৩০ দিনের জেল হলো রাশিয়ার পুটিন-বিরোধী রাজনীতিক নাভালনির। কড়া পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন ম্যার্কেল।
বিজ্ঞাপন
রোববার তাঁকে বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করেছিল রাশিয়ার পুলিশ। সোমবার তাঁকে থানার ভিতরেই আদালত তৈরি করে বিচারকের সামনে পেশ করা হলো। বিচারক পুটিন-বিরোধী নাভালনিকে ৩০ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ শুনিয়েছেন। আদালতেই সহকর্মীদের টেলিফোনে একটি ভিডিওবার্তা রেকর্ড করেছেন নাভালনি। যেখানে তিনি বলেছেন, দেশে আইন বলে আর কিছু অবশিষ্ট নেই। বিচারের নামে প্রহসন চলছে।
কয়েক মাস আগে নাভালনিকে স্নায়ুর বিষ দিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছিল রাশিয়ার প্রশাসন। এমনই অভিযোগ জার্মানি সহ বিশ্বের একাধিক দেশের। রাশিয়ায় সেই ঘটনা ঘটার পরে নাভালনিকে নিয়ে আসা হয়েছিল জার্মানিতে। বার্লিনে দীর্ঘদিন তাঁর চিকিৎসা হয়। প্রাথমিক ভাবে কোমায় চলে গেলেও ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন পুটিনের তীব্র বিরোধী এই রাশিয়ান রাজনীতিবিদ তথা ব্লগার। জার্মানি তাঁকে আশ্রয় দিতে চাইলেও নাভালনি জানিয়েছিলেন, সুস্থ হলেই তিনি দেশে ফিরবেন। কারণ রাশিয়াই তাঁর মাতৃভূমি।
নাভালনির ঘটনায় পুটিনের যা হতে পারে
আলেক্সেই নাভালনিকে বিষ খাইয়ে মারার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে ক্রেমলিন৷ নাভালনির নামই উচ্চারণ করেন না পুটিন৷ এমন অস্বীকার ও তাচ্ছিল্যের কৌশলের পরিণাম কী হতে পারে? ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Instagram @Navalny/Reuters
রাশিয়ার রাজনীতিবিদ জার্মানিতে
রাশিয়ার বিরোধী রাজনীতিবিদ, আইনজীবী এবং দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের কর্মী আলেক্সেই নাভালনি গত ২০ আগস্ট টোমাস্ক থেকে মস্কো যাওয়ার পথে বিমানে অজ্ঞান হয়ে যান৷ ১৮ দিন হাসপাতালে কোমায় ছিলেন৷ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলে গোপনে জার্মানিতে নিয়ে আসা হয় তাকে৷ বার্লিনে দীর্ঘ চিকিৎসার পর নাভালনি এখন সুস্থ৷
ছবি: Vasily Maximov/APF/Getty Images
রাশিয়ার ‘অস্বীকার’ ও ‘আদেশ’
রাশিয়ার বিরোধী দল এবং পশ্চিমা দেশগুলো মনে করে, রুশ গোয়েন্দা সংস্থা নাভালনিকে বিষ খাইয়ে হত্যা করতে চেয়েছিল৷ কিন্তু রাশিয়ার পক্ষ থেকে এ অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করা হচ্ছে৷ সম্প্রতি রাশিয়ার কারা কর্তৃপক্ষ ২০১৪ সালের এক মামলায় দোষী সাব্যস্ত নাভালনিকে অবিলম্বে সশরীরে হাজির হতে বলে, তা না হলে পরে দেশে ফেরামাত্র জেলে পোরা হবে তাকে৷
ছবি: Shamil Zhumatov/REUTERS
কৌশলী পুটিন
গত চার মাসে নাভালনির ঘটনা অনেক দূর গড়িয়েছে৷ কিন্তু ভ্লাদিমির পুটিন একটিবারের জন্য নাভালনির নাম উচ্চারণই করেননি৷ জার্মানিতে নিয়ে আসার পর থেকে নাভালনিকে পুটিন বর্ণনা করছেন স্রেফ ‘বার্লিনের হাসপাতালের একজন রোগী’ হিসেবে৷
রাশিয়া দায় অস্বীকার করলেও, পুটিন ‘বার্লিনের হাসপাতালের রোগী’ বলে তাচ্ছিল্য করলেও ঘটনার বিস্তার থেমে থাকেনি৷ নাভালনির বিষয়ে মানুষের কৌতুহলও কমেনি৷ অজ্ঞান হয়ে পড়ার বিষয়টি নিয়ে দুটি ভিডিও অনুসন্ধানী নেটওয়ার্ক বেলিংক্যাট এবং দ্য ইনসাইডারে ছেড়েছিলেন নাভালনি৷ একটি ভিডিও এক সপ্তাহে দেখা হয়েছে দু কোটি বার, অন্যটি মাত্র দু দিনেই এক কোটি ৭০ লাখ বার! ওপরের ছবিতে বার্লিনে স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে নাভালনি৷
ছবি: Instagram @Navalny/Reuters
রুশ নিরাপত্তা সংস্থার চরম ব্যর্থতা
ব্রিটেনের ইতিহাসবিদ এবং গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মার্ক গালেওট্টি মনে করেন ‘নাভালনিকাণ্ড’ রাশিয়ার কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থা এফএসবিকে সের্গেই ক্রিপাল ও তার মেয়েকে বিষ খাওয়ানোর ঘটনার চেয়েও বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে, কারণ, ‘‘এফএসবি নাভালনিকে শুধু হত্যা করতে ব্যর্থই হয়নি, বড় একটা প্রমাণও রেখে দিয়েছে তারা, কেননা নাভালনিকে জার্মানিতে সরিয়ে নেয়া সম্ভব হয়েছে৷’’
ছবি: Imago/ZUMA Press
পুটিনের কী হবে?
মার্ক গালেওট্টির ধারণা এত বড় ঘটনাকেও হয়ত কৌশলে সামাল দিয়ে ফেলবেন ভ্লাদিমির পুটিন৷ ক্রেমলিন এখনো মনে করে তাদের গোয়েন্দা সংস্থা যথেষ্ট দক্ষ৷ ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপের অভিযোগে যখন রুশ গোয়েন্দা সংস্থার নাম আসে, তখনও ধারণা করা হয়েছিল পুটিন হয়ত কোণঠাসা হবেন, বিব্রত হবেন৷ অথচ পরে সেই ঘটনার জন্য পুটিনকে ‘কিংমেকার’ ভেবেছেন অনেকে৷
ছবি: Alexei Nikolsky/AP Photo/picture alliance
‘রাশিয়া হতে চায় কঠোর খারাপ ছেলে’
রাশিয়ার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড দেখে গালেওট্টির মনে হচ্ছে, রাশিয়ায় যারা ক্ষমতাসীন, তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, ‘‘ওকে, আমরা যেহেতু ভালো ছেলে হতে পারবো না, চল তাহলে সবচেয়ে কঠোর খারাপ ছেলে হয়ে যাই৷’’ ব্রিটিশ ইতিহাসবিদের মতে, ‘‘ক্রেমলিনের নিয়ন্ত্রণ এখন এমন নিষ্ঠুর রাজনীতিবিদদের হাতে, যারা কিছুতেই থামবে না৷’’
ছবি: imago/Panthermedia
7 ছবি1 | 7
ভ্লাদিমির পুটিনের প্রশাসনও জানিয়ে দিয়েছিল, দেশে ফিরলেই নাভালনিকে গ্রেফতার করা হবে। তাঁর সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করেছে সরকার। গ্রেফতারের হুমকি থাকলেও গত রোববার দেশে ফেরেন নাভালনি। বিমানবন্দর থেকেই তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মস্কোর অদূরে একটি থানায় নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সোমবার সেই থানাতেই অস্থায়ী আদালত তৈরি করা হয়।
সোমবারের অস্থায়ী আদালতে বিচারক দুই পক্ষের ঘটনা শোনার পরে নাভালনিকে ৩০ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। ওই আদালতেই সহকর্মীদের ফোনে একটি ভিডিওবার্তা রেকর্ড করেন নাভালনি। সেখানে তিনি বলেছেন, 'দেশে বিচারের নামে প্রহসন চলছে। আইনকানুনের আর কিছু অবশিষ্ট নেই। সকলে রাস্তায় নামুন। আমার জন্য নামতে হবে না, নিজেদের সুরক্ষার জন্য নামুন।' বস্তুত, এ দিন যখন নাভালনির বিচার চলছে, থানার বাইরে তখন প্রায় ২০০ জন সমর্থক ভিড় জমিয়েছিলেন।
নাভালনির গ্রেফতার এবং বিচার নিয়ে অবশ্য রাশিয়ার প্রশাসন বিশেষ উচ্চবাচ্য করছে না। ক্রেমলিনের মুখপাত্র সোমবার বলেছেন, এ বিষয়ে তাঁর বিশেষ কিছু জানা নেই। প্রশাসন তাদের কাজ করছে। ভ্লাদিমির পুটিনও নাভালনির ঘটনা নিয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো কথা বলেননি। বস্তুত, আজ পর্যন্ত তিনি নাভালনির নাম কখনো ব্যবহার করেননি। অধিকাংশ সময়েই তাঁকে সম্বোধন করেছেন 'ব্লগার' বলে। সম্প্রতি একবার তাঁকে 'বার্লিনের রোগী' বলেও সম্বোধন করেছেন তিনি।
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল অবশ্য সোমবার নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন। রোববার তিনি নাভালনির নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করেছিলেন। সোমবার তিনি বলেছেন, নাভালনিকে না ছাড়লে রাশিয়ার সঙ্গে জার্মানির কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হবে।