বাংলাদেশে সার্বিকভাবে শিশু মৃত্যুর হার কমলেও নবজাতকের মৃত্যুর হার তেমন কমছে না৷ এই প্রবণতা শুধু বাংলাদেশে নয়, সারাবিশ্বে৷ তবে বাংলাদেশে প্রধান তিনটি কারণের একটি বাল্যবিবাহ৷
বিজ্ঞাপন
ইউনিসেফ-এর সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখন প্রতিবছর ৬২ হাজার নবজাতকের মৃত্যু হয়৷ এরা মারা যায় জন্ম থেকে ২৮ দিনের মধ্যে৷ আর জন্মের পর এক দিনের মধ্যে মারা যাচ্ছে ৫০ শতাংশ, অর্থাৎ ৩১ হাজার নবজাতক৷ তবে সার্বিক বিচারে বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর হার কমেছে৷ ইউনিসেফ-এর ‘লেভেলস অ্যান্ড ট্রেন্ডস ইন চাইল্ড মর্টালিটি রিপোর্ট-২০১৭' অনুযায়ী, গত ২৫ বছরে বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর হার শতকরা ৭৩ ভাগ কমেছে৷
জন্মের পর ৭ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে মারা যাচ্ছে ১৯ শতাংশ নবজাতক৷ নবজাতকের মোট মৃত্যুর ৭৩ শতাংশই ঘটছে বাড়িতে৷ পাঁচ বছরের কম বয়সি যে শিশুদের মৃত্যু হয়, তাদের ৬০ শতাংশই নবজাতক৷
প্রতিবেদনে ১৯৯০ সালের সঙ্গে ২০১৬ সালের তুলনা করা হয়েছে৷ বলা হয়েছে, ১৯৯০ সালে পাঁচ বছরের কম বয়সি প্রতি এক হাজার শিশুর মধ্যে মারা যেতো গড়ে ১৪৪ জন৷ সেটি কমে ২০১৬ সালে এসে দাঁড়িয়েছে প্রতি হাজারে গড়ে ৩৪ জনে৷ এর ৪৬ শতাংশ মারা গেছে জন্মের ২৮ দিনের মধ্যে৷
নবজাতক মৃত্যুর ৮৮ শতাংশই ঘটছে সংক্রমণ, শ্বাসজনিত সমস্যা ও স্বল্প ওজন নিয়ে অপরিণত জন্মসংক্রান্ত কারণে৷ আর এর একটি বড় কারণ কিশোরী মাতৃত্ব৷ যেসব নবজাতক মারা যায় তাদের বড় একটি অংশ ২ হাজার ৫০০ গ্রাম বা তারও কম ওজন নিয়ে জন্ম নেয়৷
চলছে যুদ্ধ, চলছে স্কুল
মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে চলছে দ্বন্দ্ব-সংঘাত৷ কিন্তু সেসব দেশের শিশুরা ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যেও স্কুলে যাওয়া অব্যাহত রেখেছে৷ পরিস্থিত যত খারাপই হোক স্কুল বন্ধ নেই তাদের৷ ছবিঘরে দেখে নিন তাদের স্কুলগুলোর অবস্থা৷
ছবি: Reuters/A. Zeyad
ধ্বংস স্তূপের মধ্যে চলছে লেখাপড়া
ইয়েমেনের বন্দর নগরী হেদেইদাহ-তে একটি স্কুলের শ্রেণিকক্ষে পড়ছে এই মেয়েরা৷ তবে স্কুলের দেয়াল বলতে কিছু নেই৷ সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের বিমান হামলায় পুরো দেয়াল ধসে পড়েছে৷ গত তিন বছর ধরে গৃহযুদ্ধের কবলে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে দেশটি, যা শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই৷
ছবি: Reuters/A. Zeyad
গোলাঘরে শিক্ষাদান
সিরিয়া মধ্যপ্রাচ্যের আর একটি দেশ, যেখানে গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই৷ যুদ্ধ শুরুর পর থেকে কয়েক লাখ মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, মারা গেছে লাখো মানুষ৷ সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দারা এলাকায় স্কুলের অভাবে গোলাঘরকে বেছে নেয়া হয়েছে শিশুদের শিক্ষাদানের স্থান হিসেবে৷ চেয়ার নেই, তাই পাথরের উপর বসেই চলছে শিক্ষা গ্রহণ৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Abazeed
বিধ্বস্ত স্কুল
সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলের শহর হামোরিয়ার গৌটা গ্রামের স্কুল এটি৷ এই স্কুলটিও পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে হামলায়৷ এলাকাটি এখন ছিটমহলে পরিণত হয়েছে, যেখানকার পরিস্থিতি খুব খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন মানবাধিকার কর্মীরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Almohibany
অস্থায়ী স্কুল
সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দারা এলাকায় শিশুদের শ্রেণিকক্ষে পড়ালেখা করতে দেখা যাচ্ছে৷ অনেক দেশই চাইছে যাতে যুদ্ধের কবলে পড়ে সিরীয় শিশুদের ভবিষ্যত অন্ধকার হয়ে না যায়৷ তবে যুদ্ধের কারণে এই পাঠদান কর্মসূচি অব্যাহত রাখা বেশ কষ্টকর, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অসম্ভব হয়ে পড়ে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Abazeed
যুদ্ধাবস্থার মধ্যেও স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আকুতি
সিরিয়ার রাকা প্রদেশের উত্তরে হাজিমা গ্রামের একটি স্কুলের দেয়াল এটি, বুলেটের ক্ষত বুকে নিয়ে কোনোরকমে দাঁড়িয়ে আছে৷ ২০১৪ সালে এই এলাকা দখলের সময় এলাকার স্কুলগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি দল ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএস৷ এখন এলাকাটি আইএস এর নিয়ন্ত্রণ মুক্ত৷ তাই শিশুরা এখন চাইলে স্কুলে যেতে পারে৷
ছবি: Reuters/Z. Bensemra
ধ্বংসস্তূপের মধ্যে খেলাধুলা
ব্রিটিশ সংগীত শিল্পী ইউসুফ ইসলাম, যিনি ক্যাট স্টিভেনস নামে বেশি পরিচিত, তার একটি গানের কথা ‘শিশুরা কোথায় খেলবে?’৷ আলেপ্পোর পূর্বাঞ্চলে আল-সাফলানিয়েহ এর একটি স্কুলের ধ্বংসস্তূপকে খেলার জন্য বেছে নিয়েছে এই শিশুরা৷ আমরা কেবল প্রার্থনা করতে পারি তাদের খেলার জন্য সুন্দর, নিরাপদ একটি পরিবেশের৷
ছবি: Reuters/K. Ashawi
6 ছবি1 | 6
অর্থনেতিক অসচ্ছলতা এবং সঠিক জ্ঞানের অভাবে অর্ধেকেরও বেশি গর্ভবতী মা এখনো অপুষ্টিতে ভোগেন৷ মা অপুষ্টিতে ভুগলে গর্ভের শিশুও অপুষ্টিতে ভোগে৷ গর্ভবতী মায়েদের একটি অংশ ডায়াবেটিস রোগে ভোগেন, তাঁরা নানা ধরনের সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হন৷ ১৮ বছরের আগেই তাঁদের বিয়ে এবং গর্ভধারণ হয়৷
কৈশোরে গর্ভধারণ এবং স্বল্প ওজনের কারণে শতকরা ৪৫ ভাগ নবজাতকের মৃত্যু হয়৷ ইউনিসেফের নিউবর্ন অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ মামণি এইচএসএস প্রজেক্ট'-এর একজন কর্মকর্তা জানান, প্রধানত তিনটি কারণে শতকরা ৭০ ভাগ নবজাতকের মৃত্যু হয়৷ এরমধ্যে অপরিণত হওয়ার কারণে ৪৫ ভাগ এবং বাকি ২৫ ভাগ মারা যায় শ্বাসকষ্ট এবং ইনফেকশনের কারণে৷ তাছাড়া যত শিশু জন্মের পর মারা যায়, তার সমপরিমাণ শিশু গর্ভেই মারা যায়৷
নবজাতকের মৃত্যুর সংখ্যা নিয়েও বিতর্ক আছে৷ যুক্তরাজ্যভিত্তিক মেডিক্যাল জার্নাল ‘দ্য ল্যানচেট'-এর ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৮৩,১০০ নবজাতকের মৃত অবস্থায় জন্ম হয়৷ ২০০০ সালে এই সংখ্যা ছিল ১,৬০,৩০০৷ হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. রওশন আরা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাল্যবিবাহ নবজাতক মৃত্যুর অন্যতম কারণ৷ কিশোরী মায়ের নবজাতকের মৃত্যু ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি৷ তাদের সন্তান অপুষ্টির শিকার হয়, ওজন কম হয়, ফলে তারা মারা যায়৷ এ ধরনের মায়েরাই ঠিকমতো পুষ্টি পায় না৷ ফলে তার গর্ভের সন্তানও পুষ্টি পায় না৷ ফলে তারা দুই কেজি বা তারও কম ওজনের বাচ্চা জন্ম দেয়৷''
‘কিশোরী মায়ের নবজাতকের মৃত্যু ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি’
তাঁর কথায়, ‘‘নবজাতকের মৃত্যুর হার গ্রামে বেশি৷ শহরে কিন্তু অত নয়৷ এখনো গ্রামে প্রশিক্ষিত ধাত্রী দিয়ে সন্তান প্রসবের কালচার তেমন গড়ে ওঠেনি৷ আর সন্তান প্রসবে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময় নেয়া হয়৷ ফলে নবজাতক মৃত অবস্থায় জন্ম নেয়৷ বাড়িতে প্রসবের পর ৫৫ শতাংশ মাতৃমৃত্যু এবং ৭৩ শতাংশ নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে, যদিও বর্তমানে তিন হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাভাবিক প্রসবের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷''
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রসবকালীন অপরিচ্ছন্নতা ও নাভির নাড়ির যত্নের অভাবে মেটারনাল অ্যান্ড নিওনেটাল টিটেনাস (এমএনটি) প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়ায়৷ এতে মৃত্যুর হারও খুব বেশি৷ বিশেষ করে এ সময়ই টিটেনাসের বিস্তার ঘটে৷
২০০৭ সালে শতকরা ২৩ জন নবজাতকের জন্মের সময় প্রশিক্ষিত ধাত্রীর সহায়তা নেয়া হতো৷ এখন তা হয়েছে শতকরা ৪২ ভাগ৷ কিন্তু এটা সন্তোষজনক নয়৷ এর ফলে নবজাতকের মৃত্যু থামানো যাচ্ছে না৷ ডা. রওশন আরা বলেন, ‘‘লেবার পেইন শুরু হওয়ার ছয় ঘণ্টার মধ্যেই সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা করতে হবে৷ কিন্তু গ্রামাঞ্চলে সেই বাচ্চা প্রসবে ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা সময় নেয়া হয়, যার ফলে মৃত অবস্থায় নবজাতকের জন্ম হয়৷''
তিনি বলেন, ‘‘নবজাতকের মৃত্যু কমাতে হলে বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে হবে৷ আমরা যতই বলি না কেন বাল্যবিবাহ এখনো সেই অর্থে কমিয়ে আনা যায়নি৷ বাড়িতে সন্তান প্রসব না করে হাসপাতাল বা কমিউনিটি ক্লিনিকে সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা করতে হবে৷ তাছাড়া বাড়িতে সন্তান প্রসব হলে তা অবশ্যই প্রশিক্ষিত ধাত্রীর মাধমে করাতে হবে৷ এখনো শতকরা ৬২ ভাগ ডেলিভারি হয় সাধারণ দাই দিয়ে৷''
‘২০২১ সালে এসডিজি-র লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবো’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাতৃমৃত্যু ও নবজাতক বিভাগের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম সরকার ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘জন্মের পর শিশুর নাড়ি কাটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ এটা ঠিকমতো না হলে ইনফেকশন হয়, যা নবজাতকের মৃত্যুর একটা বড় কারণ৷ আমরা এজন্য আমবিলিক্যাল কর্ড ব্যবহারে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করছি৷ কিন্তু এখনো আমরা ৩০ ভাগের বেশি রিস্ক-ফ্রি কর্ড ব্যবহারের আওতায় আনতে পারিনি৷ ফলে ৭০ ভাগ ঝুঁকির মুখে থেকে যাচ্ছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘তিনটি প্রধান কারণে নবজাতকের মৃত্যু হয়৷ এটা সংশ্লিষ্ট সবার জানা৷ আমরা এই কারণগুলো দূর করার চেষ্টা করছি৷''
বাংলাদেশে শিশুদের জন্মের পরে যে টিকাদান কর্মসূচি আছে তা শিশু মৃত্যু কমাতে বড় একটি সাফল্য নিয়ে এসেছে৷ তাই নবজাতক বাদ দিলে পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশুমৃত্যু কমাতে বাংলাদেশ সফল হচ্ছে৷ নবজাতকের মৃত্যুর হার ধীরে হলেও কমছে বলে দাবি করে ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম সরকার বলেন, ‘‘আমরা আশা করি ২০২১ সালে এসডিজি-র লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবো৷''
বিশ্বে পাঁচ বছরের কমবয়সি শিশুদের মৃত্যুর হার ক্রমেই কমে আসছে৷ তবে বাড়ছে নবজাতকের মৃত্যুর হার৷ বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় ৭ হাজার নবজাতক মারা যাচ্ছে৷ নবজাতক মৃত্যুর প্রবণতা ৪১ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে৷ বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে ৩ কোটি শিশু ২৮ দিন বয়সের মধ্যে মারা যাবে বলে ইউনিসেফ-এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে৷
সারা বিশ্বে শিশুমৃত্যু
গত কয়েক দশকে সারা বিশ্বে শিশুস্বাস্থ্য উন্নয়নে প্রভুত অগ্রগতি হয়েছে৷ কমেছে শিশুমৃত্যুর হার৷ ইউনিসেফ-এর ২০১৭ সালের রিপোর্ট দিচ্ছে এমন তথ্য৷ তারপরও এখনো যেতে হবে বহুদূর৷ ছবিঘরে বিস্তারিত দেখুন৷
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain
আড়াই দশকে কমেছে ৫৭ ভাগ
১৯৯০ সালে সারাবিশ্বে গড়ে প্রতিদিন ৩৫ হাজার পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশু মারা যেত৷ ২০১৬ সালে সংখ্যাটি কমে ১৫ হাজার হয়েছে৷ অর্থাৎ আড়াই দশকে প্রায় ৫৭ ভাগ কমেছে পাঁচ বছর পর্যন্ত বয়সি শিশুমৃত্যুর হার৷
ছবি: AP
নবজাতকের মৃত্যুর হার
২০১৬ সালে সারাবিশ্বে ২৬ লাখ নবজাতক (এক মাস বয়সি বা তার কম) মারা গেছে৷ অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৭ হাজার৷ এই সংখ্যা পাঁচ বছরের কম যত শিশু মারা যায় তার ৪৬ শতাংশ৷ অথচ ২০০০ সালে এই হার ছিল ৪১ শতাংশ৷ তুলনামূলক হারে বাড়লেও নবজাতকের মৃত্যুর সংখ্যা প্রতি হাজারে ২৫ বছরে ৩৭ থেকে কমে ১৯ হয়েছে৷
ছবি: DW/J. Abdullah
প্রথম মাসেই ঝুঁকি বেশি
জন্মের প্রথম মাসেই শিশুর মৃত্যুঝুঁকি সবচেয়ে বেশি৷ পরিসংখ্যান বলছে, প্রথম মাসে প্রতি হাজারে মৃত্যুর সংখ্যা ১৯, যেখানে এক মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত তা ১২ এবং এক বছর থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত সেটি ১১৷ ইউনিসেফ বলছে, ১ থেকে ৫৯ মাস পর্যন্ত নবজাতকের মৃত্যুর হার কমাতে যথেষ্ট সাফল্য পাওয়া গেলেও নবজাতকের মৃত্যুর হার কমানোর গতি খুবই শ্লথ৷
ছবি: imago/i Images/A. Parsons
দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি
জনসংখ্যা বেশি, তাই সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৩৯ ভাগ শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ এশিয়ায়৷ এরপর সাবসাহারান আফ্রিকায়, ৩৮ শতাংশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যে পাঁচ দেশে সবচেয়ে বেশি শিশুমৃত্যু
যত নবজাতকের মৃত্যু হয় তার অর্ধেকই হয় পাঁচটি দেশে৷ এগুলো হলো, পাকিস্তান, ভারত, নাইজেরিয়া, কঙ্গো ও ইথিওপিয়া৷ সবচেয়ে বেশি শিশুর মৃত্যু হয় এমন দশটি দেশের আটটিই আফ্রিকার৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
সবচেয়ে কম জাপানে
জাপান শিশুস্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা বলে চিহ্নিত হয়েছে৷ সেখানে প্রতি ১ হাজার ১শ ১১ জন শিশুর মধ্য একজন প্রথম মাসে মারা যায়৷ এছাড়া আইসল্যান্ডে প্রতি হাজারে, সিঙ্গাপুরে প্রতি ৯০৯ জনে, ফিনল্যান্ডে প্রতি ৮৩৩ জনে, এস্তোনিয়া ও স্লোভেনিয়ায় প্রতি ৭৬৯ জনে, সাইপ্রাসে প্রতি ৭১৪ জনে এবং বেলারুশ, লুক্সেমবুর্গ, নরওয়ে ও দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতি ৬৬৭ জনে একজন নবজাতক মারা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Matthys
পার্থক্য কমাতে হবে
উন্নত দেশগুলোর তুলনায় অনুন্নত দেশগুলোতে, মূলত আফ্রিকার দেশগুলোতে কমপক্ষে ৫০ গুণ খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে৷ এই পার্থক্য কমিয়ে আনা খুব দরকার বলে মনে করছে ইউনিসেফ৷ তাদের হিসেবে, যদি প্রতিটি দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে শিশুমৃত্যুর হার রোধে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি অর্জন করতে পারে তাহলে ২০১৭ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে কমপক্ষে এক কোটি শিশুর জীবন বাঁচবে৷
ছবি: picture alliance/dpa/blickwinkel/W. Dolder
চিকিৎসা আছে
ইউনিসেফ-এর গবেষণা অনুযায়ী, যেসব রোগে বেশির কম বয়সি শিশু (০-৫ বছর) মারা যায়, তার অধিকাংশেরই প্রমাণিত চিকিৎসা আছে এবং মোটেই ব্যয়বহুল নয়৷ তারা বলছে, বড় বাচ্চাদের (৫-১৪ বছর) চেয়ে ছোট বাচ্চারাই সংক্রামক রোগে বেশি আক্রান্ত হয় এবং মারা যায়৷ তবে বড় বাচ্চারা বেশি মারা যায় দুর্ঘটনা বা অসংক্রামক রোগে৷
ছবি: Reuters/S. Modola
বাংলাদেশ ভালো করছে, তবে...
অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ভালো করছে৷ আড়াই দশকে বাংলাদেশ পাঁচ বছরের কম শিশুমৃত্যু বছরে ২ রাখ ৪১ হাজার থেকে কমিয়ে ৬২ হাজারে নামিয়েছে৷ অর্থাৎ হার কমিয়েছে প্রায় ৭৪ শতাংশ৷ তবে নবজাতকের মৃত্যুর ক্ষেত্রে এখনো পৃথিবীর দশটি সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় রয়ে গেছে৷ এছাড়া এখনো বছরে ৮৩ হাজার শিশু জন্মের সময়েই মারা যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/Sh. Alam
9 ছবি1 | 9
নবজাতকের মৃত্যু রোধে সরকার সঠিক পদক্ষেপ নিচ্ছে? মতামত লিখুন নীচের ঘরে৷