ইউরোপের ২৭টি দেশে অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত আনতে স্ট্যান্ডার্ড অফ প্রসিডিওর (এসওপি) চূড়ান্ত হয়েছে৷ এখন তালিকা অনুযায়ী এঁরা যে বাংলাদেশের নাগরিক, সেটা নিশ্চিত হওয়াই মূল কাজ৷ ডয়চে ভেলেকে জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷
ছবি: imago/imagebroker
বিজ্ঞাপন
অবৈধ বাংলাদেশিদের নিয়ে ঢাকায় বাংলাদেশ ও ইউরোপিয় ইউনিয়নের (ইইউ) মধ্যে দু'দিনের বৈঠক ছিল মঙ্গল ও বুধবার৷ তবে প্রথম দিনের বৈঠকের শেষ পর্যায়েই এসওপি চূড়ান্ত হয়ে যায়৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইউরোপ (পশ্চিম) অনুবিভাগের মহাপরিচালক খোরশেদ খাস্তগীর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা এসওপি চূড়ান্ত করেছি৷ তবে এর কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা নাই৷ এখন একটি ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করবো, যার আওতায় আমাদের প্রথম কাজ হবে তালিকা অনুয়ায়ী ন্যাশনালিটি নিশ্চিত হওয়া৷ তারপরই ফিরিয়ে আনার বিষয়টি সামনে আসবে৷''
ইউরোপীয় ইউনিয়নের দাবি, ২০০৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৯৩ হাজার ৪৩৫ জন বাংলাদেশিকে অবৈধভাবে প্রবেশের সময় আটক করা হয়েছে৷ চলতি বছর আটক হয়েছেন আট হাজার৷ তাঁরা বলছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮টি দেশে এক লাখ অবৈধ বাংলাদেশি আছেন৷ এর আগে এঁদের ফেরত না নিলে বাংলাদেশিদের ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপের কথা বলেছিল ইইউ৷ সবাংলাদেশও তাঁদের ফেরত আনতে সম্মত হয়৷ তবে কী প্রক্রিয়ায় তাঁদের ফেরত আনা হবে, সেটাই নির্ধারিত হয়েছে ঢাকার এই বৈঠকে৷
খোরশেদ খাস্তগীর
This browser does not support the audio element.
খোরশেদ খাস্তগীর বলেন, ‘‘জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আগে থেকেই আমাদের নাগরিকরা আছেন৷ সেটা নিয়ে কোনো সমস্যা ছিল না৷ মূলত লিবিয়া থেকে সাম্প্রতিক সময়ে ইটালিতে বেশ কিছু বাংলাদেশি অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করেছে৷ সে কারণেই চাপ সৃষ্টি হয়েছে৷ নয়ত এত বেশি চাপ সৃষ্টি হতো না৷''
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ‘ইইউ-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৬ সালে ৮ হাজার ২০০ জন এবং ২০১৭ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত ৮ হাজার ৫০০ জন বাংলাদেশি ইটালিতে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছেন৷'
অন্যদিকে ২০১৬ পর্যন্ত ১৭ হাজার ৩০০ বাংলাদেশি ইউরোপে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন এবং এর মধ্যে ১১ হাজার ৮০০ জনের আবেদন খারিজ করা হয়েছে৷ বাকি ছয় হাজার আবেদনের অধিকাংশ খারিজ হবার সম্ভাবনা আছে৷ খারিজ হওয়া এই আবেদনকারীদের ইউরোপে অবস্থান করার কোনো অধিকার নেই এবং তাঁদের নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাইয়ের প্রেক্ষিতে এঁদের সবাইকে ফেরত নিয়ে আসা হবে বলে জানা গেছে৷
নাগরিকত্ব বা ন্যাশনালিটি নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশ একটি অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে জানান খোরশেদ খাস্তগীর৷ এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনও নেয়া হবে৷ প্রক্রিয়াটি কেমন হবে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘‘দেশের অভ্যন্তরে একাধিক মন্ত্রণালয়কে নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে৷ নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাই করার জন্য নির্বাচন কমিশনের ডাটাবেস, ইমিগ্রেশন অফিস, পাসপোর্ট অফিসের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বিশেষ সেল গঠনেরও প্রস্তাব করা হয়েছে এই এসওপিতে৷''
যে ১০ জেলা থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ বিদেশে গেছেন
বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৫৭ লক্ষ ৭৪ হাজার ৫৪০ জন বাংলাদেশি কর্মসূত্রে বিদেশে গেছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Naamani
১. কুমিল্লা
সবচেয়ে বেশি গেছে এই জেলা থেকে৷ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বলছে, ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত কুমিল্লা থেকে মোট ৬ লক্ষ ১৯ হাজার ১৩৮ জন বিদেশ গেছেন, যেটা রপ্তানি হওয়া মোট জনশক্তির প্রায় ১০.৯৪ শতাংশ৷
আপনি যদি এই ১০ জেলার না হয়ে থাকেন তাহলে আপনার জেলার তথ্য জানতে উপরে ‘+’ চিহ্ন ক্লিক করুন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Naamani
11 ছবি1 | 11
খোরশেদ খাস্তগীরের কথায়, ‘‘আমরা আমাদের দেশের স্বার্থ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিচেনায় রেখে কাজ করছি৷ এটা করতে গিয়ে আমাদের অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে৷ আমরা প্রতিটি বিষয় সঠিকভাবে চেক করে দেখবো৷''
ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কোনো সময়সীমা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি বিষয় নিয়ে কাজ করছি৷ তাই সবকিছু এখনই বলতে পারছি না৷''
২০১৬ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্য বাদে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য ২৭টি দেশে প্রায় দু'লাখ বৈধ ভিসাধারী বাংলাদেশি অবস্থান করছেন যাঁদের সেখানে থাকার এবং কাজ করার অনুমতি আছে৷ ইউরোপে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি অবস্থান করছেন যুক্তরাজ্যে৷
২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার বাংলাদেশি ইউরোপীয় দেশগুলোতে বৈধভাবে কাজের জন্য ‘ওয়ার্ক পারমিট' বা স্থায়ীভাবে থাকার জন্য ‘রেসিডেন্সি পারমিট' পেয়েছেন৷
ঢাকায় স্ট্যান্ডার্ড অফ প্রসিডিওর নিয়ে বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (দ্বিপক্ষীয়) কামরুল আহসান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে নেতৃত্ব দেন এশিয়া প্যাসিফিক বিভাগের ডেপুটি ম্যানাজিং ডিরেক্টর পলা পামপোলানি৷
বন্ধু, প্রতিবেদনটি নিয়ে আপনার কোনো মন্তব্য থাকলে লিখুন নীচের ঘরে৷
শরণার্থী: জলবায়ু পরিবর্তন যার অন্যতম কারণ
বিশ্বে দু’ধরনের শরণার্থী রয়েছে৷ ১. জাতিগত সহিংসতা কিংবা রাজনৈতিক আদর্শগত কারণে, ২. জলবায়ুর কারণে সৃষ্ট৷ এই দু’ধরনের শরণার্থীই এখন বাংলাদেশের দুশ্চিন্তার কারণ৷ আর এই দু’টো কারণেই বিদেশে আশ্রয় নিচ্ছেন বাংলাদেশিরা৷
ছবি: Reuters/Beawiharta
রোহিঙ্গা শরণার্থী
১৯৯১-৯২ সালে আড়াই লক্ষাধিক মুসলিম রোহিঙ্গা শরণার্থী সামরিক জান্তার নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে মুক্তি পেতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়৷ ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছরের অক্টোবর থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আরও ৭৪ হাজার নতুন রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জলবায়ু উদ্বাস্তু: প্রতি সাতজনে একজন
বাংলাদেশের জলবায়ু শরণার্থীদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্লাইমেট রিফিউজি’ বা এসিআর-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বে ৪৫ জনের মধ্যে ১ জন জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে৷ আর বাংলাদেশে সংখ্যাটা হবে প্রতি সাতজনে একজন৷ পরিবেশ বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, আগামীতে বাংলাদেশের প্রায় তিন কোটি মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Zakir Hossain Chowdhury
জলবায়ু উদ্বাস্তু: প্রতি বছর ২,০০০ মানুষ আসছে ঢাকায়
আগে কেবল দারিদ্র্যের কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকায় আসত মানুষ৷ আর এখন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঢাকায় আশ্রয় নিচ্ছে অনেকে৷ প্রতি বছর নতুন করে দুই হাজার মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঢাকায় ঠাঁই নিচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
আন্তর্জাতিক উদ্বাস্তু সংস্থা আইওএম-এর রিপোর্ট
বিশ্বব্যাংক বলছে, প্রতি বছর ঢাকার বাইরে থেকে কমপক্ষে ৪ লাখ মানুষ এই শহরে আসছে৷ আর আইওএম বলছে, ঢাকার বস্তিতে যেসব মানুষ থাকে, তার মধ্যে ৭০ ভাগই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘর-বাড়ি হারিয়ে এই শহরে আশ্রয় নিয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. uz Zaman
ইউরোপে শরণার্থীদের মধ্যে বাংলাদেশিদের সংখ্যা বাড়ছে
গত বছরের প্রথম তিন মাসে ইটালিতে গিয়েছিল মাত্র একজন বাংলাদেশি শরণার্থী৷ কিন্তু ২০১৭ সালে সেটা আশ্চর্যজনকভাবে বেড়েছে৷ প্রথম তিন মাসে ইটালিতে বাংলাদেশি শরণার্থী এসেছে ২ হাজার ৮শ’ জন৷ নৌকায় ভূ-মধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইটালিতে পৌঁছেছেন তাঁরা৷
ছবি: Reuters/Marina Militare
১০ হাজার ডলারের বিনিময়ে
দালালদের ১০ হাজার মার্কিন ডলার দিয়ে থাকেন এই শরণার্থীরা৷ প্রথমে যান দুবাই বা তুরস্ক, সেখান থেকে লিবিয়া হয়ে ইটালিতে পৌঁছান তাঁরা৷ এই দীর্ঘ ও দুর্গম পথ পাড়ি দিতে তাঁদের অনেকের কয়েক বছর লেগে যায়, প্রাণ হারান কেউ কেউ৷