নাইজেরিয়া : অটিজম সচেতনতায় কানিয়েচুকুর ইতিহাস গড়া ক্যানভাস
৪ মে ২০২৫
নাইজেরিয়ার ১৫ বছর বয়সি কিশোর কানিয়েচুকু টাগবো-ওকেকে বৃহত্তম ক্যানভাসে ছবি এঁকে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান করে নিয়েছে।
কানিয়েচুকু টাগবো-ওকেকের বৃহত্তম ক্যানভাসে আঁকা ছবিছবি: David Durowaiye/AP Photo/picture alliance
বিজ্ঞাপন
অটিজমের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ছবি আঁকার এমন আয়োজনে অংশ নিয়ে কানিয়েচুকু তাই সংবাদ শিরোনামে৷
কানিয়েচুকুর তুলির ছোঁয়ায় ১২,৩০৪ বর্গমিটারের ক্যানভাসটি হয়ে উঠেছে ইমোজি দিয়ে ঘেরা দারুণ এক শিল্পকর্ম। একটি সাধারণ ফুটবল মাঠের আয়তন ৭,১৪০ বর্গমিটার, সেই তুলনায় অনেক বড় ক্যানভাসে ছবি এঁকে রীতিমতো চমকে দিয়েছে ১৫ বছর বয়সি কানিয়েচুকু৷
এভাবে ইতিহাসে ঠাঁই করে নিয়ে নাইজেরীয় কিশোর খুব খুশি৷ সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় সে জানায়, "আমি ভালো অনুভব করেছি। খুশি। খুবই ভালো।"
কানিয়েচুকু টাগবো-ওকেকের এই শিল্পকর্মে অটিজমের প্রতীক একটি বহু রঙের ফিতা রয়েছে।নভেম্বর ২০২৪-এ আঁকা এই শিল্পকর্মটি সম্প্রতি বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসে গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের স্বীকৃতি পায়।
কানিয়েচুকু টাগবো-ওকেকে বৃহত্তম আর্ট ক্যানভাসে ছবি এঁকে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান করে নিয়েছেছবি: David Durowaiye/AP Photo/picture alliance
টাগবো-ওকেকের আগে সবচেয়ে বড় ক্যানভাসে ছবি আঁকার বিশ্বরেকর্ডটি ছিল ৪২ বছর বয়সি ইমাদ সালেহির। তার ক্যানভাসের আয়তন ছিল ৯,৬৫২ বর্গ মিটার৷
নাইজেরিয়ার সংস্কৃতি মন্ত্রী হান্নাতু মুসাওয়া মনে করেন, টাগবো-ওকেকের শিল্পকর্ম অটিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য ‘আশা ও অনুপ্রেরণার আলোকবর্তিকা'।
নাইজেরিয়ার রাষ্ট্রপতি বোলা আহমেদ তিনুবু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ কানিয়েচুকু টাগবো-ওকেকে সম্পর্কে লিখেছেন , "তুমি সাহসী, দুঃসাহসী এবং দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। এই স্বীকৃতির জন্য অভিনন্দন। তোমার গল্প ইতিহাস তৈরি করেছে এবং নাইজেরিয়া তোমার জন্য গর্বিত, কানিয়েচুকু টাগবো-ওকেকে।"
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সারা বিশ্বে প্রতি ১০০ জনে ১ জনের মতো শিশু অটিস্টিক। নাইজেরিয়ায় অটিজম নির্ণয় দেরিতে হয় এবং এ সংক্রান্ত তেমন কোনো সরকারি তথ্য নেই।
এক নারীর দেখাদেখি নাইজেরিয়ায় বিশ্বরেকর্ড গড়ার হিড়িক
বিশ্বরেকর্ড গড়ায় গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম উঠেছে এক নারীর৷ তারপর থেকে নাইজেরিয়ায় চলছে রেকর্ডের জন্য ‘পাগল’ হওয়ার হিড়িক৷ কেউ গাইছেন গান, কেউ করছেন ইন্সটাগ্রাম লাইভ, কেউ খাচ্ছেন শত শত চুমু! দেখুন ছবিঘরে....
ছবি: Fotolia/putilov_denis
চুমু ‘অস্বাস্থ্যকর এবং অনৈতিক’
নাইজেরিয়ার একিটি রাজ্যের একদল মানুষ একসাথে নেমেছিলেন বিশ্বরেকর্ড গড়ার প্রতিযোগিতায়৷ একে অন্যকে চুমু খেতে শুরু করেছিলেন তারা৷ ভেবেছিলেন যতক্ষণ সম্ভব চুমু খেয়ে দীর্ঘতম চুম্বনের রেকর্ড গড়ে গিনেসে নাম তুলবেন৷ এই উদ্দেশ্যে নিজেদের নাম দিয়েছিলেন তারা ‘সুগারটি’৷ কিন্তু রাজ্য সরকার ‘সুগারটি’দের সেই স্বপ্ন পূরণ হতে দেয়নি, এমন প্রতিযোগিতাকে ‘অস্বাস্থ্যকর এবং অনৈতিক’ আখ্যা দিয়ে সবাইকে ঘরে পাঠিয়ে দেয় তারা৷
ছবি: Hahne/Beautiful Sports/IMAGO
গানের বিশ্বরেকর্ড!
অন্যদের অবশ্য ‘সুগারটি’-দের মতো বাধার মুখে পড়তে হয়নি৷ লাগোসের গসপেল গায়ক ওলুয়াটোবি কুফেজির অনেক দিনের সাধ গায়ক হিসেবে নাম কুড়াবেন৷ তাই তিনি নেমেছিলেন টানা সবচেয়ে বেশি সময় গান গাওয়ার রেকর্ড গড়ার চেষ্টায়৷
ছবি: SEUN SANNI/REUTERS
স্বপ্ন পূরণের পথে ওলুয়াটোবি কুফেজি
৩৯ বছর বয়সি ওলুয়াটোবি কুফেজি গসপেল গেয়েছেন ২০০ ঘণ্টা৷ নিয়ম অনুযায়ী মাঝে শুধু একবার দু ঘণ্টা কণ্ঠকে বিশ্রাম দিয়েছেন৷ সেই বিরতির সময় সংবাদমাধ্যমকে দুই সন্তানের জনক বলেন, আশা করি ঈশ্বরের কৃপায় আমার শিল্পী জীবনে বড় একটা পরিবর্তন আসবে৷’’
ছবি: SEUN SANNI/REUTERS
‘জয়’ পেলেন না জয়
জয় চুকুয়ুদি চেয়েছিলেন একটানা ৭৫ ঘণ্টা শরীর মালিশ করে গিনেসে নাম লেখাতে৷ সবই চলছিল ঠিকঠাক৷ একের পর এক খদ্দেরের শরীর মালিশ করে যাচ্ছিলেন৷ কিন্তু ৫০ ঘণ্টা মাসাজ করার পর শরীর ক্লান্তিতে ভেঙে পড়লো৷ ২৫ ঘণ্টা আগে থামতে বাধ্য হলেও জয় চুকুয়ুদি বিশ্বরেকর্ডের আশা ছাড়েননি৷ তার ধারণা, বিশ্বরেকর্ড গড়ার জন্য ৫০ ঘণ্টাই যথেষ্ট৷
ছবি: Fotolia/putilov_denis
সবার প্রেরণা তিনি
‘সুগারটি’, ওলুয়াটোবি কুফেজি, জয় চুকুয়ুদির মতো আরো অনেকেই কিছু-না-কিছু করে গিনেস বুকে নাম লেখানোর মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছেন৷ আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশটিতে এমন প্রবণতা আগে কখনো দেখা যায়নি৷ সাম্প্রতিক সময়ে এমন হিড়িক দেখা দেয়ার একমাত্র কারণ ছবির এই নারী৷ নাম তার হিলডা ব্যাসে৷
ছবি: Temilade Adelaja/REUTERS
‘কুকাথন’ জয়ী হিলডা
ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ম্যারাথন, ডেকাথলন, পেন্টাথলন ইত্যাদি দেখলেও অনেকেই হয়ত ‘কুকাথন’ কখনো দেখেননি৷ ‘কুকাথন’ শব্দটি তৈরি করা হয়েছে কুক (রান্না) আর ম্যারাথন-এর থন মিলিয়ে৷ গত মে মাসে নাইজেরিয়ার ঘরে ঘরে পৌঁছে যায় এই শব্দ, কারণ, তখন এই কুকাথনেই বিশ্বরেকর্ড গড়েন ২৭ বছর বয়সি হিলডা ব্যা ব্যাসে৷
ছবি: Temilade Adelaja/REUTERS
রান্নার দর্শক ২০ কোটি মানুষ!
হিলডা রান্না করেছেন টানা ১০০ ঘণ্টা৷ লাগোসে তার রান্না শুরু হয় বৃহস্পতিবার আর শেষ হয় সোমবার রাতে৷ বলা হয়ে থাকে ২০ কোটি মানুষের দেশ নাইজেরিয়ায় এমন মানুষ নাকি খুঁজে পাওয়া কঠিন যিনি একবার অন্তত হিলডার ইতিহাস গড়া সেই রান্না দেখেননি৷
ছবি: Temilade Adelaja/REUTERS
হিলডা এখন বিশাল তারকা
টানা সবচেয়ে বেশি সময় রান্নার বর্তমান রেকর্ডি ভারতের লতা ট্যান্ডনের৷ ২০১৯ সালে ৮৭ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট রান্না করে গিনেসে নাম লিখিয়েছিলেন তিনি৷ হিলডা তাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পর সারা বিশ্বে প্রকাশিত হয় সেই খবর৷ নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদু বুহারিসহ দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক নেতা এবং সেলিব্রিটিই অভিনন্দন জানিয়েছেন তাকে৷ হিলডা এখন গিনেসের সনদ পাওয়ার অপেক্ষায়৷ সনদ হাতে এলে নিশ্চয়ই আবার উৎসব হবে নাইজেরিয়ায়৷