জঙ্গি দমনের ‘কৌশল' হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তাদের, সম্মুখ সমরেও ছিল তাদের অংশগ্রহণ৷ আন্তর্জাতিক সংস্থার মধ্যস্থতায় ধ্বংসযজ্ঞের এলাকা থেকে এবার মুক্তি মিলেছে নাইজেরিয়ার ৯০০ জন ‘শিশু যোদ্ধার'৷
বিজ্ঞাপন
জঙ্গি সংগঠন বোকো হারাম ও আইএস-বিরোধী ‘লড়াইয়ে থাকা' এসব শিশুকে শুক্রবার মুক্তি দেওয়ার কথা জানিয়েছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)৷
এক খবরে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বোকো হারাম ও আইএস নির্মূলে সেনাবাহিনী-ঘনিষ্ঠ মিলিশিয়া বাহিনী ‘সিভিলিয়ান জয়েন্ট টাস্ক ফোর্স'-এর সহযোগী হিসাবে কাজ করছিল ওই শিশুরা৷
ইউনিসেফের এক বিবৃতিতে বলা হয়, মিলিশিয়াদের হাত থেকে এ পর্যন্ত মুক্তি পাওয়া শিশু যোদ্ধার সংখ্যা ১,৭০০৷ গত অক্টোবরে প্রথম দফায় ৮৩৩ জনকে মুক্তি দিয়েছিল তারা৷
কোন কোন দেশে রয়েছে শিশু যোদ্ধা
পৃথিবীর বিভিন্ন কোণায় চলছে সংঘর্ষ৷ আর এসব সংঘর্ষে শিশুরা যে কেবল সহিংসতার শিকার হচ্ছে তা নয়, তাদের হাতেও উঠছে হাতিয়ার৷ ছবিঘরে থাকছে সেসব দেশের কথা৷
ছবি: Guillaume Briquet/AFP/Getty Images
ভারত
ছত্তিশগড়ের মতো মাওবাদীর প্রভাব আছে এমন এলাকাগুলোতে অনেক শিশুর হাতে বন্দুক তুলে দেয়া হয়েছে৷ পুলিশের সঙ্গে মাওবাদীদের সংঘর্ষে বেশ কিছু শিশু নিহতও হয়েছে৷
ছবি: AP
আফগানিস্তান
আফগানিস্তানে তালিবানসহ আরো কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন শিশুদের যুদ্ধে শামিল করে৷ বিশেষ করে এদের আত্মঘাতী হামলা চালানোর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷ এমনকি আফগান পুলিশের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আছে শিশুদের পুলিশে ভর্তি করানোর৷
ছবি: picture alliance/Tone Koene
মিয়ানমার
মিয়ানমারে বহু বছর আগে থেকে শিশুদের জোর করে সেনাবাহিনীতে ভর্তি করিয়ে দেয়ার চল রয়েছে এবং সংঘাতপূর্ণ এলাকায় লড়াইয়ে পাঠানো হয় তাদের৷ এদের মধ্যে ১১ বছর বয়সি শিশুও রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P.Kittiwongsakul
মধ্য আফ্রিকা
মধ্য আফ্রিকার দেশগুলোতে ১২ বছরের শিশুদের বিভিন্ন বিদ্রোহী দলে বন্দুকের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷
ছবি: UNICEF/NYHQ2012-0881/Sokol
চাদ
সেই দেশে কেবল বিদ্রোহী দলগুলোই নয়, সরকারি দলের বিভিন্ন সংগঠনেও শিশুদের যোদ্ধা হিসেবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷ ২০১১ সালে সরকার সেনাবাহিনীতে শিশুদের ভর্তি না করার বিষয়ে সরকার এক সিদ্ধান্তে পৌঁছায়৷
ছবি: UNICEF/NYHQ2010-1152/Asselin
কলম্বিয়া
দক্ষিণ অ্যামেরিকার এই দেশটিতে সম্প্রতি গৃহযুদ্ধ শেষ হয়েছে৷ কিন্তু এর আগে ফার্ক বিদ্রোহীরা শিশুদের যোদ্ধা হিসেবে প্রশিক্ষণ দিত৷
ছবি: AP
ডেমোক্রেটিক রিপাবলিকান অফ কঙ্গো
যুক্তরাষ্ট্রের এক জরিপ বলছে, এক সময় ডেমোক্রেটিক রিপাবলিকান অফ কঙ্গোয় ৩০ হাজার কিশোর-কিশোরী বিভিন্ন গ্রুপের হয়ে লড়াইয়ে অংশ নিত৷ এমনকি যৌনদাসী হিসেবেও কিশোরীদের ব্যবহার করত এসব গোষ্ঠী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gambarini
ইরাক
আল কায়েদা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে শিশুদের কেবল যোদ্ধা হিসেবেই নয়, গুপ্তচর হিসেবেও ব্যবহার করে৷ এছাড়া আত্মঘাতী হামলায় শিশুদের ব্যবহার করে তারা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
সোমালিয়া
জঙ্গি সংগঠন আল শাবাব ১০ বছরের শিশুদেরও জোর করে তাদের দলের যোদ্ধা হিসেবে গড়ে তোলে৷ বেশিরভাগ সময়ই শিশুদের স্কুল বা বাড়ি থেকে অপহরণ করে দলে নেয়া হয়৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/Abdi Warsameh
দক্ষিণ সুদান
২০১১ সালে দক্ষিণ সুদান আলাদা রাষ্ট্র হওয়ার পর শিশুদের সেনাবাহিনীতে ঢোকানোর বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করে৷ তারপরও বেশ কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠী শিশুদের ব্যবহার করছে৷
ছবি: DW/A. Stahl
10 ছবি1 | 10
নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলে বোকো হারাম জঙ্গিদের দমনে ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালে সাড়ে তিন হাজার শিশুকে নিয়োগ দেওয়া হয় বলে সংস্থাটি জানাচ্ছে৷
বিবৃতিতে নাইজেরিয়ায় ইউনিসেফের প্রধান মোহামেদ ফাল বলেছেন, এই মুক্তি প্রক্রিয়া ‘‘শিশুদের অধিকার সংরক্ষণের একটি ধাপ৷ এটাকে স্বীকৃতি ও উৎসাহ দিতে হবে৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিরোধের বলি হচ্ছিল শিশুরা৷ সশস্ত্র গোষ্ঠীর দ্বারা সামরিক ও বেসামরিক ভূমিকা কাজে ব্যবহৃত হচ্ছিল তারা৷ এই শিশুরা সেখানে প্রতিনিয়ত মৃত্যু, হত্যা ও সংঘাত প্রত্যক্ষ করেছে৷''
জঙ্গিবাদ দমনে নাইজেরিয়ায় শিশুদের ব্যবহার একটি রীতিতে দাঁড়িয়ে গেছে৷ জঙ্গি-গোষ্ঠী বোকো হারামের পাশাপাশি মিলিশিয়া বাহিনী ‘সিভিলিয়ান জয়েন্ট টাস্ক ফোর্স' শিশুদের নিয়োগ করে থাকে৷ সেখানে মোট কতজন ‘শিশু যোদ্ধা' রয়েছে তার সুস্পষ্ট কোনো হিসাব নেই৷
নাইজেরিয়ায় বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেটবিরোধী যুদ্ধে এ পর্যন্ত ৩০ হাজার লোক নিহত এবং প্রায় ১০ লাখ জন বাস্তুচ্যূত হয়েছেন৷ তবে তেলসমৃদ্ধ ওই এলাকায় সহসা এই সংঘাত থামার কোনো লক্ষণ নেই৷
বিশ্বের ভয়ংকর পাঁচ জঙ্গি সংগঠন
তথাকথিত জঙ্গিদের কারণে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে৷ অনেকেরই ধারণা তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস-ই সবচেয়ে ভয়ংকর জঙ্গি গোষ্ঠী৷ কিন্তু বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচি বা গ্লোবাল টেররিজম ইনডেক্স কিন্তু বলছে ভিন্ন কথা৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Lieman
বোকো হারাম
ইসলামিক স্টেট বা আইএস নয়, বিশ্বের ভয়ংকর জঙ্গি সংগঠনগুলোর তালিকার শীর্ষে রয়েছে নাইজেরিয়ার বোকো হারাম৷ ২০১৫ সালে আবু বকর শেকাউ-এর নেতৃত্বে এই জঙ্গি গোষ্ঠীটি ৬ হাজার ৬৪৪ জন মানুষকে হত্যা করেছে৷ তাদের হামলায় আহত হয়েছে ১,৭৪২ জন৷ বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক৷ এছাড়া হাজারো কিশোরীকে অপহরণ করেছে বোকো হারাম৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S.Alamba
ইসলামিক স্টেট
যদিও বোকো হারাম আইএস-এর তুলনায় বেশি মানুষকে হত্যা করেছে, কিন্তু আতঙ্ক সৃষ্টির দিক থেকে সবচেয়ে উপরে আছে আইএস৷ বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি বলা হচ্ছে আইএসকে৷ ২০১৫ সালে তাদের হাতে প্রাণ হারিয়েছে ৬ হাজার ৭৩ জন মানুষ এবং আহত হয় ৫ হাজার ৭৯৯ জন৷ ১০৭১টি হামলা চালিয়েছে তারা বিশ্ব জুড়ে৷ আবু বকর আল-বাগদাদির নেতৃত্বে সংগঠনটি সিরিয়া, ইরাক, তুরস্ক ও ইউরোপ জুড়ে এখনো হামলা চালিয়ে যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তালেবান
১৯৯৪ সালে আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ চলার সময় এই জঙ্গি সংগঠনটির আবির্ভাব৷ বিশ্বের সবচেয়ে অভিজ্ঞ জঙ্গি সংগঠন বলা হয় এদের৷ ২০১৫ সালে তালেবানের হাতে প্রাণ হারিয়েছে ৩ হাজার ৪৭৭ জন এবং আহত হয়েছে ৩ হাজার ৩১০ জন৷ গত বছর বিশ্ব জুড়ে ৮৯১ টি হামলা চালিয়েছে তারা৷ হিবাতুল্লাহ আকন্দজাদা এখন তালেবানের নেতৃত্বে রয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Noorullah Shirzada
ফুলানি জঙ্গি গোষ্ঠী
বিশ্বব্যাপী এদের তেমন পরিচিতি নেই৷ এরা নাইজেরিয়ার ফুলা সম্প্রদায়ের মানুষ৷ এদের লক্ষ্য ফুলানির ভূমি মালিকদের হত্যা করা৷ ২০১৫ সালে ১৫০ টি সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে ফুলানি, তাদের হামলায় মারা গেছে ১ হাজার ২২৯ জন৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Lieman
আল-শাবাব
বোকো হারামকে যদি আইএস-এর সাথে তুলনা করা হয়, তবে আল শাবাবকে তুলনা করা যায় আল-কায়েদার সঙ্গে৷ পূর্ব আফ্রিকায় এদের আধিপত্য অনেক বেশি৷ সোমালিয়াকে ইসলামিক রাষ্ট্র বানানোই তাদের মূল লক্ষ্য৷ গত বছর জঙ্গি গোষ্ঠীটি ৪৯৬টি হামলা চালিয়েছে, হত্যা করেছে ১ হাজার ২১ জন মানুষকে, আহত হয়েছে ৮৫০ জন৷