আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধ নয়দিন পেরিয়ে গেল। এখনও অধরা সমাধানসূত্র। ইরান সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে কার্যত যুদ্ধ চলছে আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের মধ্যে। জাতিসংঘ, রেডক্রস, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরে এ বার শান্তিপূর্ণ আলোচনার আহ্বান জানালো ইরান। দুই দেশকে আলোচনার টেবিলে আনতে মধ্যস্থতার প্রস্তাবও দিয়েছে ইরান। অন্য দিকে আর্মেনিয়া জানিয়েছে, দুই দেশের সংঘাতে তুরস্কের ভূমিকা নিয়ে অ্যামেরিকার কাছে অভিযোগ জানানো হবে।
নাগর্নো-কারাবাখের শহর-গ্রাম দখলের দাবি আজারবাইজানের
02:23
রোববারের পর সোমবারেও আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান দুই তরফেই একাধিক সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। রোববার আর্মেনিয়া কামান দেগে ধ্বংস করেছিল আজারবাইজানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর গ্যাঞ্জার একাংশ। সোমবার তাদের গোলায় বিধ্বস্ত হয়েছে আজারবাইজানের আরেক শহর টারটার। অন্য দিকে, আর্মেনিয়াও জানিয়েছে, আজারবাইজানের আক্রমণে বিতর্কিত নাগর্নো-কারাবাখের রাজধানীর কার্যত ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত পাওয়া হিসেব অনুযায়ী নাগর্নো-কারবাখেই কমপক্ষে ২২০ জন যোদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা সকলেই আর্মেনিয়ার সেনার মদতে আজারবাইজানের বিরুদ্ধে লড়াই করছিলেন। এ ছাড়াও ৮২ জন সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আজারবাইজানে অন্তত ২৪ জন সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান কোনও তরফই সেনা মৃত্যুর পরিসংখ্যান দেয়নি। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এখনো পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ এই যুদ্ধে কমবেশি আহত হয়েছেন।
আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধের ছবি
আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে চলছে যুদ্ধ৷ মৃত্যু হয়েছে কয়েকশ মানুষের৷ অন্য কোন দেশ কারো পক্ষে সরাসরি অবস্থান না নিলেও, এই যুদ্ধে তুরস্ক আজারবাইজানকে ইন্ধন দিচ্ছে বলে অভিযোগ আর্মেনিয়ার।
ছবি: Vahram BaghdasaryanReuters
সংঘাতের কারণ
দুই দেশের সীমান্তে ককেশাস পর্বতে বিতর্কিত নাগর্নো-কারাবাখের দখল নিয়ে সংঘাত শুরু হয়েছে। আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান দুইটি দেশই সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। সোভিয়েতের পতনের পর দু'টি দেশ আলাদা হয়ে যায়। তখন থেকেই নাগর্নো-কারাবাখ নিয়ে তাদের মধ্যে বিতর্ক।
ছবি: Defence Ministry of Armenia/Reuters
কারাবাখের অবস্থান
দুই দেশের সীমান্তে নাগর্নো-কারাবাখে আর্মেনিয়ার মানুষ থাকেন। তবে এলাকাটি স্বাধীন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে। তাদের নিজস্ব প্রশাসনও আছে। আর্মেনিয়ার যথেষ্ট প্রভাব আছে ওই অঞ্চলে। আজারবাইজানের দাবি, এলাকাটি তাদের ভূখণ্ডের অংশ।
আর্মেনিয়ার বক্তব্য আজারবাইজান জোর করে নাগর্নো-কারবাখের দখল নিতে চাইছে। ওই অঞ্চলে আর্মেনীয় মানুষ বাস করেন। ফলে কোনোভাবেই তা আজারবাইজানের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না। তারাও যুদ্ধ থামাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।
ছবি: Armenian Defense Ministry/AP/picture-alliance
তুরস্কের অবস্থান
আর্মেনিয়ার বক্তব্য, তুরস্ক যুদ্ধে আজারবাইজানকে সাহায্য করছে। তুরস্কের যুদ্ধবিমান আর্মেনিয়ার যুদ্ধবিমানকে ধ্বংস করেছে বলেও অভিযোগ। তুরস্ক এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে তারা যে আজারবাইজানের পক্ষে, তুরস্ক সে কথা জানিয়ে দিয়েছে।
ছবি: Armenian Defense Ministry
মৃত্যু হচ্ছে কাদের
দুই দেশের এই যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করছেন সামরিক-বেসামরিক নাগরিক। শুক্রবার পর্যন্ত প্রায় ২০০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি৷ এর মধ্যে ৩০ জনের বেশি বেসামরিক নাগরিক৷ অন্যদিকে কারাবাখের ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী সরকার’ তাদের ৫৪ জন সৈন্য নিহত হয়েছে বলে শুক্রবার দাবি করেছে৷
ছবি: Celestino Arce Lavin/Zuma/picture-alliance
বিশ্বের অবস্থান
যুদ্ধ বন্ধের আর্জি জানিয়েছে বিশ্বের বহু দেশ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। রাশিয়া, অ্যামেরিকা, ফ্রান্স যৌথ বিবৃতি পেশ করেছে।
ছবি: Vahram BaghdasaryanReuters
7 ছবি1 | 7
আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান দুইটি দেশেরই সীমান্তে অবস্থিত ইরান। যুদ্ধ থামাতে এ বার ইরানও পদক্ষেপ নিয়েছে। দুইটি দেশকেই শান্তিপূর্ণ ভাবে বৈঠকে বসার আর্জি জানিয়েছে ইরান। কিন্তু তাতে এখনো পর্যন্ত কোনো দেশই সাড়া দেয়নি। ইরান জানিয়েছে, সীমান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সবরকম চেষ্টা তারা করবে। অন্য দিকে তুরস্ক এখনো মদত দিচ্ছে আজারবাইজানকে। বস্তুত, আর্মেনিয়া জানিয়েছে, তুরস্কের ভূমিকা নিয়ে তারা অ্যামেরিকার কাছে অভিযোগ জানাবে। ডনাল্ড ট্রাম্প করোনা আক্রান্ত হওয়ায় এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায়নি।