নাইন-ইলেভেন সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সরাসরি সৌদি প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলার পথ সুগম করে দিয়েছে মার্কিন সেনেট৷ তবে প্রেসিডেন্ট ওবামা এমন প্রস্তাবের বিরোধিতা করছেন৷
বিজ্ঞাপন
নাইন-ইলেভেন মার্কিন মানসে যে ক্ষত সৃষ্টি করেছে, তা এত বছর পরেও শুকায়নি৷ সেই ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় জড়িতদের সিংহভাগই ছিল সৌদি আরবের নাগরিক৷ কিন্তু তাদের সঙ্গে সৌদি প্রশাসনের কোনো যোগাযোগ ছিল কিনা, সে বিষয়ে সরকারিভাবে কিছু প্রকাশ করা হয় নি৷ কিন্তু এ বিষয়ে জল্পনা-কল্পনা কম হয়নি৷ এবার নাইন-ইলেভেন সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের পরিবারবর্গ সরাসরি সৌদি আরবের বিরুদ্ধে মামলার সুযোগ পেতে পারেন৷ সেনেট এই মর্মে একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে৷
সংসদের দ্বিতীয় কক্ষ – হাউস অফ রিপ্রেজেনটেটিভ-ও যদি এই প্রস্তাব অনুমোদন করে, তখন প্রেসিডেন্টের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে৷ কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এই প্রস্তাবে সায় দেবেন – এমনটা কল্পনা করা কঠিন বলে মনে করছেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা৷
সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক একাধিক কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷ সে দেশের উপর ওয়াশিংটনের নির্ভরতাও কম নয়৷
বিরোধী রিপাবলিকান দলের সঙ্গে সৌদি প্রশাসনের গভীর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক কারো অজানা নয়৷ তাই প্রেসিডেন্ট ওবামা-র পাশাপাশি এই দলের পক্ষেও সৌদি আরবের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপে সায় দেওয়া কঠিন৷
যাবতীয় সমস্যা সত্ত্বেও সৌদি আরবের সঙ্গে অ্যামেরিকার বিশেষ সম্পর্ক বজায় রাখা উচিত বলে করেন প্রখ্যাত সাংবাদিক ফরিদ জাকারিয়া৷
কোথা থেকে অর্থ পাচ্ছে আইএস?
পেট্রোলিয়াম বিক্রি থেকে শুরু করে ব্যাংক ডাকাতি, অধিকৃত এলাকায় কর চাপানো এবং প্রাচীন সামগ্রী বিক্রি করে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট প্রায় ২০০ কোটি ডলার একত্র করেছে৷ তাতে তাদের আরও ২ বছর চলে যাবার কথা৷
ছবি: picture alliance/abaca
বেআইনি তেল বিক্রি
বেআইনি ভাবে পেট্রোলিয়াম বিক্রি আইএস-এর আয়ের প্রধান উৎস৷ সিরিয়া ও ইরাকে বেশ কিছু বড় তৈলকূপ আপাতত তাদের দখলে৷ মূলত তুরস্কের মধ্য দিয়েই তারা চোরাচালানের কাজ চালিয়ে থাকে৷ মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, কালোবাজারে তেল বিক্রি করে আইএস-এর মাসে প্রায় ৪ কোটি ডলার আয় হয়৷
ছবি: Getty Images/J. Moore
ব্যাংক ডাকাতি
সিরিয়া ও ইরাকে কোনো এলাকা দখলের পর আইএস সবার আগে ব্যাংকগুলি কবজা করে ফেলে৷ মার্কিন প্রশাসনের ধারণা, এভাবে তারা ৫০ থেকে ১০০ কোটি ডলার আত্মসাৎ করেছে৷ শুধু মোসুল শহর দখল করেই তারা নাকি ৬২ কোটি ডলার লুট করেছিল৷ বছরে প্রায় ৫০,০০০ জিহাদি কর্মীর বেতন দিতে এই অর্থ যথেষ্ট৷
ছবি: Getty Images/S. Platt
কর আদায় ও চাঁদাবাজি
আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকার প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষকে ৫ থেকে ১৩ শতাংশ আয়কর দিতে হয়৷ জার্মান সরকারের সূত্র অনুযায়ী, আইএস অ-মুসলিমদের কাছ থেকে জিজিয়া করও আদায় করে৷ তাছাড়া চাঁদাবাজিও তাদের আয়ের আরেকটি উৎস৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
প্রাচীন সামগ্রী বিক্রি
‘জিহাদিরা’ আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ ধ্বংস করতে অভ্যস্ত৷ তবে বেশি দামি অ্যান্টিক সম্পদ সযত্নে সরিয়ে ফেলে কালোবাজারে বিক্রি করে তারা৷ প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছ থেকেও অমূল্য সম্পদ কেড়ে নিয়ে বিক্রি করতে পিছপা হয় না এই গোষ্ঠী৷ তবে বিক্রিমূল্যের সঠিক অঙ্ক জানা নেই৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
মুক্তিপণ ও প্রচারণা
মানুষজনকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় আইএস-এর দু-মুখী চাল৷ একদিকে এটা আয়ের একটা উৎস, অন্যদিকে এর মাধ্যমে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রচারণার কাজও হয়ে যায়৷ কিছু ‘মূল্যবান’ জিম্মির শিরশ্ছেদ করে সেই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে প্রচারণার ক্ষেত্রে বিপুল সাফল্য পায় আইএস৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
সহানুভূতি দেখাতে চাঁদা
আইএস-এর প্রতি সহানুভূতিপ্রবণ মানুষ গোটা বিশ্বেই ছড়িয়ে রয়েছে৷ তারা এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তহবিলে আর্থিক অবদান রাখে৷ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সূত্র অনুযায়ী সৌদি আরবে ২০১০ সাল থেকে ৮৬০ জন ব্যক্তিকে সন্ত্রাসের কাজে আর্থিক সাহায্য দেবার অভিযোগে শাস্তি দেওয়া হয়েছে৷ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ সেখানে ১০০ জনের শাস্তি হয়েছে৷