নদীর তীরের দূষণ মোকাবিলা করতে কিশোরদের উদ্যোগ
২৬ মে ২০২১প্রথমে মনোরম মনে হলেও জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলে রুয়র এলাকার একটি জায়গা খুঁটিয়ে দেখলে মোটেই তেমন সুন্দর লাগবে না৷ কেভিন, নোয়েল ও তাদের ক্লাসের বন্ধুরা সেখানে ‘ফিশিং' করতে এসেছে৷ তবে মাছ ধরা নয়, তারা আসলে জঞ্জাল সংগ্রহ করছে৷ চারিদিকে অনেক আবর্জনা ছড়িয়ে রয়েছে৷ বিশেষ করে অনেক প্লাস্টিক ও কিছু কাচের বোতলও রয়েছে৷
স্থানীয় হাই স্কুলের পড়ুয়া হিসেবে তারা ‘প্লাস্টিক পাইরেটস' নামের এক উদ্যোগে অংশ নিচ্ছে৷ এই গবেষণা প্রকল্পের আওতায় কিশোর শিক্ষার্থীরা আসল বিজ্ঞানীর কাজ করে৷ তারা পানির নমুনা সংগ্রহ করে এবং নদী ও নদীর পাড়ের জঞ্জালের টুকরোগুলির মাপ নেয়, গোনে ও সে সবের রেকর্ড রাখে৷ কিল শহরের বিজ্ঞানীরা সেই তথ্য কাজে লাগিয়ে জার্মানির নদীগুলির জঞ্জালের মানচিত্র তৈরি করেন৷ সমুদ্রে কত পরিমাণ জঞ্জাল গিয়ে পড়ে, সেই হিসেবও করেন৷
ভবিষ্যতের বিজ্ঞানীদের প্রেরণা দিতে পেরে শিক্ষকরাও খুশি হন৷ শিক্ষিকা রামোনা পেট্রি বলেন, ‘‘বিষয়টি আমাকেও নাড়া দেয়৷ মানুষ আবর্জনা ফেলে চলে গেলে আমি বিরক্ত হই৷ বিশেষ করে অল্পবয়সি শিশু সঙ্গে থাকলে তাদের সামনে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তুলে ধরা উচিত৷''
‘প্লাস্টিক পাইরেটস'-দের কাজ দেখিয়ে দিচ্ছে যে, জার্মানিতে নদীর তীরে প্রতি দুই বর্গ মিটার এলাকায় গড়ে জঞ্জালের একটি টুকরো পাওয়া যায়৷
ফ্রান্সেও এমন জঞ্জাল চিহ্নিত করার লক্ষ্যে একটি প্রকল্প রয়েছে, যার নাম ‘প্লাস্টিক অরিজিন্স'৷ সেখানে আরও এক ধাপ এগিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও একটি অ্যাপও কাজে লাগানো হচ্ছে৷ এমন উদ্যোগের সার্থকতা ব্যখ্যা করে সার্ফরাইডার ফাউন্ডেশন ইউরোপের অঁতোয়ান ব্রুজ বলেন, ‘‘নদীর ধারে যাবার জন্য আমরা যত বেশি সম্ভব স্বেচ্ছাসেবী ও নাগরিকদের উদ্বুদ্ধ করতে চাই৷ কায়াক নৌকা চালিয়ে অথবা নদীর পাড় বরাবর হেঁটে তারা তথ্য সংগ্রহ করুক, সেটাই চাই৷ সেই তথ্য এবং তাদের তোলা নদীর তীরের ভিডিও দেখে বিশ্লেষণ করে আমরা জঞ্জালের টুকরোগুলি শনাক্ত করতে পারি এবং তার ভিত্তিতে নদীতে প্লাস্টিক দূষণের মানচিত্র তৈরি করতে পারি৷''
প্লাস্টিক বর্জ্য সংক্রান্ত আরও কড়া আইন এবং ইউরোপের নদীগুলিতে প্লাস্টিকের পরিমাণের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়াই ‘প্লাস্টিক অরিজিন্স' প্রকল্পের লক্ষ্য৷ তাদের ‘গার্বেজ ম্যাপ'-এর সাহায্যে বিশেষ দূষণযুক্ত জায়গাগুলি শনাক্ত করা সম্ভব৷ অঁতোয়ান ব্রুজ মনে করেন, ‘‘এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর মাধ্যমে আমরা অগ্রাধিকার স্থির করতে পারি৷ দূষণ সব জায়গা থেকে আসে কিন্তু আমরা জানি যে সমুদ্রে দূষণের সিংহভাগের উৎসই নদীবাহিত জঞ্জাল৷ তবে কোন নদীগুলি সবচেয়ে দূষিত আমরা এখনো তা জানি না৷''
সেই অ্যাপ অবশ্য মাইক্রোপ্লাস্টিক শনাক্ত করতে পারে না৷ শুধু জার্মানিতেই প্রতি বছর মাথাপিছু চার কিলো মাইক্রোপ্লাস্টিক পরিবেশে যুক্ত হয়৷ যানবাহনের টায়ার, শিল্পক্ষেত্রের বর্জ্য ও গৃহস্থালীর জঞ্জালই তার মূল উৎস৷ পরিশোধনের প্লান্টে বর্জ্য পানি থেকে এত ক্ষুদ্র পদার্থ ছেঁকে নেওয়া অত্যন্ত কঠিন৷
প্লাস্টিক দূষণের মোকাবিলা করতে আরো উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে তরুণ ‘প্লাস্টিক পাইরেট'-রা মনে করে৷ মনোরম এই জায়গায় মাত্র দুই ঘণ্টা কাটিয়ে তারা এত জঞ্জাল সংগ্রহ করেছে যে সেগুলি বয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়৷
টিম শাউয়েনব্যার্গ/এসবি