ফারাক্কায় গঙ্গার জল মাপার পর দুইদিন ধরে বৈঠক করেন ভারত ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা। কিন্তু সেই বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত হলো তা পরিষ্কার করে বলছেন না কেউ৷
কলকাতায় দুই দেশের মধ্যে নদীর জলবন্টন নিয়ে বৈঠক ফলপ্রসূ হলো না। ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিজ্ঞাপন
প্রথমদিকে সব ঠিকঠাক এগোলেও শেষপর্যন্ত আলোচনায় জটিলতা দেখা দেয়। দুই দেশের প্রতিনিধিরা একসঙ্গে ফারাক্কায় গঙ্গার জল মাপেন। প্রথম দিন গঙ্গার জলবন্টন নিয়ে আলোচনা হয়। দুই দেশের প্রতিনিধিদলের নেতা বৈঠকের মিনিটসে সই করেন। কিন্তু দ্বিতীয় দিনের বৈঠক ছিল সীমান্তের নদীগুলি নিয়ে। সেই বৈঠকের পর মিনিটসে সই হয়নি।
বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতা মোহাম্মদ আবুল হোসেন ডিডাব্লিউকে বলেছেন, "পরিকল্পনা মতো আমাদের বৈঠক হয়েছে। এর থেকে বেশি কিছু এই মুহুর্তে বলা সম্ভব নয়।"
কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে কেউ মুখ খোলেননি। বৈঠক শেষ হওয়ার পর সাংবাদিক সম্মেলন হয়নি। কেউ কোনো কথা বলেননি।
দ্বিতীয় বৈঠকের সমস্যা
শুক্রবারের বৈঠকে আলোচ্য ছিল ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে তথ্য বিনিময়, বন্যা রিপোর্ট, সীমান্ত নদীগুলিকে কেন্দ্র করে দুই দেশের পরিকল্পনার বিষয়টি। একাধিক বিষয়ের আলোচনায় কোনো সিদ্ধান্তে না আসতে পারার কারণে বৈঠকের পর এখনো কোনো মিনিটসে সই করা হয়নি বলে সূত্র জানাচ্ছে।
গত বছর বন্যায় একাধিক সীমান্ত নদিতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বেশি কিছু জায়গায় বাঁধ ভেঙে পড়েছে। সীমান্ত নদী হওয়ার কারণে এই বাঁধ মেরামতির জন্য দুই দেশের সম্মতি প্রয়োজন। সূত্র জানাচ্ছে, ৭ মার্চের মিটিংয়ে বাংলাদেশ এই নদীগুলির বাঁধ মেরামতের কাজ করতে চেয়েছিল। কিন্তু ভারত এখনো তাদের সম্মতি দেয়নি। তারা বিষয়টি আগে খতিয়ে দেখতে চায়।
ফারাক্কা গিয়ে যা দেখলেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল
গঙ্গার জলবন্টন চুক্তি নিয়ে বৃহস্পতিবার আলোচনায় বসবেন দুই দেশের প্রতিনিধিরা। তার আগে ফারাক্কা ঘুরে গেলেন তারা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
গঙ্গার জল মাপতে
গঙ্গার জলবন্টন চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২৬ সালে। এই চুক্তির নবীকরণ করা নিয়েই বৃহস্পতিবার বৈঠক করবেন দুই দেশের প্রতিনিধিরা। তার আগে গঙ্গার জল মাপতে এবং পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিনিধিরা ফরাক্কা গেলেন। চড়ে বসলেন নৌকায়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
জল মাপার গুরুত্ব
ফারাক্কার গঙ্গায় কত জল আছে, সেটা মেপে দেখাটা খুবই জরুরি। কারণ, চুক্তি অনুসারে গঙ্গায় যদি ৭৫ হাজার কিউসেকের বেশি জল থাকে তাহলে ভারত ৪০ হাজার এবং বাংলাদেশ ৩৫ হাজার কিউসেক জল পাবে। ৭০ থেকে ৭৫ হাজার কিউসেক জল থাকলে বাংলাদেশ ৩৫ হাজার কিউসেক জল পাবে, বাকিটা ভারত। জল তার থেকে কম থাকলে দুই দেশ সমানভাবে ভাগাভাগি করে নেবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
জল মাপার কাজ শুরু
নৌকা কিছুদূর যাওয়ার পর জল মাপার কাজ শুরু হলো। এই এক জায়গায় নয়, একাধিক জায়গায় জল মেপে দেখা হলো। গঙ্গায় জল কত আছে, তা দেখা হলো। বেশ খানিকক্ষণ জল মাপার কাজ করে আবার ঘাটে ভিড়লো তাদের নৌকা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কী বললেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতা
বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতা মোহাম্মদ আবুল হোসেন বলেন, ''এটা আমাদের রুটিন কাজ। বছরে একবার পরীক্ষা করতে আসি। দেখলাম চুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রতিদিন জল মাপা হয়। আমাদের টিম আছে। তারা মাপছেন। আমরা শুধু পরীক্ষা করলাম যে চুক্তি অনুযায়ী পানি ভাগাভাগি হচ্ছে কি না। দেখলাম সেটা হচ্ছে। এই বছর জলের গতি কম, আমরা দুই পক্ষই কম জল পাচ্ছি।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
ভারতীয় প্রতিনিধি যা জানালেন
কেন্দ্রীয় জল কমিশনের সাব ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার সম্রাট দত্ত বলেছেন, ''চুক্তি অনুযায়ী এখানে ফিডার ক্যানালে এবং গঙ্গাতে ঠিকঠাক জল ছাড়া হচ্ছে কি না সেটা পর্যবেক্ষণ করতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা এখানে এসেছিলেন। প্রতিবছরই মার্চ মাস নাগাদ একবার আসেন। দুই দেশের দলই করে এটা। আজ এই দলটি জল পরিমাপ করে দেখলেন যে চুক্তি অনুযায়ী জল ছাড়া হচ্ছে কি না।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
ফিডার ক্যানালের গুরুত্ব
এই ফিডার ক্যানাল দিয়েই গঙ্গার জল কলকাতার দিকে যায়। ফারাক্কা ব্যারাজ তৈরির উদ্দেশ্যই ছিলো কলকাতা বন্দরকে বাঁচানো। জলের নাব্যতা বজায় না থাকলে কলকাতায় জাহাজ আসবে না। সেই নাব্যতা বজায় রাখার জন্য গঙ্গার জল যাতে নির্দিষ্ট পরিমাণে আসে তা নিশ্চিত করা দরকার হয়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
গঙ্গায় জল কম
গঙ্গায় জলের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম বলে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতা জানিয়েছেন। আসলে বর্যার কয়েকমাস বাদ দিলে বাকি সময় গঙ্গার জলের পরিমাণ এখন কম থাকে। সরেজমিনে গিয়ে সেটাই দেখতে পেয়েছেন প্রতিনিধিরা। প্রতিদিন গঙ্গার জল মাপা হয়। সেই অনুসারে জলবন্টন করা হয়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সৌহার্দ্যের পরিবেশে
দুই দেশের প্রতিনিধিদলের কলকাতা থেকে আসা, গঙ্গায় জল মাপা এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার মধ্যে সৌহার্দ্যের ছবি ধরা পড়েছে। দুই দেশের প্রতিনিধিদের কথার মধ্যেও তা ফুটে উঠেছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ফিরে যাওয়া
বুধবার নিউ ফারাক্কা স্টেশন থেকে কলকাতায় ফেরার জন্য শতাব্দী এক্সপ্রেস ধরলেন বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিনিধিরা। সোমবার সন্ধ্যায় তারা কলকাতা থেকে এখানেই নেমেছিলেন। একদিনের জন্য এসে ফারাক্কার পরিস্থিতি দেখে এবার গঙ্গার জলবন্টন নিয়ে বৈঠকে বসবেন তারা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
9 ছবি1 | 9
তথ্য বিনিময়ের বিষয়টি আলোচনা হয়েছে এবং ভারত তাতে রাজি থাকলেও তা মিনিটসের খাতায় তোলা নিয়ে সমস্যা দেখা যায়। ফলে, শেষ পর্যন্ত মিনিটস-এ সই হয়নি।
ফারাক্কা সফর
গঙ্গা জলবন্টন চুক্তি মেনে জল ভাগাভাগি হচ্ছে কিনা তা দেখতে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসেন সেই দেশের প্রতিনিধিরা। এবছর ৪ মার্চ ফারাক্কায় গিয়ে জল মাপার পর তারা জানিয়েছিলেন ভাগাভাগি নিয়ে তারা সন্তুষ্ট। যদিও তারা এও জানান, এবছর জল কম থাকার জন্য দুই দেশই জল কম পাচ্ছে।
এরপর, ৬ মার্চ ভারত বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে গঙ্গা জলবন্টন, গঙ্গায় কম জল এবং নদীর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। মিটিং শেষে আলোচনার সারাংশে সই করেন ভারত ও বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব শরদ চন্দ্র এবং মোহাম্মদ আবুল হোসেন।
সূত্র জানিয়েছে, সাময়িক জটিলতা কেটে গেলে পরে দ্বিতীয় বৈঠকের মিনিটস-এ সই হতে পারে।