পাহাড়ি অঞ্চলে বেড়াতে গেলে ছোট কাঠের বাড়ি দেখলে অনেকেরই সেখানে থাকতে ইচ্ছা করে৷ নরওয়েতে এক আধুনিক বহুতল কাঠের বাড়ি পরিবেশবান্ধব নির্মাণ পদ্ধতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে৷
বিজ্ঞাপন
নরওয়ের ব্রিমুনডাল উপত্যকায় মিয়োসা হ্রদের তীরে কাঠের তৈরি ১৮ তলার ভবনটির উচ্চতা সাড়ে পঁচাশি মিটার৷ গোটা বিশ্বে অন্য কোথাও এত বড় কাঠের বাড়ি নেই৷ এই প্রকল্প আবাসন ব্যবসায়ী আর্তুর বুখার্ট-এর ব্যক্তিগত স্বপ্ন ছিল৷ তিনি বলেন, ‘‘কাঠ দিয়ে কী করা সম্ভব, এই ভবন তার প্রতীক৷ জটিল ভবন, বহুতল ভবনও বটে৷ আমাদের কার্বন নির্গমন কমাতে হবে৷ ইস্পাত ও কংক্রিটের তুলনায় এই ভবন ৬০ শতাংশ কম সিওটু নির্গমন করে৷ নির্মল ও আরও স্পষ্ট এই ভাবনা মানুষ ও প্রকৃতির স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো৷’’
১৫ তলায় লাইফ আটলে ভিকেন-এর একটি ফ্ল্যাট রয়েছে৷ চারিপাশে কাঠের সংস্পর্শ তিনি খুবই উপভোগ করেন৷ লাইফ বলেন, ‘‘এভাবে কাঠের অনুভূতি, তার গন্ধ পাওয়া যায়৷ এত কাঠ যেন মনে আবেশ এনে দেয়৷ কাঠ জীবন্ত, ইস্পাত ও কংক্রিট মৃত৷ তাই মনে হয় এই ভবনটি যেন আপনার সঙ্গে বেঁচে রয়েছে৷’’
বহু বছরের মৌলিক গবেষণার মাধ্যমে এই ভবনটিকে তীব্র বাতাস ও চরম আবহাওয়ার ধাক্কা থেকে সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ কাঠ দিয়ে নির্মাণে পারদর্শী একটি কোম্পানি বাড়িটি ডিজাইন করেছে৷
শহরের চিত্র বদলে দিচ্ছে কাঠের বহুতল
03:57
প্রকল্পের সমন্বয়ক ও্যস্টেন এলিগসাস স্থাপত্যের ক্ষেত্রে একেবারে নতুন এই প্রচেষ্টায় শামিল ছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এর আগে আমরা কখনো এমন কাজ করি নি৷ তাই এটা যে সম্ভব, সেই বিশ্বাস রাখা জরুরি ছিল৷ অনেক পরিশ্রম ও বিনিদ্র রজনীর পর আমরা সঠিক দিশা দেখতে পেয়েছি৷ এত হালকা উপকরণই ছিল সবচেয়ে বড় সমস্যা৷ বাতাসের ধাক্কা, বাইরের সব শক্তি ভবনটিকে হেলিয়ে দিতে বা তা স্থানান্তর করতে পারতো৷’’
ভবনটির ভার সামলাতে থামগুলি মাটির আরও গভীরে বসাতে হয়েছে৷ অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাও বড় বিষয় ছিল৷ মোটা কাঠের থামগুলি এমনকি ইস্পাতের তুলনায়ও আরও বেশিক্ষণ আগুনের শিখা সামলাতে পারে৷ কাঠ দিয়ে নির্মাণের ক্ষেত্রে এটাও বড় সুবিধা৷
ভিয়েনা শহরেও ৮৪ মিটার উঁচু একটি কাঠের বহুতল তৈরি করা হচ্ছে৷ ফ্রান্সের বোর্দো শহরেও পরিবেশবান্ধব কাঠ দিয়ে একটি গোটা বসতি গড়ে তোলা হচ্ছে৷ লন্ডন শহরে স্থপতিরা প্রায় ৩০০ মিটার উঁচু ওক কাঠের ভবন পরিকল্পনা করছেন৷ নরওয়ের প্রকল্পের সমন্বয়ক ও্যস্টেন এলিগসাস মনে করেন, ‘‘এমন প্রবণতা পরিবেশবান্ধব নির্মাণের প্রতীক বলে আমি মনে করি৷ পরিবেশের কথা ভাবতে হবে৷ ভবিষ্যতে নির্মাণের ক্ষেত্রে কাঠ পরিবেশবান্ধব উপকরণ হতে পারে৷ শুধু উঁচু ভবন নয়, যে কোনো বাড়িতেই তা ব্যবহার করা যায়৷’’
কাঠের এই বহুতল ভবনে হোটেল ও কনফারেন্স রুমও রয়েছে৷ এখনো পর্যন্ত কাঠের তৈরি বহুতল ভবন ব্যতিক্রম রয়ে গেছে৷ কিন্তু মিয়োসা টাওয়ারকে ভবিষ্যতের ফ্ল্যাটবাড়ির ভালো দৃষ্টান্ত হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে৷
গেয়ারহার্ড সনলাইটনার/এসবি
কাঠের বাড়ি সমৃদ্ধ জার্মানির সুন্দর দশ শহর
জার্মানিতে প্রায় বিশ লক্ষ বাড়ি আছে, যেগুলোর প্রায় অর্ধেক কাঠ দিয়ে তৈরি৷ এমন বাড়ির বেশিরভাগেরই দেখা পাওয়া যাবে ছবিঘরে নাম করা দশটি শহরে৷
ছবি: picture-alliance/imagebroker/G. Lenz
কুয়েডলিনবুর্গ
এই শহরে ১,৩০০-র বেশি কাঠের বাড়ি রয়েছে৷ ১৯৯৪ সালে শহরের পুরোনো অংশকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে৷
ছবি: picture-alliance/imagebroker/GTW
সেলে
এই শহরে কাঠের বাড়িগুলো একের পর এক এমনভাবে দাঁড়িয়ে আছে যেন লকেটে গাঁথা মুক্তা! এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বাড়িটি তৈরি হয়েছিল ১৫৩২ সালে, নাম হপেনার হাউস৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Hollemann
ফ্রিৎসলার
গত কয়েক শতকে এই শহরের রূপে পরিবর্তন হয়নি৷ এখনো সেখানে গেলে কাঠের বাড়ি আর সরু লেনের দেখা পাওয়া যাবে৷ এসবের মাঝে পাওয়া যাবে ছোট রেস্তোরাঁ, আইসক্রিমের দোকান আর ক্যাফে – নীরব, শান্তির এক পরিবেশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Zucchi
মোনশাউ
সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে ভরপুর হওয়ার কারণে মোনশাউকে ‘আইফেলের মুক্তা’ নামে ডাকা হয়৷ প্রায় তিনশ’র মতো তালিকাবদ্ধ ভবন আছে সেখানে৷ পাথর বাঁধানো পথ ধরে হাঁটতে গিয়ে আর্ট গ্যালারি আর বুটিকের সন্ধান মিলবে৷
ছবি: picture-alliance/Dumont/R. Kiedrowski
ব্যার্নকাস্টেল-কুয়েস
মোজেল নদীর ধারে আঙুর খেত সমৃদ্ধ শহর ছিল ব্যার্নকাস্টেল৷ ১৯০৫ সালে এটি নদীর অপর পাশের কুয়েসের সঙ্গে মিলে যায়৷ ফলে শহরটির নাম এখন ব্যার্নকাস্টেল-কুয়েস৷ স্থান স্বল্পতার কারণে সেখানে বাড়িগুলো যতটা সম্ভব উঁচু করে তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/imagebroker/M. Moxter
এসলিঙেন
এই শহরে গেলেও অনেক আঙুর খেতের দেখা মিলবে৷ তের থেকে ষোলো শতকের মধ্যে নির্মিত ২০০-র বেশি কাঠের বাড়ি আছে সেখানে৷
ছবি: picture-alliance/Arco Images/J. Pfeiffer
ট্যুবিঙেন
বিশ্ববিদ্যালয় শহর বলে ট্যুবিঙেনের মোট বাসিন্দার তিনজনের একজন শিক্ষার্থী৷ মধ্যযুগে নির্মিত কাঠের বাড়িসহ শহরের সরু লেন, রাস্তা, সবকিছু ভালোভাবে সংরক্ষণ করে রাখা আছে৷
ছবি: picture-alliance/imagebroker/E. Bömsch
রটেনবুর্গ অব ডেয়ার টাউবার
কাঠের বাড়ি দেখার জন্য সম্ভবত জার্মানির সবচেয়ে পরিচিত শহর এটি৷ প্রতিবছর প্রায় ২০ লক্ষ পর্যটক সেখানে যান৷ ঐতিহাসিক ভবন, আঁকাবাঁকা চলার পথ, কাঠের বাড়ি, ৪২টি দরজা আর টাওয়ার সমৃদ্ধ মধ্যযুগীয় এই শহরের প্রাচীর – পর্যটক আকর্ষণের জন্য আর কি কিছু চাই!
ছবি: picture-alliance/imagebrokerW. Dieterich
বামব্যার্গ
ছবিতে শহরের পুরনো টাউন হল দেখতে পাচ্ছেন৷ রেগনিৎস নদীর মাঝে একটি কৃত্রিম দ্বীপ বানিয়ে সেখানে এটি নির্মাণ করা হয়েছে৷ টাউন হলের পেছনে সারি ধরে কাঠের অনেক বাড়ি রয়েছে, যেখানে একসময় জেলেরা বাস করতেন৷ বামব্যার্গে প্রায় ২,৪০০ তালিকাভুক্ত ভবন রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/imagebroker/G. Lenz
স্টাডে
হামবুর্গের কাছে এই ছোট্ট শহরটি অবস্থিত৷ ‘জার্মান টিম্বার ফ্রেম রুট’-এর মধ্যে এই শহরটিও পড়বে৷ আপনি যদি এমন একের অধিক শহর দেখতে চান, তাহলে ঐ রুটের একটি অংশ দেখলেও চলবে৷ রুটটি প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ৷ উত্তরে এলবে নদী থেকে শুরু করে দক্ষিণ লেক কনস্টান্স পর্যন্ত এর ব্যাপ্তি৷