দুই দেশের যুদ্ধে প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। গুলি বোমায় বিধ্বস্ত নাগর্নো-কারাবাখের মানুষ বাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
যুদ্ধ বন্ধের এখনো কোনো ইঙ্গিত নেই। এগারো দিনে প্রবেশ করল নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের যুদ্ধ। তারই মধ্যে কারাবাখের স্বাধীন সরকার জানিয়েছে, তাদের প্রধান শহর স্টেপানকিয়ার্টের অর্ধেকরও বেশি মানুষ এখন গৃহহীন। যুদ্ধ বন্ধের জন্য ফের সওয়াল করেছে রাশিয়া, ফ্রান্স এবং অ্যামেরিকা। ন্যাটোর তরফেও দ্রুত যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো দেশই লড়াই থামানোর ইঙ্গিত দেয়নি।
নাগর্নো-কারাবাখে বিপদে সাধারণ মানুষ
নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধ প্রবেশ করলো দশম দিনে৷ কিন্তু এখনও মিলছে না যুদ্ধবিরতির আভাস৷ দুই পক্ষের বোমা বর্ষণে বিধ্বস্ত হচ্ছে বসতবাড়িও৷ ঘটছে বেসামরিক নাগরিক হতাহতের ঘটনা৷
ছবি: Reuters
প্রোপাগান্ডা চলছে
মাঠে চেয়ে বেশি লড়াই চলছে মুখে৷ দুই পক্ষই আশ্রয় নিচ্ছে বাগাড়ম্বরের৷ নিজেদের ছোঁড়া গোলায় সাধারণ মানুষ মারা গেলেও দুই পক্ষই অপর পক্ষকে দুষছে যুদ্ধের নিয়ম না মানার জন্য৷ হামলা নিয়ে দুই পক্ষের পালটা দাবিতে সংকট আরো বাড়ছে৷
ছবি: David Ghahramanyan/NKR InfoCenter/PAN Photo/Reuters
নাগরিক সেবা বন্ধ
কারবাখের প্রধান শহর স্টেপানকিয়ার্টে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে আজারবাইজান৷ এতে শহরটির বেশিরভাগ নাগরিক সেবা প্রায় বিধ্বস্ত৷ অনেক নাগরিকই বিদ্যুৎ, জলের সংকটে দিন কাটাচ্ছেন৷ ছবিতে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Aris Messinis/AFP/Getty Images
আজারাবাইজানে হামলা
আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী একাধিক শহরেও আর্মেনীয় বাহিনীর হামলার খবর পাওয়া গেছে৷ গ্যাঞ্জা শহরে হামলার কথা স্বীকার করেছে আর্মেনিয়াও৷ শহরটিতে হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিকের হতাহতের খবরও পাওয়া গেছে৷
ছবি: Gor Kroyan/Reuters
নিত্যদিনের ভয়
বসতবাড়ি হারিয়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন বাঙ্কারে৷ কেউ কেউ যাওয়ার জায়গা না থাকায় আশ্রয় নিয়েছেন রাস্তায়৷ ছবিতে রাস্তায় পড়ে থাকা বিধ্বস্ত একটি রকেটের ধ্বংসাবশেষ৷
ছবি: Reuters
পাহারায় বৃদ্ধা
বয়সের ভারে এই বৃদ্ধার নড়াচড়ারও সামর্থ্য নেই৷ নিজের বাসার দরজায় বসে আছেন বন্দুক হাতে৷ তবে মুখোমুখি সংঘর্ষের চেয়ে রকেট হামলাই এখন সবচেয়ে বড় ভয় স্টেপানকিয়ার্টের মানুষের কাছে৷
ছবি: Pablo Gonzalez/Agencia EFE/Imago Images
রাস্তাঘাটে রকেট
গত কয়েকদিনে এত বেশি রকেট হামলা হয়েছে শহরটিতে যে, এখন রাস্তা, মাঠ সর্বত্রই রকেট শেল পড়ে থাকতে দেখা যায়৷
নাগর্নো-কারাবাখের একটি শহর ও সাতটি গ্রাম পুনর্দখলের দাবি করেছে আজারবাইজন৷ কয়েকটি ভিডিওতে কারবাখের গ্রামে আজেরি সৈন্যদের পতাকা হাতে ঘুরতেও দেখা গেছে৷
ছবি: Karo Sahakyan/ArmGov/PAN Photo/Reuters
যুদ্ধবিরতি, সমঝোতা?
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শুরু থেকেই দুই দেশকে যুদ্ধ বন্ধ করে আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়ে আসছে৷ তবে তাতে সাড়া মেলেনি৷ এরই মধ্যে দুই পক্ষ মিলিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন তিন শতাধিক মানুষ৷
ছবি: via REUTERS
আঞ্চলিক যুদ্ধের শঙ্কা
তুরস্ক এরই মধ্যে সরাসরি আজারবাইজানকে সমর্থন দিয়েছে৷ সীমান্তবর্তী ইরান এবং রাশিয়া দুই দেশকে আলোচনা ও যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে৷ তবে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, দীর্ঘদিন এ যুদ্ধ চলতে থাকলে প্রতিবেশী দেশগুলোও একসময় এতে জড়িয়ে পড়তে পারে৷ সেক্ষেত্রে বড় আকারের আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কাও দেখা দিতে পারে৷
ছবি: Umit Bektas/Reuters
9 ছবি1 | 9
কার্যত ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে কারাবাখের মূল শহর। সেখানকার স্থানীয় সরকারের বক্তব্য, হাজার হাজার মানুষ বাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছেন। শহর জুড়ে পড়ে রয়েছে বোমা। বহু বোমা না ফাটা অবস্থায় রাস্তায় ছড়িয়ে রয়েছে। যখন তখন বিস্ফোরণের আশঙ্কা। বহু বাড়ি বোমার আঘাতে ভেঙে পড়েছে। ধ্বংসস্তূপ ঘেঁটে প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করে পালাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। আর্মেনিয়ার হিসেব অনুযায়ী নাগর্নো-কারাবাখে প্রায় ৩০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে বহু সাধারণ মানুষ। তবে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারই মধ্যে যুদ্ধ অব্যাহত। আর্মেনিয়া এখনও আজারবাইজানের বিভিন্ন শহরে গোলাবর্ষণ করছে। আজারবাইজানও শেলিং চালিয়ে যাচ্ছে।
আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধের ছবি
আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে চলছে যুদ্ধ৷ মৃত্যু হয়েছে কয়েকশ মানুষের৷ অন্য কোন দেশ কারো পক্ষে সরাসরি অবস্থান না নিলেও, এই যুদ্ধে তুরস্ক আজারবাইজানকে ইন্ধন দিচ্ছে বলে অভিযোগ আর্মেনিয়ার।
ছবি: Vahram BaghdasaryanReuters
সংঘাতের কারণ
দুই দেশের সীমান্তে ককেশাস পর্বতে বিতর্কিত নাগর্নো-কারাবাখের দখল নিয়ে সংঘাত শুরু হয়েছে। আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান দুইটি দেশই সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। সোভিয়েতের পতনের পর দু'টি দেশ আলাদা হয়ে যায়। তখন থেকেই নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে তাদের মধ্যে বিতর্ক।
ছবি: Defence Ministry of Armenia/Reuters
কারাবাখের অবস্থান
দুই দেশের সীমান্তে নাগর্নো-কারাবাখে আর্মেনিয়ার মানুষ থাকেন। তবে এলাকাটি স্বাধীন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে। তাদের নিজস্ব প্রশাসনও আছে। আর্মেনিয়ার যথেষ্ট প্রভাব আছে ওই অঞ্চলে। আজারবাইজানের দাবি, এলাকাটি তাদের ভূখণ্ডের অংশ।
আর্মেনিয়ার বক্তব্য আজারবাইজান জোর করে নাগর্নো-কারবাখের দখল নিতে চাইছে। ওই অঞ্চলে আর্মেনীয় মানুষ বাস করেন। ফলে কোনোভাবেই তা আজারবাইজানের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না। তারাও যুদ্ধ থামাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।
ছবি: Armenian Defense Ministry/AP/picture-alliance
তুরস্কের অবস্থান
আর্মেনিয়ার বক্তব্য, তুরস্ক যুদ্ধে আজারবাইজানকে সাহায্য করছে। তুরস্কের যুদ্ধবিমান আর্মেনিয়ার যুদ্ধবিমানকে ধ্বংস করেছে বলেও অভিযোগ। তুরস্ক এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে তারা যে আজারবাইজানের পক্ষে, তুরস্ক সে কথা জানিয়ে দিয়েছে।
ছবি: Armenian Defense Ministry
মৃত্যু হচ্ছে কাদের
দুই দেশের এই যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করছেন সামরিক-বেসামরিক নাগরিক। শুক্রবার পর্যন্ত প্রায় ২০০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি৷ এর মধ্যে ৩০ জনের বেশি বেসামরিক নাগরিক৷ অন্যদিকে কারাবাখের ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী সরকার’ তাদের ৫৪ জন সৈন্য নিহত হয়েছে বলে শুক্রবার দাবি করেছে৷
ছবি: Celestino Arce Lavin/Zuma/picture-alliance
বিশ্বের অবস্থান
যুদ্ধ বন্ধের আর্জি জানিয়েছে বিশ্বের বহু দেশ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। রাশিয়া, অ্যামেরিকা, ফ্রান্স যৌথ বিবৃতি পেশ করেছে।
ছবি: Vahram BaghdasaryanReuters
7 ছবি1 | 7
ইরান আগেই জানিয়েছিল, যে ভাবে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে, তাতে যে কোনো দিন তা আরো ছড়িয়ে পড়তে পারে। দুই দেশের যুদ্ধে অন্য দেশের যোদ্ধারাও যোগ দিচ্ছেন বলে ইরানের দাবি। সিরিয়া ইতিমধ্যেই স্বীকার করেছে, তাদের দেশের বেশ কিছু যোদ্ধা আজারবাইজানের হয়ে লড়াই করছে। তুরস্কও যুদ্ধে সরাসরি যোগ দিয়েছে বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে দ্রুত অবস্থার পরিবর্তনের জন্য বৈঠকে বসতে পারে অ্যামেরিকা, ফ্রান্স এবং রাশিয়া। জার্মানিও যুদ্ধ বন্ধের জন্য আবেদন করেছে। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস এ বিষয়ে জার্মান পার্লামেন্টেও আলোচনা করেছেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন জানিয়েছেন, আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গেই তাঁর ফোনে কথা হয়েছে। বস্তুত, এক সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল দুইটি দেশ। আর্মেনিয়ার সঙ্গে এখনও রাশিয়ার সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ। আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী আগেই বলেছিলেন, প্রয়োজনে রাশিয়া তাঁদের রক্ষা করবে। পুটিন জানিয়েছেন, দুই দেশের কাছেই যুদ্ধ বন্ধের আর্জি জানিয়েছেন তিনি। রাশিয়া দুই দেশের মধ্যে আলোচনায় মধ্যস্থতা করতেও রাজি। ন্যাটোর তরফেও যুদ্ধ বন্ধের আবেদন জানানো হয়েছে।