নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের যুদ্ধ প্রসঙ্গে দীর্ঘ বিবৃতি দিলেন পুটিন। জানালেন, নিহতের সংখ্যা অন্তত পাঁচ হাজার।
বিজ্ঞাপন
আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়া দুইটি দেশের সঙ্গেই প্রতিদিন যোগাযোগ রাখছেন তিনি। দিনে একাধিকবার ফোনে কথা হচ্ছে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে। বৃহস্পতিবার একটি টেলিভিশন বিবৃতিতে এ কথা জানান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন। তাঁর বক্তব্য, এই যুদ্ধে কোনো পক্ষকেই সমর্থন করছেন না তিনি। যুদ্ধ যাতে দ্রুত থামে তার জন্য সবরকম প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এ দিনের বিবৃতিতে পুটিন অ্যামেরিকাকেও রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা আলোচনায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শুক্রবারই অ্যামেরিকার সচিব মাইক পম্পেও-র সঙ্গে আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক হওয়ার কথা। বৃহস্পতিবার তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আজারবাইজান-আর্মেনিয়া যুদ্ধ: দুই ভূখণ্ডেই মরছে মানুষ, চলছে ধ্বংসলীলা
শিশুসন্তানের মৃতদেহ নিয়ে কাঁদছে বাবা৷শেলের আঘাতে প্রাণ হারানো স্বজনদের ছবি হাতে রাস্তায় নামছেন শোকার্ত মানুষ৷তবু নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে আজারবাইজান-আর্মেনিয়া যুদ্ধ থামছে না৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Umit Bektas/Reuters
বাবার কোলে সন্তানের লাশ
আজারবাইজানের গ্যাঞ্জা শহরে আর্মেনিয়ার হামলায় নিজের পরিবারের পাঁচজনকে হারিয়েছেন তিমুর কালিগভ, হারিয়েছেন দশ মাস বয়সের এই মেয়েকেও (ওপরের ছবি)৷স্ত্রী-সন্তান হারিয়ে তিমুর এখন দিশেহারা৷
ছবি: Umit Bektas/Reuters
বিধ্বস্ত ঘর
রকেট হামলায় গ্যাঞ্জা শহরের অনেক বাড়ি-ঘর বিধ্বস্ত৷ ছবির এই নারী তাই এখন গৃহহীন৷ উদ্ধারকর্মীদের দেখাচ্ছেন মাটিতে মিশে যাওয়া নিজের বাড়ি৷
ছবি: Umit Bektas/Reuters
ক্ষতিগ্রস্ত গির্জা
আর্মেনিয়ার সীমান্তবর্তী শুশি শহরে শেলের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত গাজানচেটসটস ক্যাথেড্রাল দেখতে এসেছেন দুই সেনা সদস্য৷
ছবি: Reuters
আর্মেনিয়ারও একই অবস্থা
কারাবাখের প্রধান শহর স্টেপানকিয়ার্টের বড় একটা অংশ আজারবাইজানের হামলায় বিধ্বস্ত৷ ঘরের ধ্বংসস্তূপ দেখছেন দুজন আর্মেনীয়৷
ছবি: Reuters
শোকার্ত পরিবার
আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী গ্যাঞ্জা শহরের আসগেরভ পরিবারের পাঁচজনের প্রাণ কেড়েছে এই যুদ্ধ৷ আর্মেনিয়ার হামলায় মারা যাওয়া সেই পাঁচজনের ছবি হাতে আজগেরভ পরিবারের বেঁচে থাকা সদস্যরা নেমেছেন রাস্তায়৷ তবু যদি যুদ্ধ থামে!
ছবি: Umit Bektas/Reuters
জ্বলছে আজারবাইজানের তের্তার
আজারবাইজানের তের্তার শহরের রাস্তায় চলছে গাড়ি, একটু দূরে আর্মেনিয়ার হামলায় কালো ধোঁয়ায় ঢাকা পড়ছে একটি বাড়ি৷
ছবি: Aziz Karimov/Reuters
আহতের সেবা
আজারবাইজানের শেলের আঘাতে আহত হয়েছেন রোজা সারকিসিয়ান৷ স্টেপানকিয়ার্ট শহরের এক হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে৷
ছবি: Reuters
লাশ উদ্ধার
আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী গ্যাঞ্জা শহরে নিহত একজনের মৃতদেহ নিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা৷
ছবি: Umit Bektas/Reuters
ব্যস্ত উদ্ধারকর্মীরা
আর্মেনিয়ার এক হামলার পর ধ্বংস হয়ে যায় আজারবাইজানের গ্যাঞ্জা শহরের বেশ কিছু ভবন৷ খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন উদ্ধারকর্মীরা৷
ছবি: Umit Bektas/Reuters
9 ছবি1 | 9
নাগর্নো-কারাবাখের স্বাধীন প্রশাসন যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির একটি হিসেব দিয়েছে। তাদের বক্তব্য, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৮৭৪ জন সেনা এবং ৩৭ জন সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে শুধুমাত্র নাগর্নো-কারাবাখে। আজারবাইজান জানিয়েছে, সেখানে ৬১ জন সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তবে সেনা মৃত্যুর কোনো সংখ্যা জানানো হয়নি। আর্মেনিয়া কিছু দিন আগে জানিয়েছিল, যুদ্ধে হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পুটিন জানিয়েছেন, তাঁর কাছে যা খবর, তাতে অন্তত পাঁচ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। কারণ দুই দেশই যুদ্ধবিরতি মানতে চাইছে না।
বস্তুত, বৃহস্পতিবার পুটিনযখন এ বিষয়ে কথা বলছেন, তখনো দুই দেশের মধ্যে তীব্র যুদ্ধ হয়েছে। আজারবাইজান জানিয়েছে, আর্মেনিয়া তিনটি ব্যালেস্টিক মিসাইল নিক্ষেপ করেছে আজারি শহর লক্ষ্য করে। অন্যদিকে আর্মেনিয়ার অভিযোগ, মারতুনি শহর এবং সংলগ্ন গ্রামে শেলিং করেছে আজারবাইজান।
আজারবাইজান, আর্মেনিয়ার মধ্যে সংঘাতের কারণ কী?
২৭ সেপ্টেম্বর থেকে রাশিয়ার মিত্র আর্মেনিয়া ও তুরস্কের মিত্র আজারবাইজানের মধ্যে সংঘাত চলছে৷ এর কারণ নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল৷ বিস্তারিত ছবিঘরে৷
ছবি: Armenian Defense Ministry/Reuters
সংঘাতের কারণ
২৭ সেপ্টেম্বর থেকে রাশিয়ার মিত্র আর্মেনিয়া ও তুরস্কের মিত্র আজারবাইজানের মধ্যে সংঘাত চলছে৷ এর কারণ নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল৷
ছবি: Defence Ministry of Azerbaijan/Reuters
নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল কোথায়?
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অঞ্চলটি আজারবাইজানের অংশ৷ পাহাড় ও বন ঘেরা দুর্গম এই অঞ্চলে প্রায় দেড় লাখ মানুষ বাস করেন৷ তাদের বেশিরভাগই আজারবাইজানের শাসনের বিরোধী আর্মেনীয়৷ অঞ্চলটির আয়তন প্রায় চার হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার৷
প্রথম সংঘাত
গত শতকের আশির দশকের শেষদিকে যখন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার প্রক্রিয়া চলছে, তখন থেকেই নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে সংঘাতের শুরু৷ ১৯৯৪ সালে যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে এই সংঘাত শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রাণ হারান প্রায় ৩০ হাজার মানুষ৷ সংঘাতের কারণে অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ চলে যায় আর্মেনীয়দের হাতে৷
ছবি: Reuters/Photolure/V. Baghdasaryan
আর্মেনিয়ার সহায়তা
১৯৯৪ সালের পর থেকে নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে আর্মেনিয়া৷ এছাড়া সারা বিশ্বে থাকা আর্মেনীয়রাও ঐ অঞ্চলের জন্য দান করে থাকেন৷ ছবিতে কারাবাখের সবচেয়ে বড় শহর স্টেপানাকিয়ার্ট দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Zuma/imago images
মাঝেমধ্যেই সংঘাত
যুদ্ধবিরতি চললেও নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের সৈন্যদের মধ্যে মাঝেমধ্যেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে৷ ২০১৬ সালে এক সংঘাতে (ছবি) প্রায় ২০০ জন প্রাণ হারান৷ এছাড়া গত জুলাইতেও মোটামুটি বড় আকারের সংঘাত হয়েছিল৷ রবিবার শুরু হওয়া সংঘাতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯৫ জন নিহত হয়েছেন৷ নিহতদের অন্তত ১১ জন বেসামরিক নাগরিক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Baghdasaryan
আবার কেন সংঘাত?
জুলাইয়ের সংঘাতের সময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তার সমাধানে ততটা আগ্রহ দেখায়নি৷ অতীতে রাশিয়া, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র ঐ অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখতে মধ্যস্থতা করলেও বর্তমানে করোনা, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, বেলারুশ, লেবানন পরিস্থিতি ইত্যাদির কারণে নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলের দিকে পর্যাপ্ত মনোযোগ দেয়া যায়নি৷ তাই রবিবার থেকে যুদ্ধ শুরু হয়েছে৷
ছবি: Armenian Defense Ministry/Reuters
এবারের সংঘাত কতটা বড়?
‘জর্জিয়ান স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালিসিস সেন্টার’-এর সিনিয়র ফেলো গেলা ভাসাদজে বলছেন, ১৯৯০ দশকের পর এই ‘প্রথম’ আর্মেনিয়া ও কারাবাখ ঐ অঞ্চলে সামরিক আইন জারি করে অস্ত্রশস্ত্র ও সামরিক যান জড়ো করছে৷ আজারবাইজানও সামরিক আইন জারি করেছে৷ এছাড়া আকাশ থেকে হামলা চালানোর সিস্টেম, ট্যাঙ্ক, আর্টিলারি সবকিছুর ব্যবস্থা করছে দেশটি৷
খ্রিস্টানপ্রধান আর্মেনিয়ার সবচেয়ে বড় বন্ধু রাশিয়া৷ তাদের সঙ্গে সামরিক চুক্তিও আছে দেশটির৷ আর মুসলমানপ্রধান দেশ আজারবাইজানের সঙ্গে সামরিক চুক্তি আছে তুরস্কের৷ তবে বিশ্লেষক গেলা ভাসাদজে বলছেন, রাশিয়া ও তুরস্ক হয়ত সরাসরি এই সংঘাতে যুক্ত হবে না, কারণ, এতে যুক্ত হয়ে খুব বেশি লাভ নেই৷ বরং এর ফলে তাদের নিজেদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে৷
ছবি: Armenian Defense Ministry/AP/picture alliance
রাশিয়ার সুযোগ
বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কোকে সমর্থন জানিয়ে এবং রুশ প্রেসিডেন্ট পুটিনের বিরোধী নাভালনিকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ সমালোচনার মুখে আছে রাশিয়া৷ এই অবস্থায় রাশিয়া যদি আলোচনার মাধ্যমে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারে, তাহলে বিশ্বমঞ্চে রাশিয়া প্রশংসিত হতে পারে৷ পুটিন ইতিমধ্যে আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/Russian Look/Belarus 24 TV
9 ছবি1 | 9
পুটিন জানিয়েছেন, এই যুদ্ধে তিনি কোনো পক্ষেই নেই। তাঁর একমাত্র লক্ষ্য দুই দেশের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। এ দিন তুরস্কেরও মৃদু সমালোচনা করেছেন পুটিন। বলেছেন, তুরস্ক যে ভাবে আজারবাইজানকে সমর্থন করছেন, তা তিনি সমর্থন করেন না। যদিও একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, এর্দোয়ান তাঁর বন্ধু। এবং তিনি মনে করেন, এর্দোয়ান এ বিষয়ে তাঁর অভিমত বদল করতে পারেন।
চুক্তি অনুযায়ী আর্মেনিয়াকে সামরিক ক্ষেত্রে সাহায্য করার কথা রাশিয়ার। কারণ, দুই দেশের মধ্যে এই বিষয়ে নির্দিষ্ট চুক্তি রয়েছে। কিন্তু পুটিনের বক্তব্য, এই যুদ্ধে কোনো পক্ষকে সাহায্য করলে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে যাবে। ফলে দুই পক্ষকে শান্তির পথে নিয়ে আসতেই হবে। এবং তার জন্য রাশিয়া সবরকম প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী অবশ্য বুধবারই জানিয়ে দিয়েছেন, এই পরিস্থিতিতে শান্তি প্রস্তাব তাঁদের পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার আজারবাইজান জানিয়েছে, আজারি ফৌজ নাগর্নো-কারাবাখের বিস্তীর্ণ এলাকা নিজেদের কব্জায় আনতে পেরেছে।