করোনা মহামারি মোকাবিলায় সরকারের বিশেষ ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৫শে নভেম্বর৷ বিদায়ী সরকার ও বিশেষজ্ঞরা কিছু নিয়ম চালু রেখে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবার প্রস্তাব দিচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
করোনা মহামারি মোকাবিলার লক্ষ্যে ২০২০ সালের ২৮শে মার্চ জার্মান সংসদ গোটা দেশের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিল৷ ফেডারেল ও রাজ্য সরকারগুলির সেই বিশেষ ক্ষমতার মেয়াদ বেশ কয়েকবার বাড়ানো হয়েছে৷ দীর্ঘ প্রায় ১৯ মাস পর সেই মেয়াদ শেষ হচ্ছে৷ ২৫শে নভেম্বরের পর তার প্রয়োজনও ফুরিয়ে যাবে বলে মনে করছেন বিদায়ী সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান৷ তার মতে, জনসংখ্যার সিংহভাগ করোনা টিকা পেয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আর জরুরি ক্ষমতার আর প্রয়োজন নেই৷ বদ্ধ জায়গায় মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো কিছু মৌলিক নিয়ম চালু রেখে বাকি সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকার ও আঞ্চলিক প্রশাসনের উপর ছেড়ে দিলেই চলবে৷ তখন স্থানীয় অবস্থা অনুযায়ী প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিতে পারবে৷
জার্মানির হাসপাতালগুলির সংগঠনও স্পানের প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে৷ শীতের মাসগুলিতে করোনা সংক্রমণের হার বাড়ার পূর্বাভাস সত্ত্বেও বাড়তি চাপের আশঙ্কা করছে না এই সংগঠন৷ তবে রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট করোনা টিকাপ্রাপ্তদের ঝুঁকি সম্পর্কে এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নয়৷ চিকিৎসকদের এক সংগঠনের প্রধান ঝুঁকি এড়াতে সারা দেশে কিছু ক্ষেত্রে শুধু করোনাটিকাপ্রাপ্ত ও করোনাজয়ীদের প্রবেশের অধিকারের পক্ষে সওয়াল করেছেন৷ সে ক্ষেত্রে মাস্ক পরা বা দূরত্ব বজায় রাখার প্রয়োজন থাকবে না৷ সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি দলের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কার্ল লাউটারবাখ মনে করেন, সরকারের জরুরি ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হলেও ঝুঁকি এড়াতে কিছু নিয়ম চালু থাকবে৷ কোনো রাজ্য সরকার মাস্ক পরার মতো নিয়ম প্রত্যাহারের বেপরোয়া সিদ্ধান্ত নেবে না৷
স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্পানসহ একাধিক বিশেষজ্ঞ মহল এমন পরামর্শ দিলেও শেষ পর্যন্ত সংসদকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ সংসদ নির্বাচনের পর আগামী সপ্তাহে নতুন সদস্যরা প্রথমবার মিলিত হবেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে সংসদের কার্যক্রম শুরু করবেন৷ তবে বিদায়ী সরকার ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে নতুন সংসদও এই বিশেষ ক্ষমতার মেয়াদ বাড়াবে না বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলও জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরও বাড়ানোর প্রয়োজন দেখছে না৷ তবে ব্রিটেন বা ইউরোপের কয়েকটি দেশের মতো সব বিধিনিষেধ তুলে নিয়ে ‘ফ্রিডম ডে' ঘোষণা করার মতো পরিস্থিতি এখনো আসে নি বলে জার্মানিতে ঐকমত্য বজায় রয়েছে৷ শীতে বাড়তি সংক্রমণের ধাক্কা সামলে নিয়ে সম্ভবত আগামী বছর জার্মানি এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ বিশেষ করে আরও বেশি মানুষকে করোনা টিকার আওতায় এনে এবং বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে বুস্টার ডোজ দিয়ে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, রয়টার্স)
করোনা কমায় প্রকাশ্য উৎসবে প্রবাসীদের ঢল
জার্মানিতে করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল করায় প্রকাশ্য স্থানে অনেক মানুষ আবার সমবেত হতে পারছেন৷ সেই সুযোগে মানহাইমে বসবাসরত প্রবাসীরা আয়োজন করেন ঈদ পূর্ণমিলনী৷
ছবি: Arafatful Islam/DW
করোনা কমায় কমেছে বিধিনিষেধ
জার্মানিতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে করোনা সংক্রমণ তুলনামূলকভাবে কম থাকায় অনেক বিধিনিষিধ শিথিল রয়েছে৷ মানহাইম শহরে তিনশ’ জন পর্যন্ত প্রকাশ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে একত্রে অনুষ্ঠান করতে পারছেন৷ সেই সুযোগে শনিবার সেখানে এক অনুষ্ঠানে হাজির হন শতাধিক মানুষ৷
ছবি: Arafatful Islam/DW
প্রবাসীদের আয়োজনে যুক্ত নানা দেশের মানুষ
মানহাইমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঈদ পূর্ণমিলনীতে হাজির ছিলেন ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ বিশ্বের নানা দেশের মানুষ৷ ছবিতে পাকিস্তানি কয়েকজন তরুণীকে ঘাসের উপর মাদুর বিছিয়ে গল্প করতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Arafatful Islam/DW
করোনা কমায় স্বস্তি, রয়েছে উদ্বেগও
পুরো করোনার সময়টা ছোট তিন সন্তানকে নিয়ে কাটিয়েছেন সোনালী৷ ২০০৬ সাল থেকে জার্মানিতে বসবাসরত এই নারী জানান, করোনার সময় কিন্ডারগার্টেন বন্ধ থাকায় সন্তানদের ২৪ ঘণ্টাই নিজের সঙ্গে রাখতে হয়েছে৷ কাজটি কঠিন হলেও, সামলাতে পারায় স্বস্তি প্রকাশ করেন তিনি৷ এখন করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল থাকায় আবারও ঘোরাঘুরি শুরু করেছেন সোনালী৷ তবে ভবিষ্যতে আবার কী হয় তা নিয়ে উদ্বেগ আছে তার৷
ছবি: Arafatful Islam/DW
খোলা ছিল স্কুল, তবে...
মানহাইমের ঈদ আয়োজনে কথা হয় নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আনিকা সিদ্দিকা ইসলামের সাথে৷ সে জানায় যে করোনার সময় তাদের স্কুল বন্ধ হয়নি৷ বরং যখন সংক্রমণ বেশি ছিল তখন অনলাইনে ক্লাস চলেছে৷ সংক্রমণ কমে গেলে স্কুলে গিয়ে ক্লাস করতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের৷ পরীক্ষাও নেয়া হয়েছে শ্রেণীকক্ষে৷
ছবি: Arafatful Islam/DW
করোনায় দুই বছর বন্ধ ছিল আয়োজন
মানহাইমে প্রবাসীদের নিয়ে ঈদ উৎসব আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ী দেওয়ান শফিকুল ইসলাম৷ তিনি জানান, করোনার কারণে গত দুই বছর বাঙালিদের নিয়ে ঈদ উৎসব করা যায়নি৷ তবে, এবার বিধিনিষেধ শিথিল থাকায় আয়োজনটি করা গেছে৷
ছবি: Arafatful Islam/DW
আসছেন শিক্ষার্থীরাও
বাংলাদেশ থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য মাত্র দুই মাস আগে জার্মানিতে এসেছেন শায়লা৷ হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী জানান, করোনার কারণে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থীদের আসার ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে বটে তবে থেমে যায়নি৷ যেসব শিক্ষার্থী এখনো জার্মানিতে আসার অপেক্ষায় রয়েছেন তাদের ধৈর্য ধরে সব প্রক্রিয়া শেষ করার পরামর্শ তার৷
ছবি: Arafatful Islam/DW
বারবিকিউ
ঈদ পূর্ণমিলনীতে প্রধান আকর্ষণ ছিল বারবিকিউ৷ চিকেন উইংস, গরুর মাংসের সসেজ, খাসির মাংসসহ নানা কিছু পুড়িয়ে উৎসবে আগতদের পরিবেশন করা হয়েছে৷
ছবি: Arafatful Islam/DW
বাড়তি আকর্ষণ চা
তবে, ঈদ পূর্ণমিলনীতে চা এবং মিষ্টান্ন সরবরাহ করেছে পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে আগত অভিবাসীদের কয়েকজন৷
ছবি: Arafatful Islam/DW
ছবি তোলার হিড়িক
মানহাইমের একটি পার্কে এবার এই উৎসবের আয়োজন করা হয়৷ সেখানে সবুজ পরিবেশের মাঝে অনেককেই দেশীয় পোশাকে ছবি তুলতে দেখা গেছে৷
ছবি: Arafatful Islam/DW
সাময়িক মুক্তি
জার্মানিতে করোনা সংক্রমণ গত কয়েকসপ্তাহ কম থাকলেও এখন আবার বাড়তে শুরু করেছে৷ যদিও সংক্রমণ এখনও উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছায়নি, তবে গ্রীষ্মের ছুটির পর পরিস্থিতি আবারো বদলে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা৷ তবে আপাতত বিধিনিষেধের বাইরের সময়টাই উপভোগ করছেন সবাই৷
ছবি: Arafatful Islam/DW
তরুণদের সামনে আনার প্রয়াস
ঈদ উৎসবে জার্মানিতে জন্ম ও বেড়ে ওঠা দ্বিতীয় প্রজন্মের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে দেখা গেছে৷ এই আয়োজনে তাদেরকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরো গভীর করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ী দেওয়ান শফিকুল ইসলাম৷