1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নানা দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন গীতা ও ইরা

৪ জানুয়ারি ২০১২

স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য গোবরা শিবিরে প্রথম যে পাঁচ জনকে নিয়ে নারীদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছিল তাদেরই অন্যতম দুই বোন গীতা ও ইরা কর৷ নানা দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে মুক্তিযুদ্ধে কাজ করলেও এখনও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাননি৷

গীতা করছবি: Motilal Adhikary

১৯৫৪ সালের ২৮শে মে রাজবাড়ীর শিবরামপুর গ্রামে জন্ম গীতা করের৷ পিতা জিতেন্দ্র নাথ কর এবং মা সন্ধ্যা রাণী কর৷ বাবা-মার ১১ মেয়ের মধ্যে গীতা কর ছিলেন সবার বড়৷ এলাকার প্রভাবশালী পরিবার হলেও ১৯৭০ সালে তাঁর কাকাকে খুন করা হয়৷ আর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর কিছুদিন পর ৫ই মে তাঁর বাবাকেও দিনের বেলায় হত্যা করে বিহারী ও স্থানীয় রাজাকাররা৷ এছাড়া এলাকার অন্যান্য হিন্দু পরিবারগুলোর উপরও নির্যাতন শুরু করে পাকিস্তানি দোসররা৷ ফলে প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে কিছুদিন মামার বাড়িতে থাকেন৷

কিন্তু গীতা করের মনে জ্বলতে থাকে কাকা আর বাবার হত্যাকারী রাজাকারদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার তাগিদ৷ তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য উদগ্রিব হয়ে পড়েন৷ এছাড়া পাকিস্তানি দোসরদের নির্যাতন গ্রামের দিকেও ছড়িয়ে পড়লে গীতা কর ও বোন ইরা করসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ভারত যাওয়ার জন্য রওয়ানা করেন৷ টানা নয় দিন পায়ে হেঁটে ভারত সীমান্তে পৌঁছেন তারা৷

ডয়চে ভেলের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসময়ের ঘটনা তুলে ধরেন৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমার এক ভাইয়ের কাছে খবর পেলাম যে, কলকাতায় নারীদের যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে৷ তখন আমি এবং আমার বোন ইরা কর তৎকালীন নেত্রী সাজেদা চৌধুরী, বদরুন্নেসা, নূরজাহান মোর্শেদের কাছে প্রায় প্রতিদিন সিআইপি রোডে গিয়ে দেখা করতাম এবং আমাদের যুদ্ধে অংশগ্রহণের আগ্রহের কথা বলতাম৷ বাসা থেকে সকালে কমলা কিংবা পান্তা ভাত খেয়ে তাঁদের কাছে প্রশিক্ষণের জন্য আমরাই প্রথম যোগাযোগ করতে থাকি৷ এভাবে প্রায় এক মাস ধরে ঘুরতে ঘুরতে এরপর সাজেদা চৌধুরী বললেন যে, মেয়েদের জন্য প্রশিক্ষণ শুরু করা হবে৷ কলকাতার পার্ক সার্কাসের কাছে গোবরা নামক জায়গায় শুরু হয় মেয়েদের প্রশিক্ষণ৷ শুরুতে আমরা দুই বোন, রাজশাহীর দুই জন এবং সম্ভবত যশোরের একজন - মোট পাঁচ জন মেয়েকে নিয়ে প্রশিক্ষণ শুরু হয়৷''

১৯৭১ সালে যুদ্ধ পরিস্থিতে ইরা করছবি: Motilal Adhikary

গোবরা শিবিরে তাঁদের প্রশিক্ষণের নানা দিক তুলে ধরলেন গীতা কর, ‘‘২রা জুলাই রবিবার প্রথম আমাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়৷ আমাদের একটা ধুতি, একটা মগ এবং একটা টিনের থালা দেওয়া হয়েছিল৷ প্রশিক্ষণের সময় আমাদের নির্দেশ দেওয়া হলো আলো জ্বালানো যাবে না এবং কোন আত্মীয় স্বজনের সাথে দেখা করা যাবে না৷ এসময় আমাদের থাকা-খাওয়ার তেমন কোন ঠিক ছিল না৷ মেঝেতে থাকতাম আমরা৷ এরপর ধীরে ধীরে শরণার্থী শিবিরগুলো থেকে আরো নারী এসে যোগ দেন সেই প্রশিক্ষণ কোর্সে৷ তাঁদের মধ্যে ছিলেন শিরিন বানু মিতিল, লায়লা পারভীন বানু, খাদিজা আখতার, মনিকা ব্যানার্জিসহ আরো অনেকে৷ শেষে প্রায় আড়াইশ' থেকে তিনশ' মেয়ে হয়ে যাই আমরা৷ সেখানে যাদবপুর ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা আমাদের প্রশিক্ষণ দিতেন৷ ফরাসি বিপ্লব, কিউবার বিপ্লবসহ বিশ্বের ঐতিহাসিক নানা ঘটনা উল্লেখ করে আমাদের উৎসাহ যোগাতেন তাঁরা৷ আমরা সেখানে শুধু অস্ত্র হাতে নেইনি৷ কিন্তু অস্ত্র চালনার তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ, ক্রলিং, গোয়েন্দাগিরি এবং প্রাথমিক চিকিৎসাসহ নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় আমাদের৷ কলকাতা থেকে সাজেদা আপা আমাদের প্রায় খোঁজ খবর নিতেন৷''

গীতা করছবি: Motilal Adhikary

প্রশিক্ষণের পর তাঁদের যুদ্ধে যাওয়ার করুণ কাহিনী জানালেন গীতা, ‘‘প্রশিক্ষণ শেষ হলে আমরা ১৫টি মেয়ে সীমান্ত এলাকায় গিয়ে যুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হই৷ তখন আমাদের হাতে মাত্র ১০ টাকা দিয়ে একজন অবাঙালির নেতৃত্বে আমাদেরকে হাওড়া স্টেশনে রেখে আসা হয়৷ অথচ আমরা কোন ঠিকানা কিংবা গন্তব্যস্থল কিছুই জানতাম না৷ আসামের লামডিং স্টেশন থেকে সেই অবাঙালি ব্যক্তিটি আমাদের ছেড়ে চলে যায়৷ তবে সেই টাকাটা আমাদেরকে দিয়ে যায়৷ আমরা এতো অল্প টাকায় কী খাবো? তখন এক টাকায় আটটা কমলা কিনতাম আর কমলা রস খেয়ে কোন রকমে দিন পার করতাম৷ অনেক মেয়েই না খেয়ে খুব দুর্বল হয়ে পড়ে৷ এ অবস্থায় ট্রেনে করে প্রায় নয় দিন পর আমরা সিলেট সীমান্তের কাছে পৌঁছি৷ সেখানে একটি শরণার্থী শিবিরে গিয়ে উঠি আমরা৷ সেখানে মিলন তালুকদার এবং মাখন নামের বাংলাদেশিরা আমাদের জন্য একটু থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেন৷ সেখানে আবার ভারতীয় সেনারা আমাদের ধরে নিয়ে গিয়েছিল৷ তারা বলছিল যে, আমাদের সাথে তোমরা কাজ কর৷ কিন্তু কয়েকজনের বুদ্ধিমত্তার কারণে আমরা সেখান থেকে কোন রকমে ছাড়া পাই৷ কারণ আমরা ভারতীয় বাহিনীর সাথে কাজ করতে আগ্রহী ছিলাম না৷ আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কাজ করতেই আগ্রহী ছিলাম৷''

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ