নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে এ বার রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে ফোন করলেন তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। যুদ্ধ থামার সমাধানসূত্র অবশ্য মেলেনি।
বিজ্ঞাপন
নাগর্নো-কারাবাখ প্রসঙ্গে ফের মুখ খুলল তুরস্ক। সোমবার তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর। সেখানে তুরস্ক জানিয়েছে, নাগর্নো-কারাবাখ আজারবাইজানের ভূখণ্ড। আর্মেনিয়া সেখান থেকে সরে গেলেই দ্রুত শান্তি ফিরবে। যুদ্ধের গোড়া থেকেই তুরস্ক আজারবাইজানকে সমর্থন করছিল। আর্মেনিয়ার অভিযোগ, তুরস্কের সামরিক বাহিনীও অস্ত্র এবং যুদ্ধবিমান দিয়ে আজারবাইজানকে সাহায্য করেছে।
যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হয়েছিল গত শনিবার। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তাতে লাভ হয়নি। আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের সেনা এখনো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে নাগর্নো-কারাবাখ। যুদ্ধ থামার কোনো ইঙ্গিত মেলেনি। কারণ, দুইটি দেশই নিজেদের দাবিতে অনড়। আজারবাইজানের বক্তব্য, আর্মেনিয়া নাগর্নো-কারাবাখ থেকে সরে না গেলে তারা যুদ্ধ বন্ধ করবে না। বস্তুত, শুক্রবার মস্কোয় দশ ঘণ্টার শান্তি বৈঠকেও একই কথা বলেছিল আজারবাইজান। যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলেও তা যে সাময়িক, সে কথাও জানিয়ে দিয়েছিল তারা।
নাগর্নো-কারাবাখে বিপদে সাধারণ মানুষ
নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধ প্রবেশ করলো দশম দিনে৷ কিন্তু এখনও মিলছে না যুদ্ধবিরতির আভাস৷ দুই পক্ষের বোমা বর্ষণে বিধ্বস্ত হচ্ছে বসতবাড়িও৷ ঘটছে বেসামরিক নাগরিক হতাহতের ঘটনা৷
ছবি: Reuters
প্রোপাগান্ডা চলছে
মাঠে চেয়ে বেশি লড়াই চলছে মুখে৷ দুই পক্ষই আশ্রয় নিচ্ছে বাগাড়ম্বরের৷ নিজেদের ছোঁড়া গোলায় সাধারণ মানুষ মারা গেলেও দুই পক্ষই অপর পক্ষকে দুষছে যুদ্ধের নিয়ম না মানার জন্য৷ হামলা নিয়ে দুই পক্ষের পালটা দাবিতে সংকট আরো বাড়ছে৷
ছবি: David Ghahramanyan/NKR InfoCenter/PAN Photo/Reuters
নাগরিক সেবা বন্ধ
কারবাখের প্রধান শহর স্টেপানকিয়ার্টে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে আজারবাইজান৷ এতে শহরটির বেশিরভাগ নাগরিক সেবা প্রায় বিধ্বস্ত৷ অনেক নাগরিকই বিদ্যুৎ, জলের সংকটে দিন কাটাচ্ছেন৷ ছবিতে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Aris Messinis/AFP/Getty Images
আজারাবাইজানে হামলা
আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী একাধিক শহরেও আর্মেনীয় বাহিনীর হামলার খবর পাওয়া গেছে৷ গ্যাঞ্জা শহরে হামলার কথা স্বীকার করেছে আর্মেনিয়াও৷ শহরটিতে হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিকের হতাহতের খবরও পাওয়া গেছে৷
ছবি: Gor Kroyan/Reuters
নিত্যদিনের ভয়
বসতবাড়ি হারিয়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন বাঙ্কারে৷ কেউ কেউ যাওয়ার জায়গা না থাকায় আশ্রয় নিয়েছেন রাস্তায়৷ ছবিতে রাস্তায় পড়ে থাকা বিধ্বস্ত একটি রকেটের ধ্বংসাবশেষ৷
ছবি: Reuters
পাহারায় বৃদ্ধা
বয়সের ভারে এই বৃদ্ধার নড়াচড়ারও সামর্থ্য নেই৷ নিজের বাসার দরজায় বসে আছেন বন্দুক হাতে৷ তবে মুখোমুখি সংঘর্ষের চেয়ে রকেট হামলাই এখন সবচেয়ে বড় ভয় স্টেপানকিয়ার্টের মানুষের কাছে৷
ছবি: Pablo Gonzalez/Agencia EFE/Imago Images
রাস্তাঘাটে রকেট
গত কয়েকদিনে এত বেশি রকেট হামলা হয়েছে শহরটিতে যে, এখন রাস্তা, মাঠ সর্বত্রই রকেট শেল পড়ে থাকতে দেখা যায়৷
নাগর্নো-কারাবাখের একটি শহর ও সাতটি গ্রাম পুনর্দখলের দাবি করেছে আজারবাইজন৷ কয়েকটি ভিডিওতে কারবাখের গ্রামে আজেরি সৈন্যদের পতাকা হাতে ঘুরতেও দেখা গেছে৷
ছবি: Karo Sahakyan/ArmGov/PAN Photo/Reuters
যুদ্ধবিরতি, সমঝোতা?
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শুরু থেকেই দুই দেশকে যুদ্ধ বন্ধ করে আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়ে আসছে৷ তবে তাতে সাড়া মেলেনি৷ এরই মধ্যে দুই পক্ষ মিলিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন তিন শতাধিক মানুষ৷
ছবি: via REUTERS
আঞ্চলিক যুদ্ধের শঙ্কা
তুরস্ক এরই মধ্যে সরাসরি আজারবাইজানকে সমর্থন দিয়েছে৷ সীমান্তবর্তী ইরান এবং রাশিয়া দুই দেশকে আলোচনা ও যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে৷ তবে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, দীর্ঘদিন এ যুদ্ধ চলতে থাকলে প্রতিবেশী দেশগুলোও একসময় এতে জড়িয়ে পড়তে পারে৷ সেক্ষেত্রে বড় আকারের আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কাও দেখা দিতে পারে৷
ছবি: Umit Bektas/Reuters
9 ছবি1 | 9
বাস্তবে যুদ্ধ বন্ধ হয়নি। শান্তি বৈঠকে একাধিকবার মধ্যস্থতার জন্য তুরস্কের নাম করেছিল আজারবাইজান। মঙ্গলবার সেই তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী কথা বলেন রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে। এখনো পর্যন্ত রাশিয়াই যুদ্ধ বন্ধের জন্য মধ্যস্থতা করছে। রাশিয়াকে তুরস্ক জানিয়ে দেয়, তারা আজারবাইজানের পক্ষে। এবং আর্মেনিয়ার সেনা নাগর্নো-কারাবাখ থেকে সরে গেলেই শান্তি ফিরে আসবে। অর্থাৎ, তুরস্ক বুঝিয়ে দিয়েছে, আজারবাইজানের দাবি না মানলে যুদ্ধ বন্ধ হবে না। এবং তারা আজারবাইজানকেই সমর্থন করবে।
স্বাভাবিক ভাবেই আর্মেনিয়া এ কথা মানতে চায়নি। রাশিয়াও তুরস্কের কথা মানতে পারেনি। কারণ, রাশিয়ার সমর্থন রয়েছে আর্মেনিয়ার দিকে। এ দিকে ফ্রান্স, অ্যামেরিকা এবং রাশিয়া ফের শান্তি বৈঠকের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ওই বৈঠকে আরও কয়েকটি দেশকেও তারা ঢোকানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু সেই বৈঠকে তুরস্ককে মূল মধ্যস্থতাকারী করার যে দাবি আজারবাইজান তুলেছে, অন্য দেশগুলি তা মানতে চায়নি।