নবায়নযোগ্য জ্বালানী জনপ্রিয় হচ্ছে বাংলাদেশে
২৩ জুলাই ২০০৯এই সংখ্যা ২০০৭ এর তুলনায় দ্বিগুণ৷
সাইদুল ইসলামের জীবনের গল্পটাই বলে দেয় যে, বিকল্প জ্বালানী বাংলাদেশের মানুষের কাছে এখন কতটা জনপ্রিয়৷ রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ৮০ কিলোমিটার দূরে নওয়াব আলী বাজারে তার দোকান এবং বাড়ি৷ পাঁচ বছর আগে সে সরকারি বিদ্যুতের উপর বিরক্ত হয়ে, ৩৩৫ ডলার বা ২৪ হাজার টাকা খরচ করে একটি সোলার পাওয়ার প্যানেল বসায় তার টিনের ঘরের চালে৷ সেসময় অনেকেই তার এই কাজে হাসাহাসি করলেও, এখন গ্রামের প্রায় প্রতিটি ঘরেই রয়েছে সোলার পাওয়ার প্যানেল এর ব্যবহার৷ কারণ এই প্যানেল থেকে পাওয়া বিদ্যুৎ তার জীবনে এনে দিয়েছে সাফল্য৷ কোন কাজের জন্য এখন তাকে সরকারি বিদ্যুতের উপর নির্ভর করতে হয় না৷ তার বা বাংলাদেশের যে কোন গ্রামের মানুষের ভাষায়, বিদ্যুত প্রতি চার ঘন্টায় এক ঘন্টা থাকে বা কখনো আসেই না৷
সাইদুল ইসলাম নিজের সাফল্যের কথা একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাকে জানাতে গিয়ে বলেছিলেন, একসময় তাদের এই গ্রামটি পরিচিত ছিল কাঠালের গ্রাম হিসাবে৷ কিন্তু এখন গ্রামটি পরিচিত এই কারণে যে, এই গ্রামের বেশিরভাগ লোকই বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সোলার পাওয়ার প্যানেল ব্যবহার করে৷ আর এখন তার পরিবার রাতে অন্তত পাঁচ ঘন্টা বিদ্যুত পায় এবং সে নিজে মধ্য রাত পর্যন্ত তার দোকনের সেলাই মেশিন চালাতে পারে৷ তার এই সাফল্যকে গ্রামের অনেকেই নমুনা হিসেবে নিয়ে সোলার পাওয়ার প্যানেল ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতিদিনের বিদ্যুতের উৎপাদন ৩৫০০ মেগাওয়াট৷ অথচ প্রতিদিনের চাহিদা ৬ হাজার মেগাওয়াট৷ আর প্রতি বছর শিল্পায়ন এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এই চাহিদা বাড়ছে ৫শ মেগাওয়াট৷
বাংলাদেশে বর্তমান সরকার তাদের নির্বাচনী ইস্তেহারে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের কথা বললেও, এটি করতে সরকার আরো তিন বছর সময় চেয়েছে৷ কিন্তু এইসময়ের মধ্যে বাংলাদেশের ৭০ ভাগ জনগোষ্ঠী বা ১৪৪ মিলিয়ন জনগন যারা খুবই কম মাত্রায় বিদ্যুৎ পেয়ে থাকে বা পায়ই না তাদের বিকল্প জ্বালনীর উপর নির্ভর করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই বলে মনে করছেন জ্বলানী বিশেষজ্ঞরা৷
বাংলাদেশে বিকল্প জ্বালানী নিয়ে কাজ করছে গ্রামীন শক্তি নামে একটি প্রতিষ্ঠান৷ এর প্রধান দীপাল বড়ুয়া বলছেন, বাংলাদেশে বিকল্প জ্বালানীর সুদূরপ্রসারী ভবিষ্যত রয়েছে৷ তাদের লক্ষ আগামী ২০১৫ সালের মধ্যে দেশের অর্ধেক গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে এই বিকল্প জ্বালনীর আওতায় নিয়ে আসা৷
তবে এই সোলার পাওয়ার প্ল্যান্টের একটি অসুবিধা রয়েছে৷ তা হচ্ছে এর প্রাথমিক দাম৷ জ্বালানী বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলছেন, তারা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন কীভাবে এই সোলার পাওয়ার প্যানেলের দামা কমানো যায়, যাতে এর গ্রাহক সংখ্যা দ্রুত গতিতে বাড়ে৷
প্রতিবেদক: ঝুমুর বারী
সম্পাদনা: আবদুস সাত্তার