজাতির মাছ আছে, কেউ চলে যায় উজানের দিকে, কেউ চলে যায় ভাটির দিকে৷ সেটা মাছেদের প্রজননের পক্ষে প্রতিকূল৷ বালি খনন বা নদীতে বাঁধ দেবার ফলে মাছেদের মতো অন্য জলজ প্রজাতির প্রজননেও সমস্যা দেখা দেয়৷ ডিম নষ্ট হয়ে যায়৷ মাছের উত্পাদন যথেষ্ট কমে যায়৷ এছাড়া গঙ্গায় যেসব ডলফিন বা শুশুক আছে, ঘড়িয়াল আছে, তাদের প্রজননও কমে যাচ্ছে৷ উজানে ফারাক্কার কাছে হয়ত কিছু শুশুক বা ঘড়িয়াল পাবেন, সংখ্যায় খুবই কম৷ মাঝখানটায় না থাকার মতো৷ আবার বিহারের ভাগলপুরের কাছে একটা জায়গা আছে, সেখানেও কিছু কিছু ডলফিন এবং ঘড়িয়াল চোখে পড়বে৷ মোট কথা, নদীর পুরো ইকোলজিটা ভেঙে পড়ছে ধীরে ধীরে৷ তা সে বালি তোলা বলুন, ড্রেজিং বলুন বা বাঁধ তৈরি বলুন৷ ভারতের সব নদীরই মোটামুটি একই দূরবস্থা৷ কোথাও নদীর জল যাচ্ছে শিল্প কারখানায়, কোথাও যাচ্ছে সেচের কাজে৷ আর এসব করতে গিয়ে অনেক নদীতে জল এতটাই কমে গেছে যে, জলজ প্রাণীদের বেঁচে থাকাই এখন দায়৷''
পানির নয়, যেন প্লাস্টিকের নদী
বিশ্বের সাগরগুলিতে যে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক গিয়ে পড়ে, তার অধিকাংশই আসে এশিয়ার আটটি ও আফ্রিকার দু’টি নদী থেকে৷ এসব নদীর অপরাপর পরিবেশগত সমস্যাও কম নয়৷
ছবি: Imago/Xinhua/Guo Chen
১) ইয়াংৎসে নদী
ইয়াংৎসে হলো এশিয়ার দীর্ঘতম ও বিশ্বের তৃতীয় দীর্ঘতম নদী৷ সাগরে প্লাস্টিক বয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও দৃশ্যত ইয়াংৎসে সবার ওপরে – অন্তত সাম্প্রতিক একটি জরিপ তাই বলছে৷ ইয়াংৎসে শাংহাইয়ের কাছে পূর্ব চীন সাগরে গিয়ে পড়ে৷ চীনের অর্থনীতি ও পরিবেশের জন্য এই নদীটির গুরুত্ব অসীম৷ ইয়াংৎসের উপকূলে ৪৮ কোটি মানুষের বাস, যা কিনা চীনের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ৷
ছবি: Imago/VCG
২) সিন্ধু নদ
জার্মানির হেল্মহলৎস পরিবেশ গবেষণা কেন্দ্রের সমীক্ষা অনুযায়ী, সাগরে যে প্লাস্টিক গিয়ে পড়ে, তার ৯০ শতাংশ আসে বিশ্বের ১০টি নদী থেকে৷ সিন্ধু নদ বা ইন্ডাস রিভার তাদের মধ্যে দ্বিতীয়৷ এশিয়ার বৃহত্তম নদীগুলির অন্যতম এই নদ ভারত ও পাকিস্তান হয়ে আরব সাগরে গিয়ে পড়েছে৷ কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা এই নদীর সঙ্গে জড়িত, কিন্তু অবকাঠামো ও পয়ঃনিষ্কাশনের অভাবে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক নদীতে গিয়ে পড়ে৷
ছবি: Asif Hassan/AFP/Getty Images
৩) হোয়াংহো নদী
মাছ-মাংসের ভিতর দিয়ে প্লাস্টিক মানুষের খাদ্যেও পৌঁছাতে পারে৷ চৈনিক সভ্যতার জন্মই নাকি হোয়াংহো নদীর তীরে৷ সেই নদীর কিন্তু প্লাস্টিক ছাড়া আরো অনেক সমস্যা আছে৷ দূষণের ফলে এই নদীর পানি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পানের অযোগ্য হয়ে উঠেছে৷ নদীতে বিভিন্ন মাছের প্রজাতির প্রায় ৩০ শতাংশ ইতিমধ্যেই লোপ পেয়েছে বলে গবেষকদের ধারণা৷
ছবি: Teh Eng Koon/AFP/Getty Images
৪) হাই নদী
এই নদীটি চীনের দু’টি সর্বাপেক্ষা জনবহুল শহুরে এলাকা তিয়ানজিন ও বেইজিংয়ের মধ্যে যোগসূত্র হিসেবে কাজ করে, তারপর বোহাই সাগরে গিয়ে পড়ে, যা কিনা বিশ্বের সবচেয়ে ঘন জাহাজ চলাচল এলাকাগুলির অন্যতম৷ তালিকার ১০টি নদীর সব ক’টির ক্ষেত্রেই কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়: তীরে ঘনবসতি, সেই সঙ্গে বর্জ্য অপসারণের অবকাঠামো ও রিসাইক্লিং চেতনার অভাব৷
ছবি: Imago/Zumapress/Feng Jun
৫) নীল নদ
নীল নদ ১১টি দেশের মধ্যে দিয়ে বয়ে শেষমেষ মিশরে ভূমধ্যসাগরে গিয়ে পড়ে৷ নদীর অববাহিকায় প্রায় ৩৬ কোটি মানুষের বাস৷ নীল নদের পানি সেচের কাজেও ব্যবহার করা হয়, কেননা, কৃষিকাজ এই এলাকার মূল উপজীব্য৷ সেচ ও গ্রীষ্মের খর তাপমাত্রার কারণে নদীর পানি মাঝে মধ্যে সাগর অবধি পৌঁছায় না৷ তবুও প্লাস্টিক বহন করার ক্ষেত্রে নীল নদ পঞ্চম স্থানে৷
ছবি: Imago/Zumapress
৬) গঙ্গা নদী
ভারতের ৫০ কোটি মানুষের কাছে গঙ্গা নদী ধর্মজীবন ও দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ৷ পয়ঃ বর্জ্য, কৃষি ও শিল্প-কারখানার বর্জ্যের ফলে গঙ্গা নদী বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নদীগুলির মধ্যে একটি হয়ে উঠেছে৷ সেই সঙ্গে টন টন প্লাস্টিক এই নদীতে গিয়ে পড়েছে৷ কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে পানি থেকে প্লাস্টিক সরিয়ে সমস্যার সমাধান করা যাবে না, প্লাস্টিকের ব্যবহার ও প্লাস্টিক বর্জ্যের উৎপাদন কমাতে হবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Kanojia
৭) পার্ল রিভার
চীনের পার্ল রিভার বা মুক্তা নদী দূষণের জন্য সুবিদিত৷ এই নদী হংকং আর ম্যাকাওয়ের মধ্যে দক্ষিণ চীন সাগরে গিয়ে পড়ে৷ এলাকাটির অবিশ্বাস্য নগরায়ণের ফলে বিপুল পরিমাণ পয়ঃনিষ্কাশন ও শিল্প বর্জ্য পার্ল নদীর ব-দ্বীপে গিয়ে পড়ে৷ প্রধানত কৃষি এলাকাটি সত্তরের দশক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম নাগরিক এলাকাগুলির মধ্যে একটিতে পরিণত হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Goh Chai Hin
৮) আমুর নদ/হাইলং নদী
নগর ও শিল্পাঞ্চলে পৌঁছানোর পরেই নদীতে প্লাস্টিক বাড়ে৷ কিন্তু বর্তমানে প্রত্যন্ত ও প্রকৃতি প্রধান অঞ্চলেও নদীতে প্লাস্টিক দেখা দিতে শুরু করেছে৷ আমুর নদের উৎস উত্তর-পূর্ব চীনের পর্বতাঞ্চলে৷ পরে এই নদ চীনের হাইলংজিয়াং প্রদেশ ও রাশিয়ার সাইবেরিয়ার মধ্যে সীমান্ত নদী হিসেবে কাজ করার পর ওখোটস্ক সাগরে গিয়ে পড়ে৷
ছবি: picture-alliance/Zumapress/Chu Fuchao
৯) নাইজার নদী
পশ্চিম আফ্রিকার মুখ্য নদী নাইজার যে শুধু ১০ কোটি মানুষের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য, তাই নয়, এই নদীর দু’কূলে প্রকৃতি তার আদিম প্রাচুর্য আজও বজায় রেখেছে৷ নাইজার নদী পাঁচটি দেশের ভিতর দিয়ে বয়ে শেষে নাইজেরিয়ায় অতলান্তিক মহাসাগরে গিয়ে পড়ে৷ প্লাস্টিক দূষণ ছাড়াও বিভিন্ন বাঁধ প্রকল্পের ফলে নদীর জল কমেছে৷ সেই সঙ্গে রয়েছে নাইজারের ব-দ্বীপে খনিজ তেল শিল্প, যা থেকে একাধিক বার তেল বেরিয়ে নদী দূষিত করেছে৷
ছবি: Getty Images
১০) মেকং নদী
মেকং নদীতেও একাধিক বাঁধ প্রকল্পের ফলে পরিবেশগত ও সামাজিক সমস্যা দেখা দিয়েছে৷ মেকং নদীর বদ্বীপে প্রায় দু’কোটি মানুষের বাস৷ তাঁদের অনেকেই পেশায় ধীবর বা কৃষিজীবী৷ নদীটি ভিয়েতনাম ও লাওসসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছয়টি দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়৷ প্রতিবছর বিশ্বের নদীগুলো থেকে মোট ৮০ লাখ টন প্লাস্টিক সাগরে গিয়ে পড়ে, যার অধিকাংশই আসে মেকং ও তালিকার অন্যান্য নদীগুলি থেকে৷
ছবি: Imago/Xinhua
10 ছবি1 | 10
আসলে ভারতে ইমারতি ব্যবসা চড়চড়িয়ে বাড়ছে৷ তার সঙ্গে তাল রেখে বাড়ছে বালির চাহিদা৷ সরকার ২০২২ সালের মধ্যে কম দামের আরো প্রায় দুই কোটি বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা করেছে৷ এমনিতে বছরে চাহিদা-জোগানের অনুপাতে প্রায় ৫০ হাজার টন বালি তোলা হয় নদীবক্ষ থেকে৷ ফলে বাড়ছে বালি মাফিয়াদের দৌরাত্ম৷ কোনো আইন-কানুন নিষেধাজ্ঞা এদের থামাতে পারছে না৷ এমনকি সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞারও তোয়াক্কা করে না এরা৷ এই শক্তিশালী মাফিয়া চক্র ভয় দেখিয়ে হোক, ঘুস দিয়ে হোক, চাকরির লোভ দেখিয়ে হোক, তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বিনা বাধায়৷ সংসদে পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে প্রায় চার লাখ ১৬ হাজার অবৈধ বালি খননের ঘটনা জানা গেছে৷ সবথেকে বেশি দিল্লির যমুনা নদীতে, পাঞ্জাবের শতদ্রু নদীতে, মধ্যপ্রদেশের চম্বল এবং ওড়িষার সুবর্ণনদীতে৷