ইউক্রেন যুদ্ধের কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছেন জেলেনস্কি। অন্যদিকে সিওল জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা ইউক্রেনের ফ্রন্টলাইনে।
ইউক্রেনে বোমায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটি বাড়িছবি: George Ivanchenko/AA/picture alliance
বিজ্ঞাপন
আইসল্যান্ডে শুরু হয়েছে ইউক্রেন-নর্ডিক সম্মেলন। সেখানে যোগ দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সম্মেলনে জেলেনস্কি দুইটি বিষয়ের উপর জোর দিয়েছেন। শীত এগিয়ে আসছে। এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধ বিধ্বস্ত এলাকায় সাধারণ মানুষকে কীভাবে ঠান্ডার সঙ্গে লড়াই করার জন্য সাহায্য করা হবে, তা নিয়ে নর্ডিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। আর আলোচনা হয়েছে ইউক্রেনের বিজয় কৌশল নিয়ে। বস্তুত, আগেই জেলেনস্কি এই বিজয় কৌশলের কথা ঘোষণা করেছিলেন। ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়াকে হারিয়ে এই যুদ্ধে ইউক্রেন জয়লাভ করবে। সেই নিরিখে তারা একটি বিজয় কৌশল তৈরি করেছে। নর্ডিক নেতাদের সেই কৌশল বিস্তারিতভাবে জানিয়েছেন জেলেনল্কি।
এদিকে দক্ষিণ কোরিয়া সম্প্রতি জানিয়েছে, রাশিয়া উত্তর কোরিয়ার সেনাকে এই যুদ্ধে কাজে লাগাচ্ছে। অভিযোগ, উত্তর কোরিয়ার এক সেনা কর্মকর্তা ইউক্রেন যুদ্ধের ফ্রন্ট লাইনে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করছেন। যদিও এই তথ্যের কোনো নির্দিষ্ট সূত্র এখনো পর্যন্ত মেলেনি।
রাশিয়ার কুরস্কে ঢুকে ৭৪টি বসতি তারা দখল করে নিয়েছে বলে দাবি ইউক্রেনের। কী বলছেন কুরস্কের সাধারণ মানুষ?
ছবি: Roman Pilipey/AFP/Getty Images
রাশিয়ার ভূখণ্ডে ইউক্রেনের সেনা
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তারা যুদ্ধটা এবার রাশিয়ার ভূখণ্ডে নিয়ে গেছেন। ইউক্রেন জানিয়েছে, তাদের সেনা ১৩ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে পড়েছে। ৭৪টি বসতি তাদের অধিকারে আছে। এক সপ্তাহ হলো ইউক্রেনের সেনা কুরস্কে ঢুকেছে। রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেনের সেনার অগ্রগতি তারা থামাতে পেরেছে।
ছবি: ROMAN PILIPEY/AFP
'প্রথমে সবাই শান্ত ছিলেন'
কুরস্কের বাসিন্দা মার্গারিটা(আসল নাম জানাতে চাননি) ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''গত শুক্রবার যখন সাইরেন বাজলো, তখন মানুষ শান্ত ছিলেন। তারা নিজেদের কাজ করেছেন, বাজার করেছেন, সবই স্বাভাবিক ছিল। রাস্তায়, পার্কে মানুষ স্বাভাবিকভাবে হাঁটছিলেন। পরে সীমা্ন্ত থেকে খবর এলো, ইউক্রেনের সেনা আক্রমণ করেছে।''
ছবি: AP Photo/picture alliance
টিভি বললো, 'সাময়িক সমস্যা'
গোটা এলাকার জন্য সতর্কবার্তা জারি করা হয়। মার্গারিটা জানিয়েছেন, ''গোটা অঞ্চলকে সতর্ক করা হয়েছিল। আর আমরা এখন সাইরেনে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তাই সাইরেন সত্ত্বেও আমরা খুব একটা চিন্তিত হইনি। পরে আত্মীয়রা জানান, সীমান্তে তীব্র লড়াই চলছে। মানুষ ওই এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।''
ছবি: Ilya Pitalev/Sputnik/IMAGO
'পালাবার জন্য হুড়োহুড়ি'
অ্যান্টোনিনা কুরস্কে থাকেন, আর তার বোন থাকতেন সুদঝাতে। অ্যান্টোনিনা জানিয়েছেন, ''সুদঝা এখন ইউক্রেনের দখলে। তার বোন জুলিয়া বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছেন। ইউক্রেনের আক্রমণের পর মানুষ যেভাবে পেরেছে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।''
ছবি: AP Photo/picture alliance
'সবকিছু ফেলে আসতে হয়েছে'
অ্যান্টোনিনা জানিয়েছেন, তার বোন জুলিয়া এখন আত্মীয়দের কাছে দূরে চলে যেতে পেরেছেন। কিন্তু তিনি ব্যাংক কার্ড-সহ সব ডকুমেন্ট ফেলে এসেছেন। তবে তার সবচেয়ে বেশি চিন্তা পালিত হাঁস, মুরগি ও অন্য পশুদের নিয়ে।
ছবি: AP Photo/picture alliance
অর্থ ও রেশনের প্রতীক্ষায়
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, যাদের বাড়ি থেকে চলে আসতে হয়েছে, তাদের রেশন দেয়া হবে এবং ১০ হাজার রুবল দেয়া হবে। কিছু অসুবিধার জন্য জুলিয়ারা এখনো রেশন পাননি। তারা অপেক্ষা করছেন। অনেকে বলছেন, এই অর্থ দিয়ে এক বা দুই দিনের জন্য খাবার ও ওষুধ কেনা যেতে পারে। ফলে তা যথেষ্ট নয়।
ছবি: AP Photo/picture alliance
প্রতিবেশী এলাকাতেও আশংকা
কুরস্কের প্রতিবেশী বেলগোরোদের নিনা ডিডাব্লিওউকে বলেছেন, তারাও সমানে এয়ার রেইড সাইরেন শুনতে পাচ্ছেন। ডিডাব্লিউর সঙ্গে কথা বলার সময়ও সাইরেন বাজার শব্দ পাওয়া গেলো। নিনা জানিয়েছেন, তারা এখন সাইরেনে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। ইউক্রেন কুরস্কে ঢুকে পড়ার পর এখানে প্রচুর রাশিয়ার সেনা এসেছে।
সুদঝা অঞ্চলে নিখোঁজ মানুষদের নিয়ে সামাজিক মাধ্যম সরগরম। বলা হচ্ছে, ৪০ জন নিখোঁজ। অনেকে আত্মীয়দের নিয়ে আসার জন্য গেছিলেন। তাদের খোঁজ নেই। সামাজিক মাধ্যমে একজন লিখেছেন, ইউক্রেনের সেনা যাতে বিপাকে পড়ে, সেজন্য রাশিয়া গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক জায়গায় ফোনে যোগাযোগও করা যাচ্ছে না।
ছবি: Evgeniy Maloletka/AP Photo/picture alliance
'আগাম সতর্কতা ছিল না'
সামাজিক মাধ্যমে মানুষ প্রশ্ন তুলছেন, কেন গোয়েন্দারা ইউক্রেনের আক্রমণের খবর দেয়নি বা দিতে পারেনি? জুলিয়ানা বলেছেন, ''মানুষের আশংকা ছিল, কিন্তু কর্তৃপক্ষ আগাম কোনো সতর্কতা জারি করেনি।'' শ্বেতলানা বলেছেন, ''কোথায় গেল সিক্রেট সার্ভিস? তারা তো মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে?'' স্থানীয় প্রশাসন মানুষকে শান্ত থাকতে বলেছেন।
ছবি: Anatoliy Zhdanov/REUTERS
9 ছবি1 | 9
রাশিয়ার অত্যাচার
সম্প্রতি জাতিসংঘ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, আটক সেনা এবং বিরোধীদের উপর ভয়াবহ অত্যাচার চালানো হয় রাশিয়ার জেলে। দেশের ভিতর যারা রাশিয়ার বিরোধিতা করছে, তাদের সঙ্গেও একই কাজ করা হচ্ছে। মানবাধিকারের তোয়াক্কা না করে এই কাজ দিনের পরর দিন ধরে রাশিয়া চালিয়ে যাচ্ছে।
জাতিসংঘের হিসেবে অনুযায়ী রাশিয়ায় এমন রাজনৈতিক বন্দির সংখ্যা অন্তত এক হাজার সাতশ। কিছুদিন আগেও এই সংখ্যাটি ছিল এক হাজার তিনশ। এছাড়াও বিরাট সংখ্যক ইউক্রেনের নাগরিককে রাশিয়া আটক করেছে। তার মধ্যে ইউক্রেনের সেনাও আছে। এদের উপর ভয়াবহ অত্যাচার চালানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।
নাভালনির স্ত্রীর আর্জি
রাশিয়ায় তীব্র পুটিন বিরোধী মুখ ছিলেন নাভালনি। জেলে তার মৃত্যু হয়েছে। সম্প্রতি তার স্ত্রী একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি জানেন না পুটিনকে কীভাবে হারানো সম্ভব, বা আদৌ সম্ভব কি না। বিশ্বনেতারাও জানেন না কীভাবে পুটিনকে সরানো সম্ভব। কিন্তু প্রতিদিন এই চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে বলে জানিয়েছেন নাভালনির স্ত্রী।