নাগরিকদের ইথিওপিয়া ছাড়ার নির্দেশ পশ্চিমা দেশগুলির
২৪ নভেম্বর ২০২১
ইথিওপিয়া থেকে অবিলম্বে নাগরিকদের চলে আসতে বললো অ্যামেরিকা, জার্মানি ও ফ্রান্স। কর্মী কমাচ্ছে জাতিসংঘও।
বিজ্ঞাপন
ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যাবি আহমেদ সোমবার বলেছেন, টিগ্রে পিপলস লিবারেশন ফোর্স(টিপিএলএফ)-এর বিরুদ্ধে তিনি লড়াইয়ের ময়দানে গিয়ে নেতৃত্ব দেবেন। তারপরই মঙ্গলবার জার্মানি তাদের সব নাগরিককে অবিলম্বে ইথিওপিয়া ছাড়তে বলেছে। একই নির্দেশ জারি করেছে ফ্রান্স এবং অ্যামেরিকাও।
টিপিএলএফের দাবি, তাদের বাহিনী এখন রাজধানীর কাছাকাছি এসে গেছে। এরপরই বিভিন্ন দেশ আদ্দিস আবাবা থেকে তাদের নাগরিকদের দ্রুত চলে আসার নির্দেশ দিচ্ছে।
জার্মানি ও জাতিসংঘ কী বলছে
জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আদ্দিস আবাবায় যে জার্মান নাগরিকরা আছেন, তারা যেন অবিলম্বে ইথিওপিয়ার বাইরে চলে যান।
ফ্রান্স ও অ্যামেরিকাও অবিলম্বে তাদের নাগরিকদের ইথিওপিয়া ছাড়তে বলেছে।
সংকটের মুখে ইথিওপিয়া
ভয়ংকর অবস্থা ইথিওপিয়ায়। বিদ্রোহী টিপিএলএফ যোদ্ধারা এবার রাজধানী আদ্দিস আবাবার দিকে এগোচ্ছে। সাবেক সেনা কর্মীদের হাতে অস্ত্র নিতে বলছে সরকার।
ছবি: Yasuyoshi Chiba/AFP/Getty Images
আদ্দিস আবাবার কাছে
রাজধানী থেকে সাড়ে তিনশ কিলোমিটার দূরের শহর দখল করে নিয়েছে টিগ্রে পিপলস লিবারেশন ফোর্স (টিপিএলএফ)। তারপর তারা রাজধানীর দিকে এগোচ্ছে। এর আগে তারা সেনাবাহিনীর কাছ থেকে টিগ্রের দখল নিয়েছিল। উপরের ছবিটি টিগ্রের রাজধানী দখলের পর টিপিএলএফের সদস্যদের।
ছবি: YASUYOSHI CHIBA/AFP
সরকারের সমর্থনে
রাজধানী আদ্দিস আবাবায় সরকার ও সেনার সমর্থনে রাস্তায় নেমেছেন সাধারণ মানুষ। বিশাল জমায়েতে তারা সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
ছবি: Tiksa Negeri/REUTERS
গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা
পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে, তাতে গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা প্রবল হচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, বিদ্রোহী টিপিএলএফ-কে ঠেকাতে না পারলে তারা রাজধানীর দখল নিয়ে নেবে। তখন রক্তগঙ্গা বইতে পারে। গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনাও বাড়বে।
ছবি: Eduardo Soteras/AFP
সরকারের আবেদন
সরকার ইতিমধ্যেই সাবেক সেনা অফিসার ও জওয়ানদের হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে বিদ্রোহীদের মোকাবিলা করার অনুরোধ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ, সাধারণ মানুষও যেন হাতে অস্ত্র তুলে নেয় এবং দেশরক্ষার জন্য এগিয়ে আসে। কার কাছে কী অস্ত্র আছে, তাও নথিভুক্ত করা হচ্ছে।
ছবি: Ben Curtis/AP Photo/picture alliance
সাবেক সেনাকর্তা এগিয়ে এলেন
সাবেক সেনাকর্তা বর্তমান সেনার সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন। তিনি ও বর্তমান সেনাপ্রধান সংঘর্ষে নিহত সেনার উদ্দেশ্যে শোকপ্রকাশ করছেন।
ছবি: AP/picture alliance
মোমবাতি মিছিল
টিপিএলএফের হাতে যেসব সেনার মৃত্যু হয়েছে, তাদের স্মরণে মোমবাতি মিছিল আদ্দিস আবাবায়। প্রচুর মানুষ এভাবে শোকপ্রকাশ করেছেন।
ছবি: AP/picture alliance
সামিল সেনারাও
বর্তমান ও সাবেক সেনারাও মৃত সৈনিকদের উদ্দেশ্যে শোকপ্রকাশ করেছেন।
ছবি: AP/picture alliance
বিদ্রোহীদের দখলে
আমহারা অঞ্চলে বিদ্রোহীরা একটি শহর দখল করে নিয়েছে। অক্টোবরে এই শহর সেনার হাতছাড়া হয়।
ছবি: Tiksa Negeri/REUTERS
টিগ্রের রাজধানীতে
টিগ্রের রাজধানীতে এভাবেই উড়ছে টিপিএলএফের পতাকা। এই শহর পুরোপুরি টিপিএলএফের দখলে।
ছবি: Yasuyoshi Chiba/AFP
গভীর সংকট
যেভাবে এখন টিপিএলএফ এবং আমহারা ফোর্স সেনাকে পরাস্ত করে এগিয়ে আসছে, তাতে পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে। প্রশ্ন এখন রাজধানীর দখল কে নিজের কাছে রাখতে পারবে তা নিয়ে। ফলে গভীর সংকটের মুখে পড়েছে ইথিওপিয়া।
ছবি: Ben Curtis/AP Photo/picture alliance
10 ছবি1 | 10
জাতিসংঘও ইথিওপিয়ায় তাদের যে বিদেশি কর্মীরা কাজ করেন তাদের পরিবারের মানুষদের দ্রুত বাইরে নিয়ে আসছে। জাতিসংঘের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ইথিওপিয়ার যা পরিস্থিতি তাতে খুবই সতর্ক হয়ে চলা দরকার। তাই জাতিসংঘ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ইথিওপিয়ায় কর্মী কমিয়ে দেয়া হবে। আর কর্মীদের উপর যারা নির্ভরশীল তাদেরও সাময়িকভাবে ইথিওপিয়ার বাইরে নিয়ে আসা হবে।
ইথিওপিয়ার অবস্থা
প্রধানমন্ত্রী অ্যাবি আহমেদ বলেছেন, তিনি লড়াইয়ের ময়দানে যাবেন এবং সেখানে সেনার নেতৃত্ব দেবেন। ২০১৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে এটা অস্তিত্বরক্ষার লড়াই। তিনি বলেছেন, ''ইথিওপিয়াকে বাঁচানোর জন্য আমরা চূড়ান্ত পর্যায়ে আছি।''
টিপিএলএফের দাবি, তারা আদ্দিস আবাবা থেকে মাত্র ২২০ কিলোমিটার দূরে আছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কূটনীতিকদের কাছে সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, সেনাবাহিনী শহরকে নিরাপদ রাখার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
টিগ্রে: যুদ্ধের বলি নারীরা
মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, নানা ধরনের অপরাধও বেড়ে চলেছে৷ টিগ্রে কেন্দ্র করে গৃহযুদ্ধ বিশেষ করে নারীদের ওপর যৌন নিপীড়ন একটি মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিয়েছে৷
ছবি: Ben Curtis/AP/picture alliance
পালাচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ
প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদের টিগ্রে আঞ্চলিক সরকারের সঙ্গে ইথিওপিয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের গৃহযুদ্ধ চলছে। প্রচণ্ড ক্ষুধা এবং যুদ্ধাপরাধের হুমকিতে দিন কাটাচ্ছেন সে এলাকার মানুষ।স্বঘোষিত টিগ্রে ডিফেন্স ফোর্সেস- টিডিএফ টিগ্রের আঞ্চলিক রাজধানী মেকেলে পুনরায় দখল করার পর লাখ লাখ মানুষ এখন পলাতক৷
ছবি: YASUYOSHI CHIBA/AFP
দুর্ভিক্ষের হুমকি
জাতিসংঘের হিসাবে, অঞ্চলটির চার লাখের বেশি মানুষ দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত, আরো প্রায় ১৮ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। আবি আহমেদ এমন তথ্য অস্বীকার করে ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন। ইউনিসেফ বলেছে, "খাদ্য, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, পানি এবং পয়ঃনিষ্কাষণ অবকাঠামো ধ্বংসের ফলে পুষ্টির সংকট দেখা দিয়েছে।"
ছবি: AP
ধ্বংসস্তূপ
ইথিওপিয়ার সেনাবাহিনী ইরিত্রিয়ার সৈন্যদের সঙ্গে মিলে যুদ্ধ করেছে৷ কিন্তু সে যুদ্ধে কেবল টিগ্রের বিচ্ছিন্নতাবাদী যোদ্ধাদেরই নয়, বেসামরিক জনগোষ্ঠীকেও লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আবি মনে করেন, টিগ্রে অঞ্চলে প্রতিরোধ গুঁডিয়ে দেয়ার জন্য এমন ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যার তথ্য জড়ো হচ্ছে। পুড়ে যাওয়া গাড়ি এবং ধ্বংস হওয়া বাড়ি এখানকার নিয়মিত চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ছবি: GIULIA PARAVICINI/REUTERS
যুদ্ধের অস্ত্র ধর্ষণ
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার জন্য ধর্ষণ এবং যৌন সহিংসতাকে কাজে লাগানো হচ্ছে। সংস্থাটির মতে, ইরিত্রিয়ার সৈন্যরাও এই অপরাধে ব্যাপকভাবে জড়িত। এক নারী বলছিলেন, "তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলেছিল। কেউ বলছিল, 'ওকে আমরা হত্যা করি।' অন্যরা বলছিল, 'না, না। ধর্ষণই তার জন্য যথেষ্ট৷'
ছবি: Ben Curtis/AP/picture alliance
গণহত্যা এবং অস্থায়ী কবর
দুই পক্ষের যোদ্ধাদের মরদেহ সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে। কখনো কখনো তাদের অস্থায়ী কবরস্থানে কবর দেয়া হয়; কখনো মরদেহ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়, অথবা ঘটনাস্থলেই ফেলে রাখা হয়। ছবিতে একজন ইথিওপীয় সৈন্যের অস্থায়ী কবর দেখা যাচ্ছে।
ছবি: GIULIA PARAVICINI/REUTERS
কিশোর যোদ্ধা
ইথিওপিয়ার এবং ইরিত্রিয়ার সম্মিলিত বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আরো বেশি সংখ্যক কিশোর নাম লেখাচ্ছেন। টিডিএফ-এর নতুন যোদ্ধাদের অনেকেই কেবল কৈশোরে পা দিয়েছেন। একটি অনিশ্চিত এবং সম্ভাব্য রক্তাক্ত ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।
ছবি: YASUYOSHI CHIBA/AFP
6 ছবি1 | 6
আদ্দিস আবাবার পিস ও সিকিউরিটি ব্যুরোর প্রধান বলেছেন, বিদেশি কূটনীতিকদের ভয়ের কোনো কারণ নেই। পশ্চিমা মিডিয়া যে ছবিটা তুলে ধরছে, তার সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই।
অ্যাবি আহমেদ টিগ্রে থেকে টিপিএলএফকে ক্ষমতাচ্যূত করতে সেনা অভিযানের নির্দেশ দেন। তারপর শুরু হয় দুই পক্ষের লড়াই। ২০২০ সালের নভেম্বরের পর থেকে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছেন। ২০ লাখ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। জাতিসংঘের রিপোর্ট হলো, লাখ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখে।
শান্তি ফিরবে কীভাবে
জাতিসংঘের দূত জেফরি ফেল্টম্যান জানিয়েছেন, তিনি মনে করেন, কূটনৈতিক প্রয়াসের মধ্যে দিয়ে লড়াই শেষ হতে পারে। তবে তিনি এটাও বলেছেন, বাস্তব পরিস্থিতি খুবই খারাপ। ইথিওপিয়ার সেনা ও টিপিএলএফ বাহিনী তাদের তৎপরতা বাড়াতে পারে। সেটা হলে শান্তিপ্রক্রিয়া ধাক্কা খেতে বাধ্য।