1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নদী ভাঙন রোধে নতুন ভাবনা চাই

শেখ রোকন
২ অক্টোবর ২০১৮

আল-মাহমুদ তাঁর ‘চোখ যখন অতীতাশ্রয়ী হয়' কবিতায় নদী ভাঙনের মনো-সামাজিক ভয়াবহতা তুলে ধরেছেন এক কিশোরের জবানিতে৷ কবিতার ভাষায়, কিশোরের ‘গ্রাম ছিল এক উদ্দাম নদীর আক্রোশের কাছে ক্রমাগত ভাঙনের রেখা'৷

ছবি: Bdnews24.com

কবিতার শেষ চরণটি মর্মান্তিক৷ ভাঙতে ভাঙতে নদী যেদিন ঘরের কাছে এসে ঠেকেছে, সেদিন তাদের বসতবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে৷ নদীতে ভাঙনের বদলে চর জাগার স্বপ্ন দেখতে দেখতে মারা যাওয়া পিতার কবর ঘরের পাশেই৷ শেষবারের মতো দেখতে গিয়ে চরের মতো ঢেউ খেলানো কবরের পাশে বসে ডুকরে ডুকরে কাঁদতে শুরু করলেন কিশোরের মা৷ কিশোরের জবানিতে আল-মাহমুদ বলছেন , ‘অভিযোগহীন এমন রোদনধ্বনি কখনো শুনিনি আর'৷ আসলেই তো, নদী ভাঙনের শিকার মানুষ কার কাছে অভিযোগ করবে?

বঙ্গীয় ব-দ্বীপে হাজার বছর ধরেই নদী ভাঙন এক অনিবার্য বাস্তবতা৷ বাংলাদেশের প্রায় সব নদীর চূড়ান্ত উৎস উজানের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল৷ ফলে পার্বত্য অঞ্চলে চাপের মধ্যে থাকা স্রোতস্বিনী পলল সমভূমিতে এসে এমনিতেই আড়মোড়া ভাঙতে চায়৷ স্রোত যখন প্রবল হয়, ভাঙন তখন আরো বাড়ে৷ এ কারণে বর্ষা মৌসুমের শুরুতে ও শেষে বাংলাদেশের বিভিন্ন জনপদ ভাঙনের মুখে পড়ে৷

সেই ‘ক্রমাগত ভাঙনের রেখা' কত লম্বা? একটি গ্রাম, বাজার, শহর বা জেলা নয়; মোটামুটি ১২শ কিলোমিটার দীর্ঘ, একটি হিসেবে দেখা গেছে৷ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পর্যবেক্ষণ মতে, দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর প্রায় তিনশ ‘ভাঙনপ্রবণ' এলাকা স্পষ্ট রয়েছে৷ প্রায় প্রতিবছরই সেখানে কমবেশি ভাঙন দেখা দেয়৷ যেমন চলতি মৌসুমেও ৫২টি জেলার ২৭২টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে৷ সরকার ও সংবাদমাধ্যমের মনোযোগ যদিও শরীয়তপুরের নড়িয়া এলাকায় পদ্মার ভাঙনের দিকে বেশি নিবদ্ধ, অন্যান্য ভাঙন এলাকাও সেখানকার জন্য সমান উদ্বেগের৷

নদী ভাঙন সাধারণভাবে ‘প্রাকৃতিক' প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ ব-দ্বীপ অঞ্চলের নদ-নদীর ভাঙা-গড়াই নিয়তি৷ আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতিতেও এর ছাপ স্পষ্ট৷ কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত গান রয়েছে – ‘এ কূল ভাঙে, ও কূল গড়ে/এই তো নদীর খেলা/এই তো বিধির খেলা/সকাল বেলা আমির রে ভাই/ফকীর সন্ধ্যা বেলা'৷ কিন্তু বাংলাদেশে যেভাবে নদী একই এলাকা বছরের পর বছর ভেঙে চলে, বা চলতে দেওয়া হয়; তার নজির আর কোনো ব-দ্বীপে আছে বলে মনে হয় না৷

পানি উন্নয়ন বোর্ডেরই একটি তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গত চার দশকে কমবেশি এক লাখ হেক্টর ভূমি নদীগর্ভে চলে গেছে৷ এই ভূমি আসলে কতখানি একটা হিসাব দিলে পরিষ্কার হতে পারে৷ যেমন, মেহেরপুর জেলার আয়তন ৭১ হাজার ৬১০ হেক্টর৷ তার মানে, গত চার দশকে বাংলাদেশ একটি আস্ত জেলার চেয়েও বেশি ভূমি নদীতে হারিয়েছে৷ ভাঙনের এই বিপর্যয়কে নিছক ভূমির হিসেবে দেখলে ভুল হবে৷ একেকটি ভাঙন মানে কিছু পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাওয়া৷ সকালবেলার অনেক আমির সন্ধ্যাবেলা ফকীর হয়ে যাওয়া৷

প্রাকৃতিক দুর্যোগ এড়ানোর উপায় নেই৷ বিশেষত বাংলাদেশের মানুষ বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করেই টিকে আছে৷ কিন্তু অন্যান্য দুর্যোগের সঙ্গে নদী ভাঙনের পার্থক্য হচ্ছে, ভাঙন কবলিত মানুষ এক ধাক্কায় পায়ের নীচের মাটিটুকুও হারিয়ে ফেলে৷ বন্যায় সব ধুয়ে গেলে, ঘূর্ণিঝড়ে উড়ে গেলেও ভিটেমাটিটুকু থাকে৷ কিন্তু নদীভাঙনে সেটুকুও থাকার জো নেই৷ পরিহাসের বিষয়, এত গুরুতর একটি দুর্যোগ ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত সরকারিভাবে দুর্যোগ হিসেবেই স্বীকৃত ছিল না!

স্বীকৃতি না থাকার কারণে নদী ভাঙনের শিকার জনগোষ্ঠী সরকারি ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতার বাইরে থাকতো বটে, নদী ভাঙন ‘রোধে' চেষ্টার কমতি ছিল না৷ আমরা দেখি, প্রতি বছরই বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ হয় ভাঙন রোধে৷ যেমন, এই মুহূর্তে আমার সামনে রয়েছে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (২০১৮-২০১৯) প্রায় হাজার পৃষ্ঠার ঢাউস বইটি৷ সেখানে দেখা যাচ্ছে, এই অর্থ বছরে পানি সম্পদ খাতের ৭৬টি প্রকল্পে মোট ৪ হাজার ৫৯২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে৷ এর মধ্যে ৩০টির বেশি হচ্ছে ভাঙন রোধ বা তীর সংরক্ষণ সংক্রান্ত প্রকল্প৷

বরাদ্দের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে, ‘‘বাংলাদেশের নদীগুলির তলদেশ পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদী খনন অপরিহার্য হয়ে পড়ছে৷ একইসঙ্গে নৌ-চলাচল স্বাভাবিক রাখার উদ্দেশ্যে নদীগুলির নাব্যতা রক্ষা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও ভাঙন প্রতিরোধের জন্য নদী খনন গুরুত্বপূর্ণ৷ এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সরকার নদী খননের ওপর গুরুত্বারোপ করে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে৷’’

এক অর্থ বছরেই যদি পানি সম্পদ খাতে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ হয়, সেটা সামান্য হতে পারে না৷ স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত কত টাকা পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার নামে ব্যয় হয়েছে, সেই হিসাব পাওয়া সহজ নয় অবশ্য৷ শুধু চলতি বছরে হিসাব করলে হবে না৷ কিছু প্রকল্প আরো আগে থেকে চলছে৷ দেখা যাচ্ছে, শুধু পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় নদীর তীর রক্ষা ও খনন কাজে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ২১ হাজার কোটি টাকা৷ নদী গবেষকরা একটি সমীক্ষা করতে পারেন, এ পর্যন্ত শুধু নদী ভাঙন রোধে কত টাকা ব্যয় হয়েছে৷

সেই অর্থ কতটা কাজে আসে, সেটা আরেকটি প্রশ্ন৷ কারণ, ভাঙন রোধে নদীতীরে যেসব প্রকৌশল স্থাপনা তৈরি করা হয়, সেগুলোর গুণগত মান, কৌশল নিয়েও প্রশ্নের শেষ নেই৷ এসব কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত বৃহত্তম সংস্থা পানি উন্নয়ন বোর্ড বরাদ্দ অর্থের বেশিরভাগ আক্ষরিকভাবেই ‘পানিতে ফেলে' বলে রসিকতা চালু রয়েছে৷ আমরা দেখে আসছি, চাঁদপুর, সিরাজগঞ্জের মতো জনপদকে ভাঙনের কবল থেকে রক্ষার জন্য ইতিমধ্যে আক্ষরিক অর্থেই শত শত কোটি টাকা খরচ করলেও আখেরে কোনো লাভ হয়নি৷

কারণ কী? আমার কাছে মনে হয়, বাংলাদেশে যে নদী ভাঙন, তা নিছক প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া নয়৷ দীর্ঘ অবহেলা ও পরিকল্পনাহীনতা কিংবা উন্নয়নের ভ্রান্ত মডেলই আমাদের গ্রাম ও শহরগুলোকে নদীর করাল গ্রাসের কাছে বিপন্ন করে তুলেছে৷ পলল নদীকে বশে রাখতে হলে একদিকে যেমন পাড় বাঁধতে হয়, অন্যদিকে প্রয়োজন হয় প্রবাহ যাতে মাঝনদী বরাবর থাকে, প্রবাহের জন্য যাতে পর্যাপ্ত গভীরতা থাকে; সেই ব্যবস্থা করা৷ দুর্ভাগ্যবশত, বাংলাদেশে নদী শাসনের কাজ বরাবরই ‘একচোখা'৷ পাড় বাঁধার দিকে যতটা মনোযোগ দেওয়া হয়, প্রবাহকে মাঝনদীতে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে তার সিকিভাগও নয়৷

অন্য সমস্যাও আছে৷ প্রকল্প প্রণয়ন, পাশ, বরাদ্দ, অর্থ ছাড় প্রভৃতি নানা ধাপ পেরিয়ে যেতে যেতে ভাঙন বসে থাকে না৷ ততদিনে প্রয়োজন হয় আরো বেশি অর্থের৷ এমন প্রতিবেদনও আমার চোখে পড়েছিল, বরাদ্দ অর্থ হাতে পেয়েও কর্তৃপক্ষ ভাঙন রোধে কাজ শুরু করতে পারছে না; কারণ, ওই অর্থে কুলাবে না৷ বরাদ্দ আসতে আসতে আরেকটি বর্ষা মৌসুম এসে যাওয়ায় কাজ শুরু করা যায় না, এমন নজিরও কম দেখিনি৷

নদী ভাঙনের মতো প্রকল্পে ঠিকাদারি চক্র, ঘাটে ঘাটে কমিশন, বখরা – এ সব তো এখন ‘ওপেন সিক্রেট'৷ এর বাইরে কাজ ও উপকরণের মান নিয়েও প্রশ্ন আছে৷ ঘূর্ণায়মাণ ‘পানির নীচে' কী ধরনের ‘কাজ' হয়, কে দেখতে যাবে! বস্তুত নদী ভাঙন রোধে বরাদ্দ অর্থের সদ্ব্যবহারের বিকল্প নেই৷ তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশে সীমাবদ্ধ সম্পদ এভাবে ভাঙন ঠেকানোর নামে ক্ষয় হয়ে যাবে, রাষ্ট্রীয় অর্থে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর পকেট ভারি হবে; মেনে নেওয়া যায় না৷ আর দীর্ঘমেয়াদে হলেও, নদী ভাঙন রোধের প্রচলিত, গতানুগতিক, শতাব্দীপ্রাচীন ধারা থেকে বের হয়ে আসতেই হবে৷ বের হয়ে আসার কী সেই পথ?

প্রথমত, কেবল ভাঙন এলাকায় মনোযোগ নিবদ্ধ করে ভাঙন ঠেকানো যাবে না৷ ভাঙন রোধে গোটা নদীকে নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে৷ এ বছর সবচেয়ে আলোচিত নড়িয়ার ভাঙনই উদাহরণ হিসেবে নেওয়া যাক৷ দু-তিন বছর আগেও সেখানে এত বড় ভাঙনের আলামত ছিল না৷ অনেকের মনে থাকার কথা, ২০১৩ ও ২০১৫ সালে প্রায় একই মাত্রার ভাঙন দেখা দিয়েছিল উজানে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া পয়েন্টে৷ পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকার কাছে৷ নানা কারিগরি প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেই ভাঙন ঠেকানো গেছে৷ পদ্মার বাম তীরের ওই ভাঙন যখন ঠেকেছে, এর ভাটিতে ডান তীরে অবস্থিত নড়িয়ায় তখন ভাঙন দেখা দিয়েছে৷ একই ধরনের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে ব্রহ্মপুত্র বা যমুনার ভাঙনের ক্ষেত্রে৷ কয়েক দশক ধরে ডান তীরে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলা ভাঙছিল৷ সেখানে যখন ভাঙন খানিকটা ঠেকানো গেছে, এখন ধাক্কা লাগছে বামতীরের রৌমারী উপজেলায়৷ আমার আশঙ্কা, আগামী দু-এক বছরে নড়িয়ায় ভাঙন ঠেকানো গেলেও আরো ভাটিতে বাম বা ডান তীরে পরের বছর ভাঙন দেখা দিতে পারে৷ তার মানে, কেবল ভাঙনের স্পট নয়, গোটা নদী নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা করতে হবে৷

দ্বিতীয়ত, গোটা নদী নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা যদি কেবল তীর বাঁধাইয়ের হয়, তাহলেও তা কতখানি কার্যকর হবে, বলা মুশকিল৷ এটা এখন প্রায় প্রমাণিত যে, কেবল পাড় বেঁধে বা তথাকথিত তীর সংরক্ষণের মাধ্যমে নদী ভাঙন রোধ করা কঠিন৷ আমরা দেখছি, দেশের নদ-নদীগুলোর গভীরতা ক্রমাগত কমছে৷ কারণ, উজানে বিভিন্ন স্থাপনার কারণে প্রবাহের গতি যখন শ্লথ হয়, তখন সিল্ট বা তলানিপ্রবাহ সাগরে যাওয়ার আগে মাঝপথেই আটকে যায়৷ ঘন ঘন চর পড়ে, গভীরতা কমতে থাকে৷ এখন তলদেশ যদি উন্নত হতে থাকে, পাড়ে যত বাঁধই দেওয়া হোক না কেন, ওই নদীর পানি জনপদের দিকে ছুটবেই৷

শেখ রোকন, নদী গবেষক ও লেখক, মহাসচিব রিভারাইন পিপলছবি: privat

কেউ ভুল বুঝবেন না যে, নদী প্রবাহের তীরমুখী প্রবণতা বন্ধ করতে গিয়ে আমি বহুল-প্রার্থিত ড্রেজিংয়ের কথা বলছি৷ ড্রেজিং সমর্থনযোগ্য নয় এই কারণে যে, পলল নদীগুলোতে ড্রেজিং কার্যকর ব্যবস্থা হতে পারে না৷ এক বছর ড্রেজিং করে গেলে পরের বছরই তা ভরাট হয়ে যাওয়ার নজির দেশে অনেক রয়েছে৷ পাথুরে মাটিতে এই ব্যবস্থা চলতে পারে, বঙ্গীয় ব-দ্বীপের পলল ভূমিতে কদাচ নয়৷ এছাড়া ড্রেজিং স্পষ্টতই প্রতিবেশবৈরী৷ এর মধ্য দিয়ে মৎস্য সম্পদ ও জীববৈচিত্র্যের আবাস ও প্রজনন বিনষ্ট হয়৷ আর ড্রেজিংয়ের উপকরণ সংগ্রহ, পরিচালনার মধ্যে অনিয়ম ও দূর্নীতির সুযোগ অবারিত৷

নদীর নাব্যতা রক্ষায় ড্রেজিংয়ের বিকল্পই আসলে আমার তৃতীয় যুক্তি৷ তা হচ্ছে, বিপুল ব্যায়বহুল ‘কংক্রিটাইজড' ও জ্বালানিনির্ভর নদী ব্যবস্থাপনা থেকে বের হয়ে আসতে হবে৷ এক্ষেত্রে একটি কথা আমি প্রায়শই বলে থাকি৷ ড্রেজিং আবিষ্কার হয়েছে উনিশ শতকের গোড়ায়৷ তার আগে আমাদের দেশে কি নদী ব্যবস্থাপনা ছিল না? আমাদের পূর্বপুরুষরা হাজার বছর ধরে এই গঙ্গা-যমুনা অববাহিকায় বসবাস করেছে৷ তাঁরা কীভাবে নদীর নাব্যতা বজায় রাখতো? তাঁরা কীভাবে ভাঙন মোকাবেলা করতো? এই দেশের জন্য অনুপযোগী পশ্চিমা প্রকৌশল রপ্ত করতে গিয়ে আমরা লোকায়ত সেসব প্রযুক্তি বহুলাংশে হারিয়ে ফেলেছি৷

এর একটি হচ্ছে ‘বান্ধাল'৷ ইংরেজিতে বলে ‘ব্যান্ডেলিং'৷ এই প্রযুক্তিতে বাঁশ ও ধইঞ্চার মতো স্থানীয়, পরিবেশসম্মত, স্বল্পমূল্যের উপকরণ ছাড়া আর কিছু লাগে না বললেই চলে৷ ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার বিভিন্ন এলাকায় এখনো এটা টিকে রয়েছে৷ মোটামুটি দুই থেকে আড়াই লাখ টাকায় একেকটি বান্ধাল তৈরি করা যায়৷ এক কিলোমিটার পরপর বসানো গেলে একটু সময় লাগে বটে, নদীর স্রোত ঘুরে যায়৷ এখনো কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল অঞ্চলে স্থানীয় জনগোষ্ঠী যমুনার মতো প্রবল নদী বশে আনতে এই প্রযুক্তি সাফল্যের সঙ্গে ব্যবহার করে চলছে৷ আশার কথা, সরকারিভাবেও কোথাও কোথাও লোকায়ত জ্ঞানভিত্তিক এই প্রকল্পের ‘পাইলটিং' হচ্ছে৷ কিন্তু বৃহৎ পরিসরে, নদী ব্যবস্থাপনার জাতীয় নীতি ও কৌশল আকারে আমাদের রাজনীতিক, জনপ্রতিনিধি, ঠিকাদার চক্র, সরকারি-বেসরকারি প্রকৌশলীরা ‘কমদামি' এই নদী ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গ্রহণে কেন আগ্রহী নয়, তা অনুমান করা কঠিন হতে পারে না৷

আপনার মতামত লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ