‘নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে নির্ভরতা করতে প্রযুক্তি প্রয়োজন’
সুলাইমান নিলয়
১৮ জুলাই ২০১৭
বাংলাদেশ দিনে দিনে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ভালো করলেও জ্বালানি নির্ভরতায় এটাকে প্রধান খাত করতে নতুন প্রযুক্তি দরকার হবে বলে মন্তব্য করেছেন টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য সিদ্দিক জোবায়ের৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলে: টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কেন হয়েছিল?
সিদ্দিক জোবায়ের: ২০০৮ সালে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন নীতিমালায় ২০১৫ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুতের ৫ শতাংশ এবং ২০ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয়া আছে৷ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায়ও এ সম্পর্কে বলা আছে৷ আইন প্রণয়ন থেকে শুরু করে এই খাতে সরকারের পক্ষ থেকে কাজ করার জন্য এই কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে৷
বর্তমানে এই কর্তৃপক্ষ কী কী কাজ করছে?
এই কর্তৃপক্ষের দুটি টার্গেট৷ নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিষয়ে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করা এবং জ্বালানি দক্ষতা বাড়ানো৷ ২০২০ সালের মধ্যে আমাদের ১০ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা তার পরিমাণ প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট৷ আমরা যদি দেখি, নবায়নযোগ্য জ্বালানির যেসব প্রযুক্তি আমাদের কাছে আছে, তার মধ্যে সৌর বিদ্যুৎ আমাদের জন্য সবচেয়ে উপযোগী৷ ২০১৮ সাল নাগাদ আমরা বায়ু সম্পদ মূল্যায়ণ প্রতিবেদন পাবো, তখন জানতে পারবো, এখান থেকে কত বিদ্যুৎ আসবে৷
এখন সৌর শক্তির উপরই অধিক গুরুত্ব দিচ্ছি৷ মেগাওয়াট স্কেলে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বড় প্রকল্প করার চেষ্টা করছি৷ ইতোমধ্যে ৩০২ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন চারটি বেসরকারি সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাথে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ‘পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট' স্বাক্ষরিত হয়েছে৷ আরো প্রায় ৫২৮ মেগাওয়াটের নয়টি প্রকল্পের জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চুক্তি স্বাক্ষর হবে৷
সিদ্দিক জোবায়ের
২০২০ সালের মধ্যে ১ হাজার মেগাওয়াট এখান থেকে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি৷ ১ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডিজেলচালিত সেচ পাম্পগুলোকে সৌর বিদ্যুৎ চালিত সেচপাম্পে রূপান্তরের কাজ করছি৷ আমাদের শ্যালোচালিত নৌকা চলে ডিজেলে৷ এগুলোকে সোলার দিয়ে স্থলাভিষিক্ত করতে চাই৷
নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে এখন কী পরিমাণ বিদ্যুৎ পাই?
এই মুহূর্তে আমরা ৪৪৪ মেগাওয়াটের মতো পাচ্ছি৷
২০২০ সালের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা সম্ভব?
আমরা খুবই আশাবাদী, যদিও এটা চ্যালেঞ্জিং হবে৷ আরেকটা খাত নিয়ে আমরা আশাবাদী, সেটা হচ্ছে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল রুফটপ৷ এমনও রুফটপ আছে, যেখানে ৩-৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে৷ শিল্পগুলোও এতে আগ্রহ দেখাচ্ছে৷ আমরাও কাজ করছি৷
এর কারণ আমাদের ছোট্ট দেশ৷ এখানে সোলারের জন্য জমি পাওয়া খুবই চ্যালেঞ্জিং৷ তাই এটাকে ব্যবহার করতে পারলে আমাদের হিসাব অনুসারে প্রায় সাড়ে চারশ' মেগাওয়াট রুফটপ থেকে আনতে পারি৷
অনেকে মনে করেন, নবায়নযোগ্য বিদ্যুতে খরচ বেশি পড়ে৷ তাই এটা বাংলাদেশের জন্য উপযোগী না৷ আপনারা কী মনে করেন?
আমার মনে হয়, এটা আজ থেকে ৩ বছর আগে পুরোপুরি সত্য ছিল৷ ২০১৭ সালের দ্বিতীয়ার্ধে এসে এটা মোটেই সত্য না৷ শিল্পে বর্তমানে বিদ্যুতের যে ট্যারিফ আছে, আমাদের ধারণা এটা এখানে থাকবে না৷ ভ্যাটসহ তাদের বর্তমানে পার কিলোওয়াট আওয়ার ৯ টাকার মতো পড়ে৷ এটা আরও বাড়বে৷ আমাদের গ্যাস কম৷ তাই এলএনজি আমদানি করতে হবে৷ তখন আমার ধারণা আরও কিছুটা বৃদ্ধি পাবে৷ না বাড়লেও সোলার রুফটপ ভালো বিকল্প৷ আমরা সমীক্ষা করেছি, সোলার কোনোভাবেই ৯ টাকার বেশি হবে না৷ অনগ্রিড এরিয়া হওয়ায় এখানে আমরা ব্যাটারির চিন্তা করছি না৷ তবে অফগ্রিড এরিয়ায় আবার খরচটা একটু বেশি হবে৷
বাংলাদেশে সব বিদ্যুৎ কেন্দ্রই দীর্ঘসূত্রতায় পড়ে যায়...
আমাদের এই প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে এই আশঙ্কা একটু কম৷ কারণ, আমাদের এই প্রকল্পগুলো মূলত বাস্তবায়িত হবে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে৷ আমরা যদি একটা অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে দিতে পারি, তাহলে বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা সময় বেশি নেয় না৷
জ্বালানির যত উৎস
লন্ডন ভিত্তিক ‘ওয়ার্ল্ড এনার্জি কাউন্সিল’ বা ডাব্লিউইসি-এর ‘বিশ্ব জ্বালানি সম্পদ ২০১৬’ প্রতিবেদনে কোন জ্বালানি কী পরিমাণ ব্যবহত হচ্ছে তার হিসেব প্রকাশ করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
১. তেল
লন্ডন ভিত্তিক ‘ওয়ার্ল্ড এনার্জি কাউন্সিল’ এর ‘বিশ্ব জ্বালানি সম্পদ ২০১৬’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানি হচ্ছে তেল৷ মোট ব্যবহৃত জ্বালানির প্রায় ৩২.৯ শতাংশই হচ্ছে তেল৷ আর তেল উৎপাদনে শীর্ষ তিন দেশ হচ্ছে সৌদি আরব (বছরে ৫৬৯ মিলিয়ন টন), যুক্তরাষ্ট্র (বছরে ৫৬৭ মিলিয়ন টন) ও রাশিয়া (বছরে ৫৪১ মিলিয়ন টন)৷
ছবি: picture-alliance/dpa
২. কয়লা
২৯ শতাংশ নিয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানির তালিকায় তেলের পরেই আছে কয়লা৷ তবে নব্বই দশকের পর ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো কয়লা উৎপাদন কমেছে৷ বিশ্বের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রায় ৪০ ভাগ কাজে কয়লা ব্যবহৃত হয়৷ শীর্ষ তিন উৎপাদনকারী দেশ হচ্ছে চীন (বছরে ২ দশমিক ৬২ হাজার এমটিওই), যুক্তরাষ্ট্র (৫৬৯ এমটিওই) ও ভারত (৪৭৪ এমটিওই)৷ উল্লেখ্য, এমটিওই মানে হচ্ছে এক মিলিয়ন মেট্রিক টন অফ ওয়েল ইকুইভ্যালেন্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Roland Weihrauch
৩. গ্যাস
তিন নম্বরে আছে গ্যাস (প্রায় ২৪ শতাংশ)৷ আর বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত জ্বালানির তালিকায় কয়লার (৪০ শতাংশ) পরে আছে গ্যাস (২২ শতাংশ)৷ শীর্য তিন গ্যাস উৎপাদনকারী দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র (বছরে ৬৯১ এমটিওই), রাশিয়া (বছরে ৫১৬ এমটিওই) ও ইরান (বছরে ১৭৩ এমটিওই)৷
ছবি: Imago
৪. পানিবিদ্যুৎ
নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিভিন্ন উৎসের মধ্যে পানি বা জলবিদ্যুতের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি৷ ২০১৫ সালে উৎপাদিত মোট নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের প্রায় ৭১ শতাংশই এসেছে জলবিদ্যুৎ থেকে৷ আর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানির তালিকায় তেল (৩৩ শতাংশ), কয়লা (২৯ শতাংশ) ও গ্যাসের (২৪ শতাংশ) পরেই আছে পানিবিদ্যুৎ (প্রায় ৭ শতাংশ)৷ শীর্ষ তিন উৎপাদনকারী চীন (বছরে ৯৬.৯ এমটিওই), ব্রাজিল (৩২.৯ এমটিওই) ও ক্যানাডা (৩২.৩ এমটিওই)৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Jourdier
৫. পরমাণুশক্তি
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানির তালিকায় পাঁচ নম্বরে আছে এটি (৪ দশমিক ৪ শতাংশ)৷ অর্থাৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানির একটি উৎস পানিবিদ্যুতের (প্রায় ৭ শতাংশ) চেয়েও এর ব্যবহার কম৷ ইউরেনিয়াম উৎপাদনে শীর্ষ তিন দেশ হচ্ছে কাজাখস্তান (বছরে ২২ দশমিক ৮ হাজার টন), ক্যানাডা (৯ দশমিক ১৪ হাজার টন) ও অস্ট্রেলিয়া (৪ দশমিক ৯৮ হাজার টন)৷
ছবি: Kerry Skyring
৬. বায়ুশক্তি
বিশ্বের মোট বিদ্যুতের ৭ শতাংশ আসে বায়ুবিদ্যুৎ থেকে৷ ২০১৫ সালে ৪৩২ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছিল৷ এর মধ্যে ৪২০ গিগাওয়াট অনশোর (ভূমি) ও ১২ গিগাওয়াট অফশোর, অর্থাৎ সাগরে বসানো টারবাইনের মাধ্যমে উৎপাদিত হয়৷ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানির তালিকায় ছয়ে আছে এটি (১.৪৪ শতাংশ)৷ শীর্ষ তিন বায়ুশক্তি উৎপাদনকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র (বছরে ১৫.৮ এমটিওই), চীন (১৩.৬ এমটিওই) এবং জার্মানি (৪.৯৩ এমটিওই)৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Vaughn
৭. সৌরশক্তি
২০১৫ সালে সারা বিশ্বে মোট সৌরশক্তি উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ২২৭ গিগাওয়াটে৷ ফলে মোট বিদ্যুতের এক শতাংশ এসেছিল সৌরশক্তি থেকে৷ সৌরশক্তি উৎপাদনে শীর্ষ তিন দেশ চীন (৪৩ দশমিক ১ গিগাওয়াট), জার্মানি (৩৯ দশমিক ৬ গিগাওয়াট) ও জাপান (৩৩ দশমিক ৩ গিগাওয়াট)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Gupta
৮. অন্যান্য উৎস
জিওথার্মাল, ই-স্টোরেজ, মেরিন এনার্জি, বর্জ্য থেকে শক্তি, বায়োএনার্জি (যেমন বায়োমাস) ইত্যাদি সহ আরও অনেক উৎস দিয়েও জ্বালানি উৎপাদন করা হয়ে থাকে৷ ছবিতে আইসল্যান্ডের একটি জিওথার্মাল পাওয়ার স্টেশন দেখা যাচ্ছে৷ ডাব্লিউইসি-র প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন উপরের ‘+’ চিহ্নে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/McPHOTO
8 ছবি1 | 8
আমরাও অনেক সময় নিয়েছি৷ ২০০৮ সালে আমাদের নীতিমালা হয়েছে৷ ২০০৯ সাল থেকে ধরলেও ২০১৭ পর্যন্ত আট বছর সময় নিয়ে ফেলেছি৷ আমরা মনে করি, যথেষ্ট সময় নিয়েছি৷
অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য যে ধরণের তথ্য-উপাত্ত, কারিগরি জ্ঞান সেগুলো দেশে এরই মধ্যে হয়ে গেছে৷ তাই ২০২০ সাল পর্যন্ত মন্থর গতি আর থাকবে না৷ আমরা যখন ২০০৩ সালে সোলার হোম সিস্টেম চালু করি, তখন থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ে আমাদের প্রতি মাসে যে পরিমাণ সিস্টেম বিক্রি হতো, ২০০৯-২০১৫ সালে প্রতিদিনে সে পরিমাণ সিস্টেম বিক্রি হয়েছে৷ সোলার ইরিগেশনেও একই অবস্থা৷ ২০১১ সাল থেকে এখানে কাজ শুরু করি৷ ২০১৬ পর্যন্ত বসাতে পেরেছি মাত্র ৫০টা ইরিগেশন সিস্টেম৷ এরপর এ পর্যন্ত ৬০০টা বসে গেছে৷
এটা নতুন প্রযুক্তি, তাই শুরুর দিকে আমাদের কারিগরি জ্ঞানের অভাব ছিল৷ এখানে বিনিয়োগ করবে কিনা, তা নিয়ে আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দ্বিধা ছিল৷ আমরা আশা করি, ২ হাজার মেগাওয়াটের লক্ষ্য অতিক্রমও করে যেতে পারি৷
ডেনমার্কের অর্থায়নে কক্সবাজারে ৬০ মেগাওয়াটের একটা বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র হওয়ার কথা শুনেছি, যেটি ২০১৭ সালে উৎপাদনে যাওয়ার কথা৷ সেটার কী অবস্থা?
এটা ডেনমার্কের অর্থায়নে না৷ মার্কিন অর্থায়ন এবং ডেনমার্কের প্রযুক্তিতে হওয়ার কথা৷
বায়ু বিদ্যুতে আমরা (সংস্থার পক্ষ থেকে) এখন কাজ করছি না৷ এটা আমরা করবো ২০১৮ সালে গিয়ে৷ সেই প্রকল্প ছিল একটা আনসলিসিটেড অফার যে, তারা ওখানে সমীক্ষা করে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে৷ ওই প্রকল্পের কিছু সমস্যা ছিল, একটা হচ্ছে, সেখানে কোনো ‘উইন্ড রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট' করা নাই৷ এটা করা না থাকলে ওখানে বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প করা যাবে কিনা, কারিগরিভাবে সেটা জানার উপায় নাই৷ আর সেটা না থাকলে কেউ সেখানে অর্থায়নও করবে না৷ গত বছর তারা এই সমীক্ষা করা শুরু করেছে৷ সেপ্টেম্বরে হয়ত রিপোর্ট দিতে পারবে৷ তারপর বলা যাবে কখন এটা করা সম্ভব হবে৷
২০১৭ সালে হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নাই৷ আমরা শ্রেডা থেকে এখন বায়ুভিত্তিক কোনো প্রকল্প করার পক্ষে না৷ ফেনীর মুহুরীতে একটি প্রকল্পে আমরা সহায়তা দিচ্ছি, কারণ, যারা করছে, তারা এরই মধ্যে আড়াই বছরের ডাটা সংগ্রহ করেছে৷ এটা (চালু করা সম্ভব) হবে৷
বিকল্প জ্বালানির পথে জার্মানি
আজকের বিশ্বে অনেক দেশেই জ্বালানি-নীতি নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা চলছে৷ জাপানে ফুকুশিমা বিপর্যয়ের পর জার্মানি পরমাণু ও জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানি সম্পূর্ণ বর্জন করে পুরোপুরি বিকল্প পথে অগ্রসর হচ্ছে৷
ছবি: Reuters
ফুকুশিমা বিপর্যয়ের গভীর প্রভাব
২০১১ সালের মার্চ মাসে ফুকুশিমা বিপর্যয়ের ঠিক আগে জার্মানি তার পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৷ কিন্তু জাপানের মতো শিল্পোন্নত দেশে পরমাণু চুল্লির এমন বিপর্যয়ের ফলে জার্মানি সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়৷ ধাপে ধাপে সব পরমাণু কেন্দ্র বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার৷
ছবি: dapd
জ্বালানি-নীতির আমূল পরিবর্তন
আর দেরি না করে ২০১১ সালের ৬ই জুন জার্মানির মন্ত্রিসভা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেয়৷ এই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধাপে ধাপে পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে ২০২২ সালে জার্মানির শেষ পরমাণু কেন্দ্র অচল করে দেওয়া হবে৷ অন্যদিকে ২০২০ সালের মধ্যে গোটা দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ আসবে বিকল্প জ্বালানি থেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শুধু বিদ্যুতের উৎস নয়
জ্বালানি-নীতির ক্ষেত্রে জার্মানির এই আমূল পরিবর্তন শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই৷ সার্বিক এই নীতির আওতায় পরিবহণ ও শীতকালে ঘরবাড়ি গরম রাখার উত্তাপের উৎসকে রাখা হয়েছে৷ এ সব ক্ষেত্রেও জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমাতে না পারলে কাঙ্খিত ফলাফল পাওয়া সম্ভব নয়৷
ছবি: REUTERS
বিকল্প জ্বালানির আর্থিক সুবিধা
ছাদে সোলার প্যানেল লাগালে জার্মানিতে বাড়ির মালিক তা থেকে দু’পয়সা আয় করতে পারেন৷ একদিকে সরকার নামমাত্র সুদে ঋণ ও অন্যান্য অনেক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে৷ অন্যদিকে কিছু বিদ্যুৎ কোম্পানি তাঁদের কাছ থেকে উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ কিনে নিতে পারে৷
ছবি: DW/G.Rueter
লোকসানের ধাক্কা
জার্মানির সবচেয়ে বড় বেসরকারি জ্বালানি কোম্পানি ‘এয়ন’ জ্বালানি-নীতির পরিবর্তনের ফলে মারাত্মক লোকসানের মুখ দেখছে৷ নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে কাঠামোগত পরিবর্তনের ফলেও আপাতত আর্থিক ক্ষতির মুখ দেখতে হচ্ছে এই সংস্থাকে৷ ২০১৬ সালের প্রথমার্ধে লোকসানের মাত্রা ছিল প্রায় ৩০০ কোটি ইউরো৷ অন্যান্য কিছু সংস্থাও লোকসানের মুখ দেখছে৷
ছবি: Reuters/I. Fassbender
পরিবেশ সংরক্ষণ বিধি
বিকল্প জ্বালানি উৎপাদন পরিবেশের ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে৷ কিন্তু পরিবেশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত কড়া বিধিনিয়িমের ফলে এমন প্রকল্পও বাধার মুখে পড়ছে৷ যেমন উপকূলের কাছে সমুদ্রের উপর বায়ুশক্তি টার্বাইন গড়ে তোলার বিরুদ্ধে মামলা করেছে এক পরিবেশ সংগঠন৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকল্পের পরিকল্পনার সময় পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়গুলি বিবেচনায় রাখলে এমন সমস্যা এড়ানো সম্ভব৷
ছবি: Bund/M.Rode
বাজার অর্থনীতির উপযোগী
শুধু সরকারের একার পক্ষে জ্বালানি-নীতির পরিবর্তন ও বিকল্প জ্বালানি উৎপাদনে উৎসাহ দেওয়ার প্রচেষ্টা কোনো দেশেই বেশি দিন চলতে পারে না৷ জার্মানি দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর পর বিকল্প জ্বালানির ক্ষেত্রে কিছু ভরতুকি বন্ধ করে দিয়েছে৷ সরকারের বক্তব্য, বিকল্প জ্বালানি উৎপাদন এতদিনে লাভজনক হয়ে উঠেছে৷ বাজার অর্থনীতির প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে টিকে থাকার ক্ষমতাও এসে গেছে৷
ছবি: BELECTRIC.com
বিদ্যুৎ পরিবহণ
বিকল্প জ্বালানির উৎপাদন বাড়িয়ে জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমানো যায় বটে, কিন্তু ‘ক্লিন এনার্জি’ গোটা দেশে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া বড় চ্যালেঞ্জ৷ জার্মানির উত্তরে সমুদ্র উপকূল থেকে বায়ুশক্তি প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বাভেরিয়া রাজ্যে পৌঁছে দিতে বিশাল এক প্রকল্পের কাজ চলছে৷ এই উদ্যোগকে ঘিরে বাধা-বিপত্তি ও প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সামলে নিতে পারলে এই পথে ২০২২ সাল থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে৷
ছবি: Fotolia/Thorsten Schier
জার্মানির সুদূরপ্রসারী জ্বালানি নীতি
জ্বালানির ক্ষেত্রে জার্মানি যে সুদূরপ্রসারী নীতি গ্রহণ করেছে, তার তুলনা মেলা ভার৷ এ বিষয়ে আরও জানতে চান? উপরে ডানদিকে ক্লিক করুন৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত বাংলাদেশের জ্বালানির প্রধান উৎস হতে কতদিন সময় লাগবে বা এ বিষয়ে আপনাদের কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
নিকট ভবিষ্যতে এটা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আমি ব্যক্তিগতভাবে দেখি না৷ তবে আপনি বলবেন, আমি কি আশাবাদী না? আমি বলবো, আমি আশাবাদী৷ তবে এর জন্য টেকনোলজিক্যাল ‘ব্রেক থ্রু' লাগবে৷ নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রযুক্তির বিষয়ে বিশ্বজুড়েই অনেক গবেষণা হচ্ছে৷ বাংলাদেশের জন্য সোলারই সবচেয়ে উপযোগী৷ কিন্তু এখানে এক মেগাওয়াটের জন্য ৪ একর জায়গার প্রয়োজন হয়৷ বাংলাদেশ ছোট ভূখণ্ডের দেশ৷ সব জায়গায় আমাদের জনবসতি আছে৷ প্রতি একর জায়গাই চাষের আওতায়৷ সেখানে আমাদেরকে ফসল ফলাতে হয়৷ আমাদের খাদ্য নিরাপত্তাকে সেক্রিফাইস করে এটা করতে পারবো না৷
বর্তমানে সোলার প্যানেলের ‘জ্বালানি দক্ষতা' ১৬-১৭ শতাংশ৷ কেউ বলে ২১-২২ শতাংশ৷ এটা যদি বেড়ে হাফ একরে এক মেগাওয়াট হয়, তাহলে বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ মূল বিদ্যুৎ হয়ে যেতে পারে৷
উন্নত অর্থনীতির দেশের জন্য এটা খুব সহজ৷ কারণ, তাদের অর্থনীতি এরই মধ্যে উন্নত হয়ে গেছে৷ তাদের প্রবৃদ্ধি অনেক কম৷ কিন্তু আমাদের প্রবৃদ্ধি অনেক৷ এই অবস্থায় আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা দিনদিন প্রচুর বৃদ্ধি পাচ্ছে৷
বিপুল পরিমাণ জ্বালানি চাহিদা বর্তমান প্রযুক্তি দিয়ে শতভাগে যাওয়া নিকট ভবিষ্যতে সম্ভব হবে না৷ সুদূর ভবিষ্যতে এটা সম্ভব হবে৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷