1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নাচোলে জোড়া-খুন : ‘এসে দেখে যান কী ঘটেছে'

১৮ ডিসেম্বর ২০২৪

নাচোলে মঙ্গলবার রাতে দুইজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়৷ দুজনই ছাত্রলীগ করতেন৷ পুলিশ এ হত্যাকাণ্ডে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক দেখছে না৷ তবে এক নিহতের বাবা বলেছেন, ‘‘আপনারা এসে দেখে যান কী ঘটেছে।”

বাংলাদেশ নাচোল
নাচোলে নিহত রায়হান আলীর বাড়িতে জড়ো হয়েছেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা ছবি: Md Monowar

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "মামলা কী করবো? আমি এখন বিপদে আছি।”

চাঁপাইনবাবগঞ্জেরনাচোলে নিহতদের একজন ছাত্রলীগ এবং অন্যজন কিশোর ছাত্রলীগের সাধারণ কর্মী ছিলেন বলে জানা গেছে। তারা একই গ্রামের বাসিন্দা এবং আত্মীয়।

নিহতরা হলেন, মাসুদ রানা (২১) এবং রায়হান আলী(১৪)। বিজয় দিবসের পরদিন ১৭ ডিসেম্বর(মঙ্গলবার) রাত ১১টার দিকে নাচোলে মল্লিকপুর বাজারে বিজয় দিবসের একটি অনুষ্ঠান চলাকালে সেই অনুষ্ঠানের পাশেই তাদের হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় আরো অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন।পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল স্থানীয় শহিদ জিয়া স্মৃতি সংঘ। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন নাচোল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম। তবে ঘটনারসঙ্গে জড়িত সন্দেহে দুই জনকে আটক করা হয়েছেবলে জানান তিনি। 

কয়েকটি সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টে বলা হয়েছে ওই অনুষ্ঠানে ‘জয় বাংলা' স্লোগান দেয়ায় তাদের কুপিয়ে ও ছরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। আবার কোনো খবরে বলা হয়েছে তারা দেয়ালে জয় বাংলা লেখায় তাতের হত্যা করা হয়েছে। তারা ছাত্রলীগ হওয়ায় তাদের হত্যা করা হয়েছে -এমন দাবি করে কেউ কেউ ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন।

যে মল্লিকপুর বাজারে মঙ্গলবার রাতে হত্যার ঘটনা ঘটে, সেই বাজারটি নাচোল উপজেলা সদর থেকে ১৫-১৬ কিলোমিটার দূরে। নিহত মাসুদ রানার মাসুদ রানার বাবা এজাবুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন,"কেন আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে, তা আমি এখন বলতে পারবো না। আমি টেলিফোনে কিছু বলতে পারবো না। আপনারা এসে দেখে যান কী ঘটেছে।” তার ছেলের রাজনৈতিক পরিচয় ও জয় বাংলা স্লোগান সম্পর্কেও তিনি কিছু বলতে রাজি হননি। মামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন," মামলা কী করবো? আমি এখন বিপদে আছি।”

মামলা কী করবো? আমি এখন বিপদে আছি : এক নিহতের বাবা

This browser does not support the audio element.

তবে মাসুদ রানার ভাই মোহাম্মদ মোস্তাকিম বাবু ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমার ভাইকে পেটে ছুরি চালিয়ে হত্যা করা হয়। বাজারে একটি অনুষ্ঠান চলছিল। তার পাশেই রাতে আমার ভাই এবং চাচাতো ভাই রায়হানকে হত্যা করা হয়। আরো কয়েকজনকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে।”

কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমাদের গ্রামের নাম খলসি। পাশের গ্রাম মল্লিকপুর। ১৫ দিন আগে একটি পেয়ারা বাগানে মল্লিকুকুপুরের একজনের ভিডিও করে তা ফেসবুকে দিলে দ্বন্দ্ব হয়। ভিডিও দিয়েছিল খলসি গ্রামের একজন। তারই জেরে ওই রাতে খলসি গ্রামের যাকে পেয়েছে, তাকেই কুপিয়েছে। আহত ও নিহত সবাই খলসি গ্রামের।”

‘‘অনুষ্ঠানে কোনো ঝামেলা হয়নি। জয় বাংলা স্লোগানের কোনো ঘটনাও হয়েছে কিনা জানি না। আমার ভাই ছাত্রলীগ করতো কিনা তা-ও জানি না। আগের ঝামেলার জেরে আমার ভাই এবং চাচাতো ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। খলসি গ্রামের যাকে পেয়েছে তার ওপরই ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা করা হয়েছে,” বলেন তিনি।

তিনি জানান, তার ভাই চাঁপাইনবাবগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র। তিন দিন আগে তিনি বাড়িতে এসেছিলেন।

বুধবার সন্ধ্যার আগেই খলসি গ্রামে নিহত দুইজনকে দাফন করা হয়।

স্থানীয় ফতেহপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ইসমাইল হক অপু বলেন, " আমি তো দেখিনি, শুনেছি। মল্লিকপুরের কয়েকটি ছেলে অনুষ্ঠান চলাকালে তাদের টেনে-হিঁচড়ে পাশে নিয়ে হত্যা করে। দুইজন মারা গেছে। আরো কয়েকজন আহত হয়েছে।”

তবে এ জনপ্রতিনিধি জানান, জয় বাংলা স্লোগান দেয়া নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে কথাকাটাকাটির কথা তিনি শুনেছেন, "কোনো রাজনৈতিক ঘটনা আছে কিনা জানি না। তবে যারা নিহত ও আহত হয়েছে তারা সবাই আওয়ামী পরিবারের সন্তান। আগের কোনা শত্রুতার কারণে এটা ঘটেছে কিনা আমি জানি না। তবে আজ(বুধবার) সকালে আমি শুনেছি , কয়েকজন বলেছে ওখানে জয় বাংলা স্লোগান নিয়ে কথা কটাকাটি হয়েছে। কিন্তু ঘটনার সময় ছিল এমন কারো কাছ থেকে আমি বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারিনি।”

স্থানীয় সাংবাদিক ইব্রাহিম বাবু ডয়চে ভেলেকে বলেন, " কয়েকদিন আগে একটি পেয়ারা বাগানে একজনের আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে তা ফেসবুকে দিলে তা নিয়ে দ্বন্দ্ব হয়।   এটা নিয়ে সালিশ হলেও তা মেটেনি। তার জেরেই মঙ্গলবার রাতে ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। অনুষ্ঠানের পাশে তাদের ওপর হামলা হয়। যারা নিহত হয়েছেন, তারা যিনি ভিডিও করে ফেসবুকে দিয়েছিলেন তার সঙ্গে ওই বাজারে গিয়েছিলেন।”

তিনি বলেন," তবে এটা নিশ্চিত যে নিহত দুইজনই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মাসুদ রানা চাঁপাইনবাবগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্ট ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি এবং নাচোল উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ছিলেন। আর নিহত রায়হান নাচোল উপজেলা ছাত্রলীগের কর্মী।”

একই প্রসঙ্গে চাঁপাই নবাবগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম সাহিদ বলেন," প্রায় ১২-১৩ দিন আগে একটি পেয়ারা বাগানে পলিথিন লাগানোর কাজ করছিল সালাম ও শাহিন। এ সময় শাহিন গোপনে সালামের একটি আপত্তিকর ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়িয়ে দেন। এরই জের ধরে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। পরে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করা হলেও ওই ঘটনার জেরে আবারো বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে দ্বন্দ্বে জড়ায় উভয় পক্ষ। এতে ছুরিকাঘাতে মাসুদ ও রায়হান নিহত হন।এ ঘটনায় আহত হন আরো চারজন। নিহত ও আহতরা সালামের অনুসারী।”

এই হত্যাকান্ড রাজনৈতিক নয়:অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম

This browser does not support the audio element.

তিনি আরো জানান, "এ ঘটনায় দুই জনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনায় সাত-আটজন জড়িত বলে আমরা চিহ্নিত করেছি। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। নাচোল থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। মরদেহ ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, "শহিদ জিয়া স্মৃতি সংঘের আয়োজনে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের শেষে রাত পৌনে ১১টার দিকে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটে। ওই অনুষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ছিল। কিন্তু অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে হওয়ায় পুলিশ বুঝে উঠতে পারেনি।”

হত্যাকাণ্ডের পরের দিনই চাঁপাই নবাবগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম সাহিদ দাবি করেন, "এই হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক নয়। ফেসবুকে যেভাবে ছড়িয়েছে, সেইভাবে এখানে জয় বাংলা বলা নিয়ে কোনো ঘটনা ঘটেনি। জয় বাংলা লেখা নিয়েও কোনো ঘটনা ঘটেনি। পূর্ব শত্রুতার জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। কারা এটা ফেসবুকে ছড়িয়েছে, তা আমরা চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ