ফরাসি প্রেসিডেন্ট ও জার্মান চ্যান্সেলর দু'জনেই বলেছেন, যে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির বিকল্প নেই৷ দুজনেই চলতি সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প-কে বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করবেন৷ ট্রাম্প মতবদল করবেন কিনা তা অস্পষ্ট৷
বিজ্ঞাপন
চলতি সপ্তাহে পরপর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ ও জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করবেন৷ ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি নিয়ে বর্তমান অনিশ্চয়তার বিষয়টিও তাঁদের আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পেতে চলেছে৷ ট্রাম্প ১২ই মে এই চুক্তি থেকে সরে আসার হুমকি দিয়েছেন৷ সে ক্ষেত্রে ইরানও পালটা পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিচ্ছে৷ এই অবস্থায় ট্রাম্পের মতবদলের চেষ্টা করতে চান দুই নেতা৷
মাক্রোঁর সঙ্গে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত রসায়ন এ পর্যন্ত বেশ ইতিবাচক৷ ফ্রান্সের জাতীয় দিবসের কুচকাওয়াজে বিশেষ অতিথি হয়ে ট্রাম্প অত্যন্ত আপ্লুত হয়েছিলেন৷ সম্প্রতি সিরিয়ায় মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময় ফ্রান্সও সেই অভিযানে অংশ নিয়েছিল৷ এবার দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ২৫০ বছর পূর্তি উৎসবে মাক্রোঁ ওয়াশিংটনে যাচ্ছেন বিশেষ অতিথি হিসেবে৷ ট্রাম্পের আমলে এটাই অ্যামেরিকায় কোনো বিদেশি নেতার প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর৷
কেউ যদি ট্রাম্পের মতবদল করতে পারেন, তাহলে সেটা মাক্রোঁ – এমন বিশ্বাস অ্যামেরিকা ও ইউরোপের কূটনৈতিক মহলে বেশ প্রচলিত৷ উল্লেখ্য, এর আগে মাক্রোঁ ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির সীমাবদ্ধতা নীতিগতভাবে মেনে নিয়েছিলেন৷ তবে পরমাণু চুক্তি বাতিল করার বদলে তিনি সে দেশের সঙ্গে এক বাড়তি ব্যালিস্টিক মিসাইল চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছেন৷
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিয়মিত যে টেলিভিশন চ্যানেল দেখেন, সেই ফক্স নিউজে রবিবার মাক্রোঁর সঙ্গে ইংরাজি ভাষায় এক সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়েছে৷ তাতে মাক্রোঁ বলেছেন, ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির কোনো ‘প্ল্যান বি’ বা বিকল্প তাঁর কাছে নেই৷
মাক্রোঁ বিফল হলে ম্যার্কেল ট্রাম্পকে বোঝাতে পারবেন, এমন আশা আপাতত অত্যন্ত ক্ষীণ৷ দুই নেতার মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক মোটেই তেমন মধুর নয়৷ তিনি আপাতত ইরান-চুক্তির প্রধান বিরোধী দেশ ইসরায়েলকে সতর্ক করে দিয়েছেন৷ সে দেশের এক টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো’৷ অর্থাৎ আদৌ কোনো চুক্তি না থাকার চেয়ে ত্রুটিপূর্ণ চুক্তি শ্রেয়৷ তিনি ইসরায়েলে এ বিষয়ে গভীর দুশ্চিন্তার কারণ বুঝলেও সেই বিপদের মোকাবিলা করতে মতপার্থক্যের উল্লেখ করেন৷
এসবি/এসিবি (এএফপি, এপি, ডিপিএ)
২০ জানুয়ারির এই ছবিঘরটি দেখতে পারেন...
এক বছরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পররাষ্ট্র নীতি
হোয়াইট হাউসে এক বছর পূর্ণ করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তাঁর নানা বিতর্কিত মন্তব্য ও পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মঞ্চে আলোড়ন সৃষ্টি করলেও কাঠামোয় ভাঙন ধরাতে পারেনি৷ নিজের অনেক হুমকিও এখনো পর্যন্ত কার্যকর করেননি ট্রাম্প৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
বিশ্বে ভগ্ন ভাবমূর্তি
গ্যালপ সংস্থার জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী, এক বছরে অ্যামেরিকার বাইরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন ৪৮ শতাংশ থেকে কমে ৩০ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে৷ তবে ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রবক্তা ট্রাম্প দেশের মধ্যে নিজের সমর্থকদেরই গুরুত্ব দেন৷ বিদেশে নিজের ভাবমূর্তি নিয়ে চিন্তিত নন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Hassan
অনির্দিষ্ট পররাষ্ট্র নীতি
মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে এতকালের প্রচলিত ধারা ভেঙে অনেক ক্ষেত্রে ট্রাম্প সম্পূর্ণ ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন৷ তাঁর সিদ্ধান্ত প্রায়ই অনিশ্চয়তায় ভরা থাকে৷ ফলে আগে থেকে তাঁর উদ্দেশ্য বোঝা প্রায়ই সম্ভব হয় না৷ বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের প্রধান কর্ণধারের এমন খামখেয়ালিপনা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা কাঠামোর স্থিতিশীলতার জন্য মোটেই সহায়ক হয় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Harnik
একলা চলো রে
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অস্বীকার করে ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে প্যারিস চুক্তি বর্জন করেছেন, তার ফলে বাকি বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ ও ক্রোধ দেখা গেছে৷ ট্রাম্প অ্যামেরিকাকে বেশ কয়েকটি বহুজাতিক কাঠামো থেকে বিচ্ছিন্ন করার কথা বলে এসেছেন৷ কার্যক্ষেত্রে অবশ্য ন্যাটোর মতো জোট ত্যাগ করেননি তিনি৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
ইরানের বিরুদ্ধে তোপ
২০১৫ সালে ওবামা প্রশাসন বিশ্বের প্রধান শক্তিগুলির সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে ইরানের বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করতে যে চুক্তি করেছিলো, ট্রাম্প তার ঘোরতর বিরোধী৷ বিশেষ করে সে দেশের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ও আঞ্চলিক সংকটে সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে ট্রাম্প ক্ষুব্ধ৷ তবে চরম সমালোচনা সত্ত্বেও তিনি এখনো এই চুক্তি থেকে সরে আসেননি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Marovich
ইসরায়েলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনার আশায় এ পর্যন্ত সব মার্কিন প্রশাসন ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার কমবেশি চেষ্টা চালিয়ে এসেছে৷ জেরুসালেম শহরকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা করার মাধ্যমে ট্রাম্প সেই ধারা ভেঙে দিয়েছেন৷ দেশ-বিদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরোয়া করেননি তিনি৷
ছবি: Reuters/R. Zvulun
উত্তর কোরিয়া নিয়ে বিভ্রান্তি
নরম-গরম বার্তা পাঠিয়ে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন সম্পর্কে নিজের অবস্থান অস্পষ্ট রেখেছেন ট্রাম্প৷ কখনো ‘লিটল রকেট ম্যান’-কে ধমক দিয়েছেন, কখনো তাঁর সঙ্গে সরাসরি আলোচনার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি৷ চীনকে কাছে টেনে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচিতে রাশ টানার চেষ্টা করছেন ট্রাম্প৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/E. Contini
মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর
বেআইনি অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তার ব্যয়ও মেক্সিকোকে বহন করতে হবে বলে দাবি করেছিলেন তিনি৷ মেক্সিকো ও ক্যানাডার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করারও হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প৷ এখনো পর্যন্ত দুটি ক্ষেত্রেই কোনো অগ্রগতি ঘটেনি৷