জার্মানির হামবুর্গে করোনা শুরুর পর প্রথমবারের মতো আবার নাচ শুরুর অনুমতি মিলেছে৷ তবে আউটডোর ড্যান্সে অংশগ্রহণকারীদের অবশ্যই কড়া শর্ত মানতে হবে বলে জানিয়েছেন শহরের মেয়র৷
শর্তের মধ্যে রয়েছে, আউটডোর ড্যান্স উপভোগ করতে সকল দর্শককে নেগেটিভ করোনা টেস্ট সার্টিফিকেট দেখাতে হবে৷ এবং দুই ডোজ টিকাদানের সনদপত্র সাথে থাকা বাধ্যতামূলক৷ তাছাড়া নাচের জায়গা হতে হবে খোলা আকাশের নীচে৷ এবং সেখানে সর্বোচ্চ ২৫০ জন নাচপ্রেমী মাস্ক ছাড়াই অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবেন৷ আগ্রহীদের এসব শর্ত মেনেই কেবল ড্যান্সপার্টিতে অংশগ্রহণ করা যাবে বলে জানিয়েছেন হামবুর্গের মেয়র পেটার চেঞ্চা৷
করোনার কারণে তরুণদের নাচ বা বিভিন্ন অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় তারা অধৈর্য হয়ে পড়েছিল তা বলাই বাহুল্য৷ যার ফলে গত সপ্তাহান্তগুলোতে কয়েক হাজার তরুণ-তরুণী হামবুর্গের খোলা সবুজ মাঠ বা পার্কে অবৈধভাবে বেশ কয়েকবার পার্টির আয়োজন করেছিল, যা ফৌজদারি অপরাধ৷ এসব ঘটনার পরই নাচ পার্টির নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার পক্ষে সরব হয়ে ওঠে জার্মান পুলিশ ইউনিয়ন৷
এর আগেও পার্কে কিছু আক্রমণাত্মক তরুণ পুলিশের সাথে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছে৷ তবে মেয়র নাচের অনুমতি দিলেও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শুক্র এবং শনিবার সকাল ৯টা থেকে সিটি পার্কে অ্যালকোহল পান পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেছেন৷
মহামারির কারণে গত বছর মার্চ থেকে হামবুর্গে নাচ পার্টি এবং বাইরে মদ্যপান নিষিদ্ধ ছিল৷ করোনা সংক্রমণ এখন অনেকটা কমায় কড়াকড়ি শিথিল করে বিভিন্ন স্পোর্টস ইভেন্ট আবার শুরু করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷ তবে এসব ইভেন্টের শর্ত হিসেবে দর্শকের সংখ্যা থাকবে শতকরা ৫০ভাগ৷ ইনডোর খেলাধুলায় দুই খেলোয়াড়ের মাঝে বজায় রাখতে হবে যথেষ্ট দূরত্ব৷ আর করোনা টেস্টের মেয়াদকাল ২৪ ঘণ্টার পরিবর্তে বাড়িয়ে ৪৮ ঘণ্টা করা হয়েছে৷
এনএস/জেডএইচ (ডিপিএ)
জার্মানিতে তুর্কিদের জীবন
জার্মান-তুর্কি নিয়োগ চুক্তির ৬০ বছর পূর্তিতে জার্মানির রুর জাদুঘরে একটি চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন চিত্রগ্রাহক এরগুন চাগাতে। বিস্তারিত ছবিঘরে...
ইস্তাম্বুলের চিত্রগ্রাহক এরগুন চাগাতে ১৯৯০ সালে জার্মানির কোলন, হামবুর্গ, ভের্ল, বার্লিন ও ডুইসবুর্গ শহরের তুর্কি বংশোদ্ভূতদের ছবি তোলেন। ওপরের ছবিতে চিত্রগ্রাহক নিজে।
ছবিতে ডুইসবুর্গের ভালসুম খনির দৃশ্য, যেখানে রয়েছে তুরস্ক থেকে আসা দুই খনি শ্রমিক। পঞ্চাশের দশকে জার্মানির কৃষি ও খনিখাতে দেখা যায় শ্রমিক সংকট। জার্মানির তৎকালীন রাজধানী বন ও তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারার মধ্যে ১৯৬১ সালে সাক্ষরিত হয় নিয়োগ চুক্তি, যার ফলে ১৯৭৩ পর্যন্ত প্রায় দশ লাখ অতিথি শ্রমিক আসেন এই দেশে।
ছবিতে কোলনে গাড়ি তৈরির প্রতিষ্ঠান ফোর্ডের একটি কারখানা। গাড়িসহ নানাখাতে কাজ করতে আসা এই তুর্কিরা বর্তমানে জার্মানির বৃহত্তম সংখ্যালঘু গোষ্ঠী। জার্মানিতে রয়েছেন প্রায় ২৫ লাখ তুর্কি।
চাগাতের তিনমাসব্যাপী এই সফরে জার্মানির পরিবর্তনের চিত্রটি ধরা পড়ে। বার্লিন প্রাচীরের পতনের পর ধীরে ধীরে একটি বহুমাত্রিক সমাজের দিকে যাচ্ছিল দেশটি, যার সাথে মানিয়ে নেওয়া ছিল অনেকের জন্যই নতুন। ছবিতে দেখা যাচ্ছে ১৯৯০ সালে হামবুর্গ শহরে তৎকালীন একটি আইনের বিরুদ্ধে তুর্কীদের প্রতিবাদ সমাবেশ।
এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে এমনই একটি তুর্কী পরিবারের বাসার দৃশ্য। হামবুর্গের বাসিন্দা হাসান হ্যুসেইন গ্যুল ও তার পরিবারের সাত সদস্য। চাগাতের ছবির এই প্রদর্শনীতে রয়েছে হাসানের পরিবারের মতো আরো বহু পরিবারের কথা, যারা জার্মানিতে বাস করছেন কয়েক প্রজন্ম ধরে।
বর্তমানে, জার্মানিতে জলপাই বা ভেড়ার দুধের ছানা পাওয়া মোটেও কঠিন নয়। তবে একটা সময় তুর্কীদের পছন্দের খাবারের ব্যাপক অভাব থাকায় এই পরিবারেরা দেশ থেকে নিজেদের খাবার নিয়ে আসতেন। আস্তে আস্তে এই অবস্থার পরিবর্তন হয় ও তুরস্কে প্রচলিত খাবারের জোগান দিতে চালু হয় বহু তুর্কি বাজার। ছবিতে দেখা যাচ্ছে কোলন শহরের এমনই এক বাজার।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে কোলনের একটি পাড়ার দৃশ্য, যেখানে একটি দেয়ালে লেখা তুর্কী নির্বাসিত কবি নাজিম হিকমেটের কয়েকটি পংক্তি, "বাঁচতে হলে গাছের মতো, একা, মুক্ত! যেন জঙ্গলে একা হয়েও সঙ্ঘবদ্ধ থাকা যায়! এটাই আমাদের চাওয়া।"
বার্লিন-ক্রয়েতজবার্গ অঞ্চলের একটি তুর্কী বিয়েতেও উপস্থিত ছিলেন এই চিত্রগ্রাহক। তুরস্কের সংস্কৃতি অনুযায়ী এখানেও নববিবাহিত দম্পতির জন্য সবাই দোয়া করেন, যাতে তারা একসাথে একই বালিশ ভাগাভাগি করে থাকেন। কারণ, তুর্কী সংস্কৃতিতে বিয়ের পর নবদম্পতির জন্য বরাদ্দ থাকে একটা লম্বা বালিশ।
তুরস্কে প্রচলিত অনেক কিছুই ভুলে যাননি এই অভিবাসীরা। খৎনার অনুষ্ঠান শেষে 'মাশাল্লাহ' লেখা উত্তরীয় পরানোর চল জার্মানিতে আজও প্রচলিত। চাগাতের এই চিত্রপ্রদর্শনীর অর্থায়ন করেছে জার্মান পররাষ্ট্র বিভাগ ও অন্যান্য সংস্থা। সহযোগিতা করছে তুরস্কে অবস্থিত জার্মান সংস্থা গ্যোটে ইন্সটিটিউটও।