হালে রেলের ভাড়া বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব ছিল গোটা ভারত৷ পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন রাজ্যে ‘‘রেল-রোখো’’ আন্দোলন চলে৷ তাই বর্ধিত রেল ভাড়াকে সহনশীল করতে রেল কর্তৃপক্ষ কিছু বাড়তি সুবিধা দেবার কথা ঘোষণা করেছে৷
ছবি: Getty Images/Afp/Raveendran
বিজ্ঞাপন
রেলবোর্ড সম্প্রতি দূর পাল্লার ট্রেনে সফরকারী যাত্রীদের বাড়তি কিছু সুবিধা দেবে বলে জানিয়েছে৷ রাতে ট্রেনের সহযাত্রীদের নাক ডাকা অন্য যাত্রীদের কাছে বিরক্তির কারণ৷ পাশের যাত্রীর বিকট নাক ডাকার ফলে অন্য যাত্রীদের ঘুম মাথায় ওঠে৷ নাক ডাকার কারণে অন্য যাত্রীদের ঘুমের ব্যাঘাত যাতে কম করা যায়, তার জন্য রেলওয়ে যে বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, এটা তারই এক অঙ্গ৷
নাক ডাকা এক বড় সমস্যাছবি: Fotolia/Farina3000
রেলবোর্ডের চেয়ারম্যান অরুনেন্দ্র কুমার বলেন, সংরক্ষিত আসনের টিকিটে রাত ৯টার পর সফরকারী যাত্রী সাধারণকে সহযাত্রীদের নাক ডাকার হাত থেকে বাঁচাতে ‘স্ন্যোর-ব্লকার' নামে এক বিশেষ উপকরণ দেয়া হবে, বিনা পয়সায়৷ দূর পাল্লার যাত্রীদের সফরকে আরামদায়ক করতে ভারতীয় রেলওয়ে যেসব বিষয়ের ওপর জোর দিচ্ছে ‘স্ন্যোর-ব্লকার' তার মধ্যে অন্যতম৷ দেখা গেছে, এমন কিছু যাত্রী আছেন যাঁরা তাঁদের বার্থে শোবার সঙ্গে সঙ্গেই বিচিত্র আওয়াজে নাক ডাকতে শুরু করেন৷ মারা পড়ে বেচারা পাশের যাত্রী৷ রাতভোর একরকম জেগেই কাটাতে হয়৷ এই নিয়ে লাগাতার অভিযোগ আসে রেলদপ্তরে বলেন রেলবোর্ডের চেয়ারম্যান কুমার৷
কীভাবে কাজ করবে এটি?
এই প্রশ্নের উত্তরে কুমার বলেন, আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি এই যন্ত্র হলো আদতে একটি ‘ইয়ার-বাডস'৷ ট্রেনে শোবার সময় কানে লাগালে সব রকম আওয়াজ থেকে মুক্তি৷ তাঁর দাবি, জার্মান টেকনিকে তৈরি এই যন্ত্র আশেপাশের আওয়াজকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কম করতে সক্ষম৷ রেলওয়ের পরিভাষায় তাই এর নাম দেয়া হয়েছে ‘স্ন্যোর-ব্লকার'৷ রাতে দূরপাল্লার ট্রেনে সফরকালে অন্যান্য আওয়াজের তুলনায় নাক ডাকার আওয়াজ সব থেকে বেশি অতিষ্ট করে তোলে৷ রেলবোর্ডের চেয়ারম্যান কুমার আরো জানান, যাত্রীরা ট্রেনের টিকিট চেকারকে নিজের রিজার্ভেশন টিকিট দেখিয়ে এই যন্ত্র চেয়ে নিতে পারেন৷
দার্জিলিংয়ের ঐতিহ্যবাহী ‘টয় ট্রেন’
দার্জিলিংয়ের টয় ট্রেন ইউনেসকো ঘোষিত একটি ঐতিহ্যবাহী রেলওয়ে হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত৷ টয় ট্রেনের ওয়ার্কশপটাকে এখন দেখলে মনে হয় যেন একটা মিউজিয়াম, যে ঐতিহ্য দার্জিলিং তো বটেই, এক সময় যা সারা বাংলার গর্ব ছিল৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে
আদত নামটা এমন হলেও, পর্যটক এবং স্থানীয় মানুষজন আদর করে ডাকেন ‘টয় ট্রেন’৷ এই ট্রেন ইউনেসকো ঘোষিত একটি ঐতিহ্যবাহী রেলওয়ে হিসেবে আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃত৷ আগে এই টয় ট্রেন চলত নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত৷ এখন অবশ্য তার যাত্রা সীমাবদ্ধ দার্জিলিং আর ভারতের সর্বোচ্চ রেলস্টেশন ঘুম-এর মধ্যে, দিনে চারবারের জয় রাইডে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
বাষ্পচালিত ইঞ্জিন
কাজেই টয় ট্রেনের বাষ্পচালিত ইঞ্জিনগুলো এখন কার্যত অবসর জীবন কাটায় দার্জিলিংস্টেশনের লাগোয়া লম্বা এক শেডের তলায়৷ যদিও মাঝেমধ্যে জয় রাইডে যাওয়ার জন্য এদেরও ডাক পড়ে৷
ছবি: DW/Zeljka Telisman
সচল ওয়ার্কশপ
দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের নিজস্ব কারিগরি বিভাগের কর্মীরা তাই রোজই এই ওয়ার্কশপে আসেন, ব্যস্ত থাকেন মেরামতিতে, যাতে ইঞ্জিনগুলো সচল থাকে৷টয় ট্রেনের বিরাট ওয়ার্কশপটাকে এখন দেখে মনে হয় যেন এক মিউজিয়াম, যেখানে সংরক্ষিত আছে ইতিহাস আর ঐতিহ্য, যে ঐতিহ্য দার্জিলিং তো বটেই, সারা বাংলার গর্ব ছিল এক সময়৷
ছবি: S. Bandopadhyay
প্রবীণ কারিগর
এই প্রযুক্তি-কর্মীদের অনেকেই ডিএইচআর-এ বহু বছর ধরে কাজ করছেন৷ যেমন এই প্রবীণ মুসলিম কারিগর, যিনি তাঁর অধস্তন এক ছোকরা মেকানিককে বকাবকি করছিলেন যে তারা কোনো কাজ ঠিকঠাক করতে পারে না৷ তাতে সবারই নাম খারাপ হয়৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
যেন জুল ভার্নের কল্পকাহিনি
কিন্তু আসল সমস্যা আদ্যিকালের এইসব ইঞ্জিনের পুরনো যন্ত্রাংশ৷ টয় ট্রেনের চালকের ঘরটা দেখলে মনে হয়, যেন সোজা জুল ভার্নের কল্পবিজ্ঞানের কাহিনি থেকে উঠে এসেছে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
মান্ধাতা আমলের যন্ত্রাংশ
যন্ত্রপাতিগুলো দেখতে নেহাতই সহজ-সরল হলেও সবই অতি পুরনো, মান্ধাতার আমলের৷ ফলে এগুলোকে সারানো বা এর যন্ত্রাংশ জোগাড় করাটাই কারিগরদের জন্যে আজকাল মস্ত বড় সমস্যা৷ কাজেই একাধিক বাষ্পচালিত ইঞ্জিন আজকে স্থানু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ওয়ার্কশপে৷ যদি কোনোভাবে তাদের সারিয়ে তোলা যায়, সেই অপেক্ষায়৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
রোজকার দৌড়
তবে কিছু ইঞ্জিন এখনও রোজ নিয়ম করে রেল লাইনের উপর দিয়ে ছুটতে বের হয়৷ পাহাড়ি রাস্তায় পাতা ন্যারো গেজ রেললাইন ধরে তারা এঁকে-বেঁকে দৌড়ায়, নিজেদের ফিট রাখে৷ কে জানে, কখন কী কাজের ডাক আসে!দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গা ঘামানোর মতো ইঞ্জিনগুলোর থেকে ধোঁয়া বেরোয়, কলকব্জার ধাতব আওয়াজ হয় সারা শরীর জুড়ে৷ যেন পাহাড়ি রাস্তায় ছুটতে যাবে বলে সবাই খুব উত্তেজিত৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
নামেই যায় চেনা
টয় ট্রেনের সব ইঞ্জিনেরই একটা করে নাম আছে৷ আর সেই নামগুলো কোনো না কোনো শক্তিধর প্রাণীর নামে৷ খাড়াই রাস্তায় আস্ত একটা ট্রেন টেনে নিয়ে যাওয়ায় এদের যে বিক্রম, সম্ভবত তা-ই বোঝাতে৷কখনও ইঞ্জিনের নাম দাঁতাল হাতির নামে, ‘টাস্কার’৷ কখনও হিমালয়ের পরাক্রমশালী ঈগল পাখির নামে তার নাম৷ এখনও খুব যত্ন নিয়ে পিতলের নাম-ফলকগুলো ঘষে-মেজে চকচকে রাখা হয়৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
8 ছবি1 | 8
যাত্রি সাধারণের স্বস্তি
রেলওয়ের এই হাল আমলের যন্ত্রের সাহায়্যে রাতের ট্রেন যাত্রীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বাঁচবেন৷ নির্ঘুম রাতের বিভীষিকা থেকে মুক্তি পাবেন৷ রেলওয়ে প্যাসেঞ্জার সংগঠনের সভাপতি ধীরেন কুমার বলেন, ‘‘আমরা খুশি৷ তবে ট্রেন সফরকে আরো আরামদায়ক করে তুলতে রেলের আরো কিছু পদক্ষেপ নেয়া দরকার৷'' দুরপাল্লার যাত্রী সুমিত সরকার মনে করেন,‘‘‘স্ন্যোর-ব্লকার' খুবই ভালো ব্যবস্থা৷ কিন্তু বর্ষাকালে ট্রেনের কামরায় একটা বিশ্রি দুর্গন্ধ হয়৷ সেটা দূর করারও একটা ব্যবস্থা থাকা উচিত৷'' সাধারণ মানুষ মনে করে, রেল ভাড়া বাড়ানোর সঙ্গে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য সেই অনুপাতে বাড়ানো দরকার৷
ভাড়া বাড়ানোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
রেলকর্তৃপক্ষ হালে যাত্রীভাড়া বাড়িয়েছে ১৪.২ শতাংশ৷ এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দল প্রতিবাদ আন্দোলনে নেমেছে পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের অনেকগুলি রাজ্য৷ মোদী সরকারের শরিক দল শিবসেনা পর্যন্ত এর বিরোধীতা করেছে এবং অবিলম্বে এই বৃদ্ধি প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস সপ্তাহব্যাপী ‘পথ অবরোধ' কর্মসূচি পালন করে৷ নিত্যযাত্রীদের মুখ চেয়ে রেল কর্তৃপক্ষ অবশ্য ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত নিত্যযাত্রীদের ট্রেনভাড়া বাড়াননি৷ আগের ভাড়াই রেখেছেন৷