নাইজেরিয়ায় পোলিও রোধ
১৬ নভেম্বর ২০১৩পোলিও এমন একটি রোগ যার কারণে দেহের যে-কোনো অংশ বিকল হয়ে যেতে পারে৷ শিশুদের এই রোগ বেশি হয়৷ পানি ও খাবারের মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এটি৷ অথচ কানোর অভিভাবকরা কিছুতেই শিশুদের পোলিওর টিকা দিতে রাজি নন৷ তাদের রাজি করানোর দায়িত্ব চিকিৎসক মাহমুদ জুবাইরু ও তাঁর ভ্যাকসিনেশন টিমের৷
বার্তা সংস্থা এএফপিকে জুবাইরু বলেন, টিকাদান কর্মসূচি কিভাবে কাজ করছে তা জানা এখন খুব সহজ হয়ে গেছে৷ ভ্যাকসিনেশন দলের সাথে ফোন রয়েছে, সেই ফোন ট্র্যাক করে সেসব তথ্য স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ওয়েবসাইটে পৌঁছে যাচ্ছে৷ ফলে তিনি জানতে পারছেন কোথায় কোথায় টিকা দেয়া হয়েছে, আর কোথায় হয়নি৷
‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন'এর হয়ে কাজ করছেন তাঁরা৷ নাইজেরিয়া থেকে পোলিওর প্রাদুর্ভাব দূর করতে চার বছরের প্রকল্পে কাজ করছে এই ফাউন্ডেশন৷
এ পর্যন্ত নাইজেরিয়ায় ছয়টি স্থান ঠিক করেছেন জুবাইরু৷ সেখানে প্রতিদিন ভ্যাকসিনেশন দল গিয়ে স্থানীয়দের টিকার উপকারিতা বোঝানোর চেষ্টা করছেন৷ গুগল ম্যাপস সফটওয়ারের মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চল ভাগ করেছেন তিনি এবং লক্ষ্য রাখছেন কোথায় দল গেছে, আর কোথায় যায়নি৷
কানোতে থাকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন চিকিৎসক জানালেন, স্থানীয় ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতারা এখন বেশ সচেতন এবং তাঁদের মাধ্যমে এই সচেতনতা প্রতিটি পরিবারে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে৷
নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট গুডলাক জোনাথন বলেছেন, যেভাবে কাজ হচ্ছে তাতে ২০১৪ সালের মধ্যে নাইজেরিয়া থেকে পোলিও দূর হবে বলে আশা করছেন তিনি৷
গেটস ফাউন্ডেশন নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলের কানোসহ আটটি রাজ্যের ৪০টি স্থান চিহ্নিত করেছে, যে স্থানগুলো পোলিও ঝুঁকিপূর্ণ৷ তবে এই টিকাদান কর্মসূচিতে প্রধান বাধা জঙ্গিগোষ্ঠী৷ এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে কানোর দুটি পোলিও ক্লিনিকে বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হয় নয় নারী কর্মী৷
গেটস ফাউন্ডেশনের কর্মসূচির ফলেই হয়ত এ সপ্তাহে পোলিওতে আক্রান্ত বিশ্বের ৩২৮ জন রোগীর মধ্যে মাত্র ৫১ জন নাইজেরিয়ার৷ অথচ এক বছর আগে বিশ্বের ২২৩ জন রোগীর মধ্যে ১২১ জনই ছিলেন নাইজেরিয়ার৷ জুবাইরুর ধারণা, প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে পোলিও -র সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব হচ্ছে৷
২০০৩ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে ১৩ মাস কানোতে কোনো টিকাদান কর্মসূচি ছিল না৷ কারণ স্থানীয় মুসলিম ধর্মীয় নেতা এবং চিকিৎসকদের অভিযোগ ছিল, এ টিকার মধ্যে এমন পদার্থ রয়েছে যার ফলে নারীরা বন্ধ্যাত্বের শিকার হতে পারেন৷ তাঁদের ধারণা ছিল, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব টিকার মাধ্যমে আফ্রিকাকে জনশূন্য করতে এ পরিকল্পনা করছে৷ এর ফলে দেখা গেছে কানোতে পোলিও সংক্রমণ ক্রমেই বেড়ে গেছে৷ অনেক শিশু বিকলাঙ্গ হয়েছে৷ মারাও গেছে অনেকে৷
নাইজেরিয়া, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান এই তিনটি দেশে পোলিও-র প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ৷ তাই এই দেশগুলোকে পোলিও মুক্ত করতে নানা সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে৷ সম্প্রতি সোমালিয়া ও সিরিয়াতেও পোলিও ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷
এপিবি/জেডএইচ (এপি,এএফপি)