আজকাল মোবাইল ফোন, টেলিভিশন, কম্পিউটার দ্রুত পুরানো হয়ে যায়৷ পুরানোকে সরিয়ে আসে হালের মডেল৷ সেই ইলেকট্রনিক বর্জ্য রিসাইক্লিং না করলে মানুষ ও পরিবেশের ক্ষতি অনিবার্য৷ এই লক্ষ্যে নাইজেরিয়ায় শুরু হয়েছে এক দারুণ উদ্যোগ৷
বিজ্ঞাপন
নাইজেরিয়ার লাগোস শহরে ইলেকট্রনিক বর্জ্য ফেলার অনেকগুলি জায়গা রয়েছে৷ সেখানে প্লাস্টিকের পোড়া গন্ধ নাকে আসে৷ সেই বর্জ্য কাজে লাগিয়ে অনেক মানুষ আয় করেন৷ কিন্তু বিষাক্ত টক্সিক ধোঁয়া ও হেভি মেটালের কারণে সেই কাজ বেশ বিপজ্জনক৷ কর্মীরা হাতে করেই ইলেকট্রনিক বর্জ্য আলাদা করেন এবং কাঁচামাল হিসেবে সেগুলি বেচে দেন৷
এমন বর্জ্য ফেলার জায়গাগুলি কিন্তু বে-আইনি৷ গোপনে সেখানে ভিডিও তোলা হয়েছে, কারণ বর্জ্য কুড়ানো মানুষগুলি নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে চান৷ নাইজেরিয়ার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংগঠনের প্রধান প্রো. ওলাডেলে ওসিবানজো বলেন, ‘‘তারা একটি যন্ত্র দিয়ে অন্যটির মেরামতি করে৷ কোনটা ভালো আছে, কোনটা নয় – তা তারা দেখে৷ সেটা নিয়ে কী করবে বুঝতে পারে না৷ তাই মাটিতে পুঁতে অথবা পুড়িয়ে ফেলে৷ তার ফলে সৃষ্ট ডায়ক্সিন বাতাস ও মাটি দুষিত করে৷ তাদের কার্যকলাপের ফলে মাটিতে অনেক সময়ে ৫০০ গুণ হেভি মেটাল শনাক্ত করা হয়৷’’
ময়লা দিয়ে ব্যবসা করেন তাঁরা
বর্জ্য, বিশেষ করে প্লাস্টিক বর্জ্যকে কাজে লাগিয়ে অনেকেই ব্যবসা করছেন৷ এতে একদিকে যেমন পরিবেশের ভাল হচ্ছে, তেমনি কিছু মানুষের কর্মসংস্থানও হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Frentzen
বিলিকিস আদেবিয়ি-আবিওলা
যুক্তরাষ্ট্রে এমবিএ করার পর আইবিএম-এ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পাঁচ বছর কাজ করার পর নিজ দেশ নাইজেরিয়ায় গিয়ে বর্জ্য নিয়ে ব্যবসা করছেন৷ দেশটির সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা অধ্যুষিত শহর লাগসের ময়লা নিয়ে ব্যবসা করছেন৷ কোম্পানির নাম ‘উইসাইকেলার্স’৷ তাদেরকে আবর্জনা দেয়ার মাধ্যমে স্থানীয়রা ‘উপহার’ পেয়ে থাকেন৷ আর আবিওলার কোম্পানি ঐ আবর্জনা থেকে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে৷ আরও জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: WeCyclers
থাটো গাটহানিয়া ও রেয়া এনগোয়ানে
দক্ষিণ আফ্রিকার এই দুই তরুণী প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে স্কুল ব্যাগ তৈরি করেন৷ দরিদ্র শিক্ষার্থীদের এগুলো দেয়া হয়৷ এ সব ব্যাগে সোলার প্যানেল বসানো আছে৷ ফলে শিক্ষার্থীরা হেঁটে স্কুলে যাওয়া-আসার ফলে প্যানেলগুলো যে চার্জ পায় তা দিয়ে রাতের বেলায় আলো জ্বলে৷ ফলে মোমবাতি না জ্বালিয়ে শিশুরা পড়তে পারে৷ ছবিতে একেবারে ডানে রেয়া আর বাম থেকে তিন নম্বরে থাটোকে দেখা যাচ্ছে৷ আরও জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: repurposeschoolbags.com/Screenshot
অ্যান্ড্রু মুপুয়া
মাত্র ১৬ বছর বয়সে স্কুলে পড়ার সময় বাবা-মা দু’জনই যখন চাকরি হারিয়ে ফেলেন তখন অ্যান্ড্রু কাগজের ব্যাগ তৈরির ব্যবসা শুরু করেন৷ পুঁজি জোগাড় করতে ৭০ কেজি প্লাস্টিক বোতল বিক্রি ও শিক্ষকের কাছ থেকে টাকা ধার নেন তিনি৷ ব্যাগ তৈরি শিখতে ইন্টারনেট আর ভিডিওর সাহায্য নেন তিনি৷ বর্তমানে ২৪ বছর বয়সি অ্যান্ড্রুর অধীনে ২০ জন কাজ করছেন৷ আরও জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: DW
লরনা রুট্ট
ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে কেনিয়ার নাইরোবিতে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ফ্যাক্টরি গড়ে তোলেন তিনি৷ এসব প্লাস্টিক দিয়ে তাঁর কোম্পানি বেড়া তৈরি করে৷ ঘরবাড়ি সহ সংরক্ষিত এলাকায় বেষ্টনী দিতে তাঁর বেড়া ব্যবহৃত হয়৷ কাঠের বদলে এ সব বেড়া খুব দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে৷ আরও জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: L. Rutto
বেথেলহেম টিলাহুন আলেমু
আফ্রিকার ফুটওয়্যার ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ইথিওপিয়ার ‘সোলরেবেলস’ বিশ্বে অনেক জনপ্রিয়৷ আলেমু’-র উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিটি গাড়ির পুরনো টায়ার, ফেলে দেয়া জামাকাপড় ব্যবহার করে জুতা তৈরি করে৷ আরও জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Frentzen
বাংলাদেশে রিসাইক্লিং ব্যবসা
প্লাস্টিক বোতল রিসাইকেল করে এমন অনেক কারখানা গড়ে উঠেছে ঢাকায়৷ তাদের হয়ে পরিত্যক্ত বোতল সংগ্রহ করছেন অনেকে৷ এতে তাদের দারিদ্র্যতা দূর হচ্ছে৷ বোতলগুলো মেশিন দিয়ে টুকরো করে প্লাস্টিক পণ্য বানায় এমন কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হয়৷ কিছু অংশ বিদেশে, বিশেষ করে চীনেও রপ্তানি হয়ে থাকে৷ আরও জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M.Uz Zaman
ওয়েস্ট কনসার্ন
বেশ কয়েক বছর ধরে ঢাকার বর্জ্য থেকে কমপোস্ট সার তৈরি করছে ওয়েস্ট কনসার্ন নামের একটি কোম্পানি৷ তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটি এক লক্ষ মেট্রিক টনের বেশি বর্জ্য রিসাইকেল করেছে৷ বিস্তারিত জানতে উপরে ‘+’ চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: wasteconcern.org
7 ছবি1 | 7
ইফেয়ানি ওচোনগর ইলেকট্রনিক বর্জ্যের জন্য ভিন্ন সমাধানসূত্র বার করেছেন৷ তিনি ই-টেরা নামের এক রিসাইক্লিং কোম্পানি খুলেছেন, যা সরকারের বিধিনিয়ম মেনে কাজ করে৷ তিনি বলেন, ‘‘এখানে ইলেকট্রনিক যন্ত্র খুলে যন্ত্রাংশ আালাদা করা হয়৷ তারপর প্রত্যেকটি টুকরোর মৌলিক অংশগুলিও আলাদা করা হয়, যেমনটা টেবিলের উপর দেখা যাচ্ছে৷ কিবোর্ড, ইস্ত্রি, স্পিকারের অংশগুলি অন্যদিকে রাখা আছে৷’’
ইফেয়ানি এই জটিল সিস্টেমে বিনিয়োগ করেছেন, গোটা নাইজেরিয়ায় যার তুলনা নেই৷ এর মাধ্যমে তাঁর কোম্পানি ইলেকট্রনিক বর্জ্য এমনভাবে আলাদা করতে পারে, যাতে মানুষ বা পরিবেশের ক্ষতি না হয়৷ টক্সিক ধোঁয়াও শুষে নেওয়া হয়৷
বিশ্বব্যাপী তথ্য প্রযুক্তি বাজারে সব সময়ে উদ্ভাবনের চাপ কাজ করে৷ নতুন ডিভাইস দ্রুত সেকেলে হয়ে পড়ে৷ ফলে টেলিভিশন, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, চার্জার – সব কিছু ইলেকট্রনিক বর্জ্যে পরিণত হয়৷
ই-টেরা নাইজেরিয়ার প্রথম ই-ওয়েস্ট কোম্পানি৷ ডিভাইস খুলে ফেলার পর ইলেকট্রনিক বর্জ্য আলাদা করে কাঁচামাল অনুযায়ী ভাগ করা হয়৷ এর একটা বড় অংশ বিক্রি করা হয়৷ সেটাই কোম্পানির আয়ের প্রধান উৎস৷
২০১৭ সালে গোটা বিশ্বে প্রায় ৫ কোটি টন ইলেকট্রনিক বর্জ্য সৃষ্টি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ তার কিছু অংশ লাগোস শহরের উপকণ্ঠ্যে বর্জ্যের স্তুপে জমা হবে৷ কিন্তু ইফেয়ানি ওচোনগর সেই বোঝাকে টেকসই সম্পদে রূপান্তরিত করে প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছেন৷