নববর্ষের রাতে তুরস্কের ইস্তানবুলের রাইনা নাইট ক্লাবে হামলা চালানো সম্ভাব্য অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সোমবার মধ্যরাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তাকে এখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে মঙ্গলবার জানান দেশটির প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইয়েলডিরিম৷
বিজ্ঞাপন
তুরস্কের সরকারি টেলিভিশন টিআরটি বলছে, সম্ভাব্য হামলাকারীর নাম আব্দুলগাদির মাশারিপভ৷ তিনি উজবেকিস্তানের নাগরিক বলে স্থানীয় গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে৷ ইস্তানবুলের এসেনইয়ুর্ত এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে তাকে তার চার বছরের ছেলে সহ গ্রেপ্তার করা হয়৷ মাশারিপভকে ধরতে যৌথভাবে অভিযান চালায় তুর্কি পুলিশ ও এমআইটি নামের একটি গোয়েন্দা সংস্থা৷ অ্যাপার্টমেন্টটি ভাড়া নিয়েছিলেন কিরঘিস্তানের এক নাগরিক৷ তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ এছাড়া মিশর, সোমালিয়া ও সেনেগালের তিন নারীকেও একই জায়গা থেকে ধরা হয়েছে৷
পুলিশ গ্রেপ্তারকৃত মাশারিপভের ছবি প্রকাশ করেছে৷
Police capture Istanbul club attack suspect
00:29
তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইয়েলডিরিম মঙ্গলবার রিপোর্টারদের জানান, সম্ভাব্য হামলাকারী মাশারিপভকে এখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে৷
নববর্ষ পালনের জন্য ইস্তানবুলের জনপ্রিয় নাইট ক্লাবটিতে সমবেত হয়েছিলেন প্রায় ৭০০ অতিথি৷ মধ্যরাতের এক ঘণ্টার মধ্যেই মাশারিপভ প্রহরারত এক পুলিশ ও নাইটক্লাবের রক্ষীকে গুলি করে ভিতরে ঢোকে ও এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে ৩৯ জনকে হত্যা করে৷ নিহতদের দুই-তৃতীয়াংশ বিদেশি এবং তাদের অনেকেই মধ্যপ্রাচ্যের নাগরিক৷
হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ শুরুর দিকে মূল হামলাকারী কিরঘিস্তানের নাগরিক হতে পারেন বলে ধারণা করা হয়েছিল৷ হামলাকারী চীনের উইগুর সম্প্রদায়ের কেউ হতে পারেন বলেও তুর্কি গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল৷
তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস নাইট ক্লাবে হামলার দায় স্বীকার করে৷ তুরস্কে এই প্রথম কোনো হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি সংগঠনটি৷
মাশারিপভকে জীবিত ধরতে পারার কারণে ইস্তানবুলে আইএস-এর উপস্থিতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ৷
জেডএইচ/ডিজি (এএফপি, রয়টার্স, এপি)
‘ইসলামিক স্টেট’ আসলে কী?
আল-কায়েদার অখ্যাত এক উপদল থেকে প্রভাবশালী ‘মিলিট্যান্ট মুভমেন্টে’ পরিণত হয়েছে তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএস৷ জিহাদি এই গোষ্ঠীটির দখলে থাকা অঞ্চল থেকে আক্রমণের কৌশল – আইএস-এর এমন নানা দিক তুলে দেয়া হলো এই ছবিঘরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Souleiman
আইএস কোথা থেকে এসেছে?
ইসলামিক স্টেট (আইএস) সুন্নী ইসলামিস্ট আদর্শে বিশ্বাসী আল-কায়েদার একটি উপদল, যেটি আইএসআইএল, আইসিস এবং দায়েশ নামেও পরিচিত৷ ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আক্রমণের পর এটির বহিঃপ্রকাশ ঘটে৷ এই গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছেন আবু বকর আল-বাগদাদি৷ জঙ্গি গোষ্ঠীটির লক্ষ্য হচ্ছে ইরাক, সিরিয়া এবং অন্যান্যা অঞ্চল নিয়ে একটি ইসলামিক স্টেট বা খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আইএস কোথায় কাজ করে?
বিশ্বের ১৮টি দেশে আইএস সক্রিয় রয়েছে বলে ধারণা করা হয়৷ ইরাক এবং সিরিয়ার কিছু অংশ এই গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং এটি সিরিয়ার রাকা শহরকে রাজধানী হিসেবে বিবেচনা করে৷ তবে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে এখন অবধি নিজেদের দখলে থেকে এক চতুর্থাংশ এলাকা তাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে৷
কারা তাদের বিরুদ্ধে লড়ছে?
আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বেশ কয়েকটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে৷ বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশের সমন্বয়ে তৈরি মার্কিন নেতৃত্বাধীন একটি ‘কোয়ালিশন’ আইএস অধ্যুষিত এলাকায় বিমান হামলা চালাচ্ছে৷ এই কোয়ালিশনে কয়েকটি আরব দেশও রয়েছে৷ অন্যদিকে সিরিয়া সরকারের পক্ষে সেদেশে বিমান হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া৷ তবে ভূমিতে তাদের বিরুদ্ধে লড়ছে কুর্দিশ পেশমার্গার মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলো৷
ছবি: picture-alliance/abaca/H. Huseyin
আইএস-এর অর্থের উৎস কী?
জঙ্গি গোষ্ঠীটির অর্থ আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে তেল এবং গ্যাস৷ এটি এখনো সিরিয়ার তেল উৎপাদনের এক তৃতীয়াংশ দখলে রেখেছে৷ আর মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিমান হামলার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে জঙ্গি গোষ্ঠীর এই মূল্যবান সম্পদ৷ এছাড়া কর, মুক্তিপন এবং লুট করা পুরাকীর্তি বিক্রি করেও অর্থ আয় করে এই জঙ্গি গোষ্ঠীটি৷
ছবি: Getty Images/J. Moore
আইএস কোথায় কোথায় জঙ্গি হামলা চালিয়েছে?
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অসংখ্য জঙ্গি হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস৷ চলত বছর সবচেয়ে ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলাটি চালানো হয়েছে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে, যেখানে দু’শোর বেশি মানুষ নিহত ও অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছে৷ আইএস-এর নেতারা জঙ্গি গোষ্ঠীটির আদর্শে বিশ্বাসীদের এককভাবে বিভিন্নস্থানে আঘাত হানতে উৎসাহ প্রদান করে৷
অন্যান্য আর কী কৌশল ব্যবহার করে আইএস?
নিজেদের ক্ষমতার পরিধি বাড়াতে অনেক কৌশল ব্যবহার করে আইএস৷ জঙ্গি গোষ্ঠীটি ‘কালচারাল ক্লিনজিংয়ের’ নামে সিরিয়া এবং ইরাকের অনেক ঐতিহাসিক শিল্পকর্ম লুট ও ধ্বংস করেছে৷ এছাড়া সংখ্যালঘু ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর কয়েকহাজার মেয়েকে ক্রীতদাসী বানিয়েছে৷ গোষ্ঠীটি নিজেদের ‘প্রোপোগান্ডা’ এবং নিয়োগের কাজে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে থাকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
শরণার্থী হয়েছেন কতজন?
সিরিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে সেদেশের প্রায় ৬০ লাখ মানুষ প্রতিবেশী লেবানন, জর্ডান এবং তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছেন৷ অনেক সিরীয় ইউরোপেও পাড়ি জমিয়েছেন৷ এছাড়া প্রায় ৩০ লাখ ইরাকে ইরাকের মধ্যেই অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন বলে খবর৷