স্টিং অপারেশন চালিয়ে একসময় ভারতের এক মন্ত্রীকে গদিচ্যূত করেছিলেন সাংবাদিকেরা৷ পশ্চিমবঙ্গেও নারদ স্টিং সাড়া ফেলে দিয়েছে৷ তবে সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিয়ে নানা অভিযোগ আছে৷
বিজ্ঞাপন
কয়েকমাসের মধ্যেই বিধানসভা নির্বাচন৷ ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থা সারদার মামলা নিয়ে জর্জরিত তৃণমূল কংগ্রেস৷ বিরোধী দলগুলি লাগাতার সে সব বিষয় নিয়ে প্রচার চালাচ্ছে৷ নাগরিক সমাজও শাসকের বিরুদ্ধে নানারকম আলোচনা করছে৷ ঠিক সেই পরিস্থিতিতেই নতুন ‘যন্ত্রণার' আবির্ভাব৷ ‘নারদ' নামে এক সংস্থা প্রকাশ করল তাদের স্টিং অপারেশন৷ দেখা গেল শাসকদলের ১২ জন নেতা-মন্ত্রী গোপন ক্যামেরার সামনে ঘুস নিচ্ছেন৷
নারদ স্টিং অপারেশন নিয়ে এরপর জলঘোলা হয়েছে বিস্তর৷ বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে বিরোধীরা লাগাতার প্রচার চালিয়েছে ঘুস নেওয়া নেতা মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে৷ শাসক দল কখনো যুক্তি দিয়ে, কখনো কুযুক্তি দিয়ে সমস্যার মোকাবিলা করার চেষ্টা করেছে৷ নিজেদের দোষ ঢাকতে পুরো ঘটনাটিকেই বিরোধীদের ষড়যন্ত্র বলে চালানোর চেষ্টা করেছে৷ তবে শেষপর্যন্ত ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নারদের কোনো প্রভাব পড়েনি৷ তৃণমূল দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেছে৷ কিন্তু নারদ মামলা এখনো অব্যাহত৷ অতি বড় তৃণমূলপন্থিও অস্বীকার করবেন না যে, নারদ কাণ্ড দলের ভাবমূর্তিকে প্রভূত নাড়িয়ে দিয়েছে৷
ঘটনার সূত্রপাত অবশ্য ২০১১ সালে৷ ম্যাথু স্যামুয়েল নামে কেরলের এক সাংবাদিক তখন কাজ করেন বিখ্যাত সংবাদসংস্থা ‘তহেলকা'-তে৷ এর আগে তহেলকা স্টিং অপারেশন করে নড়িয়ে দিয়েছিল দিল্লির গদি৷ মন্ত্রিত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে হয়েছিল তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জর্জ ফার্নান্ডেজকে৷ এবং সেই স্টিং অপারেশনেরও প্রধান কাণ্ডারী ছিলেন ম্যাথু৷ ২০১১ সাল নাগাদ ‘তহেলকা' ঠিক করে আরো একটা স্টিং অপারেশন করা দরকার৷ পুরো দেশকে যা নাড়িয়ে দেবে৷ প্রাথমিক ভাবে তাদের সিদ্ধান্ত ছিল হিমাচল প্রদেশ কিংবা মধ্যপ্রদেশে গিয়ে অপারেশনটি চালানো হবে৷
‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির খুনিদের নিশ্চিত করা যায়নি! তাই নৃশংস সেই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করেই রাজধানীর দৃক গ্যালারিতে চলছে ‘সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করি’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী৷
ছবি: DW
ছবিতে বর্বোরোচিত হত্যাকাণ্ড
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির বর্বোরোচিত হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পূর্তিতে এই প্রদর্শনীটির আয়োজন করেছে সাগর-রুনির পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও শুভানুধ্যায়ীরা৷ প্রদর্শনীটি চলবে ২৬শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত৷
ছবি: DW
স্থান পেয়েছে কবরের ‘এপিটাফ’
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পূর্তিতে আয়োজিত আলোকচিত্র প্রদর্শনীর দুই দরজায় সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির কবরের এপিটাফ-এর একটি আলোকচিত্র৷
ছবি: DW
‘আমরা তোমাদের ভুলবো না’
‘সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করি’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনীটিতে সাংবাদিক দম্পতির কর্মস্থলের পরিচয়-পত্র৷ ঢাকায় মাছরাঙা টেলিভিশনে যোগ দেয়ার আগে সাগর সরওয়ার কাজ করতেন ডয়চে ভেলেতে আর মেহেরুন রুনি কাজ করতেন বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন ‘চ্যানেল আই’-এ৷
ছবি: DW
ছোটবেলার সেই দিনগুলো...
সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির পরিচয়-পত্রের পাশে রুনির ছোটবেলার আলোকচিত্র৷ মেহেরুন রুনির পারিবারিক অ্যালবামের এ সব ছবিও স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে৷
ছবি: DW
‘আজও বড় ভালোবাসি তোমায়’
সাগর-রুনি ও তাঁদের একমাত্র শিশুপুত্র মেঘের একটি মর্মস্পর্শী ছবি৷ ছবিটির বামদিকে মেঘের আঁকা বাবার ছবি আর ডানে মায়ের ছবি৷ কোনো এক ‘মা দিবসে’ ছবিটি এঁকেছিল মেঘ, যার পাশে কাঁচা হাতে লেখা – ‘‘ভালোবাসি মা’’৷
ছবি: DW
চঞ্চল মেঘের প্রশ্নবিদ্ধ চোখ
প্রদর্শনী জুড়ে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে মাহির সরওয়ার মেঘের চঞ্চলতা৷ পুরো গ্যালারি জুড়ে আপন মনে খেলে চলা ছোট্ট এই শিশুটির দু’চোখেই যেন বাবা-মা হত্যার বিচারের আকুতি৷ মেঘ কি পাবে বর্বর এ হত্যাকাণ্ডের বিচার?
ছবি: DW
ছোট্ট মেঘের হাতের কাজ
ডয়চে ভেলেতে কাজের সূত্রে মেঘকে নিয়ে সাগর-রুনির বসবাস ছিল জার্মানিতে৷ সে সময়ে স্কুলের জন্য তৈরি করা মেঘের একটি ছবির অ্যালবাম৷
ছবি: DW
সত্যি কি আমরা ভুলে যায়নি?
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পর প্রকাশিত বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা৷ আর তার সামনে, দেয়ালে লেখা ‘Let’s Forget Sagar-Runi’ – ‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’৷
ছবি: DW
হারিয়ে যাওয়া বোনের জন্য...
প্রদর্শনীতে মেহেরুন রুনির ছোটবেলার একটি ছবি বোর্ডে লাগাচ্ছেন ভাই নওশেদ আলম৷ চার ভাই-বোনের মধ্যে রুনি ছিলেন দ্বিতীয় সন্তান৷
ছবি: DW
দোষীদের খোঁজ পাওয়া যাবে তো?
রুনির আরেক ভাই নওশের রোমান৷ তিনি জানান, ‘‘সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতেই এ প্রদর্শনীর আয়োজন৷ এতে পুরো ঘটনার ভয়াবহতা ফুটে না উঠলেও, জঘন্যতম এই অপরাধের প্রতি মানুষের মধ্যে এক ধরনের সচেতনতা সৃষ্টি করার প্রয়াস রয়েছে৷’’
ছবি: DW
কোথায় গেল সাগরের ল্যাপটপ?
প্রদর্শনীতে সাগর সরওয়ারের ব্যবহৃত ল্যাপটপের পাশে তাঁরই লেখা একটি বই৷ মাঝে প্রতীক হিসেবে রাখা হয়েছে একটি খেলনার পিস্তল৷
ছবি: DW
চোখে চশমা, মুখে সেই অনবদ্য হাসি
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পূর্তিতে আয়োজিত প্রদর্শনীতে মেহেরুন রুনি ও সাগর সরওয়ারের ব্যবহৃত চশমা৷ এ আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে সাংবাদিক দম্পতির বিভিন্ন আলোকচিত্র ছাড়াও দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্রও স্থান পেয়েছে৷
ছবি: DW
আজও কেমন জলজ্যান্ত!
প্রদর্শনীতে আলোকচিত্রের পাশাপাশি দেখানো হচ্ছে ভিডিও ক্লিপও৷ সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পর নানা ঘটনার ভিডিও-চিত্র দেখানো হচ্ছে প্রজেক্টরে৷
ছবি: DW
নৃশংসতার প্রতীক
নিহত এই সাংবাদিক দম্পতির প্রতি সম্মান জানাতে এবং একই সাথে পুরো রহস্য উদঘাটনের দাবি জানিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন৷ ২০১২ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি পশ্চিম রাজাবাজারে নিজেদের ভাড়া করা ফ্ল্যাটে, অজ্ঞাত আততায়ীদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন তাঁরা৷
ছবি: DW
নীরবে-নিভৃতে কাঁদে...
মেহেরুন রুনির পুরনো ছবির সামনে অশ্রুসজল মা নুরন নাহার মির্জা৷ সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে আজও নীরবে-নিভৃতে চোখের জল ফেলে চলছেন এই মা৷
ছবি: DW
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই
প্রদর্শনীতে সাগর-রুনি ও মেঘের ছবির সঙ্গে ‘সেলফি’ তুলছেন এক দর্শনার্থী৷ সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থান পাওয়া সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির হত্যাকাণ্ডের বিচার এখন বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের দাবি৷
ছবি: DW
16 ছবি1 | 16
কিন্তু বিজেপির বিরুদ্ধে আরও একবার অভিযান চালাতে রাজি হননি ম্যাথু৷ তাঁর বক্তব্য ছিল, এর আগেও তিনি বিজেপির বিরুদ্ধেই অপারেশন চালিয়েছিলেন৷ দ্বিতীয়বার নতুন কোনো দলের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে চান৷ পশ্চিমবঙ্গে ২০১১ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচন ততদিনে সম্পূর্ণ হয়েছে৷ ৩৪ বছরের বাম সরকারকে তাসের ঘরের মতো ভেঙে ফেলে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল৷ আর ঠিক তার পরপরই সারদা কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে চলে এসেছে৷ নাম জড়িয়েছে তৃণমূলের প্রথমসারির বেশ কিছু নেতা মন্ত্রীর৷ এ হেন পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গকেই টার্গেট করেন ম্যাথু৷ একটি ভুয়ো সংস্থা তৈরি করেন৷ যার নাম দেওয়া হয় ‘ইমপেক্স কনসালটেন্সি সলিউশন'৷ বন্ধুদের সাহায্যে সেই সংস্থার একটি ওয়েবসাইটও তৈরি করে ফেলেন ম্যাথু৷ নিজেকে তার কর্ণধার হিসেবে পরিচয় দেন৷ বানিয়ে ফেলেন একটি ভুয়ো আধার কার্ডও৷
এরপর কলকাতায় এসে এক ট্যাক্সি চালকের সাহায্যে রাজ্যের বিশিষ্ট নেতা এবং মন্ত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেন ম্যাথু৷ একে একে যোগাযোগ করেন তৃণমূলের তৎকালীন সর্বভারতীয় সভাপতি মুকুল রায় থেকে শুরু করে পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, তৎকালীন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র থেকে শুরু করে লোকসভার সাংসদ সৌগত রায় পর্যন্ত সকলের সঙ্গেই৷ বাদ যাননি পুরসভার মেয়র এবং পরিবেশমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ও৷ গোপন ক্যামেরায় দেখা যায় এঁদের অধিকাংশই ম্যাথুর কাছ থেকে সরাসরি টাকা নিচ্ছেন৷ মুকুল রায় এবং ফিরহাদ হাকিম অবশ্য তাঁদের সহকর্মীদের হাতে টাকা পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেন৷ রাজ্যের এক উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসার এসএমএইচ মির্জাকেও ক্যামেরায় দেখা যায়৷ তিনি ম্যাথুকে বলেন, মন্ত্রী এবং নেতাদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করিয়ে দেবেন৷
গোপন ক্যামেরার সামনে নেতা মন্ত্রীদের ম্যাথু বলেন, কলকাতায় তাঁর সংস্থা ব্যবসা করতে চায়৷ সমস্ত ব্যবস্থাপনা যাতে ঠিক থাকে তার জন্য তিনি নেতা মন্ত্রীদের খুশি করতে চান৷ মন্ত্রীরাও সব ঠিক থাকবে এই আশ্বাস দিয়ে তাঁর কাছ থেকে ঘুস নেন৷
ঘটনা সাড়া ফেলে দেয় সর্বত্র৷ প্রথামিক ভাবে তৃণমূলের তরফ থেকে জানানো হয়, বিরোধীদল বিজেপি চক্রান্ত করে তাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছে৷ তবে ক্যামেরার সামনে টাকা নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে তারা কথা বলতে চায়নি৷ পরবর্তীকালে অবশ্য বলার চেষ্টা করা হয়, ঘুস নয়, স্যামুয়েল পার্টিকে অনুদান দিতে চেয়েছিলেন৷ সে কারণেই নেতারা অর্থ গ্রহণ করেছেন৷
পুরো ঘটনাটির তদন্ত এখনো চলছে৷ ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টে এই মোতাবেক মামলা শুরু হয়েছে৷ প্রাথমিক ভাবে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছিল কলকাতা পুলিশ৷ পরবর্তীকালে আদালতের নির্দেশে তদন্তভার হস্তান্তরিত হয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইয়ের হাতে৷ আদালত জানায়, কলকাতা পুলিশের তদন্ত পক্ষপাতদুষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷
বাংলাদেশের গণমাধ্যম আইন এখনো পড়ে আছে ব্রিটিশ আমলে
ব্রিটিশ আমল থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের গণমাধ্যম সংক্রান্ত যেসব আইন তৈরি হয়েছে, এবং এখনো বলবৎ আছে, তাতে কী বলা হয়েছে৷ ছবিঘরে জেনে নিন কিছু আশ্চর্য আইনের কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ছাপাখানা প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধীকরণ) আইন ১৯৭৩
ব্রিটিশ আমলে ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করতে বেশ কিছু আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল, যার কয়েকটি কিছুটা সংশোধিত আকারে আজও রয়ে গেছে৷ যেমন: ছাপাখানা প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধীকরণ) আইন ১৯৭৩৷ এ আইন অনুযায়ী, যে কোনো সংবাদপত্র প্রকাশের আগে জেলার ডেপুটি কমিশনারের লিখিত অনুমোদন লাগবে৷ এটি ১৮২৩ সালে ভারতের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত গর্ভনর জেনারেল জন অ্যাডামের অধ্যাদেশ৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
দণ্ডবিধি ১৮৬০
১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি ‘১২৪ ক’ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি সরকারের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে, তার তিন বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানার বিধান রয়েছে৷ এটি একেবারেই মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতার লঙ্ঘন৷ একই আইনের ‘৫০৫ খ’ অনুচ্ছেদে বলা হয়, কোনো প্রতিবেদন বা বিবৃতি যদি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যায়, তাহলে তাকে ৭ বছর কারাভোগ করতে হবে৷ একইভাবে মানহানির জন্য ৪৯৯ এবং ৫০১ অনুচ্ছেদে শাস্তির বিধান রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪
বাংলাদেশের অবাধ তথ্যের প্রবাহের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হল অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ১৯২৩ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন বা স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট ১৯৭৪৷ প্রথমটিতে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা যেতে পারে এমন কোনো বিষয় কাউকে দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের উপর বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে৷ দ্বিতীয় আইনে রাষ্ট্রের চোখে অনিষ্টকর কোনো তথ্য গণমাধ্যমে কেউ প্রকাশ করলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ
বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ (১) অনুচ্ছেদে ‘চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা’র কথা বলা হয়েছে৷ অথচ ৩৯(২)-এ এই স্বাধীনতা আইনের দ্বারা আরোপিত ‘যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষেই’ নিশ্চিত হবে বলা হয়েছে৷ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশি রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃংখলা, শালীনতা বা নৈতিকতার স্বার্থে অথবা আদালত অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে এই বাধা-নিষেধের কথা বলা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Jaspersen
তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা
২০১৩ সালের সংশোধিত আইনে কোনো ব্যক্তি যদি ইন্টারনেটে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যার দ্বারা কারো মানহানি ঘটে, কিংবা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করতে পারে, বা এ ধরনের তথ্য কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে দেয়া হয়, তাহলে এটি অপরাধ এবং সেই অপরাধে ৭ থেকে ১৪ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে৷
ছবি: Schlierner - Fotolia.com
ডিজিটাল আইনের ৩২ ধারা
এ আইনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বেআইনিভাবে প্রবেশের মাধ্যমে কোনো সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা বিধিবদ্ধ কোনো সংস্থার অতিগোপনীয় বা গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত কম্পিউটার, ডিজিটাল যন্ত্র, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করেন বা করতে সহায়তা করেন, তাহলে সেই কাজ হবে কম্পিউটার বা ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ৷
ছবি: Badruddoza Babu
৩২ ধারায় শাস্তি
এই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হবে৷ কেউ যদি এই অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার করেন, তাহলে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড ভোগ করতে হবে৷
ছবি: Imago/IPON
তথ্য অধিকার আইন ২০০৯
এই আইনটি বাক স্বাধীনতার পক্ষে৷ বলা হয়েছে, ‘‘এই আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে প্রত্যেক নাগরিকের তথ্য লাভের অধিকার থাকিবে এবং কোন নাগরিকের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাহাকে তথ্য সরবরাহ করিতে বাধ্য থাকিবে৷’’ আরো বলা হয়েছে, ‘‘তথ্য প্রদানে বাধা সংক্রান্ত বিধানাবলী এই আইনের বিধানাবলীর সহিত সাংঘর্ষিক হইলে, এই আইনের বিধানাবলী প্রাধান্য পাইবে৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/Dinodia Photo Library
8 ছবি1 | 8
তৃণমূল অবশ্য বিষয়টিকে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে৷ তারা প্রশ্ন তুলেছে, কোথা থেকে টাকা জোগার করেছিলেন ম্যাথু? বিজেপি কি তাঁকে দিয়ে এই কাজ করিয়েছিল? যদিও ম্যাথু জানিয়েছেন, তৃণমূলের প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ কে ডি সিংহ তাঁকে অর্থ সাহায্য করেছিলেন৷ বিষয় যা-ই হোক, তা তদন্ত সাপেক্ষ৷ আদালতেই তার ফয়সলা হবে৷
তবে নারদ স্টিং অপারেশন যে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিকে নাড়িয়ে দিয়েছিল এবং ভবিষ্যতেও দেবে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ এবং এক্ষেত্রে রাজনীতি যে তরজাই করুক না কেন, একজন সাংবাদিক যে স্বাধীনভাবে এ ধরনের স্টিংঅপারেশন চালাতে পারেন, তা আরো একবার পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে৷ ডয়চে ভেলের তরফ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল ম্যাথু স্যামুয়েলকে৷ হোয়াটসঅ্যাপে নিজের মতামত জানিয়েছেন বলেছেন তিনি৷ তাঁর মতে, ভারতের মতো দেশে আরো বেশি স্টিং অপারেশন হওয়া দরকার৷ কারণ, উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতি ধরার জন্যএটা একটা মোক্ষম অস্ত্র৷ এবং তার চেয়েও বড় কথা, এটি একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া৷ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা৷ কোনো সরকার সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারে না৷ নাগরিক সমাজের মতে, এটাই গণতান্ত্রিক দেশে বাকস্বাধীনতার চরিত্র হওয়া উচিত৷ মত প্রকাশের এবং সাংবাদিকের স্বাধীনতার প্রমাণ৷ এর আগেও জর্জ ফার্নান্ডেজের রাজনীতি হার স্বীকার করেছিল সাংবাদিকের স্বাধীনতার কাছে৷ আগামীদিনেও পারবে, এমনই তাঁদের বিশ্বাস৷ বিশেষত, বাংলাদেশে নতুন আইনের খসরা প্রস্তাব তৈরি হওয়ার পর বিষয়টি ভারতের কাছেও অন্যরকম গুরুত্ব পাচ্ছে৷
লেখকের ভাবনার সঙ্গে আপনি কতটুকু একমত? লিখুন নিচের মন্তব্যের ঘরে৷