শনিবার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তা মানেনি কোনও দেশ। আর্মেনিয়া-আজারবাইজান নিয়ে উদ্বেগে ইইউ।
বিজ্ঞাপন
যুদ্ধবিরতি কথার কথা। রোববারেও থামেনি নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের যুদ্ধ। প্রতিদিনের মতো এ দিনও দুই দেশ যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জন্য অপরের দিকে আঙুল তুলেছে। আজারবাইজানের দাবি, রোববারেও তাদের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলিকে লক্ষ্য করে কামান দেগেছে আর্মেনিয়া। যার জেরে আরো সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ভেঙে গিয়েছে বাড়ি-ঘর। আর্মেনিয়াও অভিযোগ করেছে, আজারবাইজান যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে।
শনিবার মস্কোয় আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়া একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিল। আপাতত যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে দুই দেশই আটক যুদ্ধাপরাধীদের হস্তান্তর করবে বলে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু এখনো পর্যন্ত বাস্তবে তার প্রভাব দেখা যায়নি। রোববারেও একই ভাবে যুদ্ধ হয়েছে বলে অভিযোগ।
নাগর্নো-কারাবাখে বিপদে সাধারণ মানুষ
নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধ প্রবেশ করলো দশম দিনে৷ কিন্তু এখনও মিলছে না যুদ্ধবিরতির আভাস৷ দুই পক্ষের বোমা বর্ষণে বিধ্বস্ত হচ্ছে বসতবাড়িও৷ ঘটছে বেসামরিক নাগরিক হতাহতের ঘটনা৷
ছবি: Reuters
প্রোপাগান্ডা চলছে
মাঠে চেয়ে বেশি লড়াই চলছে মুখে৷ দুই পক্ষই আশ্রয় নিচ্ছে বাগাড়ম্বরের৷ নিজেদের ছোঁড়া গোলায় সাধারণ মানুষ মারা গেলেও দুই পক্ষই অপর পক্ষকে দুষছে যুদ্ধের নিয়ম না মানার জন্য৷ হামলা নিয়ে দুই পক্ষের পালটা দাবিতে সংকট আরো বাড়ছে৷
ছবি: David Ghahramanyan/NKR InfoCenter/PAN Photo/Reuters
নাগরিক সেবা বন্ধ
কারবাখের প্রধান শহর স্টেপানকিয়ার্টে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে আজারবাইজান৷ এতে শহরটির বেশিরভাগ নাগরিক সেবা প্রায় বিধ্বস্ত৷ অনেক নাগরিকই বিদ্যুৎ, জলের সংকটে দিন কাটাচ্ছেন৷ ছবিতে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Aris Messinis/AFP/Getty Images
আজারাবাইজানে হামলা
আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী একাধিক শহরেও আর্মেনীয় বাহিনীর হামলার খবর পাওয়া গেছে৷ গ্যাঞ্জা শহরে হামলার কথা স্বীকার করেছে আর্মেনিয়াও৷ শহরটিতে হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিকের হতাহতের খবরও পাওয়া গেছে৷
ছবি: Gor Kroyan/Reuters
নিত্যদিনের ভয়
বসতবাড়ি হারিয়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন বাঙ্কারে৷ কেউ কেউ যাওয়ার জায়গা না থাকায় আশ্রয় নিয়েছেন রাস্তায়৷ ছবিতে রাস্তায় পড়ে থাকা বিধ্বস্ত একটি রকেটের ধ্বংসাবশেষ৷
ছবি: Reuters
পাহারায় বৃদ্ধা
বয়সের ভারে এই বৃদ্ধার নড়াচড়ারও সামর্থ্য নেই৷ নিজের বাসার দরজায় বসে আছেন বন্দুক হাতে৷ তবে মুখোমুখি সংঘর্ষের চেয়ে রকেট হামলাই এখন সবচেয়ে বড় ভয় স্টেপানকিয়ার্টের মানুষের কাছে৷
ছবি: Pablo Gonzalez/Agencia EFE/Imago Images
রাস্তাঘাটে রকেট
গত কয়েকদিনে এত বেশি রকেট হামলা হয়েছে শহরটিতে যে, এখন রাস্তা, মাঠ সর্বত্রই রকেট শেল পড়ে থাকতে দেখা যায়৷
নাগর্নো-কারাবাখের একটি শহর ও সাতটি গ্রাম পুনর্দখলের দাবি করেছে আজারবাইজন৷ কয়েকটি ভিডিওতে কারবাখের গ্রামে আজেরি সৈন্যদের পতাকা হাতে ঘুরতেও দেখা গেছে৷
ছবি: Karo Sahakyan/ArmGov/PAN Photo/Reuters
যুদ্ধবিরতি, সমঝোতা?
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শুরু থেকেই দুই দেশকে যুদ্ধ বন্ধ করে আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়ে আসছে৷ তবে তাতে সাড়া মেলেনি৷ এরই মধ্যে দুই পক্ষ মিলিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন তিন শতাধিক মানুষ৷
ছবি: via REUTERS
আঞ্চলিক যুদ্ধের শঙ্কা
তুরস্ক এরই মধ্যে সরাসরি আজারবাইজানকে সমর্থন দিয়েছে৷ সীমান্তবর্তী ইরান এবং রাশিয়া দুই দেশকে আলোচনা ও যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে৷ তবে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, দীর্ঘদিন এ যুদ্ধ চলতে থাকলে প্রতিবেশী দেশগুলোও একসময় এতে জড়িয়ে পড়তে পারে৷ সেক্ষেত্রে বড় আকারের আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কাও দেখা দিতে পারে৷
ছবি: Umit Bektas/Reuters
9 ছবি1 | 9
যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘিত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। রোববার ইইউ-এর পররাষ্ট্র নীতির প্রধান জোসেপ বরেল আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, 'যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের যে রিপোর্ট আমাদের কাছে আসছে, তা অত্যন্ত চিন্তার এবং উদ্বেগের। দ্রুত এই যুদ্ধ বন্ধ করা দরকার। ইইউ সবরকম চেষ্টা করছে।' বস্তুত যুদ্ধ বন্ধের জন্য রোববার জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করেছিলেন। দুইজনের মধ্যে দীর্ঘ কথা হয়েছে। তবে কোনো দেশই সরকারি ভাবে আলোচনার খুঁটিনাটি জানায়নি।
জার্মানি প্রথম দিন থেকেই যুদ্ধ বন্ধের আবেদন জানাচ্ছে। ইইউ-তে এ বিষয়ে প্রস্তাবও পেশ করেছে জার্মানি। অন্য দিকে রাশিয়া, ফ্রান্স এবং অ্যামেরিকা লাগাতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দুই দেশকে ফের একবার আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসার। শনিবার যুদ্ধবিরতির যে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছিল, তা যাতে দ্রুত বাস্তবে প্রয়োগ করা যায়, তার চেষ্টা চালানে হচ্ছে।
যুদ্ধ না থামলে বন্দি হস্তান্তর সম্ভব নয় বলেও দুই দেশ জানিয়ে দিয়েছে। এ দিকে যুদ্ধের ফলে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ গৃহহারা হয়েছেন বলে অধিকাররক্ষা সংস্থাগুলি জানিয়েছে। বহু মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। এখনো পর্যন্ত একশরও বেশি সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কী ভাবে এই ক্ষতি পূরণ করা হবে, তা নিয়েও উদ্বেগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা।