নব্য নাৎসি মামলা
১৬ এপ্রিল ২০১৩মিউনিখের ওবারলান্ডেসগেরিশ্ট বা উচ্চতর রাজ্য আদালত শুনানিকক্ষে সাংবাদিকদের জন্য ৫০টি আসন সংরক্ষিত রাখে বটে, কিন্তু সেই আসন বণ্টনের প্রক্রিয়া এমনই ছিল যে, শেষমেষ দেখা যায়, তুর্কি এবং গ্রিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা কোনো আসন পাননি৷ অথচ সুইকাও-এর সেল নামধারী নবনাৎসি ত্রয়ীর যারা শিকার হয়েছেন, সেই দশজনের মধ্যে আটজনই ছিলেন তুর্কি বংশোদ্ভূত এবং একজন ছিলেন গ্রিক৷
আদালত নিয়ম করে দিয়েছিলেন, প্রথমে যারা আবেদন করবে, তারাই আসন পাবে৷ অথচ আসন বণ্টন প্রক্রিয়া সম্পর্কে খবর পাঠানো হয় ই-মেলে এবং কিছু ক্ষেত্রে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে৷ প্রক্রিয়াগত নিয়ম-অনিয়মের প্রশ্ন ছাড়াও, গোটা নবনাৎসি মামলাটাই যে বহির্বিশ্বে কি পরিমাণ আগ্রহ ও কৌতূহল সৃষ্টি করেছে অথবা করতে পারে, সেটা বোধহয় মিউনিখের মাননীয় আদালত ঠিক উপলব্ধি করে উঠতে পারেননি৷
বিশেষ করে তুরস্কের মানুষ, যেখান থেকে আজ কয়েক প্রজন্ম ধরে বহিরাগত শ্রমিকরা জার্মানিতে আসছেন, এখানে কাজ করছেন, বাস করছেন, সন্তান প্রতিপালন করছেন – সেই তুরস্কের মানুষরা নবনাৎসিদের হাতে নিরপরাধ তুর্কিদের মৃত্যুর ব্যাপারটাকে যে সম্পূর্ণ অন্য চক্ষে দেখবে, জার্মানিতে বসবাসকারী তুর্কিদের প্রত্যাশার কথা তো আলাদা – এই জটিল অঙ্কটি প্রশাসনিক ছকে ফেলার কোনো উপায়ই ছিল না৷
‘‘পর্যাপ্ত আসন''
এবার সাংবিধানিক আদালত সেটাই পরিষ্কার করে দিয়েছেন৷ তুরস্কের ‘‘সাবাহ'' দৈনিকের আনীত অভিযোগের ভিত্তিতে সাংবিধানিক আদালত একটি সংক্ষিপ্ত প্রক্রিয়ার পর রায় দেন যে, তুর্কি এবং গ্রিক সাংবাদিকদের ‘‘পর্যাপ্ত আসন'' দিতে হবে৷ নয়ত গণমাধ্যমগত প্রতিযোগিতায় সমানাধিকারের নীতি লঙ্ঘিত হবে৷ লক্ষণীয় যে, জার্মানির প্রায় সব রাজনৈতিক দলের নেতৃস্থানীয় রাজনীতিকরা সাংবিধানিক আদালতের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন৷
মিউনিখের আদালতে ১০০ জন দর্শকের বসার স্থান আছে৷ তার মধ্যে ৫০টি আসন সাংবাদিকদের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছিল৷ বাস্তবে শুধু জার্মান গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের এই আসনগুলি বরাদ্দ করা হয় কেননা তারাই সর্বাগ্রে আবেদন করেছিলেন৷ তুর্কি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা কি করছিলেন? তাদের বক্তব্য: আদালতের প্রেস দপ্তরে বারংবার টেলিফোন করা সত্ত্বেও তাদের বলা হয়, আসনের আবেদন গ্রহণের কাজ এখনও শুরু হয়নি৷ অথচ বাস্তবিক রেজিস্ট্রেশন শুরু হবার সময় তাদের অনেকের কাছেই সে খবর ছিল না
‘ফেয়ারনেস'
বস্তুত সাংবিধানিক আদালত জার্মানির মুখরক্ষা করলেন, বলে বিশ্লেষকদের ধারণা৷ সুইকাও-এর নবনাৎসি ত্রয়ীর একমাত্র মহিলা ও জীবিত সদস্য বেয়াটে চেপে ও তার চার জন মদতকারীর বিরুদ্ধে এই মামলায় ‘ফেয়ারনেস' একটি রাজনৈতিক প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াচ্ছিল, যার সমাধান করলেন সাংবিধানিক আদালত৷
প্রায় এক দশক ধরে ঐ এনএসইউ বা নাৎসি গুপ্তপ্রতিরোধ নামধারী গোষ্ঠী জার্মানিতে তাদের হত্যালীলা চালিয়েছে৷ তদন্তকারী পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের হয়ত অনেক আগেই অপরাধীদের হদিশ পাওয়া, সনাক্ত করা এবং গ্রেপ্তার করা সম্ভব ছিল, যদি না ঐ তদন্তে নানা ধরনের ভুলভ্রান্তি ঘটতো৷ পরে আবার সংসদীয় পরিষদের সামনে সেই সব ভুলভ্রান্তির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান আশ্চর্য অক্ষমতা প্রদর্শন করে৷ সব মিলিয়ে খোদ জার্মানিতেই প্রকাশ্য সন্দেহ দেখা দিয়েছিল, এ দেশের শাসনব্যবস্থা চরম দক্ষিণপন্থিদের প্রতি বড় বেশি সহনশীল কিনা৷
যা থেকে জার্মানির ভাবমূর্তির ব্যাপক ক্ষতি হতে পারত৷ এবং ঠিক সেই ক্ষতি রোধ করল সাংবিধানিক আদালতের সিদ্ধান্ত৷