কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে একদিকে যেমন দারিদ্র্য ও অনগ্রসরতা, অন্যদিকে তেমন গার্ডেন সিটির মতো আবাসিক এলাকায় কার পার্কের মাথায় সোলার প্যানেল বসানো; আবার রেস্টুরেন্টের ময়লা বেসমেন্টে নিয়ে গিয়ে আলাদা করা হয়৷
বিজ্ঞাপন
সকালে চায়ের জল গরম করার সময়েও আইদা মুনেনের মুখে হাসি ফোটে – কেননা তাঁর ফ্ল্যাটে গরম পানির খরচ ৩০ শতাংশ কমে গেছে, যা খুব কম নয়৷ গত বছরের শেষদিক থেকে মুনেনে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবির উত্তরে অবস্থিত গার্ডেন সিটি-তে বাস করছেন৷ অভিজাত, উচ্চবিত্ত এলাকা৷ এখানে যুগপৎ পরিবেশ সুরক্ষা ও বাসিন্দাদের খরচ কমানোর একটি নতুন উদ্যোগ চলেছে৷
আবাসিক এলাকাটির আসে কাছের একটি বহুতল কার পার্কের ছাদ থেকে৷ ব্যবসায়ী ও ফ্ল্যাটের মালিক আইদা রজব মুনেনে জানালেন, ‘‘দিনে ভালো রোদ্দুর থাকলে গোটা ফ্ল্যাটে গরম পানির ব্যবস্থা হয়ে যায়৷ আকাশে মেঘ থাকলে হিটার কাজ করে ও তা থেকে গরম পানি পাওয়া যায়৷ তবে সাধারণত আমাদের হিটার ব্যবহার করার দরকার পড়ে না৷ সূর্যের আলো থেকেই সারা ফ্ল্যাটে পানি গরম হয়ে যায়৷''
শপিং সেন্টারের বাড়িটি কেনিয়ার সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব ভবনগুলির মধ্যে গণ্য, বলে তার ম্যানেজারের দাবি৷ প্লাস্টিকের কাপ, স্ট্র, প্যাকেজিং, রেস্টুরেন্ট থেকে ফেলা খাবারদাবার, সব গিয়ে জমা হয় শপিং সেন্টারের বেসমেন্টে৷ সেখানে হাতে করে বিভিন্ন ধরনের ময়লা আলাদা করা হয়৷ কার্ডবোর্ড আর কার্টনগুলি যায় কাগজের স্তূপে; টি-ব্যাগ যায় অরগ্যানিক ময়লা ফেলার বিন-এ; পানীয়ের ক্যান যায় ধাতুর দিকে; পিইটি বোতলগুলো জমা হয় প্লাস্টিক হিসেবে – প্রচুর কাজ৷
শেখা ও শেখানো
গার্ডেন সিটি শপিং সেন্টারের ম্যানেজার এডউইন মুগাম্বি বললেন, ‘‘এদেশে আমরা এখনও শিখছি: কাজেই আমাদের গ্রাহকরা সব কিছু মিশিয়ে ফেলেন, যে কারণে আমাদের হাতে করে সব কিছু আলাদা করতে হয়৷ কিন্তু আমরা গ্রাহকদের ক্রমাগত সচেতন করছি, বর্জ্য আলাদা করার শিক্ষা দিচ্ছি৷ কাজেই আমরা এক বছরের মধ্যে বর্জ্য আলাদা করার প্রাথমিক পর্যায়ে পৌঁছে যাব বলে আমাদের আশা৷''
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আফ্রিকার সংগ্রাম
জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী না হলেও আফ্রিকার কয়েকটি দেশের নাম জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হওয়া দেশের তালিকায় উপরের দিকেই আছে৷
ছবি: DW/J. Beck
বাঁধ নির্মাণ
সাগরের পানি বৃদ্ধি ও অতিবৃষ্টি থেকে সৃষ্ট বন্যার কারণে মোজাম্বিকের উপকূলীয় শহর বাইরার জনজীবন হুমকির মুখে পড়েছে৷ এ থেকে পরিত্রাণ পেতে শহরের মাঝখান দিয়ে যাওয়া নদীতে বাঁধ দেয়া হয়েছে৷ এছাড়া নতুন খাল তৈরি ও বনায়ন করেও সমস্যার সমাধান খোঁজা হচ্ছে৷
ছবি: DW/J. Beck
বনায়ন
সাহারা মরুভূমির বালু দিন দিন সাব-সাহারা আফ্রিকার আবাদি জমিতে ঢুকে পড়ছে৷ এতে অত্র অঞ্চলের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে৷ এই অবস্থায় আফ্রিকার ১১টি দেশ প্রচুর গাছ লাগিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Senna
মাটির ক্ষয়রোধ
নাইজারের সুন্না মুসা শতাব্দী পুরনো সেচ ব্যবস্থা প্রয়োগ করে ফসল উৎপাদন করেন৷ এর ফলে মাটির ক্ষয়রোধ সম্ভব হচ্ছে৷ বিশেষজ্ঞরাও ফসল উৎপাদনের প্রাচীন পদ্ধতি প্রয়োগের পরামর্শ দিচ্ছেন৷
ছবি: DW/K. Tiassou
সবুজ জ্বালানি
২০৩০ সালের মধ্যে আফ্রিকার সবার জন্য জ্বালানির ব্যবস্থা করার ঘোষণা দিয়েছেন মহাদেশটির ৫৫টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান৷ এই লক্ষ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিভিন্ন উৎসের প্রসার ঘটানো হচ্ছে৷ প্রতিবছর ৩০০ গিগাওয়াট সবুজ জ্বালানি উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Vaughn
সৌরশক্তি ব্যবহার
খরচ কমে যাওয়ায় আফ্রিকার মানুষেরা সৌরশক্তি ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছেন৷ ফলে ব্যক্তিগত বাড়ি ছাড়াও হাসপাতাল, স্কুল এসব জায়গায় সৌরশক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে৷
ছবি: Solar4Charity
ইটের বদলে প্লাস্টিক
নাইজেরিয়ায় বাড়ি নির্মাণে ইটের বদলে পুরনো প্লাস্টিক বোতল ব্যবহার করছেন অনেকে৷ এতে পরিবেশ রক্ষা হচ্ছে৷ সারা বিশ্বে মিনিটে প্রায় ১০ লাখ প্লাস্টিকের বোতল বিক্রি হয় বলে জানা গেছে৷
ছবি: DARE
6 ছবি1 | 6
পার্কিং গ্যারেজের ছাদে প্রায় ৩,০০০ সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ সোলার ইনস্টলেশনটি আফ্রিকার বৃহত্তম সোলার ইনস্টলেশনগুলির মধ্যে পড়ে৷ এছাড়া সোলার প্যানেলের ছাদের নীচে রাখা গাড়িগুলোও গরম হয় না৷ আর একটা সুবিধেও আছে, বলে মুগাম্বি অভিমত প্রকাশ করলেন: ‘‘সোলার প্যানেলের চাহিদা যতো বাড়বে, তাদের দামও ততো কমবে, যার ফলে আরো অনেক মানুষ সেগুলো কিনতে পারবেন ও প্রকৃতিদত্ত সূর্যালোক ব্যবহার করে নিজেদের বাড়িতে বিদ্যুৎ পেতে পারবেন৷''
বিনিয়োগের অর্থ আসে ও মুনাফা যায় শিল্পোন্নত দেশে
কেনিয়ায় বাড়ির ছাদে সোলার প্যানেল এখনও খুব কমই দেখা যায়৷ শপিং সেন্টারের কার পার্কের সোলার ইউনিটের টাকাও এসেছে শিল্পোন্নত দেশগুলির বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে৷ যে কারণে প্রকল্পের আর্থিক মুনাফা কেনিয়ায় থাকে না৷ ক্রসবাউন্ডারি সংস্থার ম্যানেজিং পার্টনার ম্যাট টিলিয়ার্ড জানালেন, ‘‘আমাদের বিনিয়োগকারীরা সবাই অ্যামেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যে থাকেন৷ আমাদের সোলার ফান্ড ও অন্যান্য বিনিয়োগের জন্য পূর্ব আফ্রিকা থেকে পুঁজি সংগ্রহ করতে পারলে খুবই ভালো হতো, কিন্তু বাস্তব এই যে, আসল পুঁজি শিল্পোন্নত দেশগুলিতেই রয়েছে৷ কাজেই বাইরে থেকে পুঁজি আনা ভবিষ্যতেও আমাদের কাজের একটা বড় অঙ্গ থাকবে৷''
জ্বালানির যত উৎস
লন্ডন ভিত্তিক ‘ওয়ার্ল্ড এনার্জি কাউন্সিল’ বা ডাব্লিউইসি-এর ‘বিশ্ব জ্বালানি সম্পদ ২০১৬’ প্রতিবেদনে কোন জ্বালানি কী পরিমাণ ব্যবহত হচ্ছে তার হিসেব প্রকাশ করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
১. তেল
লন্ডন ভিত্তিক ‘ওয়ার্ল্ড এনার্জি কাউন্সিল’ এর ‘বিশ্ব জ্বালানি সম্পদ ২০১৬’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানি হচ্ছে তেল৷ মোট ব্যবহৃত জ্বালানির প্রায় ৩২.৯ শতাংশই হচ্ছে তেল৷ আর তেল উৎপাদনে শীর্ষ তিন দেশ হচ্ছে সৌদি আরব (বছরে ৫৬৯ মিলিয়ন টন), যুক্তরাষ্ট্র (বছরে ৫৬৭ মিলিয়ন টন) ও রাশিয়া (বছরে ৫৪১ মিলিয়ন টন)৷
ছবি: picture-alliance/dpa
২. কয়লা
২৯ শতাংশ নিয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানির তালিকায় তেলের পরেই আছে কয়লা৷ তবে নব্বই দশকের পর ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো কয়লা উৎপাদন কমেছে৷ বিশ্বের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রায় ৪০ ভাগ কাজে কয়লা ব্যবহৃত হয়৷ শীর্ষ তিন উৎপাদনকারী দেশ হচ্ছে চীন (বছরে ২ দশমিক ৬২ হাজার এমটিওই), যুক্তরাষ্ট্র (৫৬৯ এমটিওই) ও ভারত (৪৭৪ এমটিওই)৷ উল্লেখ্য, এমটিওই মানে হচ্ছে এক মিলিয়ন মেট্রিক টন অফ ওয়েল ইকুইভ্যালেন্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Roland Weihrauch
৩. গ্যাস
তিন নম্বরে আছে গ্যাস (প্রায় ২৪ শতাংশ)৷ আর বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত জ্বালানির তালিকায় কয়লার (৪০ শতাংশ) পরে আছে গ্যাস (২২ শতাংশ)৷ শীর্য তিন গ্যাস উৎপাদনকারী দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র (বছরে ৬৯১ এমটিওই), রাশিয়া (বছরে ৫১৬ এমটিওই) ও ইরান (বছরে ১৭৩ এমটিওই)৷
ছবি: Imago
৪. পানিবিদ্যুৎ
নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিভিন্ন উৎসের মধ্যে পানি বা জলবিদ্যুতের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি৷ ২০১৫ সালে উৎপাদিত মোট নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের প্রায় ৭১ শতাংশই এসেছে জলবিদ্যুৎ থেকে৷ আর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানির তালিকায় তেল (৩৩ শতাংশ), কয়লা (২৯ শতাংশ) ও গ্যাসের (২৪ শতাংশ) পরেই আছে পানিবিদ্যুৎ (প্রায় ৭ শতাংশ)৷ শীর্ষ তিন উৎপাদনকারী চীন (বছরে ৯৬.৯ এমটিওই), ব্রাজিল (৩২.৯ এমটিওই) ও ক্যানাডা (৩২.৩ এমটিওই)৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Jourdier
৫. পরমাণুশক্তি
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানির তালিকায় পাঁচ নম্বরে আছে এটি (৪ দশমিক ৪ শতাংশ)৷ অর্থাৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানির একটি উৎস পানিবিদ্যুতের (প্রায় ৭ শতাংশ) চেয়েও এর ব্যবহার কম৷ ইউরেনিয়াম উৎপাদনে শীর্ষ তিন দেশ হচ্ছে কাজাখস্তান (বছরে ২২ দশমিক ৮ হাজার টন), ক্যানাডা (৯ দশমিক ১৪ হাজার টন) ও অস্ট্রেলিয়া (৪ দশমিক ৯৮ হাজার টন)৷
ছবি: Kerry Skyring
৬. বায়ুশক্তি
বিশ্বের মোট বিদ্যুতের ৭ শতাংশ আসে বায়ুবিদ্যুৎ থেকে৷ ২০১৫ সালে ৪৩২ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছিল৷ এর মধ্যে ৪২০ গিগাওয়াট অনশোর (ভূমি) ও ১২ গিগাওয়াট অফশোর, অর্থাৎ সাগরে বসানো টারবাইনের মাধ্যমে উৎপাদিত হয়৷ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানির তালিকায় ছয়ে আছে এটি (১.৪৪ শতাংশ)৷ শীর্ষ তিন বায়ুশক্তি উৎপাদনকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র (বছরে ১৫.৮ এমটিওই), চীন (১৩.৬ এমটিওই) এবং জার্মানি (৪.৯৩ এমটিওই)৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Vaughn
৭. সৌরশক্তি
২০১৫ সালে সারা বিশ্বে মোট সৌরশক্তি উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ২২৭ গিগাওয়াটে৷ ফলে মোট বিদ্যুতের এক শতাংশ এসেছিল সৌরশক্তি থেকে৷ সৌরশক্তি উৎপাদনে শীর্ষ তিন দেশ চীন (৪৩ দশমিক ১ গিগাওয়াট), জার্মানি (৩৯ দশমিক ৬ গিগাওয়াট) ও জাপান (৩৩ দশমিক ৩ গিগাওয়াট)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Gupta
৮. অন্যান্য উৎস
জিওথার্মাল, ই-স্টোরেজ, মেরিন এনার্জি, বর্জ্য থেকে শক্তি, বায়োএনার্জি (যেমন বায়োমাস) ইত্যাদি সহ আরও অনেক উৎস দিয়েও জ্বালানি উৎপাদন করা হয়ে থাকে৷ ছবিতে আইসল্যান্ডের একটি জিওথার্মাল পাওয়ার স্টেশন দেখা যাচ্ছে৷ ডাব্লিউইসি-র প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন উপরের ‘+’ চিহ্নে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/McPHOTO
8 ছবি1 | 8
আগামীতে গার্ডেন সিটি শপিং সেন্টারের কার পার্কের প্রতিটি সোলার পার্কিং স্পটে ইলেকট্রিক কার-এর জন্য চার্জিং স্টেশন থাকবে – আফ্রিকায় যা অভিনব বললেও কম বলা হয়৷
আইদা রজব মুনেনের মতে, ‘‘বিশেষ করে নাইরোবির বিজনেস এলাকায় যদি বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য আরো বেশি ব্যাটারি চার্জ করার স্টেশন থাকত,তাহলে বেশ ভালো হতো৷ অন্য সব শপিং মল-গুলোও সেই ব্যবস্থা করতে পারে – তাহলে খুব ভালো হয়, বলে আমার ধারণা৷ নাইরোবিতে প্রচুর যানবাহন, কাজেই বেশি ইলেকট্রিক কার চললে বায়ুদূষণও কম হবে৷''