1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলায় তথ্য বিকৃতি

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৮ ডিসেম্বর ২০১৬

বাংলাদেশের সাংবাদিক নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় পুলিশই তথ্য বিকৃতি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ আর এই ধরনের মামলার মাধ্যমে পুলিশ সাংবাদিকদের চাপের মুখে রাখতে চায় বলে মনে করেন মানবাধিকার কর্মীরা৷

নাজমুল হুদা
ছবি: DW/H. U. Swapan

নাজমুলের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, নাজমুলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্যা এবং হয়রানিমূলক৷ শুক্রবার রাতে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকা থেকে আটকের পর মঙ্গলবার তাকে আদালতের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে আশুলিয়া থানা পুলিশ৷ তার বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা হয়েছে৷ নাজমুল হুদা বেসরকারি টিভি চ্যানেল একুশে টেলিভিশন এবং বাংলাদেশ প্রতিদিন নামে একটি দৈনিকের সাভার প্রতিনিধি৷

এজাহারের কপিছবি: DW/H. U. R. Swapan

এজাহারে অভিযোগ করা হয় যে, ২০, ২২ এবং ২৩ ডিসেম্বর আশুলিয়ার পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলন নিয়ে নাজমুল মিথ্যা খবর পরিবেশন করেন৷ আর এই সংবাদ পাঠাতে তিনি মোবাইল ও ল্যাপটপ ব্যবহার করেন৷ এজাহারে বলা হয়, নাজমুল ২২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ প্রতিদিনে লিখেছেন, ‘‘গতকাল সকাল থেকে আব্দুল্লাহপুর বাইপাইল সড়কের দূর পাল্লার এবং আঞ্চলিক গণপরিবহন চলাচল বন্ধ আছে, সাভার ও আশুলিয়ায় ছয়শ’-এর বেশি পোশাক কারখানা বন্ধ রয়েছে৷ বাইপাইল এলাকায় পুলিশ কোনো যানবাহন ঢুকতে দেয়নি ও বন্ধ ঘোষিত ৫৫ টি কারখানা ছাড়া বাকি কারাখানার শ্রমিকরা কর্মস্থলে উপস্থিত থাকলেও তারা কর্মবিরতি পালন করেন৷’’

বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ছয়শ’ কারাখানা বন্ধ আছে এরকম কোনো তথ্য বাংলাদেশ প্রতিদিনে ছাপা হয়নি৷ বাংলাদেশ প্রতিদিনে ৫৫ টি পোশাক কারাখানা বন্ধের খবর ছাপা হয়েছে, যা সত্য৷ বাংলাদেশ প্রতিদিন কোনো বাড়তি বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্য পরিবেশন করেনি৷ বরং পুলিশের কোনো কর্মকর্তা প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে মামলার এজাহারে মিথ্যা তথ্য লিখে নাজমুলকে হয়রানি করছে৷’’

Nyeem Nizam - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

তিনি আরো বলেন, ‘‘পুলিশের যেসব কর্মকর্তা মিথ্যা তথ্য দিয়ে এজাহার করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত সরকারের৷ কারণ তারা মিথ্যা মামলা দিয়ে সাংবাদিক হয়রানি করে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে৷’’

বিষয়টি নিয়ে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা দেখেছি সাংবাদিক নাজমুল কোনো মিথ্যা বা উদ্দেশ্যমূলক তথ্য পরিবেশন করেননি, বরং পুলিশই তাদের এজাহারে তথ্য বিকৃতি ঘটিয়েছে৷ নাজমুলের প্রতিবেদনে কোথাও ছয়শ’ পোশাক কারাখানা বন্ধের তথ্য নেই৷ আছে ৫৫টি পোশাক কারাথানা বন্ধের কথা৷ কিন্তু পুলিশ তথ্য বিকৃত করে এজাহারে বলেছে নাজমুল ছয়শ’ কারখানা বন্ধের কথা লিখেছে৷ পুলিশের এই তথ্য বিকৃতি নিন্দনীয় এবং ন্যাক্কারজনক৷’’

Noor Khan - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ উদ্দেশ্যমূলকভাবে নাজমুলকে হয়রানি করার জন্য এই তথ্যবিকৃতি ঘটিয়েছে৷ তারা এর মাধ্যমে সাংবাদিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায়৷ তারা চায় সাংবাদিকরা যাতে মামলার ভয়ে প্রকৃত তথ্য পরিবেশনে বিরত থাকে৷’’

নূর খান আরো বলেন, ‘‘এছাড়া সংবাদ প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বিতর্কিত তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা কোনোভাকেই গ্রহণযোগ্য নয়৷’’

এদিকে সাংবাদিক নাজমুল হুদার আইনজীবী সাইদুর রহমান মানিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আদালতে বলেছি এজাহারে নাজমুলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সত্য নয়৷ নাজমুলের প্রতিবেদনে বাড়তি বা ঘটনার বাইরে কোনো তথ্য নেই৷ পুলিশের কাছে তার কোনো তথ্য প্রমাণ নেই৷ মামলাটি হয়রানিমূলক৷ তারপরও আদালত তার বিবেচনা থেকে নাজমুলকে দুই দিনের রিমান্ডে দিয়েছেন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য৷ তাঁকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মেনে জিজ্ঞাসাবাদ করতে বলা হয়েছে৷’’

Saidur Rahman Manik - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘এজাহারের সাথে পুলিশের রিমান্ড আবেদনে দেয়া তথ্য এক নয়৷ রিমান্ড আবেদনে বলা হয়েছে নাজমুল রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে জড়িত বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে৷ সেই তথ্য জানতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন৷’’

এজাহারে তথ্য বিকৃতির বিষয়ে পুলিশের বক্তব্য জানতে চাইলে কেউ কথা বলতে রাজি হননি৷

প্রসঙ্গত, কারাগারে আটক সাভারের এই সাংবাদিক রানা প্লাজা ধসের সময় তার ধারণ করা ফুটেজের জন্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে আলোচিত হন৷ তিনিই একমাত্র সাংবাদিক যিনি রানা প্লাজা ধসের আগের দিন ভবনের ফাঁটলের ভিডিও ধারণ ও প্রচার করেন একুশে টেলিভিশনে৷ ভবন ধসের দিন সকালে শ্রমিকদের জোর করে ভবনে ঢোকানোর ভিডিও ফুটেজও তিনিই ধারণ করেছিলেন৷ রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার বিরুদ্ধে হত্যা মামলায় নাজমুলের ধারণ করা ভিডিও ফুটেজই প্রধান সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে৷ রানা প্লাজা ধসের সময় নাজমুলের সাহসী সাংবাদিকতার জন্য নাজমুলকে নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম তথ্য চিত্রও নির্মাণ করেছে৷

আপনার কী মনে হয়? নাজমুল হুদা কি সত্যিই অপরাধী? লিখুন নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ