জেলার নামে নয়, স্থানের নামে নয়, ‘পদ্মা' ও ‘মেঘনা' নদীর নামেই হতে যাচ্ছে দেশের নতুন দুটি বিভাগ৷ নামের প্রস্তাব প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) আগামী সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে৷
বিজ্ঞাপন
নিকারের সায় পেলে দেশে বিভাগের সংখ্যা বেড়ে হবে ১০টি৷ বর্তমানে দেশে যত বিভাগ রয়েছে, তার সবই জেলার নামে৷ সেগুলো হল- ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহ৷ কুমিল্লা অঞ্চল নিয়ে নতুন বিভাগ মেঘনা এবং ফরিদপুর অঞ্চল নিয়ে নতুন বিভাগ পদ্মা হবে৷
আগামী রোববার নিকার'র সভা রয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (সমন্বয় অনুবিভাগ) মো. রাহাত আনোয়ার, ওই সভায়ই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পক্ষ থেকে পদ্মা ও মেঘনা প্রশাসনিক বিভাগ সৃজনের প্রস্তাব উঠছে৷
কুমিল্লা ও ফরিদপুর অঞ্চল নিয়ে নতুন দুটি বিভাগ করার বিষয়টি কয়েক বছর ধরেই আলোচনায় রয়েছে ৷ কিন্তু নতুন বিভাগের নাম কী হবে, তা নিয়ে পাল্টাপাল্টি দাবি রয়েছে কুমিল্লা ও নোয়াখালী জেলার রাজনৈতিক নেতাদের৷
সবশেষ গত বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুমিল্লা ও ফরিদপুরের প্রস্তাবিত বিভাগকে যথাক্রমে ‘মেঘনা' ও ‘পদ্মা' হিসেবে নামকরণের আগ্রহ প্রকাশ করেন৷
একনেক পরবর্তী সভায় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেছিলেন, "বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে নতুন বিভাগ করতে চাই৷ এবং এই দুই বিভাগের দুই বড় নদীর নামে করতে চাই৷ একটি হবে মেঘনা, আরেকটি হবে পদ্মা৷”
এর আগে গত ২১ অক্টোবর কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের অফিস ভবনের উদ্বোধনী আয়োজনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, "স্বাধীনতা যুদ্ধের ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা' স্লোগানের আদলে নদীর নামে হবে এ বিভাগ দুটির নাম৷ ফরিদপুর বিভাগের নাম হবে ‘পদ্মা' আর ‘মেঘনা' হবে কুমিল্লা বিভাগের নাম৷
নতুন বিভাগ, জেলা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, থানা গঠন বা স্থাপনের প্রস্তাব বিবেচনা করে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি-নিকার৷ এছাড়া বিভাগ, জেলা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা এবং থানার সীমানা পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত প্রস্তাব বিবেচনা করাও হবে এর কাজ৷
নতুন সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আহ্বায়ক করে ২০১৯ সালে ২৯ জানুয়ারিতে ২৫ সদস্যের নিকার গঠিত হয়৷ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেয়৷
আরও প্রস্তাব
নিকার'র আলোচ্যসূচিতে দুটি বিভাগ ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আরও চার প্রস্তাব রয়েছে৷ জন নিরাপত্তা বিভাগের পক্ষ থেকে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানাকে ঝাউদিয়া এলাকায় স্থানান্তর করে ‘ঝাউদিয়া থানা' নামকরণ এবং কাউদিয়া পুলিশ ক্যাম্পকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করে ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ক্যাম্প' হিসেবে নামকরণের প্রস্তাব উপস্থাপনের কথা রয়েছে৷
স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ থেকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় পৌরসভা গঠন; বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কাজলা ও বোয়াইল ইউনিয়নের ‘বিরোধপূর্ণ' অংশ বিয়োজন করে জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে সংযোজন করে মাদারগঞ্জ উপজেলার সীমানা পুনর্গঠন এবং ময়মনসিংহের নান্দাইল পৌরসভার সীমানা সম্প্রসারণের প্রস্তাব নিকারের আলোচ্যসূচির প্রাথমিক তালিকায় রয়েছে৷
এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণে শীর্ষ দশে বাংলাদেশের নদী
সমুদ্রে নদীবাহিত প্লাস্টিক দূষণে নবম স্থানে বাংলাদেশ৷ সম্প্রতি গবেষণায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে৷ গেল এপ্রিল মাসে সায়েন্স অ্যাডভান্সে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, সমুদ্রে নদীবাহিত প্লাস্টিক দূষণে শীর্ষ দশ দেশের নয়টিই এশিয়ার৷
ছবি: AFP via Getty Images
নদী থেকে সমুদ্রে
নেদারল্যান্ডস, জার্মানি ও নিউজিল্যান্ডের সাত গবেষকের করা এই গবেষণা বলছে, সমুদ্রের প্রায় ৮০ ভাগ নদীবাহিত প্লাস্টিক বর্জ্য আসে পৃথিবীর এক হাজারেরও বেশি নদী থেকে৷ এর একটি বড় অংশ আসে এশিয়ার নদীগুলো থেকে৷
ছবি: Imago/Nature Picture Library
ছোট নদীর দায়
২০১৭ সালে নেচার জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা বলেছিল, পৃথিবীর ২০টি বড় নদী, যার অধিকাংশই এশিয়াতে সমুদ্রের ৬৭ ভাগ প্লাস্টিক দূষণের জন্য দায়ী৷ তবে সায়েন্স অ্যাডভান্স জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা বলছে, বড় নদী নয়, বরং ঘনবসতিপূর্ণ নগর এলাকা দিয়ে যেসব ছোট নদী গেছে, সেগুলোই মূলত এই প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে যায় বড় নদীতে এবং পরে তা সমুদ্রে পড়ে৷
ছবি: Gaston Brito Miserocchi/Getty Images
বছরে সর্বোচ্চ ২৭ লাখ টন
গবেষকদের হিসেবে, নদীগুলো বছরে কমপক্ষে ৮ লাখ টন থেকে সর্বোচ্চ ২৭ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে নিয়ে যায়৷ নেচারের গবেষণায় বলা হয়েছিল, এই প্রাক্কলন সাড়ে এগার লাখ থেকে ২৪ লাখ টনের কিছু বেশি৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
গবেষণায় দেড় হাজারের বেশি নদী
নতুন গবেষণাটিতে মোট ১,৬৫৬টি নদীর তথ্য নিয়ে কাজ করা হয়েছে৷ এখানে নদীর বেসিনগুলোর নানা তথ্য, নদীর ব্যবহার সবকিছুকেই গবেষণার আওতায় আনা হয়েছে৷ যেমন, সমুদ্রতীর থেকে নদীগুলোর দূরত্ব, বৃষ্টিপাতের প্রভাব, বাতাসের গতিবেগ, ভূমির ঢাল ও বিস্তৃতি এবং এগুলো প্লাস্টিক পরিবহণে কেমন প্রভাব ফেলে এসব৷
ছবি: Rui Vieira/empics/picture alliance
এশিয়ার দেশগুলো শীর্ষে
দূষণের মাত্রায় এশিয়ার নদীগুলো এগিয়ে আছে৷ শীর্ষ দশের ব্রাজিল ছাড়া বাকি সবদেশ এশিয়ার৷ শীর্ষ ৫০টি নদীর মধ্যে এশিয়ার আছে ৪৪টি৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/S. M. Rahman
সবার ওপরে ফিলিপাইন্স
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির রাজধানী ম্যানিলার জনবহুল এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া পাসিগ নদী দূষণের তালিকায় সবার ওপরে৷ বছরে প্রায় ৬৯ হাজার টন প্লাস্টিক বহন করে এই নদী৷ দেশটি বছরে মোট তিন লাখ ৬০ হাজার প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে ফেলে৷
ছবি: Getty Images/J. Aznar
৯-এ বাংলাদেশ
বাংলাদেশের অবস্থান ৯৷ বছরে প্রায় ২৫ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে ফেলে দেশটির নদীগুলো৷ বিশেষ করে ভারত ও বাংলাদেশের গঙ্গা-পদ্মা-মেঘনা বেসিন, কর্ণফুলি ও রূপসা নদী থেকে সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য যায় বঙ্গোপসাগরে৷ পদ্মা দিয়ে বছরে প্রায় সাত হাজার টন, কর্ণফুলি দিয়ে প্রায় তিন হাজার টন এবং রূপসা দিয়ে প্রায় এক হাজার ৪০০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে গিয়ে পড়ে৷
ছবি: Munir Uz Zaman/Getty Images/AFP
দ্বিতীয় ভারত, চতুর্থ চীন
ভারতের নদীগুলো বছরে এক লাখ ৩০ হাজার টন বর্জ্য সমুদ্রে নিয়ে যায়৷ আর চীন তৈরি করে প্রায় ৭১ হাজার টন৷
ছবি: picture-alliance/Imaginechina/S. Zhengyi
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিনিধিত্ব
শীর্ষ দশে সবচেয়ে বেশি প্রতিনিধিত্ব দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার৷ ফিলিপাইন্স ছাড়াও এখানে রয়েছে মালয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড৷ শুধু এই দেশগুলোই বছরে প্রায় পাঁচ লাখ ৮০ হাজার টন বর্জ্য ফেলে সমুদ্রে৷
ছবি: AFP/B. Ismoyo
সমাধানসূত্র
আশার কথা হলো, সমুদ্র পরিষ্কার করার জন্য এখন পৃথিবীতে অনেকগুলো সংস্থা কাজ করছে৷ তারা প্রচুর অর্থও সেখানে ব্যয় করছে৷ কিন্তু গবেষকরা বলছেন, শুধু পরিষ্কার করাই সমাধান হতে পারে না৷ যেসব জনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো দিয়ে এসব নদী বয়ে গেছে, সেসব এলাকায় পানিতে প্লাস্টিক বর্জ্য যেন না ফেলা হয়, তেমন উদ্যোগ নিতে হবে৷