অনেকের ধারণা কিডনির অসুখ একমাত্র বড়দেরই হয়৷ কিন্তু না৷ জন্ম নেয়ার পরপরই যে শিশুদের কিডনি জটিলতা ধরা পড়ে, তাদের জন্য এবার ছোট আকৃতির ডায়ালিসিস মেশিন তৈরি করেছেন ইটালির চিকিৎসকরা, যা দিয়ে তাদের জীবন বাঁচানো সম্ভব৷
বিজ্ঞাপন
এমনিতে হাসপাতালে শিশু বা নবজাতকের কিডনি জটিলতার ক্ষেত্রে সাধারণ ডায়ালিসিস মেশিনই ব্যবহার করা হয়৷ কিন্তু সঠিক মাপে বদলে নেয়া না হলে শিশুদের জন্য তা বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে৷
ইউরোপের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রতি বছর যেসব শিশুর জন্ম হয়, তাদের ১ থেকে ২ শতাংশের ক্ষেত্রে কিডনি জটিলতা দেখা দেয়৷ কিডনি কাজ না করলে শরীরে রক্ত পরিশোধন হয় না৷ তখন ডায়ালিসিস মেশিন ব্যবহার করে এই পরিশোধনের কাজটি করা হয়৷
ব্রিটিশ রয়্যাল কলেজ অফ পেডিয়াট্রিকস অ্যান্ড চাইল্ড হেল্থ-এর মুখপাত্র ডা. হিদার ল্যাম্বার্ট বলেন, ‘‘খুব কম নবজাতকের ক্ষেত্রেই হয়ত এ ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন হয়৷ তবে সময়মতো চিকিৎসা দিতে পারলে এই মেশিন জীবন বাঁচাতে পারে৷''
‘শিশু কাঁদলে, তাকে কোলে তুলে নিন’
বাচ্চা কাঁদলে কোলে তুলে নেয়াটাই স্বাভাবিক, বিশেষ করে উপ-মহাদেশের বাবা-মা এবং পরিবারের মানুষদের কাছে৷ এ নিয়ে তাঁদের মনে কোনো প্রশ্ন নেই৷ কিন্তু জার্মানিতে? চলুন বিস্তারিত জানা যাক এই ছবিঘর থেকে৷
ছবি: Fotolia/st-fotograf
শিশুরা কাঁদে কেন?
যে কোনো শিশুই চিৎকার করে কেঁদে তার ভূমিষ্ঠ হওয়ার খবর জানিয়ে দেয়৷ তারপরও কারণে-অকারণেই ওরা কাঁদে৷ এই সুন্দর ভুবনের সাথে মানিয়ে নিতে ওদের যেমন কিছুটা সময় লাগে, তেমনই নতুন মা-বাবারও লাগে খানিকটা সময় সব কিছু গুছিয়ে নিতে৷ যা খুবই স্বাভাবিক৷
ছবি: Fotolia/S.Kobold
আমার কান্না কেউ কি শুনছে না?
মাঝে মাঝে শিশুরা চিৎকার করে ওঠে, বিশেষ করে কাছাকাছি অনেকক্ষণ কোনো শব্দ শুনতে না পেলে৷ অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যই হয়ত তখন কাঁদে তারা৷ মজার ব্যাপার, ঐ মুহূর্তে কেউ কাছে গিয়ে কথা বললে বা কোলে তুলে নিলে সাথে সাথেই শিশুদের কান্না থেমে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাঙালি বাবা-মায়ের সন্তান
দেশে সন্তান জন্মের পর থেকেই সে বাচ্চা কোলে কোলে থাকে৷ বাচ্চা কাঁদুক আর না কাঁদুক৷ নতুন মা সারাক্ষণই তাঁর শিশুটিকে নিয়ে ব্যস্ত আর সেই শিশু সর্বক্ষণই পেয়ে থাকে মায়ের শরীরের উষ্ণতা৷ শিশুকে কোলে নেওয়ার জন্য বাবা-মা ছাড়াও আত্মীয়স্বজন থাকেন৷ এছাড়া, বাচ্চাকে শুধু দেখাশোনা করার জন্য আলাদা লোকও অনেক সময় রাখা হয়৷
ছবি: picture-alliance/Joker
জার্মান শিশু
জার্মানিতে কোনো শিশু কাঁদলেই চট করে কোলো তুলে নেওয়া হতো না কয়েক বছর আগ পর্যন্তও৷ শিশু কাঁদলে ওকে শুইয়ে রাখা হতো৷ এক সময় সেই ছোট্ট শিশু কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পরতো৷ কারণ, মা সারাক্ষণ বাচ্চাকে কোলো নিলে বাড়ির অন্য কাজ কে করবে? রাতে প্রতিদিন ঘড়ি ধরে একই সময়ে বাচ্চাকে বিছানায় শুইয়ে দেওয়া হতো ঘর অন্ধকার করে৷ বলা বাহুল্য জার্মানিতে গ্রীষ্মকালে প্রায় ১১টা পর্যন্ত বাইরে সূর্যের আলো থাকে৷
ছবি: Getty Images/Afp/Timothy Clary
সময় পাল্টেছে, বদলেছে চিন্তাধারা
একদিকে যেমন জার্মানির মতো উন্নত দেশগুলিতে প্রযুক্তি দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তেমনই অন্যদিকে উন্নয়নশীল দেশেরও কিছু বিষয় গ্রহণ করতে শুরু করেছে তারা৷ শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. গেন কামেদা বলেন, পশ্চিমের সংস্কৃতিটা এমন যে শিশুরা মায়ের শরীরের উষ্ণতা কম পায়, কারণ এ দেশে বাচ্চারা বিছানায় বেশি সময় থাকে আর এটাই হয়ত শিশুদের রাতে কান্নাকটি করার বড় কারণ৷
ছবি: Yuri Arcurs/Fotolia
নতুন বাবা-মা
নতুন মা-বাবার নানা প্রশ্ন, শিশুটির কান্নার কারণ তাঁরা বুঝতে পারেন না৷ ক্ষুধা, শরীর খারাপ, ক্লান্ত নাকি আদর, কি চায় বেবিটি? আসলে শরীরের উষ্ণতা পেলে শিশুরা সব কিছুই ভুলে যায়, যদি না বড় কোনো শারীরিক কষ্ট থেকে থাকে, বলেন ডা. কামেদা৷ তাঁর পরামর্শ, পিতা-মাতা হলে অনেককিছুই বাদ দিতে হয়, তাই বাইরে গেলে শিশুকে কোলে করে সঙ্গে নেবার চেষ্টা করবেন – যাতে শিশুটি শরীরের উষ্ণতা পায়৷
ছবি: Fotolia/detailblick
ডাক্তারের পরামর্শ
নতুন বাবা-মায়ের জন্য ডাক্তার কামেদার আরো পরামর্শ, শিশুর কাছাকাছি থাকুন, শিশুকে সময় দিন, কোলে তুলে নিন৷ অল্প কিছুদিন পরেই দেখবেন, শিশু শুধু কাঁদেই না, বরং খুব শীঘ্রই তারা হাসতে শিখবে, হাসাবে মা-বাবাকেও৷
ছবি: Fotolia/st-fotograf
7 ছবি1 | 7
ল্যাম্বার্ট ও তাঁর সহকর্মীরা ‘গ্রেট নর্থ চিলড্রেনস হসপিটাল'-এ শিশুদের জন্য বিশেষ ধরনের ডায়ালিসিস যন্ত্র তৈরির কাজ করছেন৷ আর ইটালির সান বর্তোলো হাসপাতালের ডা. ক্লাওদিও রংকো ও তাঁর সহকর্মীদের তৈরি করা ডায়ালিসিস মেশিন গত বছরই ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনুমোদন পেয়েছে৷
এই মিনি ডায়ালিসিস মেশিন ব্যবহার করা যায় সেই শিশুদের ক্ষেত্রে যাঁদের ওজন দশ কিলোগ্রামের কম৷ এই মেশিনে প্রথম যে শিশুটির চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল, তার ওজন ছিল তিন কিলোগ্রাম৷ তার কিডনিসহ বেশ কয়েকটি অঙ্গ কাজ করছিল না৷
ডা. রংকো বলেন, ‘‘মেয়েটার বাবা-মা ধরেই নিয়েছিল যে সে আর বাঁচবে না৷ কিন্তু এক মাস চিকিৎসা চলার পর সে সুস্থ হয়ে উঠতে শুরু করল৷''
এই চিকিৎসক জানান, মেয়েটির কিডনিতে এখনো সামান্য সমস্যা রয়েছে৷ তার আরো ভিটামিন ডি প্রয়োজন৷ এ সব বাদ দিলে সে স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে উঠছে৷
প্রতিটি মিনি ডায়ালিসিস মেশিনের দাম পড়ে ৩৫ হাজার ইউরো৷ এর বিক্রি থেকে কোনো মুনাফা করা হয় না বলে ডা. রংকো জানান৷
তাঁরা এই যন্ত্র চালু করার পর এ পর্যন্ত দশটি শিশু চিকিৎসা পেয়ে ভালো হয়ে উঠেছে৷