সামান্য হলেও যেখানে-সেখানে জঞ্জাল ফেলার অভ্যাস বৃহত্তর দূষণের জন্য দায়ী৷ শিশুরাও এসব দেখে ভুল শিক্ষা পায়৷ জার্মানি ও ফ্রান্সে অভিনব উদ্যোগের মাধ্যমে নদীর বর্জ্য চিহ্বিত ও দূর করার চেষ্টা চলছে৷
ছবি: Andreas Vitting/imageBROKER/picture alliance
বিজ্ঞাপন
প্রথমে মনোরম মনে হলেও জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলে রুয়র এলাকার একটি জায়গা খুঁটিয়ে দেখলে মোটেই তেমন সুন্দর লাগবে না৷ কেভিন, নোয়েল ও তাদের ক্লাসের বন্ধুরা সেখানে ‘ফিশিং' করতে এসেছে৷ তবে মাছ ধরা নয়, তারা আসলে জঞ্জাল সংগ্রহ করছে৷ চারিদিকে অনেক আবর্জনা ছড়িয়ে রয়েছে৷ বিশেষ করে অনেক প্লাস্টিক ও কিছু কাচের বোতলও রয়েছে৷
স্থানীয় হাই স্কুলের পড়ুয়া হিসেবে তারা ‘প্লাস্টিক পাইরেটস' নামের এক উদ্যোগে অংশ নিচ্ছে৷ এই গবেষণা প্রকল্পের আওতায় কিশোর শিক্ষার্থীরা আসল বিজ্ঞানীর কাজ করে৷ তারা পানির নমুনা সংগ্রহ করে এবং নদী ও নদীর পাড়ের জঞ্জালের টুকরোগুলির মাপ নেয়, গোনে ও সে সবের রেকর্ড রাখে৷ কিল শহরের বিজ্ঞানীরা সেই তথ্য কাজে লাগিয়ে জার্মানির নদীগুলির জঞ্জালের মানচিত্র তৈরি করেন৷ সমুদ্রে কত পরিমাণ জঞ্জাল গিয়ে পড়ে, সেই হিসেবও করেন৷
ভবিষ্যতের বিজ্ঞানীদের প্রেরণা দিতে পেরে শিক্ষকরাও খুশি হন৷ শিক্ষিকা রামোনা পেট্রি বলেন, ‘‘বিষয়টি আমাকেও নাড়া দেয়৷ মানুষ আবর্জনা ফেলে চলে গেলে আমি বিরক্ত হই৷ বিশেষ করে অল্পবয়সি শিশু সঙ্গে থাকলে তাদের সামনে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তুলে ধরা উচিত৷''
দূষণ মোকাবিলায় কিশোরদের উদ্যোগ
04:20
This browser does not support the video element.
‘প্লাস্টিক পাইরেটস'-দের কাজ দেখিয়ে দিচ্ছে যে, জার্মানিতে নদীর তীরে প্রতি দুই বর্গ মিটার এলাকায় গড়ে জঞ্জালের একটি টুকরো পাওয়া যায়৷
ফ্রান্সেও এমন জঞ্জাল চিহ্নিত করার লক্ষ্যে একটি প্রকল্প রয়েছে, যার নাম ‘প্লাস্টিক অরিজিন্স'৷ সেখানে আরও এক ধাপ এগিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও একটি অ্যাপও কাজে লাগানো হচ্ছে৷ এমন উদ্যোগের সার্থকতা ব্যখ্যা করে সার্ফরাইডার ফাউন্ডেশন ইউরোপের অঁতোয়ান ব্রুজ বলেন, ‘‘নদীর ধারে যাবার জন্য আমরা যত বেশি সম্ভব স্বেচ্ছাসেবী ও নাগরিকদের উদ্বুদ্ধ করতে চাই৷ কায়াক নৌকা চালিয়ে অথবা নদীর পাড় বরাবর হেঁটে তারা তথ্য সংগ্রহ করুক, সেটাই চাই৷ সেই তথ্য এবং তাদের তোলা নদীর তীরের ভিডিও দেখে বিশ্লেষণ করে আমরা জঞ্জালের টুকরোগুলি শনাক্ত করতে পারি এবং তার ভিত্তিতে নদীতে প্লাস্টিক দূষণের মানচিত্র তৈরি করতে পারি৷''
বুড়িগঙ্গায় দূষণ: শত্রু কারা কারা?
২২শে মার্চ ছিল বিশ্ব পানি দিবস৷ সবার কাছে সুপেয় পানি পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই দিনটি উদযাপিত হয়৷ অথচ বিশ্বে জনসংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি কমছে পানির সরবরাহ৷ তার সঙ্গে যোগ হয়েছে পরিবেশ দূষণ৷ ঠিক যেমনটা ঘটছে বুড়িগঙ্গা নদীতে...
ছবি: DW/M. Mamun
ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা নদী
একসময় মহানগরীর প্রাণ হিসেবে গণ্য হতো বুড়িগঙ্গা নদী৷ কিন্তু এই শহরের শিল্প আর মানব বর্জ্য সরাসরি এ নদীতে নির্গমনের ফলে নদীটি পানি ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে৷ এই ছবিটি শহরের বাবুবাজার সেতু থেকে তোলা৷
ছবি: DW/M. Mamun
নোংরা গন্ধযুক্ত পানি
ব্যবহারের অনুপোযোগী হলেও মানুষের হাত-পা বাঁধা৷ তাই বুড়িগঙ্গা নদীর নোংরা, গন্ধযুক্ত পানির ওপর দিয়েই খেয়াপার হচ্ছেন কর্মজীবী মানুষ৷
ছবি: DW/M. Mamun
গরিব মানুষের বাস
ঢাকার এই এলাকায় বাড়ি ভাড়া কম হওয়ায় নদীর ওপারের কেরানীগঞ্জ এলাকায় নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস বেশি৷ ছবিটি সদরঘাট এলাকা থেকে তোলা৷
ছবি: DW/M. Mamun
পানিতে মাত্রাতিরিক্ত দূষণ
বুড়িগঙ্গা আজ যেন সত্যিই বুড়ি হয়ে গেছে৷ নদীতে মাত্রাতিরিক্ত দূষণের ফলে বুড়িগঙ্গার পানির রং এখন কুচকুচে কালো, আর দুর্গন্ধযুক্ত৷
ছবি: DW/M. Mamun
দূষণের কারণে বেড়েছে ঘনত্ব
বুড়িগঙ্গার দূষিত পানির উপর দিয়ে জাহাজ চলার পরের দৃশ্য এটি৷ কি ভয়াবহ! আসলে দূষণের কারণে পানির ঘনত্ব বেড়ে গেছে বুড়িগঙ্গার৷
ছবি: DW/M. Mamun
নদীতে লঞ্চ চলাচল
দূষণের এই ভয়াবহ মাত্রার পরও বুড়িগঙ্গার ওপর দিয়ে চলছে লঞ্চ৷ জিনিস-পত্র পারাপার তো বটেই, নদী পথে যে এখনও পার হচ্ছে মানুষ৷ ছবিটি কামরাঙ্গীরচর থেকে তোলা৷
ছবি: DW/M. Mamun
রাসায়নিকের বস্তা পরিষ্কার
বুড়িগঙ্গার পানিতে রাসায়নিকের বস্তা পরিষ্কার করছেন শ্রমিকরা৷ তাঁদের কি আর কোনো উপায় নেই? তাঁরা কি আদৌ জানেন এর পরিবেশগত প্রভাব? সরকারই বা নিরব কেন?
ছবি: DW/M. Mamun
ধোপাদেরও প্রয়োজন নদী
বুড়িগঙ্গার দূষিত জলেই কাপড় ধোয়ায় ব্যস্ত ধোপারা৷ এ সব কাপড়ের বেশিরভাগই ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ব্যবহৃত বিছানার চাদর, ডাক্তারদের অ্যাপ্রন, অপারেশন থিয়েটার বা ওটি-তে পড়ার ড্রেস ইত্যাদি৷
ছবি: DW/M. Mamun
ধোয়া কাপড়
বুড়িগঙ্গা নদীর দূষিত জলে ধোয়া কাপড় এবার মেলে দেওয়া হয়েছে৷ নদীর পাড়েই শুকানো হচ্ছে এগুলি৷ ছবিটি কামরাঙ্গীরচর থেকে তোলা৷
ছবি: DW/M. Mamun
বর্জ্য মিশছে সরাসরি
ঢাকা শহরের সুয়ারেজের লাইন থেকে সরাসরি বর্জ্য মিশছে বুড়িগঙ্গা নদীর জলে৷ এমন দশা চলতে থাকলে অচিরেই যে অন্ধকার নেমে আসবে – তা বলাই বাহুল্য৷ শহরের বাবুবাজার সেতুর নীচ থেকে তোলা এ ছবিটি৷
ছবি: DW/M. Mamun
দূষণের অন্যতম কারণ ট্যানারি
বুড়িগঙ্গার পানি দূষণের অন্যতম কারণ ট্যানারি শিল্পর বর্জ্য৷ ঢাকার হাজারীবাগে বেশ কিছু ট্যানারি শিল্প থাকলেও কারুরই নেই বর্জ্য শোধনাগার৷ তাই এ সব ট্যানারির রাসায়নিক মিশ্রিত বর্জ্য সরাসরি গিয়ে মিলে বুড়িগঙ্গায়৷ গত এক যুগ ধরে ঢাকার বাইরে ট্যানারি শিল্পের জন্য আলাদা জায়গা দেওয়া হলেও, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ট্যানারি মালিরা কারখানাগুলো স্থানান্তর করছেন না৷
ছবি: DW/M. Mamun
শুধু দূষণই নয়...
শুধু দূষণেই থেমে নেই বুড়িগঙ্গা৷ আছে দখলও৷ দূষণ আর দখলে থেমে যেতে বসেছে বুড়িগঙ্গার গতিপথ৷ কামরাঙ্গীরচরে বুড়িগঙ্গা যেন এখন মরা খাল!
ছবি: DW/M. Mamun
আর এক শত্রু প্লাস্টিক
শিল্প আর মানব বর্জ্য ছাড়াও বুড়িগঙ্গা দূষণের আরেক অংশীদার প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্য৷ প্রতিদিন প্রচুর প্লাস্টিক জাতীয় বর্জ্য মিশছে বুড়িঙ্গার জলে৷ এ ছবিটি বাদামতলী থেকে তোলা৷
ছবি: DW/M. Mamun
13 ছবি1 | 13
প্লাস্টিক বর্জ্য সংক্রান্ত আরও কড়া আইন এবং ইউরোপের নদীগুলিতে প্লাস্টিকের পরিমাণের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়াই ‘প্লাস্টিক অরিজিন্স' প্রকল্পের লক্ষ্য৷ তাদের ‘গার্বেজ ম্যাপ'-এর সাহায্যে বিশেষ দূষণযুক্ত জায়গাগুলি শনাক্ত করা সম্ভব৷ অঁতোয়ান ব্রুজ মনে করেন, ‘‘এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর মাধ্যমে আমরা অগ্রাধিকার স্থির করতে পারি৷ দূষণ সব জায়গা থেকে আসে কিন্তু আমরা জানি যে সমুদ্রে দূষণের সিংহভাগের উৎসই নদীবাহিত জঞ্জাল৷ তবে কোন নদীগুলি সবচেয়ে দূষিত আমরা এখনো তা জানি না৷''
সেই অ্যাপ অবশ্য মাইক্রোপ্লাস্টিক শনাক্ত করতে পারে না৷ শুধু জার্মানিতেই প্রতি বছর মাথাপিছু চার কিলো মাইক্রোপ্লাস্টিক পরিবেশে যুক্ত হয়৷ যানবাহনের টায়ার, শিল্পক্ষেত্রের বর্জ্য ও গৃহস্থালীর জঞ্জালই তার মূল উৎস৷ পরিশোধনের প্লান্টে বর্জ্য পানি থেকে এত ক্ষুদ্র পদার্থ ছেঁকে নেওয়া অত্যন্ত কঠিন৷
প্লাস্টিক দূষণের মোকাবিলা করতে আরো উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে তরুণ ‘প্লাস্টিক পাইরেট'-রা মনে করে৷ মনোরম এই জায়গায় মাত্র দুই ঘণ্টা কাটিয়ে তারা এত জঞ্জাল সংগ্রহ করেছে যে সেগুলি বয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়৷