আজ পহেলা বৈশাখ৷ বাঙালির আজ আনন্দের দিন, উৎসবের দিন৷ সেই হাওয়ার পরশ লেগেছে ব্লগ আর ফেসবুকেও৷ বৈশাখী খাওয়া দাওয়া, রঙিন পোশাক, মঙ্গল শোভাযাত্রা – এ সব ছবিতেই সেজেছে সবার ফেসবুক ওয়াল, চলছে আলোচনা৷
বিজ্ঞাপন
সামহয়্যার ইন ব্লগ, আমারব্লগ সহ কয়েকটি ব্লগ সাইট পাঠকদের নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে তাদের প্রথম পাতায় পরিবর্তন এনেছে৷ ‘নববর্ষের সেকাল একাল' শিরোনামে সামহয়্যার ইন ব্লগে লেখা একটি পোস্টে তাসজিদ বাংলা বর্ষবরণের ইতিহাস তুলে ধরেছেন৷
একই ব্লগে শাহজাহান আহমেদ তাঁর পোস্টে ভবিষ্যতে পান্তা-ইলিশের পরিবর্তে পান্তা-ভর্তা খাওয়ার চল শুরুর পক্ষে নিজের যুক্তি তুলে ধরেছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘বৈশাখ মাস ইলিশের মৌসুম না৷ অমৌসুমের ইলিশের দাম হয় আকাশ-ছোঁয়া৷ যাদের প্রচুর টাকা-পয়সা তাঁরাই ইলিশ বিলাস করতে পারে৷ বেশিরভাগ মানুষই ইলিশ কিনতে পারে না৷ নতুন বছরে জাতির একটা বিশাল অংশকে বঞ্চিত করে কিছু মানুষ পান্তা-ইলিশ খেয়ে সংস্কৃতি রক্ষার গর্ব করবে, তা হতে পারে না৷ নববর্ষের এই আইটেমটা বাদ দিয়ে যদি আগামী বছর থেকে আমরা পান্তা-ভর্তা যোগ করি, তাহলেই আমার মনে হয় সর্বোচ্চ বাঙালিয়ানার গর্বে আমরা গর্বিত হতে পারব৷ পান্তা ভাতের সাথে ভর্তাটাই মানানসই, ইলিশ না৷''
বাঙালিকে পরিশুদ্ধ করার উত্সব
ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় বর্ষবরণ৷ এরপর সারাদিন ধরে সেটা চলছে৷ ছবিঘরে থাকছে তারই কিছু আমেজ৷
ছবি: DW/M. Mamun
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!
বৈশাখকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি বাঙালি গেয়ে ওঠে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর!/তোরা সব জয়ধ্বনি কর!/ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কাল-বোশেখীর ঝড়/তোরা সব জয়ধ্বনি কর...৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
এসো হে বৈশাখ
ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই ঢাকার রমনা বটমূলে শুরু হয় বাংলা বর্ষবরণ৷ ছায়ানটের শিল্পীরা বিশ্বকবির – ‘‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’’ গেয়ে বাংলা ১৪২১ সালকে স্বাগত জানান৷
ছবি: DW/M. Mamun
সার্বজনীন উৎসব
রমনা বটমূলে নতুন বছরের সূর্য উঁকি দিতেই সমবেত কণ্ঠে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন সব বয়সের, সব শ্রেণির মানুষ৷ পুরনো বছরের জরা, দুঃখ, পাপ, তাপকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে শপথ নিয়েছেন তাঁরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
মঙ্গল শোভাযাত্রা
মঙ্গল শোভাযাত্রার ‘‘জাগ্রত করো উদ্যত করো নির্ভয় করো হে’’ – এই বাণী সব প্রাণের ভয় দূর করে বাঙালির চিত্তকে যেন করেছে ভয়শূণ্য৷ এ উত্সবে মিলেছে সব প্রাণ, সব ধর্ম, সব বর্ণ৷
ছবি: DW/M. Mamun
সমৃদ্ধির প্রতীক
বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রায় সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে ছিল লক্ষ্মী পেঁচা, শিশু হরিণ, মা ও শিশু, হাঁস এবং মাছের ঝাঁক; লোক ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে বিড়ালের মুখে চিংড়ি, শখের হাঁড়িসহ মোট ১৩টি বড় ভাস্কর্য৷ এছাড়াও ময়ূর, বাঘের দুইটি বড় মুখোশ, ১০টা ছোট পাখি, প্রায় এক হাজার কাগজে কাটা ছোট মুখোশ, ১০০টি বড় মুখোশ৷
ছবি: DW/M. Mamun
কাণ্ডারির প্রতীক
হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের দুঃসময়ের কাণ্ডারির প্রতীক হিসেবে এবারের শোভাযাত্রায় স্থান পেয়েছে ‘গাজী ও বাঘ’৷
ছবি: DW/M. Mamun
২৬ বছরে মঙ্গল শোভাযাত্রা
বৈশাখ উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন বলেন, ‘‘মঙ্গল শোভাযাত্রার ২৬ বছরে পদার্পণ ও শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে এবারের আয়োজন অন্যবারের চেয়ে দ্বিগুণ৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
বাঙালিকে পরিশুদ্ধ করে
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলা নববর্ষ বাঙালির সার্বজনীন উত্সব৷ এই উত্সবের রঙ পবিত্র৷ এই উত্সব বাঙালিকে পরিশুদ্ধ করে৷ করে জরামুক্ত৷ এছাড়া বাংলা নববর্ষ অশুভকে বিদায় দিয়ে শুভ এবং কল্যাণের দিকে আহ্বান জানায়৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের মিশেল
বাঙালির আবহমান সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য মিশে আসে এই বাংলা বর্ষবরণের সঙ্গে৷ এই উত্সব বাঙালিকে তার আত্ম পরিচয়ের সন্ধান দেয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
বসেছে মেলা
নববর্ষকে ঘিরে বৈশাখী মেলার আয়োজন বসেছিল৷
ছবি: DW/M. Mamun
10 ছবি1 | 10
আজ ফেসবুক খুললেই পাওয়া যাচ্ছে বন্ধুদের নববর্ষের শুভেচ্ছা৷ সঙ্গে থাকছে তাঁদের নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার কথা৷ এসবের মধ্যে সুমন রহমান নববর্ষ উপলক্ষ্যে ‘প্রথম আলো'-র বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত তাঁর নিজের লেখার একটি অংশ ফেসবুকে তুলে দিয়েছেন৷ বাউলগানের ‘বাহিরানা' শীর্ষক লেখায় তিনি লিখেছেন, ‘‘বাউলগান যে সমসাময়িক বাংলাদেশে অত্যন্ত দাপটের সঙ্গে টিকে আছে, তার পেছনে বাউল জীবনচর্চার অবদান হয়ত খুব বেশি নেই৷ লালনের পর আরও যাঁরা বাউলগানকে সমৃদ্ধ করেছেন, তাঁদের বেশির ভাগই জীবনচর্চায় বাউল ছিলেন না৷ আবার তাঁরা যে ঘটা করে নিজেদের ‘অবাউল' দাবি করেছেন, এমনও নয়৷ জাতিগঠনের চক্করে বাউলগানের অছিলায় বাউলিয়ানার একটা ঢিলেঢালা চর্চা সমাজে দাঁড়িয়ে গেছে৷ ফলে এই অবধারিত ডায়ালেকটিকসকে খেয়াল না করে আমাদের উপায় নেই: একদিকে আখড়ার বাউল এবং তাদের অথেনটিসিটির অহম, অন্যদিকে হাইব্রিড বাউল এবং তাদের অভিযোজনের জখম৷ একদিকে সাধনা, অন্যদিকে বাজার৷ একদিকে তত্ত্বের আলাপ, অন্যদিকে সমাজ-অনুশীলন৷''