জার্মানিতে নব্য-নাৎসি দৌরাত্ম্য
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১২বার্লিনে বৃহস্পতিবার এক স্মরণসভায় আট তুর্কি, এক গ্রিক এবং এক জার্মান নারী পুলিশের পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ নব্য নাৎসিদের হাতে দশ ব্যক্তি নিহত হলেও জার্মান নিরাপত্তা বাহিনী তা সহজে শনাক্ত করতে পারেনি৷ বার্লিনের গ্র্যান্ড কনসার্ট হাউসে ম্যার্কেল বলেন, ‘‘এদেরকে হত্যার কারণ দীর্ঘ সময় ধরেই অজানা ছিল৷ এটা নির্মম সত্য যে, এই বছরগুলো আপনাদের কাছে অন্তহীন দুঃস্বপ্নের মতো ছিল৷ এজন্য আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি৷ ম্যার্কেল আরও বলেন, ‘‘জার্মানিতে কিছু মানুষ ধারণা করেছিল, ২০০০ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে সংগঠিত এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে কোন উগ্র-দক্ষিণপন্থী দল জড়িত রয়েছে৷ তা সত্ত্বেও তদন্তকারীরা এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মাফিয়া কিংবা মাদক-পাচারের কোন সম্পর্ক কিংবা হতভাগাদের পরিবারের কোন সম্পৃক্ততা আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখেছে''৷
গত নভেম্বর মাসে এসব হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ প্রকাশ পায়৷ এবং এরপরই বিষয়টি জার্মানিতে ব্যাপক আলোচনার ঝড় তোলে৷ জার্মানির পূর্বাঞ্চলে সুইকাউ শহরের এক উগ্র দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠী কয়েক বছর ধরে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে গেলেও গোয়েন্দারা তা শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়৷ শুধু মানুষ হত্যা নয়, এই দল প্রায় ডজনখানেক ব্যাংক ডাকাতির সঙ্গেও জড়িত বলে জানা যায়৷
উগ্র দক্ষিণপন্থী এই দলটি নিজেদেরকে ‘ন্যাশনাল সোশালিস্ট আন্ডারগ্রাউন্ড' হিসেবে আখ্যা দেয়৷ এই দলের দুই সদস্য একটি ব্যাংক ডাকাতির পর আত্মহত্যা করে৷ কিন্তু দলের অপর এক নারী সদস্য আত্মহত্যাকারীদের ফেলে যাওয়া তথ্যউপাত্ত নষ্ট করতে গেলে পুরো বিষয়টি ধরা পড়ে৷ পুলিশ তখন অস্ত্র, নব্য নাৎসিদের বিভিন্ন পরিকল্পনা এবং তাদের হাতে নিহতদের বিভিন্ন ছবির সন্ধান পায়৷
যারা নব্য নাৎসিদের হামলার শিকার হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই ছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা ফাস্ট-ফুড দোকানদার৷ হালিত নামক ২১ বছর বয়সি এক ভুক্তভোগীর পিতা ইসমাইল ইয়োজগাট বলেন, ‘‘২০০৬ সালে আমার সন্তান আমার কোলেই প্রাণ হারায়৷ একটি ইন্টারনেট ক্যাফেতে সে গুলিবিদ্ধ হয়৷'' তিনি কাসেল শহরের যেই রাস্তায় তাঁর ছেলে বেড়ে উঠেছে এবং নিহত হয়েছে, সেই রাস্তার নামকরণ ছেলের নামে করার আহ্বান জানান৷
সেমিয়া সিমসেক'এর বাবা এন্ভার সিমসেক নুরেমবার্গে ফুল বিক্রি করার সময় গুলিবিদ্ধ হন৷ সেমিয়া জানান, দীর্ঘসময় তারা নিজেদেরকে ভুক্তভোগী মনে করেন নি, কেননা সন্দেহ করা হয়েছিল তাঁর বাবা হয়ত কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন৷
তিনি স্মরণ সভায় সমবেতদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘আপনারা কি ধারণা করতে পারেন, আমাদের কেমন মনে হচ্ছিল, যখন আমার মা ছিলেন তদন্তের কেন্দ্রবিন্দু? আজকে আমি নিজেকে একটি প্রশ্নবানে জর্জরিত করি৷ সেটি হচ্ছে, আমি কি জার্মানিকে নিজের দেশ হিসেবে মেনে নিতে পারি? আমি কীভাবে এই বিষয়ে নিশ্চিত হব, যখন কিছু মানুষ চায় না আমি এখানে থাকি, কেননা আমার বাবা-মা অন্য দেশ থেকে এসেছিল?''
জার্মানিতে বর্তমানে ত্রিশ লক্ষ তুর্কি বংশোদ্ভূত নাগরিকের বসবাস৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শ্রমিক সংকট মেটাতে এদের অনেকেই জার্মানিতে আসেন৷ যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জার্মানির অর্থনীতিতে অভূতপূর্ব উন্নতি আনতে এদের ভূমিকা কম নয়৷
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন