‘‘নলিউড’’ বিশ্বসেরা
১৪ জুলাই ২০১২নলিউড নাকি বছরে এক হাজার থেকে দু'হাজার ছবি তৈরি করে, হলিউড কি বলিউড যার ধারে-কাছেও পৌঁছতে পারবে না৷ অপরদিকে মনে রাখা দরকার, নাইজিরীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি'র বাৎসরিক রোজগার মোট ২৫ কোটি ডলার, একটিমাত্র হ্যারি পটার কিংবা স্পাইডারম্যান ছবির বাজেট যার কাছাকাছি৷
নলিউডে সবই প্রায় সস্তাদরের প্রোডাকশন৷ বিনিয়োগ কম, সরকারি ভর্তুকি নেই বললে চলে৷ কাহিনি বলতে প্রেম-ক্ষমতালোলুপতা-বিশ্বাসঘাতকতা নিয়ে নানা ধরণের মেলোড্রামা৷ আফ্রিকা ম্যাজিক'এর মতো টেলিভিশন কেন্দ্রগুলি থেকে ২৪ ঘণ্টা এ ধরণের নাইজিরীয় ছবি দেখানো হয়, অনেকটা প্রায় ব্রাজিলের টেলেনভেলা'গুলির মতো৷ এছাড়া এসব ছবি রাস্তার দোকানদার এবং ফিরিওয়ালারাও বিক্রি করে থাকে৷ এছাড়া আছে ভিডিও ক্লাব৷ কিন্তু খোদ নাইজিরিয়াতেই ডজন দু'য়েকের বেশি সিনেমা হল নেই, আফ্রিকার অন্যান্য দেশে তো আরও কম৷
সব মিলিয়ে ছবিগুলোর মান এমন নয় যে, সেগুলো কোনো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে লোকের মন কিংবা চোখ কাড়তে পারে৷ তবে আফ্রিকার চলচ্চিত্র উৎসবগুলিতে নাইজিরিয়ার ছবি নিয়মিত পুরস্কার পেয়ে থাকে৷ ইউরোপের খ্যাতনামা চিত্রপরিচালকদেরও আফ্রিকান ছবির ‘‘আশাজনক তৃণমূল আন্দোলন''-এর কথা বলতে শোনা গেছে৷
সহজ-সরল ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে মাত্র কয়েক দিন কিংবা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তোলা এই সব ছবি৷ নাইজিরিয়ায় কোনো ফিল্ম স্টুডিও নেই৷ অধিকাংশ ছবির মোট বাজেট - ফিল্ম ক্রু, অভিনেতা-অভিনেত্রী, পোশাকআশাক, ব্যাকড্রপ, পরিবহণ, টেকনিকাল এফেক্ট, সব কিছু মিলিয়ে - সাকুল্যে দশ থেকে ত্রিশ হাজার ডলার৷
এই পরিস্থিতিতে নাইজিরিয়ার ছবি পশ্চিমি দর্শকদের কাছে কাঁচা হাতের, এমনকি অজ্ঞানত হাস্যকর বলে মনে হতে পারে৷ অপরদিকে আফ্রিকান দর্শকদের কাছে এই ছবিগুলোই তাদের বাস্তব৷ কিছু দৃষ্টান্ত দেওয়া যেতে পারে৷ এক বেশ্যালয়ের মালিক গ্রামাঞ্চলের এক সরল কিশোরীকে ভুলিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, বলছে, সে নাকি তাকে হোটেলে ওয়েট্রেসের চাকরি দেবে৷ কিংবা এক ডাইনির অভিশাপের ফলে এক দম্পতির দু'পক্ষের পরিবারের মধ্যে সম্পর্কে বিষাক্ত হয়ে উঠল৷ ডাইনিবিদ্যা-ঝাড়ফুঁক, ষড়যন্ত্র, দুর্নীতি, কেলেঙ্কারি, এই সব নিয়েই ছবির প্লট৷ আর আছে পারিবারিক ঝগড়া-বিবাদ, নারী নির্যাতন৷
সহজ-সরল সব দৃশ্য, অ্যাকশনের বিশেষ কোনো বালাই নেই, কেননা তাতে খরচ পড়ে৷ সব সামলানো গেলেও, বাকি থাকছে পাইরেসি: ছবি মুক্তি পাবার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তার জাল করা কপিতে বাজার ছেয়ে যায়৷ এ'ও নলিউডের বাস্তব৷
এসি / এএইচ (ডিপিএ)