নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে আর্মেনিয়ার সঙ্গে আজারবাইজানের যুদ্ধ অব্যাহত। রোববার আজারি ফৌজ জানিয়ে দিল, কারাবাখের গুরুত্বপূর্ণ শহর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাত থেকে পুনর্দখল করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে আশঙ্কা আরো গভীর হচ্ছে। একমাসেরও বেশি সময় ধরে সেখানে যুদ্ধ চলছে। আর্মেনিয়ার সেনা, আর্মেনিয়ার মদতপুষ্ট নাগর্নো-কারাবাখের বিচ্ছিন্নতাবাদী যোদ্ধা এবং আজারি ফৌজের মধ্যে। রাশিয়া এবং অ্যামেরিকা একাধিকবার দুইপক্ষের মধ্যে শান্তিচুক্তি করানোর চেষ্টা করেছে। চুক্তিতে সই করলেও বাস্তবে যুদ্ধ বন্ধ করেনি কোনো পক্ষই। দুইপক্ষই একের পর এক শহর ধ্বংস করেছে। হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন। তারই মধ্যে রোববার আজারবাইজানের সেনা দাবি করেছে, নাগর্নো-কারাবাখের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর তারা দখল করেছে।
রোববার আজারি প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভও একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে একই কথা দাবি করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, নাগর্নো-কারাবাখের শহর শুশা এখন আজারি ফৌজের দখলে। আর্মেনিয়ার ভাষায় এই শহরটিরই নাম শুশি। আর্মেনিয়ার প্রশাসন এবং সেনা অবশ্য এই তথ্য স্বীকার করেনি। বরং তাদের বক্তব্য, শুশি অঞ্চলে দুই দেশের মধ্যে তীব্র যুদ্ধ চলছে। আজারি ফৌজ শহরটির দখল নিতে পারেনি।
নাগর্নো-কারাবাখে বিপদে সাধারণ মানুষ
নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধ প্রবেশ করলো দশম দিনে৷ কিন্তু এখনও মিলছে না যুদ্ধবিরতির আভাস৷ দুই পক্ষের বোমা বর্ষণে বিধ্বস্ত হচ্ছে বসতবাড়িও৷ ঘটছে বেসামরিক নাগরিক হতাহতের ঘটনা৷
ছবি: Reuters
প্রোপাগান্ডা চলছে
মাঠে চেয়ে বেশি লড়াই চলছে মুখে৷ দুই পক্ষই আশ্রয় নিচ্ছে বাগাড়ম্বরের৷ নিজেদের ছোঁড়া গোলায় সাধারণ মানুষ মারা গেলেও দুই পক্ষই অপর পক্ষকে দুষছে যুদ্ধের নিয়ম না মানার জন্য৷ হামলা নিয়ে দুই পক্ষের পালটা দাবিতে সংকট আরো বাড়ছে৷
ছবি: David Ghahramanyan/NKR InfoCenter/PAN Photo/Reuters
নাগরিক সেবা বন্ধ
কারবাখের প্রধান শহর স্টেপানকিয়ার্টে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে আজারবাইজান৷ এতে শহরটির বেশিরভাগ নাগরিক সেবা প্রায় বিধ্বস্ত৷ অনেক নাগরিকই বিদ্যুৎ, জলের সংকটে দিন কাটাচ্ছেন৷ ছবিতে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Aris Messinis/AFP/Getty Images
আজারাবাইজানে হামলা
আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী একাধিক শহরেও আর্মেনীয় বাহিনীর হামলার খবর পাওয়া গেছে৷ গ্যাঞ্জা শহরে হামলার কথা স্বীকার করেছে আর্মেনিয়াও৷ শহরটিতে হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিকের হতাহতের খবরও পাওয়া গেছে৷
ছবি: Gor Kroyan/Reuters
নিত্যদিনের ভয়
বসতবাড়ি হারিয়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন বাঙ্কারে৷ কেউ কেউ যাওয়ার জায়গা না থাকায় আশ্রয় নিয়েছেন রাস্তায়৷ ছবিতে রাস্তায় পড়ে থাকা বিধ্বস্ত একটি রকেটের ধ্বংসাবশেষ৷
ছবি: Reuters
পাহারায় বৃদ্ধা
বয়সের ভারে এই বৃদ্ধার নড়াচড়ারও সামর্থ্য নেই৷ নিজের বাসার দরজায় বসে আছেন বন্দুক হাতে৷ তবে মুখোমুখি সংঘর্ষের চেয়ে রকেট হামলাই এখন সবচেয়ে বড় ভয় স্টেপানকিয়ার্টের মানুষের কাছে৷
ছবি: Pablo Gonzalez/Agencia EFE/Imago Images
রাস্তাঘাটে রকেট
গত কয়েকদিনে এত বেশি রকেট হামলা হয়েছে শহরটিতে যে, এখন রাস্তা, মাঠ সর্বত্রই রকেট শেল পড়ে থাকতে দেখা যায়৷
নাগর্নো-কারাবাখের একটি শহর ও সাতটি গ্রাম পুনর্দখলের দাবি করেছে আজারবাইজন৷ কয়েকটি ভিডিওতে কারবাখের গ্রামে আজেরি সৈন্যদের পতাকা হাতে ঘুরতেও দেখা গেছে৷
ছবি: Karo Sahakyan/ArmGov/PAN Photo/Reuters
যুদ্ধবিরতি, সমঝোতা?
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শুরু থেকেই দুই দেশকে যুদ্ধ বন্ধ করে আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়ে আসছে৷ তবে তাতে সাড়া মেলেনি৷ এরই মধ্যে দুই পক্ষ মিলিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন তিন শতাধিক মানুষ৷
ছবি: via REUTERS
আঞ্চলিক যুদ্ধের শঙ্কা
তুরস্ক এরই মধ্যে সরাসরি আজারবাইজানকে সমর্থন দিয়েছে৷ সীমান্তবর্তী ইরান এবং রাশিয়া দুই দেশকে আলোচনা ও যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে৷ তবে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, দীর্ঘদিন এ যুদ্ধ চলতে থাকলে প্রতিবেশী দেশগুলোও একসময় এতে জড়িয়ে পড়তে পারে৷ সেক্ষেত্রে বড় আকারের আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কাও দেখা দিতে পারে৷
ছবি: Umit Bektas/Reuters
9 ছবি1 | 9
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এই যুদ্ধে শুশা বা শুশি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্ট্র্যাটেজিক শহর। আজারি ফৌজ যদি সত্যিই শহরটির দখল নিয়ে থাকে, তা হলে যুদ্ধে বিরাট জয় হিসেবেই তা দেখতে হবে। নাগর্নো-কারাবাখের রাজধানীর ঠিক পিছনে একটি পাহাড়ের উপর শুশা বা শুশি শহরটির অবস্থান। ওই শহর আজারবাইজানের দখলে এলে সেখান থেকে খুব সহজেই রাজধানী শহর আক্রমণ করা যাবে বলে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য। ক্রমগাত নজরদারি চালানো যাবে রাজধানীতে ঢোকার মূল রাস্তার উপর। সে কারণেই, শুশি জয় এই যুদ্ধে এত গুরুত্বপূর্ণ।
আন্তর্জাতিক ভাবে নাগর্নো-কারাবাখ আজারবাইজানের এলাকা। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরেই আর্মেনিয়ার মদতে সেখানে স্বাধীন প্রশাসন চালাচ্ছে এথনিক আর্মেনিয়ানদের একটি গোষ্ঠী। বিচ্ছিন্নতাবাদী সেই গোষ্ঠী নিজেদের আজারবাইজানের অংশ হিসেবে দেখতে চায় না। দীর্ঘ দিন ধরেই এই বিষয়টি নিয়ে আজারবাইজানের সঙ্গে আর্মেনিয়ার বিরোধ। গত দেড় মাসে যা চূড়ান্ত জায়গায় পৌঁছেছে।