২০১১ সালের ২২শে জুলাই আন্ডার্স বেরিং ব্রাইভিক প্রথমে একটি বোমা ফাটিয়ে এবং পরে গুলি চালিয়ে ৭৭ জন মানুষের প্রাণ নেয়, যাদের অধিকাংশ ছিল কিশোর-কিশোরী৷ গত বৃহস্পতিবার তারই বাবা ইয়েন্স ব্রাইভিক একটি সংবাদ সম্মেলন করেন৷
বিজ্ঞাপন
২০১১ সালে ব্রাইভিক নিজেকে বলত ‘‘জঙ্গি জাতীয়তাবাদী''৷ সে নাকি ইউরোপ থেকে সব মুসলিমকে বিতাড়ন করবে৷ নরওয়ের সরকারি নীতি ও সমাজের প্রতি নিজের প্রতিবাদ ব্যক্ত করার এক ভয়াবহ পন্থা বেছে নেয় ব্রাইভিক: প্রথমে রাজধানী অসলোর মন্ত্রণালয় এলাকায় একটি শক্তিশালী গাড়ি বোমা ফাটায় – যে বিস্ফোরণে আটজন মানুষ প্রাণ হারায়; তারপর সে উটোইয়া দ্বীপে গিয়ে একটি সামার ক্যাম্পের জন্য আগত কিশোর-কিশোরীদের দিকে গুলি চালিয়ে তাদের ৬৯ জনকে হত্যা করে৷ সামার ক্যাম্পের উদ্যোক্তা ছিল একটি বাম-ঘেঁষা যুব সংগঠন৷
তারপর ব্রাইভিকের বিচার হয়েছে এবং তাকে ২১ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে, যে দণ্ড শেষ হলেও তার মুক্তি পাবার সম্ভাবনা কম৷ ব্রাইভিক কিন্তু গত মাসে মিডিয়ার কাছে একাধিক চিঠি লিখে জানিয়েছে যে, সে তার সশস্ত্র সংগ্রাম পরিত্যাগ করেছে এবং গণতন্ত্রে তার আস্থা ফিরে পেয়েছে৷ এর কারণ: গ্রিসে নাৎসি-অনুপ্রাণিত গোল্ডেন ডন দলটির নির্বাচনি সাফল্য৷ ব্রাইভিক নিজেও নাকি কারাগার থেকেই তার নিজের ফ্যাসিস্ট দল গঠন করতে চায়৷ এপি সংবাদ সংস্থাকে পাঠানো ১৮ই আগস্টের একটি চিঠিতে ব্রাইভিক তার নিজের ‘‘বর্বরতার'' জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে – অপরদিকে বলেছে যে, তার প্রধান দুঃখ এ জন্য যে, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামেও বর্বরতা কাজে লাগে৷
নরওয়েতে বাংলার দেখা
নোবেলের দেশ সুইডেন হলেও শান্তি পুরস্কারটা কিন্তু দেয়া হয় নরওয়ে থেকে৷ সেই নরওয়ের রাজধানী অসলোর কিছু আকর্ষণীয় স্থান নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: DW/M. Z. Haque
‘ফিয়র্ড’-এর দেশ
লম্বা, সরু ও পর্বতঘেরা উপসাগর বা সামুদ্রিক খাঁড়িকে বলে ‘ফিয়র্ড’৷ নরওয়েতে এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেখা মেলে হরহামেশাই৷
ছবি: Tareq Onu
বাংলার দেখা
নরওয়ে বললে নোবেল শান্তি পুরস্কারের কথাও মনে আসে৷ রাজধানী অসলোতে রয়েছে ‘নোবেল পিস সেন্টার’৷ সেখানে শান্তিতে নোবেলজয়ীদের বিশেষভাবে স্মরণ করা হয়৷ সেন্টারের সুভেনির শপ এর ছবি এটি৷ ব্যাগটি তৈরি করেছেন বাংলাদেশের একজন নারী৷
ছবি: DW/M. Z. Haque
আমাদের ইউনূস
নোবেল পিস সেন্টারে অন্যান্য নোবেল বিজয়ীদের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে৷
ছবি: DW/M. Z. Haque
নোবেল দেয়ার স্থান
এই যে জায়গাটা দেখছেন এখানেই প্রতি বছর নোবেল পুরস্কার দেয়ার জন্য মঞ্চ তৈরি হয়৷
ছবি: DW/M. Z. Haque
অসলো অপেরা হাউজ
রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই থিয়েটারটি অসলোর অন্যতম আকর্ষণ৷ ২০০৮ সালে এটি তার সৌন্দর্যের জন্য ‘ওয়ার্ল্ড আর্কিটেকচার ফেস্টিভ্যাল’-এ একটি অ্যাওয়ার্ড পায়৷ এছাড়া ২০০৯ সালে ‘ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন প্রাইজ ফর কনটেম্পোরারি আর্কিটেকচার’ পুরস্কার জেতে এই অপেরা৷
ছবি: DW/M. Z. Haque
ইতিহাস গড়া কাঠের জাহাজ
বলা হয় ‘ফ্রাম’ নামে ওক গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি এই নৌকাটিই ‘সবচেয়ে শক্তিশালী কাঠের জাহাজ’৷ কারণ এটা দিয়ে উত্তর (৮৫°৫৭') ও দক্ষিণ মেরুর (৭৮°৪১') সবচেয়ে দূরে যাওয়া সম্ভব হয়েছে৷ কাঠের তৈরি অন্য কোনো বাহন দিয়ে যা সম্ভব হয়নি৷ পুরো জাহাজটিই এখন সংরক্ষণ করা হচ্ছে অসলোর ‘ফ্রাম মিউজিয়াম’-এ৷
ছবি: DW/M. Z. Haque
নৌকা যখন কফিন!
এটি ‘ওসেব্যার্গ শিপ’৷ দুজন নারীর কঙ্কাল পাওয়া গেছে এই জাহাজে৷ ৮৩৪ সালে অর্থাৎ প্রায় ১,১৭৯ বছর আগে এই জাহাজে ঐ দুই নারীকে সমাহিত করা হয়৷ সঙ্গে দিয়ে দেয়া হয় অলংকার, নিত্য-ব্যবহার্য জিনিস আর কিছু প্রাণী৷ ১৯০৪-০৫ সালে জাহাজটি উদ্ধার করা হয়৷ এরপর থেকে সেটি অসলোর ‘ভাইকিং শিপ মিউজিয়াম’-এ রাখা আছে৷
ছবি: DW/M. Z. Haque
উঁচু থেকে অসলো দেখা
উপর থেকে শহর দেখার মজাই আলাদা৷ অসলো গিয়ে পর্যটকরা সেই আনন্দ নিতে পারেন ছবির এই স্থাপনার শীর্ষে উঠে৷ এটি ‘হোলমেনকোলেন স্কি জাম্প’৷ বলা হয়, স্কি জাম্পিং-এর জন্য বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক স্থান এটি৷ ফলে পর্যটকদের কাছে অসলোর সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গাও এটি৷
ছবি: DW/M. Z. Haque
হোলমেনকোলেন থেকে অসলো
হোলমেনকোলেন থেকে অসলো দেখতে ঠিক এরকম৷
ছবি: DW/M. Z. Haque
ভিগেলান্ড পার্ক
নরওয়েজিয়ান শিল্পী ইমানুয়েল ভিগেলান্ডের স্থাপত্যকর্মের সংগ্রহশালা বলা যায় এই ভিগেলান্ড পার্ককে৷ এটারও স্থান অসলোতে৷
ছবি: DW/M. Z. Haque
10 ছবি1 | 10
খুনি ছেলে
আন্ডার্স ব্রাইভিকের বাবা ইয়েন্স ব্রাইভিক একজন নরওয়েজীয় কূটনীতিক৷ তিনি পরে অপর একটি বিবাহ করে ফ্রান্সে অভিবাসী হন৷ ব্রাইভিক অসলোয় মা-র কাছে মানুষ হয়৷ বাবার সঙ্গে বছরে বার দুই-তিন দেখা হতো বটে, কিন্তু তার ১৬ বছর বয়স হবার পর থেকে সেই সংযোগসূত্রটুকুও বিচ্ছিন্ন হয়৷ তবে ইয়েন্স ব্রাইভিকের পক্ষে এটুকু বলা চলতে পারে যে, বিবাহবিচ্ছেদের সময় তিনি ব্রাইভিকের দেখাশোনার ভার পেতে চেয়েছিলেন এবং আদালতেও গেছিলেন৷ আজও তাঁর মনে হয়, তাঁর যদি ব্রাইভিকের সঙ্গে আরো যোগাযোগ থাকত, তিনি যদি ‘‘আরো ভালো বাবা হতেন'', তাহলে ব্রাইভিক হয়ত একটা অন্য মানুষ হতো৷
এমনকি ইয়েন্স সম্প্রতি অসলোর কারাগারে ছেলের সঙ্গে দেখা করার কথাও ভেবেছেন, কিন্তু ছেলে তাঁকে চিঠি মারফত জানিয়েছে যে, প্রথমে ইয়েন্সকে ফ্যাসিস্ট মতবাদে বিশ্বাসী হতে হবে৷ চিঠির ধরণ দেখে নাকি ইয়েন্সের ভয় লেগেছে৷ ব্রাইভিক জেলে আরো উগ্রপন্থি, আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠছে, বলে তাঁর ধারণা৷ অপরদিকে: তাঁর নিজের সন্তান যে কী করে গণহত্যাকারী হয়ে উঠতে পারে, সেটা ইয়েন্সের কাছে আজও অবোধ্য৷