নাভালনির বাড়ি এবং অফিসে তল্লাশির নামে তাণ্ডব চালালো রাশিয়ার পুলিশ। শুরু হয়েছে প্রতিবাদ।
বিজ্ঞাপন
গোটা বিশ্বে যতই প্রতিবাদ হোক। নাভালনির নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে জার্মানি-অ্যামেরিকা রাশিয়ার উপর যতই চাপ তৈরি করুক, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন নিজের অবস্থানে অনড়। বুধবার তা আরো একবার স্পষ্ট হয়ে গেল। এদিন রাশিয়ায় নাভালনির যতগুলি বাড়ি আছে এবং তাঁর প্রতিটি অফিস এবং স্টুডিওয় তল্লাশি চালায় পুলিশ। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে একাজ করেছে পুলিশ।
বুধবার আগাম বার্তা না দিয়েই নাভালনির একাধিক বাড়ি এবং তাঁর আত্মীয়দের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালায় পুলিশ। একটি বাড়িতে নাভালনির ভাই ছিলেন। অন্যটিতে ছিলেন তাঁর স্ত্রী। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, লাথি মেরে দরজা ভেঙে বাড়ির ভিতরে ঢুকেছে পুলিশ। নাভালনির স্ত্রী উইলিয়া তাঁর আইনজীবীকে ফোন করে ঘটনাস্থলে ডেকে নিয়েছিলেন। তাঁর আইনজীবী ডয়চে ভেলের প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, পুলিশ তাঁকে ভিতরে ঢুকতে দেয়নি। রাশিয়ার আইন অনুযায়ী যা সম্পূর্ণ বেআইনি। নাভালনির ভাই ওলেগও একই অভিযোগ করেছেন।
রাশিয়ায় পুটিনবিরোধী নজিরবিহীন বিক্ষোভ
রাশিয়ার বিরোধী নেতা আলেক্সি নাভালনির মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে রাজধানী মস্কোসহ বিভিন্ন অঞ্চলে৷ এ পর্যন্ত আটক সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি মানুষ৷ ছবিঘরে বিস্তারিত৷
ছবি: Anton Vaganov/REUTERS
বিক্ষোভের ডাক
১৭ জানুয়ারি জার্মানি থেকে রাশিয়ায় ফিরলে বিমানবন্দরেই গ্রেপ্তার হন রাশিয়ার বিরোধী নেতা আলেক্সি নাভালনি৷ সেসময় সমর্থকদের উদ্দেশে বিক্ষোভের ডাক দেন তিনি৷
ছবি: Alexey Malgavko/REUTERS
ব্যাপক বিক্ষোভ
শনিবার থেকে রাজধানী মস্কোসহ দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে শুরু হয় পুটিনবিরোধী বিক্ষোভ৷ নাভালনির মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা৷ পাশাপাশি পুটিনের পদত্যাগের দাবিও জানান তারা৷
ছবি: Sergei Shevchenko/REUTERS
তীব্র শীত উপেক্ষা করে আন্দোলনে
রাশিয়ায় এখন তীব্র শীত৷ তুষারপাত বা তীব্র শীতও দমাতে পারেনি বিক্ষোভকারীদের৷ প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে নাভালনির মুক্তির দাবিতে তারা রাস্তায় নেমেছেন৷
ছবি: Alexey Malgavko/REUTERS
পুলিশ-বিক্ষোভকারী সংঘর্ষ
কৃষ্ণসাগরের ধারে পুটিনের প্রাসাদ ঘিরে রোববার অবস্থান নেন কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী৷ বিক্ষোভের এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করলে আহত হন বেশ কয়েকজন৷ এরপর পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে এক পর্যায়ে ধড়পাকড় শুরু হয়৷
ছবি: Maxim Shemetov/REUTERS
আটক সাড়ে তিন হাজার
রোববার পর্যন্ত দেশজুড়ে সাড়ে তিন হাজার নাভালনি সমর্থকের আটকের খবর পাওয়া গেছে৷
ছবি: Maxim Shemetov/REUTERS
নিরাপত্তাবাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি
বিক্ষোভ দমনে দেশজুড়ে মোতায়েন করা হয় কয়েক হাজার নিরাপত্তাবাহিনী৷ তবে তাদের উপেক্ষা করে বিক্ষোভে অংশ নেন হাজার হাজার মানুষ৷
ছবি: Maxim Shemetov/REUTERS/REUTERS
১০০ শহরে বিক্ষোভ
মস্কো, সেইন্ট পিটার্সবার্গসহ প্রায় ১০০ শহরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন নাভালনি সমর্থকরা৷ সংবাদ সংস্থা রয়টার্স বলছে, মস্কোর র্যালিতে অন্তত ৪০ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিল৷ তবে রাশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য, বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা ছিল চার হাজার৷
ছবি: Anton Vaganov/REUTERS
দেশজুড়ে দাঙ্গা পুলিশ
মস্কোতে দাঙ্গা পুলিশ বিক্ষোভকারীদের নির্যাতন করেছে৷ মস্কো থেকেই আটক করা হয় ১২শ’ মানুষকে৷
ছবি: Ksenia Korshun/REUTERS
নাভালনির স্ত্রীকে আটকের পর মুক্তি
বিক্ষোভের মধ্যে নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়াকেও কিছুক্ষণের জন্য আটক করে পুলিশ৷ পরে অবশ্য তাকে ছেড়ে দেয়া হয়৷
ছবি: Maxim Shemetov/REUTERS/REUTERS
বিশ্লেষকদের বক্তব্য
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়াযজুড়ে এত বড় বিক্ষোভ আগে কখনো দেখা যায়নি আর মস্কোতে গত দশ বছরের মধ্যে এত বড় বিক্ষোভ হয়নি৷
ছবি: Anton Vaganov/REUTERS
পুটিনের নিন্দা
এই ব্যাপক বিক্ষোভে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে পড়েছে পুটিন সরকার৷ সোমবার এই বিক্ষোভ সমাবেশকে অনৈতিক ও বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করে এর নিন্দা জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷
ছবি: Maxim Shemetov/REUTERS
নতুন নিষেধাজ্ঞা নয়
সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা রাশিয়ার বিক্ষোভ নিয়ে আলোচনায় বসেন৷ সেখানে বিক্ষোভ দমনে পুটিন প্রশাসনের সমালোচনা করা হলেও নতুন করে রাশিয়ায় কোনো অবরোধ আরোপের সিদ্ধান্ত হয়নি৷
ছবি: Evgenia Novozhenina/REUTERS
নাভালনি যে কারণে গ্রেপ্তার
গত বছরের আগস্টে নাভালনির ওপর স্নায়ু বিকল করার বিষাক্ত রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়৷ এরপর থেকে চিকিৎসার জন্য তিনি বার্লিনে ছিলেন৷ সুস্থ হয়ে দেশে ফিরতেই তাকে বিমানবন্দরে আটক করা হয়৷ প্যারোলের নিয়ম ভঙ্গ করায় একটি মামলায় তাকে ৩০ দিনের আটকাদেশ দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে৷
ছবি: Kirill Kudryavtsev/AFP
13 ছবি1 | 13
এদিন নাভালনির বাড়ির পাশাপাশি তাঁর একাধিক অফিসে তল্লাশি চালায় পুলিশ। দুর্নীতির বিরুদ্ধে মূলত কাজ করে তাঁর অফিস। রাশিয়ার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দুর্নীতি নিয়ে একাধিক রিপোর্ট তৈরি করেছে নাভালনির দপ্তর। সম্প্রতি তারা প্রেসিডেন্ট পুটিনের একটি প্রাসাদের সন্ধান দিয়েছেন। কৃষ্ণসাগরের ধারের ওই প্রাসাদ দুর্নীতির টাকায় কেনা বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। পুটিন কিংবা তাঁর প্রশাসন অবশ্য সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। বিষয়টি নিয়ে রাশিয়ায় প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। এদিন নাভালনির সেই প্রতিটি অফিসেই তল্লাশি চালানো হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য বহু নথি বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে গেছে পুলিশ। তবে কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।
গত সপ্তাহে নাভালনির গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমেছিলেন। রাশিয়ার প্রায় ১০০টি অঞ্চলে বিক্ষোভ দেখানো হয়। সব মিলিয়ে পুলিশ চার হাজারেরও বেশি প্রতিবাদকারীকে গ্রেফতার করে। তাতেও প্রতিবাদ থামেনি। মস্কোয় প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভ সমাবেশ হচ্ছে। তারই মধ্যে বুধবার পুলিশের এই কাজে উত্তাপ আরো বাড়বে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জার্মানি গোড়া থেকেই নাভালনির নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করছে। জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল জানিয়েছেন, নাভালনিকে মুক্তি না দিলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার রাস্তায় হাঁটবে জার্মানি। মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুটিনকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন। কিন্তু রাশিয়া এখনো পর্যন্ত অবস্থান বদল করেনি।