রাশিয়া সীমান্তে ইউরোপের ছোট দেশ লাটভিয়া চাপের মুখেও নিজস্ব পরিচয়, ভাষা ও সংস্কৃতি ধরে রেখেছে৷ প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নাচগানের এক উৎসব জাতিগত পার্থক্য ভুলিয়ে গোটা জাতিকে ঐকবদ্ধ রাখতে সাহাষ্য করে৷
কোনো জাতি কখন প্রকৃত অর্থে মুক্ত, ঐক্যবদ্ধ ও স্বাধীন হতে পারে? লাটভিয়ার মানুষ নাচ ও গানের মাধ্যমেই সেই অনুভূতি পান৷ প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সংগীত ও নৃত্য উৎসব গোটা দেশ মাতিয়ে রাখে৷ প্রায় দেড়শো বছর ধরে সেই ঐতিহ্য চলছে৷
আলিনা রাশিয়া থেকে এসেছেন৷ আর্মান্ডস লাটভিয়ার মানুষ৷ একই দেশে দুটি সংস্কৃতি রয়েছে৷ রাজনৈতিক সম্পর্ক জটিল হলেও উৎসবে সেই পার্থক্য মুছে যায়৷ সেখানে সবাই একই জাতির প্রতিনিধি৷বিশাল আকারের এই উৎসবের চূড়ান্ত কনসার্টের প্রস্তুতি চলে পাঁচ বছর ধরে৷ সপ্তাহে দুই দিন করে অনুশীলন করতে হয়৷
আলিনা ইগোশেভার কাছে সেই সব সুর যেন লাটভিয়ার দ্বার খুলে দিয়েছে৷ ১৯৯৮ সালে তিনি প্রথম বার সংগীত উৎসবে অংশ নিয়েছিলেন৷ তখন তিনি মস্কোয় বাস করতেন৷ আলিনার পূর্বপুরুষরা লাটভিয়ার মানুষ ছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার মায়ের কাছে সেটা জরুরি ছিল৷ আমার যখন সাত বছর বয়স, তখন মা আমাকে মস্কোয় লাটভিয়ার দূতাবাসে নিয়ে যান৷ সেখানে রোববার লাটভীয় ভাষার স্কুল বসতো৷ এভাবে আমি লাটভিয়ার সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসি৷''
পরে আলিনা যথন নিজেই এক কয়ারে গান গাইতে শুরু করেন, তখন তিনি একবার রিগায় অনুষ্ঠান করেন৷ তখন থেকেই শহরটির প্রেমে পড়ে যান৷ ২০১৪ সালে তিনি পাকাপাকি সেখানে চলে যান৷ আজ আলিনা এক লাটভীয়-রুশ প্রাইমারি স্কুলে পড়ান৷
আলিনার জন্য সংগীতের যে গুরুত্ব, আর্মান্ডসের কাছে নৃত্য সেই অনুভূতি জাগিয়ে তোলে৷ আর্মান্ডস প্রিডল্স লাটভিয়ার পশ্চিমে সি বার্কথর্ন চাষ করেন৷ নাচের পরেই বার্কথর্ন তাঁর দ্বিতীয় নেশার মতো৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার বোন আর আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন বাবা-মা আমাদের নাচের ক্লাসের জন্য লিপায়া শহরে নিয়ে যেতেন৷ সে সময় দশ কিলোমিটার দূরে গিয়ে আমাদের রিহার্সাল করতে হতো৷ তখন থেকেই নাচ আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ৷''
লাটভিয়ায় নাচগান শুধু অবসর কাটানোর উপায় নয়, বরং লাটভিয়ার আত্মপরিচয়ের ভিত্তি বলা চলে৷ এক সপ্তাহ ধরে সংগীত ও নৃত্য উৎসব গোটা দেশকে মাতিয়ে রাখে৷ রাজধানী রিগার পুরানো অংশে ঐতিহ্যবাহী প্রসেশন দিয়ে উৎসব শুরু হয়৷ সেই শহরেই বিশাল বিদায়ী কনসার্টের মাধ্যমে উৎসবের সমাপ্তি ঘটে৷
দ্বৈত নৃত্যের কিছুক্ষণ আগে আলিনা ও আরমান্ডস প্রথমবার পরস্পরের মুখোমুখি হলেন৷ পরদিন সকাল পর্যন্ত তাঁদের উৎসব চললো৷ প্রায় দশ ঘণ্টার অনুষ্ঠান৷ সেই গান আশা, বিশ্বাস ও স্থিতিশীলতার বার্তা বহন করে৷
ইয়ুরি রেশেটো/এসবি
পর্যটকদের আকর্ষণ পূর্ব ইউরোপের দেশ লাটভিয়া
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইদানীং মধ্য ও পূর্ব ইউরোপ ভ্রমণে পর্যটকরা দু’বার চিন্তা করছেন৷ তবে অনেক দেশই ভ্রমণের জন্য নিরাপদ৷ যেমন, লাটভিয়া৷
ছবি: Nando Lardi/Zoonar/picture alliance
রিগা: অপূর্ব নগরী
ইউরোপীয় মান হিসেব করলে ছয় লাখ জনসংখ্যার শহর রিগাকে রাজধানী হিসেবে ছোট মনে হতে পারে৷ তবে বাল্টিক দেশগুলোর হিসেবে এটি একটি মহানগরী৷ শহরের কেন্দ্রটি বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে চিহ্নিত৷ কারণ, এখানে অনেক ঐতিহাসিক ভবন রয়েছে৷ রিগার কেন্দ্রীয় বাজারটি পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়৷
ছবি: Toms Auzins/robertharding/picture alliance
নৃতাত্ত্বিক জাদুঘর
রিগার পূর্ব দিকে শহরতলীতে রয়েছে লাটভিয়ার বিখ্যাত নৃতাত্ত্বিক জাদুঘর৷ ইউরোপে খোলা আকাশের নীচে এটাই সর্ববৃহৎ এ ধরনের জাদুঘর৷ এখানে এই অঞ্চলের মানুষের শত শত বছরের ইতিহাস জানার সুযোগ রয়েছে৷
ছবি: Minodora/imageBROKER/picture alliance
গাউজা ন্যাশনাল পার্ক
৯০ হাজার হেক্টরের এই সবুজ উদ্যানে যেমন দেখা মিলবে অসাধারণ সব প্রাকৃতিক দৃশ্যের, তেমনি পাথুরে পথ ও গুহার সমন্বয় পর্যটকদের দেবে অপার আনন্দ৷ হাইকিং, বোটিং ও শীতকালে স্নোবোর্ডিংয়ের জন্য একটা আদর্শ জায়গা৷
ছবি: Minodora/imageBROKER/picture alliance
জুরমালা
উপকূলীয় শহর জুর্মালা রাজধানী থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত৷ বালুময় সৈকতে খালি পায়ে হেঁটে বেড়ানো, কিংবা সমুদ্রে গোসল করা এখানে আসা পর্যটকদের আকর্ষণ৷ এছাড়া ১৯ ও ২০ শতকের কাঠের বাড়িগুলো এখানকার সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে তুলেছে৷
ছবি: Victor Lisitsyn/Russian Look/picture alliance
কুলডিগা
লাটভিয়ার আসল স্বাদ পেতে হলে যেতে হবে কুলডিগা৷ ছোট্ট এক শহর৷ পর্যটকদের আনাগোনা এখানে কম৷ ১৭ থেকে ১৯ শতকের চমৎকার সব বাড়ি শহরটির মূল বৈশিষ্ট্য৷ এটি ঐতিহাসিক শহরও৷ ১২শ’ শতকে শহরটি হানসিয়াটিক লিগে যুক্ত হয়েছিল৷ পরে পোলিশ-লিথুয়ানিয়ান ও এরপর রাশিয়ার অধীন ছিল৷
ছবি: Rainer Hackenberg/picture alliance
উত্তরের দুর্গ
লাটভিয়ার পশ্চিম উপকূলে গেলে দেখা যাবে রাশিয়ার জার সাম্রাজ্যের স্মৃতিচিহ্ন৷ লিয়েপায়া শহরে ২০ শতকের গোড়ার দিকে এই দুর্গগুলো তৈরি করা হয়৷ কিন্তু তার কয়েক বছর পর পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়৷
ছবি: Nando Lardi/Zoonar/picture alliance
রুন্ডাল ক্যাসল
লাটভিয়ার দক্ষিণের এই দুর্গ ১৮শতকের তৈরি৷ বাল্টিক অঞ্চলের অন্যতম আকর্ষণ এই দুর্গ৷ ফ্রান্সের ভার্সাই প্যালেসের মডেলে তৈরি এই স্থাপনা৷
ছবি: Marc Schmerbeck/Zoonar/picture alliance
রাই ব্রেড
লাটভিয়ার খাবারও পর্যটকদের কাছে প্রিয়৷ অনেক লাটভিয়ান ডিশে অবশ্য রুশ বা জার্মান প্রভাব রয়েছে৷ তবে একেবারে নিজেদের খাবার হলো রাই থেকে তৈরি রুটি৷