মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিলের শুনানির প্রথমদিনে ১০০ জনের প্রার্থিতা নিয়ে শুনানি হয়েছে৷ এর মধ্যে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ৮০ জন৷
বিজ্ঞাপন
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনের দশম তলায় স্থাপিত এজলাসে এ আপিল শুনানি হয়৷
নির্বাচন কমিশনের আপিল শুনানিতে চট্টগ্রাম-৫ আসনের বিএনপি'র প্রার্থী মীর মোহাম্মদ নাছিরের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় তিনি হাইকোর্টে যাওয়ার কথা বলেছেন৷ নাটোর-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন নির্বাচন কমিশন৷ সেই সঙ্গে সিরাজগঞ্জ-২ আসনের বিএনপির প্রার্থী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর মনোনয়নও বাতিল হয়েছে৷
শুনানি শুরু হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের নবাব মো. শামছুল হুদার আপিলের মধ্য দিয়ে৷ এ দফায় আপিলেও তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করে নির্বাচন কমিশন৷ এরপর ছিল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বগুড়া-৭ আসনে দলের মনোনীত বিকল্প প্রার্থী মোরশেদ মিলটনের আপিলের শুনানি৷ শুনানি শেষে তাঁর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়৷ এ সময় ঢাকা-১ আসনে খন্দকার আবু আশফাক ও ঢাকা-২০ আসনের তমিজ উদ্দিনও প্রার্থিতা ফিরে পান৷ তাঁরা দু'জনই বিএনপির প্রার্থী৷ যাঁরা প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে পটুয়াখালী-৩ আসনে সদ্য আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে যোগ দেয়া গোলাম মাওলা রনিও আছেন৷
মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে জামালপুর-৪ আসনের বিএনপির প্রার্থী মো. ফরিদুল কবির তালুকদার শামীমের৷ পটুয়াখালী-৩ আসনে মোহাম্মদ শাহজাহান প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন৷ রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বাছাইয়ের পর যে ছয়টি আসনে বিএনপির কোনো প্রার্থী ছিল না সেখানে আপিলের মাধ্যমে চারটি আসনেই লড়াই করার সুযোগ পেলো দলটি৷ ঢাকা-১ আসনে আবু আশফাক, বগুড়া-৭-এ মোর্শেদ মিল্টন, , মানিকগঞ্জ-২ এবং জামালপুর-৪-এ ফরিদুল কবীর তালুকদারের প্রার্থিতা বাতিল হয়ে গিয়েছিল৷ সেগুলোতে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার পর এখন বাকি রয়েছে রংপুর-৫ এবং শরীয়তপুর-১ আসন৷
নির্বাচনি প্রচারণার কয়েকটি নীতিমালা
নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালে ‘সংসদীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮’ প্রণয়ন করে৷ ছবিঘরে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম উল্লেখ করা হলো৷
ছবি: Reuters
চাঁদা দেয়া যাবে না
কোনো প্রার্থী বা তাঁর পক্ষ থেকে অন্য কেউ নির্বাচনের আগে উক্ত প্রার্থীর নির্বাচনি এলাকায় বসবাসকারী কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী কিংবা উক্ত এলাকা বা অন্যত্র অবস্থিত কোনো প্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্যে বা গোপনে কোনো চাঁদা বা অনুদান দেয়া বা দেয়ার অঙ্গীকার করতে পারবেন না৷
ছবি: ROBERTO SCHMIDT/AFP/Getty Images
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন চলবে না
নির্বাচনপূর্ব সময়ে কোনো সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে রাজস্ব বা উন্নয়ন তহবিলভুক্ত কোনো প্রকল্পের অনুমোদন, ঘোষণা বা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন বা ফলক উন্মোচন করা যাবে না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
পোস্টারের আকার
সাদা-কালো রংয়ের ও আয়তন অনধিক ৬০X৪৫ সেন্টিমিটার এবং ব্যানার সাদা-কালো রংয়ের ও আয়তন অনধিক ৩X১ মিটার হতে হবে এবং পোস্টারে বা ব্যানারে প্রার্থী তাঁর প্রতীক ও নিজের ছবি ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তির ছবি বা প্রতীক ছাপাতে পারবেন না৷ তবে প্রার্থী কোনো নিবন্ধিত দলের মনোনীত হলে সেক্ষেত্রে তিনি কেবল তাঁর বর্তমান দলীয় প্রধানের ছবি পোস্টারে ছাপাতে পারবেন৷
ছবি: Reuters
যেখানে পোস্টার লাগানো যাবে না
কোনো প্রার্থী কিংবা তাঁর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি সিটি কর্পোরেশন ও পৌর এলাকায় অবস্থিত দালান, দেয়াল, গাছ, বেড়া, বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের খুঁটি, সরকারি বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের স্থাপনাসমূহ এবং বাস, ট্রাক, ট্রেন, স্টিমার, লঞ্চ, রিক্সা কিংবা অন্য কোনো প্রকার যানবাহনে পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল লাগাতে পারবেন না৷ তবে দেশের যে কোনো স্থানে এসব ঝুলানো বা টাঙানো যাবে৷
ছবি: Reuters
অন্যের পোস্টারে নয়
কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পোস্টার, লিফলেট, হ্যান্ডবিল ইত্যাদির উপর অন্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পোস্টার, লিফলেট, হ্যান্ডবিল ইত্যাদি লাগানো যাবে না এবং উক্ত পোস্টার, লিফলেট ও হ্যান্ডবিলের কোনো প্রকার ক্ষতিসাধন তথা বিকৃতি বা বিনষ্ট করা যাবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হেলিকপ্টার নয়
কোনো দল বা তার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি ট্রাক, বাস, মোটর সাইকেল, নৌযান, ট্রেন কিংবা অন্য কোনো যান্ত্রিক যানবাহন নিয়ে মিছিল বের করতে পারবেন না কিংবা কোনো শোডাউন করতে পারবেন না৷ প্রচারণাকাজে হেলিকপ্টার বা অন্য কোনো আকাশযান ব্যবহার করা যাবে না৷ তবে দলীয় প্রধানরা যাতায়াতের জন্য তা ব্যবহার করতে পারবেন৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto
ভয় দেখানো চলবে না
কোনো দল বা তার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি প্রচারণার ক্ষেত্রে সমান অধিকার পাবে৷ তবে প্রতিপক্ষের সভা, শোভাযাত্রা এবং অন্যান্য প্রচারাভিযান পন্ড বা তাতে বাধা প্রদান বা ভীতিসঞ্চারমূলক কিছু করতে পারবে না৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
দেয়াললিখন নয়
দেয়ালে লিখে প্রচারণা চালানো যাবে না৷ কালি বা রং দিয়ে বা অন্য কোনোভাবে দেয়াল ছাড়াও কোনো দালান, থাম, বাড়ি বা ঘরের ছাদ, সেতু, সড়কদ্বীপ, রোড ডিভাইডার, যানবাহন বা অন্য কোনো স্থাপনায় প্রচারণামূলক কোনো লিখন বা অংকন করা যাবে না৷ প্রতীক হিসাবে জীবন্ত প্রাণী ব্যবহার করা যাবে না৷ উপরের ছবিটি প্রতীকী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে৷
ছবি: DW/Mustafiz Mamun
খাবার দেয়া যাবে না
নির্বাচনি ক্যাম্পে ভোটারদের কোনোরকম কোমল পানীয় বা খাদ্য পরিবেশন বা কোনো উপঢৌকন দেয়া যাবে না৷
ছবি: ROBERTO SCHMIDT/AFP/Getty Images
মসজিদ, মন্দিরে নয়
মসজিদ, মন্দির, গির্জা বা অন্য কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়ে কোনো নির্বাচনি প্রচারণা চালানো যাবে না৷ প্রচারণার সময় ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করে বক্তব্য দেয়া বা কোনো ধরনের তিক্ত বা উসকানিমূলক বা মানহানিকর কিংবা লিঙ্গবৈষম্যমূলক, সাম্প্রদায়িক বা ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে এমন বক্তব্য দেয়া যাবে না৷
ছবি: Reuters/M.P. Hossain
মাইক ব্যবহারের নিয়ম
নির্বাচনি এলাকায় মাইক বা শব্দের মাত্রা বর্ধনকারী কোনো যন্ত্রের ব্যবহার দুপুর দুইটা থেকে রাত আটটার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
নিয়ম না মানলে
কোনো প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি কোনো নিয়ম ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন৷ দলের ক্ষেত্রেও এই শাস্তি প্রযোজ্য হবে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
12 ছবি1 | 12
মাদারীপুর-১ আসনের জহিরুল ইসলাম মিন্টু এবং সিলেট-৩ আসনের আবদুল কাইয়ুম চৌধুরীও আপিল করে সফল হয়েছেন৷ প্রার্থিতা ফেরত পাওয়া ৫৩ জনের বেশিরভাগই বিএনপি প্রার্থী৷
একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে ৩০ ডিসেম্বর৷ গত ২৯ নভেম্বর ছিল মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন৷ এরপর গত রোববার মনোনয়নপত্র বাছাই করা হয়৷ এদিন নির্বাচনে ৩০০ সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য জমা দেওয়া ৩ হাজার ৬৫ মনোনয়নপত্রের মধ্যে ৭৮৬টি বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা, যাঁদের মধ্যে বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দলের শক্তিধর প্রার্থীও রয়েছেন৷
গত সোমবার থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত আপিল গ্রহণ করে নির্বাচন কমিশন৷ তিন দিনে মোট ৫৪৩ জন আপিল করেছেন৷ প্রথম দিনে ৮৪, দ্বিতীয় দিনে ২৩৭ ও তৃতীয় দিনে ২২২টি আবেদন জমা পড়ে নির্বাচন কমিশনে৷ আজ ১ থেকে ১৬০ পর্যন্ত ক্রমিক নম্বরের আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা৷ কাল শুক্রবার ১৬১ থেকে ৩১০ পর্যন্ত এবং আগামী শনিবার ৩১১ ক্রমিক নম্বর থেকে ৫৪৩ পর্যন্ত আবেদনের আপিল শুনানি গ্রহণ করবে কমিশন৷
এপিবি/এসিবি (সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, প্রথম আলো)