আফ্রিকার নেতারা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার তিন দিনের মাথায় নাইজেরিয়ার জস শহরে জোড়া বোমা হামলায় অন্তত ১১৮ জন নিহত হয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার শহরের প্রধান বিপণি বিতান এবং একটি হাসপাতালে আধা ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি গাড়ি বোমায় এই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়৷
প্ল্যাটু স্টেটের পুলিশ কমিশনার ক্রিস ওলাকপে জানিয়েছেন, এই হামলায় আরো অন্তত ৫৬ জন আহত হয়েছেন৷ বিপণি বিতানের ধ্বংসস্তূপের নিচে আরো মৃতদেহ পড়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট গুডলাক জনাথন এ হামলাকে ‘বর্বরোচিত' আখ্যায়িত করে বলেছেন, তাঁর সরকার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হতে বদ্ধপরিকর৷ ‘মানব সভ্যতার শত্রুদের' এ ধরনের নাশকতায় সরকার পিছু হটবে না৷
পাঁচ বছর আগে সংগঠনটির জঙ্গি কার্যক্রম শুরুর পর থেকে তাঁদের হামলায় অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে৷ পশ্চিমা শিক্ষার বিরোধী বোকো হারামের জঙ্গিরা গত ১৪ এপ্রিল চিবোকের এক স্কুল থেকে অস্ত্রের মুখে ২৭৬ জন স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করে, যাঁদের মধ্য ২২৩ জনকে এখনো আটকে রাখা হয়েছে৷
আফ্রিকায় মানবাধিকারের ছবি
এক সময় আফ্রিকাকে বলা হতো ‘অন্ধকার মহাদেশ’৷ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই মহাদেশ সব দিক থেকে অনেক এগোলেও মানবাধিকার পরিস্থিতি এখনো খুব খারাপ৷ ছবিগুলো তারই প্রমাণ৷
ছবি: Adballe Ahmed Mumin
চলমান ছবি
এক রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় নিকিওয়ে মাসাঙ্গোর৷ চোখ খুলে দেখেন এক লোক তাঁর ওপরে৷ লোকটি বলল, চোখ ঢেকে রাখতে যাতে তাকে চেনা না যায়৷ তারপর সারা রাত ধরে চলল ধর্ষণ৷ দক্ষিণ আফ্রিকার এই নারীর বয়স এখন ৮৭ হয়ে গেলেও সেই রাতের কথা ভোলেননি মাসাঙ্গোর৷ তাঁর এ ছবি তুলেছেন জার্মান ডেভেলপমেন্ট মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডসের ‘আফ্রিকায় মানবাধিকারের ছবি’ ক্যাটাগরির ফাইনালিস্ট লুঙ্গি মবুলওয়ানা৷
ছবি: Lungi Mbulwana
পুলিশের নির্মমতা
পুলিশের পা ধরে রেহাই চাইছেন এক ওকাডা মোটর সাইকেল ট্যাক্সি চালক৷ তাঁকে গ্রেপ্তার করার প্রতিবাদ নগ্ন হয়ে জানিয়ে আরো বড় বিপদ ডেকে এনেছেন তিনি৷ পুলিশ বেধড়ক পেটাতে শুরু করে৷ নাইজেরিয়া সরকার প্রধান সড়কগুলোতে ওকাডা নিষিদ্ধ করার পরও চালাতে যাওয়াই এই তরুণের প্রথম অপরাধ৷ রাস্তায় সরকারের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার কাজে ভীষণ কঠোর নাইজেরিয়ার পুলিশ৷
ছবি: Olufemi Ajasa
ইচ্ছা থাকলে শিক্ষা হয়
শিশুগুলো এখন স্কুল থেকে মাকোকোয় ফিরবে নৌকা চালিয়ে৷ ওদের ভাগ্য ভালো, কেননা দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার লেখাপড়া, আর খুব কষ্ট করে হলেও তা তারা করতে পারছে৷ ওদের মতো ভাসমান বস্তির অনেক ছেলেমেয়েই কিন্তু এ সুযোগ পায়না৷
ছবি: Oluyinka Ezekiel Adeparusi
হতভাগ্যের আবেগ
দক্ষিণ আফ্রিকার এই লোকটি ২০ বছরেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন কারাগারে৷ সেই কষ্ট আছে, আছে অহঙ্কারও৷ মুখে অনেকগুলো ট্যাটু৷ প্রত্যেকটি ট্যাটু তাঁর দল এবং নিজের মর্যাদার প্রতীক৷ যত জটিলতা, যত দুর্ভোগই থাকুক জীবনে তারপরও সুন্দর কিছু থাকেই- ছবিটি দেখে তা বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই!
ছবি: Theodore Afrika
সড়কে ন্যায়দণ্ড
মোবাইল ফোন চুরি করেছে- এই সন্দেহে একটু আগে মারধর করা হয়েছে তাঁকে৷ গণপিটুনির পর তাঁকে বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ তারপর পুলিশ তাঁকে নিয়ে যায় হাসপাতালে৷ স্রেফ সন্দেহের বশে একজনকে নির্বিচারে পেটানোর অপরাধে কাউকেই গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ৷ সুবিচারের মানবাধিকার দক্ষিণ আফ্রিকার রাজধানীতে অনেক মানুষেরই নেই৷
ছবি: Lulama Zenzile
গৃহহারার কান্না
বিলাসবহুল হোটেল তৈরি করার জন্য ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে ঘর৷ আফ্রিকার আরেক দেশ চাদ-এর রাজধানীতে সাত সন্তানের এই মায়ের অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে তাঁর অশ্রু৷ এভাবে গৃহহারা করা হয়েছে ৬৭০টি পরিরারকে৷ অথচ ক্ষতিপূরণ হিসেবে একটি পয়সাও দেয়া হয়নি কাউকে৷
ছবি: Salma Khalil Alio
সাংবাদিকের অধিকারের লড়াই
সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার এবং হত্যার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন সোমালিয়ার সাংবাদিকরা৷ আব্দাল্লে আহমেদ মুমিন ছবিটি তুলেছেন ধর্ষিতার সাক্ষাৎকার নেয়ার কারণে এক সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের ঘটনার প্রতিবাদ জানানোর সময়৷ ‘আফ্রিকায় মানবাধিকারের ছবি’ ক্যাটাগরিতে এই ছবিও স্থান পেয়েছে৷ প্রতিযোগিতার পৃষ্ঠপোষক ডয়চে ভেলে এবং জার্মানির অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং উন্নয়ন মন্ত্রণালয়৷ বুধবারই বিজয়ীদের হাত পুরষ্কার তুলে দেয়ার কথা৷
ছবি: Adballe Ahmed Mumin
7 ছবি1 | 7
এরপরও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান শুরু না করায় প্রেসিডেন্ট গুডলাক জনাথনকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে৷ এমনকি তাঁর পদত্যাগেরও দাবি উঠেছে৷
এই পরিস্থিতিতে গত ১৭ই মে প্যারিসে এক সম্মেলনে অংশ নিয়ে নাইজেরিয়া, ক্যামেরুন, নাইজার, চাড ও বেনিনের প্রেসিডেন্টরা বোকো হারামের বিরুদ্ধে একসঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন৷
এর তিন দিনের মাথায় মঙ্গলবার বিকালে জস শহরের জনাকীর্ণ বাণিজ্যিক এলাকায় এই গাড়ি বোমা হামলা হলো৷
প্রথম বিস্ফোরণটি ঘটে শহরের প্রাণকেন্দ্রে একটি বিপণি বিতানে৷ হতাহতদের সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হওয়ার পর হট্টগোলের মধ্যেই জস ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের সামনে ঘটানো হয় দ্বিতীয় বিস্ফোরণ৷
শক্তিশালী বিস্ফোরণে নিউ আবুজা মার্কেট এলাকায় কয়েকটি ভবনও ধসে পড়ে৷ বহু দোকান পুড়ে যায় এবং হাসপাতাল, একটি ব্যাংক এবং বেশ কিছু যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷
নাইজেরিয়া সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুটি বোমার মধ্যে একটি লুকিয়ে রাখা হয়েছিল ট্রাকে, অন্যটি একটি মিনিবাসে৷ বিস্ফোরণের পর বহু পোড়া মৃতদেহ ঘটনাস্থল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে সরিয়ে নিতে দেখা যায়৷